সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৮৮২ সালে।[১]

সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়
বিদ্যালয়ের মূল ভবন
অবস্থান
মানচিত্র
নিশ্চিন্তপুর,

,
নলডাঙ্গা–৭৩৫০,

স্থানাঙ্ক২৩°২৪′২৫″ উত্তর ৮৯°০৮′১৮″ পূর্ব / ২৩.৪০৭০৫০৭° উত্তর ৮৯.১৩৮২৩১১° পূর্ব / 23.4070507; 89.1382311
তথ্য
ধরনসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
নীতিবাক্যপড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন
প্রতিষ্ঠাকাল১ জানুয়ারি ১৮৮২; ১৪২ বছর আগে (1882-01-01)
অবস্থাসক্রিয়
বিদ্যালয় বোর্ডযশোর বোর্ড
বিদ্যালয় জেলাঝিনাইদহ জেলা
সেশনজানুয়ারি–ডিসেম্বর
বিদ্যালয় কোড১১৬৫৬৭
প্রধান শিক্ষকমোঃ মকবুল হোসেন
অনুষদবিজ্ঞান, মানবিক,ব্যবসায় ও কারিগরি(ভকেশনাল) শিক্ষা
শিক্ষকমণ্ডলী৩৮
কর্মচারী
শ্রেণী৬ষ্ঠ–১০ম
লিঙ্গবালক, বালিকা
  • বর্তমানে শুধু ছেলেদের ভর্তি পরীক্ষায় নেওয়া হয়
শিক্ষার্থী সংখ্যা১০০০+
ভাষাবাংলা
শিক্ষায়তন৪.২৫ একর
ক্যাম্পাসের ধরনশহুরে
রংসাদা, নেভী ব্লু এবং নীল             
ডাকনামভূষণ স্কুল
ওয়েবসাইটwww.nbpss.edu.bd

ইতিহাস সম্পাদনা

অত্র বিদ্যালয়টি সর্ব প্রথম ইং ১৮৬৯ সালের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তরে নলডাঙ্গা রাজবাড়ীতে রাজবংশের ক্রীর্তিমান পুরুষ রাজা ইন্দু ভূষণ দেবরায় কর্তৃক "মিডিল ইংলিশ স্কুল" রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীকালে রাজপুত্র রাজা বাহাদুর প্রমথ ভূষণ দেবরায় কর্তৃক ইং ১৮৮২ সালে এটিকে "ইংলিশ হাই স্কুল" রূপে গড়ে তোলা হয়।

ঝিনাইদহ জেলার তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক মি: সি.কে গাংগুলী সর্ব প্রথম বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন । ১৮৮৩ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী যশোরের মাননীয় জেলা প্রশাসক ও কালেক্টর মি: বেইটন পরিদর্শনে আসেন। এই বিদ্যালয় হইতে সর্ব প্রথম ইং ১৮৮৮ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেওয়া হয় এবং ২ জনের মধ্যে ১ জন কৃতকার্য হয়। তখন সর্বমোট ছাত্র সংখ্যা ছিল ৭৯ জন এবং সমস্ত ছাত্র ও শিক্ষক হিন্দু ছিলেন । ক্রমান্বয়ে স্কুলটি ইং ১৯০৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থায়ীভাবে মঞ্জুরী লাভ করে, যার মেমো নং ২০৭৬ তাং ০২/১১/১৯০৯ইং।

১৯১৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন মুসলমান ছাত্র বা শিক্ষক না থাকায় প্রেসিডেন্সি বিভাগের মাননীয় বিভাগীয় পরিদর্শক খান বাহদুর আহসান উল্লাহ বিদ্যালয পরিদর্শন কালে গভীর দু:খ প্রকাশ করেন। ফলে তখন হতে ধর্মীয় শিক্ষক হিসাবে মুসলমান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।

কালক্রমে রাজা বাহাদুরের কলিকাতায় প্রস্থানের পর নলডাঙ্গা রাজবাড়ীস্থ অত্র বিদ্যালয়টি অচলাবস্থ হয়। এই সময় রাজা বাহাদুরের অনুমতিক্রমে কালীগঞ্জের বেশ কিছু শিক্ষা অনুরাগী গণ্যমান্য ব্যাক্তির প্রচেষ্টায় ইং ১৯৩৫ সালে অত্র বিদ্যালটি কালীগঞ্জ থানা সদর দপ্তরে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।

১৯৩৬ সালে রাজা ৫ম জুবিলী উৎসব পালন উপলক্ষে বলিদাপাড়ার প্রখ্যাত কবিরাজ মহেন্দ্রনাথ সরকার স্কুল সংলগ্ন বিরাট খেলার মাঠটির জন্য ৩.৪১ একর জমি দান করেন।

স্কুলটি আস্তে আস্তে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে এবং ১৯৫৬ সালে বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শকের সুপারিশক্রমে সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সাল হতে সরকারী মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয়।

১৯৬২/৬৩ অর্থ বৎসরে দ্বিমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার অধীনে স্কুলের ভবন নির্মানের জন্য ৫৬,০০০/- মঞ্জুরী লাভ করা হয়। পুন: ১৯৬৫/৬৬ অর্থ বৎসরে বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিদ্যালয়টি ৬৬,৮০০/- মঞ্জুরী লাভ করে। তখন হইতে সরকারী অনুমতিক্রমে বিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান, কৃষি, বাণিজ্য ও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল আর্ট সহ সর্বমোট ৫টি শাখা চালু করা হয় এবং ছাত্র সংখ্যা ৮০০ তে উন্নীত হয়।

অত্র বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে। এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এই বৎসরের জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসাবে সরকারী স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছেন ।

১৯৪৫ সালে থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশীনাথ দত্ত নলডাঙা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি দেশত্যাগ করলে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত পদটি শূন্য থেকে যায়। তদানীন্তন প্রধান শিক্ষক কালীপদ কাঞ্জীলাল পদাধিকার বলে সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে বিশিষ্ট্য সমাজসেবী বিদ্যানুরাগী ডা. এস,এম,এ, করিম সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত হন।

তিনি দীর্ঘ ১৭ বছন এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেছেন মরহুম নূর আলী মিয়া, আব্দুল ছাত্তার মিয়া, এডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল মান্নান (এম,পি), আলহাজ্ব এম, শহীদুজ্জামান বেল্টু (এম,পি) প্রমুখ ব্যক্তি। তারপর বিদ্যালয়টি পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে পরিচালনা করেছেন জাতীয় সংসদ সদস্য ঝিনাইদহ-৪, কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায়-৮৪ সংসদ সদস্য জনাব আনোয়ারুল আজীম আনার।

উল্লেখ্য, স্কুলটির সার্বিক গুণগত মানের উৎকর্ষে সন্তুষ্ঠ ও প্রীত হয়ে ইং ১৯৬৯ সনে তদানীন্তন সরকার স্কুলটি জাতীয় করণের লক্ষে যাবতীয় কাগজপত্র ও দানপত্র গ্রহণ করেন। এবং পরবর্তী ইং ১৯৭৯ সনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সরকারী করণের লক্ষে যাবতীয় কাগজপত্র গ্রহণ করেন। ইং ১৯৯২ সনে সরকারী করণের লক্ষে যাবতীয় কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা প্রদান করা হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় স্কুলটি জাতীয় করণ হয়নি। বর্তমান সরকারের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব আনোয়ারুল আজীম আনার -৮৪ ঝিনাইদহ-৪ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী তারিখ হইতে জাতীয় করণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টির নাম সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়।[২]

শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনা

বিদ্যালয়টিতে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই অধ্যয়নের সুযোগ থাকলেও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শুধুমাত্র ছেলেদের শিক্ষাদান করা হয়।

ইউনিফর্ম সম্পাদনা

  • ছেলেদের সাদা শার্ট     , নেভি ব্লু প্যান্ট     , সাদা কেডস্      এবং কালো বেল্ট     
  • মেয়েদের নীল কামিজ     , কামিজের উপর সাদা ক্রস বেল্ট     , কোমরে সাদা বেল্ট     , সাদা অ্যাপ্রোন      এবং সাদা কেডস্     

ফলাফল সম্পাদনা

বিদ্যালয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পাশের হারের তালিকাঃ[৩]

সাল পরীক্ষার নাম পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ পাশের হার
২০১৯ এসএসসি ১৬৫ ১৬১ ৯৭.৫৮
২০২০ এসএসসি ১৩৩ ১৩১ ৯৮.৫০
২০২১ এসএসসি ১১৮ ১১৮ ১০০
২০২২ এসএসসি ১৪৩ ১৪৩ ১০০
২০২৩ এসএসসি ১৪২ ১৩৭ ৯৬.৫

অবকাঠামো সম্পাদনা

বিদ্যালয়টিতে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি মডেল ভবন এবং আরেকটি ফ্যাসিলিটিজ ভবন আছে।

 
সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন
  • প্রশাসনিক ভবন : এটির নিচতলায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং বৃহৎ হল রুম বিদ্যমান। পূর্বে এটির উপরতলা শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও দীর্ঘ এবং পূরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমান ক্লাস নেওয়া হয়না।তবে এখানে স্কাউট দলের মিলনায়তন অবস্থিত।
  • মডেল ভবন :এখানে ১ম ও ২য় তলা ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির ক্লাস রুম হিসেবে এবং ৩য় তলা কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।
 
সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফ্যাসিলিটিজ ভবন
  • ফ্যাসিলিটিজ ভবন: এখানে নিচতলায় বিশাল লাইব্রেরি এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যাবস্থা এবং একটি নামাযের ঘর আছে এবং ২য় তলায় ৯ম ও ১০ম শ্রেণির পাঠদান করা হয়।

এছাড়াও বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে একটি বৃহৎ অডিটোরিয়াম এবং কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংগঠনের কার্যালয় অবস্থিত।

ল্যাবরেটরি সম্পাদনা

বিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য রয়েছে ল্যাব। এসব ল্যাবে বহু মূল্যবান যন্ত্রপাতি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য এসব উপকরণ ব্যবহৃত হয়।

গ্রন্থাগার সম্পাদনা

বিদ্যালয়টিতে রয়েছে বিশাল একটি গ্রন্থাগার। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নামী-দামী কয়েক হাজার বই। শিক্ষার্থীরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বসে পড়তে পারে এবং তাদের পছন্দের বই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে পারে।

খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

 
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষকগণ

শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য মাঠ রয়েছে, যা মূল ভবনের সামনেই অবস্থিত। মাঠটি বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তঃশ্রেণী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বছরজুড়েই বিদ্যালয়ে নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পালন করা হয়। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতির জনকের জন্মদিন ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয়। বর্ষবরণ, বাসন্তী উৎসব ইত্যাদি নানা রকম অনুষ্ঠান শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্মিলিতভাবে পালন করে। এছাড়াও প্রতি বছরই আয়োজিত হয় শিক্ষা সফর।

সহশিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনা

সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়।

ক্লাব কথন সম্পাদনা

  1. আইসিটি ক্লাব
  2. বিজ্ঞান ক্লাব
  3. বিতর্ক ক্লাব
  4. সংগীত ও নাট্য ক্লাব

অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনা

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "পরিক্রমা, সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়"nbpss.edu.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪ 
  2. http://www.nbpss.edu.bd/SMS/InstituteHistory/Show
  3. "ফলাফল"banbeis.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪