সরকারি আজিজুল হক কলেজ
সরকারি আজিজুল হক কলেজ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই কলেজ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[১]
![]() | |
নীতিবাক্য | মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে-মানবতার সেবক হও |
---|---|
ধরন | সরকারি কলেজ |
স্থাপিত | ১৯৩৯ |
অধ্যক্ষ | প্রফেসর খোন্দকার কামাল হাসান |
উপাধ্যক্ষ | প্রফেসর ড. মোঃ সবুর উদ্দিন |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ২০৭ জন |
ঠিকানা | কামারগারি , , |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে |
অধিভুক্তি | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় |
ওয়েবসাইট | ahcollege |
![]() |
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/c8/Old-Building-of-Azizul-Haque-College.jpg/220px-Old-Building-of-Azizul-Haque-College.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/e/e9/Govt_Azizul_Haque_College_B.jpg/220px-Govt_Azizul_Haque_College_B.jpg)
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল বগুড়ায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খাঁন বাহাদুর মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি এবং মৌলভী আব্দুস সাত্তারকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কলেজটি ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।[২] অবিভক্ত বঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্যার আজিজুল হক এর নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনি সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য ছিলেন; সরকারি স্কুলে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি থেকে বাংলায় চালু, প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনাকে অ্যাক্টে পরিণত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠা (১৯৪০), শিক্ষা সপ্তাহ পালন কর্মসূচি প্রবর্তন, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার মহাজনী বিল ও প্রজাস্বত্ব আইন উপস্থাপন তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি।কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ড. এম.এম. মুখার্জি (আগস্ট ১৯৩৯- সেপ্টেম্বর ১৯৩৯) এবং প্রথম উপাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রী এস.পি সেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের প্রাক্কালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষপঞ্জিতে ২১৬ টি অধিভুক্ত কলেজের তালিকা প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে সাতাশটি কলেজ ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, বর্তমান বাংলাদেশে। এগুলোর মধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রধান ও শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয় বর্তমান এই কলেজ আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া (১৯৪১)। কলেজের যাত্রা শুরুর প্রায় দুই বছর পর্যন্ত কলেজের ক্লাস অস্থায়ীভাবে সুবিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বর্তমান) নেয়া হয়। পরবর্তীতে এটি ফুলবাড়ি বটতলাতে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়।
শিক্ষাব্যবস্থার ক্রম-বিকাশ
সম্পাদনাকলেজের যাত্রার শুরুতে কেবলমাত্র আই-এ শ্রেণী চালুর অনুমতি পায়। শুরুতে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী ছিল কোন ছাত্রী ছিল না। প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া তারা হলেন মোজাম পাইকার, আমীর আলী, শফিকুর রহমান, আব্দুল মালেক নূরুল ইসলাম ভোলা প্রমুখ।’’ ১৯৪১ সালে কলেজের প্রথম ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ১৫২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০৭ জন পরীক্ষায় পাশ করে। এর মধ্যে প্রথম বিভাগে ০৮ জন, দ্বিতীয় বিভাগে ৬৪ জন এবং তৃতীয় বিভাগে ৩৫ জন পাশ করে। পাশের হার ছিল ৬৯.২%। অথচ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হার ছিল ৬৩.৪%।
প্রতিষ্ঠালগ্নে আই.এ. শ্রেণীতে বাংলা (সাধারণ), বাংলা (২য় ভাষা), ইংরেজি (আবশ্যিক), ইংরেজি (অতিরিক্ত), ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, যুক্তিবিদ্যা, পৌরনীতি, সাধারণ গণিত, আরবি/ ফার্সি বিষয়গুলো পড়ানোর অনুমতি পেয়েছিল। সেসময় যারা কলেজের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা হলেন ইংরেজি- শ্রী কে. সি. চক্রবর্ত্তী, সংস্কৃত ও বংলা- শ্রী প্রভাত চন্দ্র সেন এম.এ.বি.টি, আরবী ও ফার্সী- মোঃ আব্দুল গফুর, গণিত- শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র চাকী এম.এ, ইতিহাস- শ্রী এস.পি সেন বি.এ (সম্মান) লন্ডন, যুক্তিবিদ্যা- মোঃ ফজলুর রহমান এম.এ, পৌরনীতি- মোঃ আকবর কবির এম.এ। প্রতিষ্ঠাকালে কলেজে ছাত্রী ছিলনা, এটা সত্য হলেও ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। জানা যায় ১৯৪৩ সাল থেকে কলেজে ছাত্রী ভর্তি শুরু হয় এবং এই সংখ্যা ছিল ৮ থেকে ১২ জন। পরবর্তীতে এই সংখ্যা কিছু বৃদ্ধি পায়। এরপর ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রীরা সকালের শিফটে বর্তমান ভি.এম গার্লস স্কুলে ক্লাশ করত। ঐ বৎসরই কলেজে সহ শিক্ষা চালু হলে এই প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটে, উজ্জীবিত হয় শিক্ষার মহৎ ও মানবিক উদ্দেশ্য, এতদিন যা সম্প্রদায়িকতার রোষানলে পরে পদদলিত হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠার মাত্র ২ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৪১ সালে কলেজে, অর্থনীতি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে দু’বছর মেয়াদী সম্মান শ্রেণী ও বি.এ পাস কোর্স চালুর অনুমতি লাভ করে। ড. কে. এম ইয়াকুব আলীর মতে, ‘তদানীন্তন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এটিই প্রথম কলেজ যেখানে সেসময় সম্মান শ্রেণী চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।’ কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতা ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে কলেজ পরিচালনা কমিটি শুধুমাত্র ইসলামের ইতিহাস বিভাগে সম্মান এবং বি.এ পাস কোর্স চালু করেন। এরপর ১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষ হতে কলেজটি বাংলা এবং আরবি বিভাগে সম্মান ও আই.কম শ্রেণী চালুর অনুমতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে কলেজটি আইনত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হয়ে পরে। প্রশাসনিক জটিলতার অজুহাতে সেসময় কলেজে সম্মান শ্রেণী পরিত্যক্ত হয়, এবং আই.এস.সি. শ্রেণী (পদার্থ, রসায়ন, অঙ্ক) চালুর অনুমতি পায়। আই.এস.সি. শ্রেণীতে বায়োলজি বিষয় অমত্মর্ভূক্ত হয় ১৯৪৮-৪৯ শিক্ষাবর্ষে। এর কিছুকাল পরে ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হয় এবং আরবী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে তিন বছর মেয়াদী সম্মান শ্রেণী চালু করা হয়। সরকারিকরণের পর কলেজে বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে সম্মান পড়ানোর পাশাপাশি বি.এ,বি.কম, বি.এস.সি, আই.এ, আই.কম, আই.এস.সি চালু হয়। ১৯৭২-৭৩ সালে সম্মান কোর্সে বাংলা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আরবি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, গণিত ও হিসাববিজ্ঞান চালু হয়। মাস্টার্স কোর্স অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান চালু করা হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে মাস্টার্স ও সম্মানে যথাক্রমে ৩১৭ ও ৬১৮ সহ মোট ৩,৭৮৭ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। শিক্ষক ছিলেন ৯০ জন।-
-
বর্তমানে মার্কেটিং ও ফিনান্স নতুন করে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। উত্তর বঙ্গে একমাত্র কলেজ হিসেবে এই কোর্সে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। মার্কেটিং এ নিয়মিত মাস্টার্স সিট সংখ্যা ১০০ জন এবং অনিয়মিত বা প্রাইভেট মাস্টার্স সিট সংখ্যা ৪০০ জন। অনার্স সিজিপিএ এর মাধ্যমে আসন সংখ্যা নির্বাচন করা হয়।
বিভাগ সমূহ
সম্পাদনা- বিজ্ঞান অনুষদঃ
- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
- রসায়ন বিভাগ
- গণিত বিভাগ
- উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
- প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
- পরিসংখ্যান বিভাগ
- মনোবিজ্ঞান বিভাগ
- ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ [৩]
- কলা অনুষদঃ
- বাংলা বিভাগ
- ইংরেজি বিভাগ
- ইসলাম শিক্ষা বিভাগ
- আরবি বিভাগ
- ইতিহাস বিভাগ
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
- দর্শন বিভাগ
- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদঃ
- অর্থনীতি বিভাগ
- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
- সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
- সমাজকর্ম বিভাগ
- ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদঃ
- হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
- ব্যবস্থাপনা বিভাগ
- ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ
- মার্কেটিং বিভাগ
অবকাঠামো
সম্পাদনাকলেজের পুরাতন ক্যাম্পাসে ৯টি শ্রেণী কক্ষ, ৪টি গবেষণাগার, ১টি গ্রন্থাগার, অফিস, ছাত্র-ছাত্রী বিশ্রামাগার, বি,এন,সি,সি ভবন, দ্বিতল মসজিদসহ ৫টি ভবন রয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসে ১টি ত্রিতল বিশিষ্ট কলা ভবন, ১টি ৪তলা বিজ্ঞান ভবন, ১টি ৫তলা কমার্স ভবন এবং ১টি দ্বিতল গ্রন্থাগার রয়েছে। ১টি দ্বিতল অধ্যক্ষ ভবন, ১টি ছাত্র সংসদ ভবন, ১টি দ্বিতল মসজিদ, ১টি রোভার্স স্কাউট ভবন, একটি শহীদ মিনার এবং ১টি খেলার মাঠ রয়েছে। শ্রেনীকক্ষ- ৭১, লাইবেরীকক্ষ -৭, গবেষণাগার-১৮
ছাত্রাবাস
সম্পাদনাকলেজের নতুন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য * তিতুমীর হল, * শের-ই-বাংলা হল ও * শহীদ আকতার আলীমুন হল নামে ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল নামে ১টি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া পুরাতন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য ফখরুদ্দিন আহমদ হল নামে একটি হল রয়েছে।
লাইব্রেরী
এখানে প্রায় ২২,০০০ পুস্তক সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার রয়েছে। লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বিদ্যমান। সুবিশাল এই লাইব্রেরীতে একাডেমিক বইয়ের ছাড়াও রয়েছে দেশী ও বিদেশী সাহিত্য।
সংগঠন
সম্পাদনা- রাজনৈতিক
- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
- সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট
- স্বেচ্ছাসেবক
-রোভার স্কাউট,
-বি.এন.সি.সি,
-রেডক্রিসেন্ট,
-বাঁধন,
-Team for Energy and environmental research (TEER)
শিক্ষার্থী সংগঠন
*ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব (এফবিসিসি )
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক
সম্পাদনা- শিক্ষক
- মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক
- সৈয়দ মুজতবা আলী, বাঙালি সাহিত্যিক
- অধ্যাপক ড. মছির উদ্দিন, সরকারি আযিযুল হক কলেজ-এর অধ্যক্ষ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Bogra, Hasibur Rahman Bilu (২০১২-০২-০১)। "Bogra Azizul Haque college beset with manifold problems"। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৬।
- ↑ "Banglapedia"। ৫ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ http://www.ahcollege.gov.bd/?page_id=93