বর্ষবরণ বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিনে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগতম জানানোর জন্য অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ উৎসব । ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার নানা আয়োজন ৷ রমনা বটমূলে ছায়ানট কেন্দ্রীয়ভাবে বর্ষবরণের আয়োজন করে থাকে। তবে নববর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামের প্রতিটি অঞ্চলে৷ এটি বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

বর্ষবরণ উৎসব
পালনকারীবাঙালি জাতি
ধরনঅসাম্প্রদায়িক
তাৎপর্যজাতিগত
পালনবাংলাদেশ
তারিখ১৪ই এপ্রিল
সংঘটনবার্ষিক

রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সম্পাদনা

 
রমনা পার্কের রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান

প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা পার্কের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। সংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট এটি আয়োজন করে। ছায়ানট ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখ (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ) থেকে এখানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করে আসছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাদে অদ্যাবধি এই উৎসব হয়ে আসছে। বর্তমানে এটি জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। আপামর জনসাধারণ পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা বটমূলে এসে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়।[১]

ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পাদনা

বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে, সবাইকে নিয়ে পয়লা বৈশাখের আনন্দ ভাগাভাগির উৎসবের কেন্দ্রে থাকে  ছায়ানটের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ সংগীত ও মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছায়ানটের যাত্রা, বাংলার মানুষকে সাংস্কৃৃতিক মুক্তিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। ছায়ানট বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৬১ সালে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করা ছাড়াও এ সংগঠন বাদ্যযন্ত্র, সংগীত, নৃত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও সংগীত বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকে। পয়লা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ রমনার বটমূলে ছায়ানটের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপনের পর একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগেই এর যাত্রা। মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই নামে পরিচিত), শামসুন্নাহার রহমান, সুফিয়া কামাল, ওয়াহিদুল হক ছিলেন উদ্যোগের পেছনে।

সাঈদুল হাসানের প্রস্তাবে সংঠনটির নামকরণ করা হয় ছায়ানট। সুফিয়া কামালকে সভাপতি আর ফরিদা হাসানকে সম্পাদক করে প্রথম কমিটি গঠিত হয়। ওই বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠান পুরনো গানের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালে সনজীদা খাতুনের উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বারান্দায় সংগীত শেখার ক্লাস শুরু হয়।

ইংরেজি ১৯৬৪ সাল, বাংলা ১৩৭১ সনের ১ বৈশাখ রমনার বটমূলে ছায়ানট বাংলা নববর্ষ পালন শুরু করে। কালক্রমে এ নববর্ষ পালন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়ে। ছায়ানটের বর্ষবরণ গানে বাংলা নতুন বছরকে আহ্বানের মধ্যদিয়ে এখন নববর্ষের দিন শুরু করে নগরবাসী।

১৪০৮ বর্ষবরণে সন্ত্রাসী হামলা সম্পাদনা

বাংলাদেশে সংঘটিত একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এই নৃশংস হত্যাকান্ডটিতে ৯ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়।[২]২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে (বাংলা ১৪০৮ সনের পহেলা বৈশাখ) রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এই বোমা হামলাটি সংগঠিত হয়।

ঘটনার বিবরণ সম্পাদনা

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখ ছিলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন; বাংলা ১৪০৮ সনের পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছরের মতো সেবারও রমনার বটমূলে ছায়ানট কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।[৩] এই অনুষ্ঠানে গানের অনুষ্ঠান চলাকালীন বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনা স্থলে ৯ জন সাংস্কৃতিক কর্মী ও দর্শক প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হন আরো অগণিত মানুষ; পরবর্তীতে আরো একজন মারা যান। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেনঃ[৪]

  • চট্টগ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৩৫),
  • বরগুনার মোঃ জসীম (২৩),
  • ঢাকার হাজারীবাগের এমরান (৩২),
  • পটুয়াখালীর অসীম চন্দ্র সরকার (২৫),
  • পটুয়াখালীর মোঃ মামুন,
  • ঢাকার দোহারের আফসার (৩৪),
  • নোয়াখালীর ইসমাইল হোসেন ওরফে স্বপন (২৭),
  • পটুয়াখালীর শিল্পী (২০) ও
  • অজ্ঞাত একজন

মামলা ও তদন্ত সম্পাদনা

এই হত্যাকাণ্ডে ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। ২০০৮ সালে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায় এবং ১৬ এপ্রিল মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়।[৫]

বিচারকার্য সম্পাদনা

হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে নিম্ন আদালত রায় ঘোষণা করে। আদালতে রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। একইসঙ্গে কারাবন্দি আসামিরা আপিল করে। উভয় আবেদনের ওপর ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। আদালত বদল হওয়ায় শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।[৬] ২০২২ সালের ২১ মার্চ বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অনলাইন, চ্যানেল আই (২০১৬-০৪-১৩)। "৫০ বছরে চেতনার বাতিঘর রমনা বটমূল"চ্যানেল আই অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৩ 
  2. "রমনায় বোমা হামলার মামলা থমকে আছে"dw.com/bn 
  3. "রমনা বটমূলে হুজির বোমা হামলার রায় ১৬ই জুন"dw.com/bn 
  4. "ফাঁসি ৮ জনের যাবজ্জীবন ৬"jugantor.com 
  5. Pratidin, Bangladesh (২০১৮-০৪-১৪)। "বিচার হয়নি রমনা বটমূল হামলার"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৩ 
  6. "রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলা : ছয় বছর ধরে ঝুলছে হাইকোর্টে"kalerkantho.com। ২০২০-০৪-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৩ 
  7. রমনার বটমূলে বোমা হামলা: বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ২২ মার্চ ২০২২