সুপ্রভা সরকার
সুপ্রভা সরকার (২৫ সেপ্টেম্বর , ১৯১৯ – ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯) বাংলা গানের জগতে এক খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী। [১] প্রথমদিকে আধুনিক ও ছায়াছবির জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে পরিচিতি পেলেও, পরে শুধুমাত্র নজরুলগীতিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন। [২]
সুপ্রভা সরকার | |
---|---|
জন্ম | ভবানীপুর, কলকাতা বৃটিশ ভারত | ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯১৯
মৃত্যু | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ | (বয়স ৬৯)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | সঙ্গীতশিল্পী |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুধীরচন্দ্র সরকার (বি.১৯৪২) |
সন্তান | ২ পুত্র |
পিতা-মাতা | উপেন্দ্রনাথ ঘোষ (পিতা) চম্পকনলিনী ঘোষ (মাতা) |
পুরস্কার | নজরুলসংঙ্গীত অ্যাকাডেমি পুরস্কার |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাসুপ্রভা সরকার (বিবাহের পূর্বে সুপ্রভা ঘোষ) বৃটিশ ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উপেন্দ্রনাথ ঘোষ এবং মাতা চম্পকনলিনী ঘোষ দুজনেই ছিলেন সঙ্গীতপ্রেমী। [৩] পিতা সেতার বাজাতেন এবং মাতা ভক্তিমূলক গান গাইতেন। স্থানীয় স্যার রমেশমিত্র গার্লস স্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে তার মায়ের কাছে প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা। তবে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় ধ্রুপদিয়া শিশির গুহর কাছে এবং তারপর তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গল্পদাদুর আসরে অংশ গ্রহণ করেন ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে।
সঙ্গীতজীবন
সম্পাদনাসুপ্রভা সরকারের প্রথম গানের রেকর্ড করে সেনোলা মিউজিক্যাল নামের এক গ্রামোফোন কোম্পানি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে। গান দুটি ছিল - গীতিকার হাসিরাশি দেবীর 'যদি স্বপন ভাঙ্গে আজি নয়ন জলে' এবং বটকৃষ্ণ দে'র 'আলোর দেশের বন্ধু হে মোর'। দুটি গানেরই সুরকার ছিলেন নিতাই ঘটক। সেনোলায় তিনি জগৎ ঘটক, নবেশ্বর ভট্টাচার্যের কথায় এবং উমাপদ ভট্টাচার্যের সুরে ভজন, শৈলেন রায়ের কথায় কীর্তন গান রেকর্ড করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে 'হিন্দুস্থান রেকর্ড' কোম্পানির শিল্পী হিসাবে তিনি কৃষ্ণচন্দ্র দে, হিমাংশু দত্তের সুরে আধুনিক কাব্যসংগীত গেয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি ষোল বৎসর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসেন এবং ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রেকর্ডে প্রকাশিত প্রথম নজরুল গীতি কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ধরনের গানে তাঁর সমান দক্ষতা থাকলেও মূলত নজরুল গীতির শিল্পী হিসাবেই তাঁর সমধিক প্রসিদ্ধি। আকাশবাণী কলকাতার মহালয়া উপলক্ষে বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান - মহিষাসুরমর্দিনী -তে শুরু থেকেই অংশ নেন। দূরদর্শনের সঙ্গেও তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। জীবনের শেষের দিকে তিনি আকাশবাণীতে নজরুলগীতি র প্রশিক্ষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়ার উৎসাহে তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্যে কণ্ঠ দান শুরু করেন এবং ত্রিশ দশকের শেষার্ধ পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বাগ্রগণ্য নেপথ্যগায়িকা ছিলেন। নিউ থিয়েটার্সের নীতিন বসু, দেবকী বসু, মধু বসু, হেমচন্দ্র প্রমুখের ছবিতেও তিনি গান করেছেন। নীতিন বসু পরিচালিত ও রাইচাঁদ বড়াল সুরারোপিত ভাগ্যচক্র ছবিতে প্রথম সার্থকভাবে প্লে-ব্যাক পদ্ধতিতে যে গান টি ব্যবহৃত হয়, সমবেত কণ্ঠের 'মোরা পুলক যাচি...' গানটিতে অন্যতম কণ্ঠ ছিল সুপ্রভা সরকারের। [২] সুপ্রভা সরকারের নানা ধরনের গানের রেকর্ড সংখ্যা প্রায় পাঁচ শত। চলচ্চিত্রের বিশেষ জনপ্রিয় গানগুলি ছিল -
- কভু যে আশায়, কভু নিরাশায় ('জীবনমরণ' ছায়াছবি)
- হে অজানা এবং তু শক্তি দে দে মাতা ('স্বয়ংসিদ্ধা' ছবি)
- রাধাশ্যাম যেথা করে খেলা ('রাজনর্তকী' ছবি)
- গানের সুরে জ্বালবো তারার দীপগুলি ('স্বপ্ন ও সাধনা' ছবি)
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইনজীবী সুরীরচন্দ্র সরকারকে বিবাহ করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ধ্রুপদী সঙ্গীতে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সঙ্গীত জগতে নবীন প্রতিভার উত্থানে তাদের যথাযথ স্থান করে দিতে ধীরে ধীরে নিজে রেকর্ড জগতের বাইরে আসেন এবং প্রশিক্ষকের স্থান নেন। সুরতীর্থ বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। এরপরে বারো বৎসর তিনি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সঙ্গীতের অধ্যাপক ছিলেন। সঙ্গীত মহলে তিনি 'বড়দি' আখ্যায় পরিচিত ছিলেন। তিনি নজরুল সঙ্গীত আকাডেমির পুরস্কার লাভ করেন। [১]
জীবনাবসান
সম্পাদনা১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৫০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ অভীক চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক (২০১৯)। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আনন্দধারা। সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৯৬। আইএসবিএন 978-93-8270-654-0।
- ↑ "সুপ্রভা সরকার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]