সাহারা খাতুন
সাহারা খাতুন (১ মার্চ ১৯৪৩ - ৯ জুলাই ২০২০[৩]) ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আইনজীবী যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪] তিনি নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।[৫] শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি আওয়ামী লীগের আইন সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[৬]
সাহারা খাতুন | |
---|---|
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় | |
কাজের মেয়াদ ১৫ সেপ্টম্বর ২০১২[১] – ২১ নভেম্বর ২০১৩[২] | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | রাজুদ্দিন আহমেদ রাজু |
উত্তরসূরী | রাশেদ খান মেনন |
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | |
কাজের মেয়াদ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ – ১৫ সেপ্টম্বর ২০১২ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
উত্তরসূরী | মহিউদ্দীন খান আলমগীর |
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮ | |
কাজের মেয়াদ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ – ৯ জুলাই ২০২০ | |
উত্তরসূরী | মোহাম্মদ হাবিব হাসান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কুর্মিটোলা, ঢাকা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) | ১ মার্চ ১৯৪৩
মৃত্যু | ৯ জুলাই ২০২০ ব্যাংকক বামুনগ্রাড হাসপাতাল | (বয়স ৭৭)
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
পেশা | আইনজীবী, রাজনীতিবিদ |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাসাহারা ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন।[৭] তার পিতা-মাতা হলেন যথাক্রমে, আব্দুল আজিজ ও টুরজান নেসা। তিনি বি.এ এবং এল.এল. বি ডিগ্রী আর্জন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক মহিলা আইনজীবী সমিতি ও আন্তর্জাতিক মহিলা জোটের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাসাহারা খাতুন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ এর সংসদ সদস্য ছিলেন।[৫] তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৪][৮]
সাহারা খাতুন ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িত হন। ১৯৯১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তবে তিনি সেই নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিকট পরাজিত হন। ২০০৭-৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি আবারও রাজনীতির দৃশ্যপটে আসেন। শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ে অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাহারা খাতুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাহারা নিজে রাজনৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।[৯]
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৮ হতে নির্বাচিত হন। তিনি আনন্দিত হয়ে জনগণকে তার দেয়া প্রতিশ্রুতি; সড়ক পুননির্মাণ ও ড্রেন সংস্করণের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন।[৪][৫][৭] তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনোনীত হন।[৪] তিনি ৬ ই জানুয়ারি ২০০৯ সালে তার দফতরে প্রবেশ করেন।[১০] ২০১২ সালে মন্ত্রণালয়ের রদবদল ঘটলে তিনি বাংলাদেশ সরকার এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৮] তিনি পুনরায় ঢাকা-১৮ আসন থেকে ২০১৪ সালের ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন।
বিডিআর বিদ্রোহ
সম্পাদনা২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বিদ্রোহী জওয়ানদের আলোচনায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং অস্ত্র সমর্পণে রাজি করাতে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের সদরের প্রবেশ করেন।
এ বিদ্রোহের ঘটনার ফলে ৫৩ জন সেনা কর্মকর্তা ও ৩ জন সেনা পরিবারের সদস্য নিহত হয়।[১১]
এই সময়ে বাংলাদেশ রাইফেলএর অন্তত সাড়ে ছয় হাজার সদস্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। সাহারা খাতুন বিডিআর গণহত্যায় তার ব্যর্থতার জন্য বিশেষভাবে নিন্দিত হন।[১২] সরকারের হেফাজতে থাকাকালীন গ্রেপ্তারকৃত বিদ্রোহীদের অনেকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তার মন্ত্রণালয় সমালোচিত হয়।
মৃত্যু
সম্পাদনা৯ই জুলাই ২০২০ সালে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১৩] এর আগে তিনি চলতি বছরের ২রা জুন বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে ঢাকার গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Liton, Shakhawat; Hasan, Rashidul (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "MKA replaces Shahara"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "28 ministers out, effectively"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ নভেম্বর ২০১৩। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "আ.লীগ নেতা সাহারা খাতুন আর নেই"। প্রথম আলো। ১০ জুলাই ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ "About Honourable Minister"। Ministry of Home Affairs (ইংরেজি ভাষায়)। MHA। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ গ "১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য তালিকা"। জাতীয় সংসদ। ২০১৯-০৯-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ - কেন্দ্রীয় কমিটি"। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ "Profile of Ministers"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ "Minister Message"। Ministry of Posts & Telecommunications (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Kumar, Anand (১৮ এপ্রিল ২০০৭)। "Bangladesh: Caretaker Government Targets Dynastic Politics"। ১৩ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "The President appointed Sheikh Hasina as the Prime Minister"। Bangabhaban। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Manik, Julfiker Ali (৩ মার্চ ২০০৯)। "6, not 72, army officers missing"। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "রহস্য উদ্ঘাটন ছাড়াই চলছে বিচার\ ৬০ মামলায় অভিযুক্ত সাড়ে ৬ হাজার"। দৈনিক সংগ্রাম। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ৯ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২০।
- ↑ "আ.লীগ নেতা সাহারা খাতুন আর নেই"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২০।