শ্যাম মানেকশ’

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম ফিল্ড মার্শাল

ফিল্ড মার্শাল শ্যাম হোরামশিজি প্রেমজি "শ্যাম বাহাদুর" জামসেদজি মানেকশ' (৩রা এপ্রিল, ১৯১৪ - ২৭শে জুন, ২০০৮) পারস্য বংশোদ্ভূত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা। তিনি মূলত পারস্যের জরথুস্ত্রীয় ধর্মের অনুসারী ছিলেন যিনি শরণার্থী হিসেবে ভারতে এসেছিলেন। প্রায় ৪ দশকের দীর্ঘ সামরিক জীবনে তার অর্জন অনেক। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এ যুদ্ধে যৌথ বাহিনী জয়ী হয়, পাকিস্তান ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের উত্থান ঘটে।[২]

ফিল্ড মার্শাল

শ্যাম মানেকশ'

মিলিটারি ক্রস
ডাকনামশ্যাম বাহাদুর
জন্ম(১৯১৪-০৪-০৩)৩ এপ্রিল ১৯১৪
অমৃতসর, পাঞ্জাব
মৃত্যু২৭ জুন ২০০৮(2008-06-27) (বয়স ৯৪)
ওয়েলিংটন, তামিলনাড়ু
সমাধি
আনুগত্য ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 ভারত (১৯৪৭ সালের পর)
সার্ভিস/শাখা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী
 ভারতীয় সেনাবাহিনী
কার্যকাল১৯৩৪–১৯৭৩, ২০০৮ (আমৃত্যু ফিল্ড মার্শাল)[১]
পদমর্যাদা ফিল্ড মার্শাল
নেতৃত্বসমূহ পূর্ব কমান্ড
পশ্চিম কমান্ড
চতুর্থ কোর
ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ
পরিচালক, সামরিক অপারেশন
ইনফেন্ট্রি স্কুল,মাহো
ষোলতম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট
৫ গুর্খা রাইফেলস
৮ গুর্খা রাইফেলস
বারোতম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স‌ রেজিমেন্ট
রয়েল স্কাউটস
যুদ্ধ/সংগ্রামদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৪৭
ভারত-চীন যুদ্ধ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১
পুরস্কার পদ্মবিভূষণ
পদ্মভূষণ
মিলিটারি ক্রস
স্বাক্ষর

শ্যাম মানেকশ' ভারতের মাত্র দুইজন সামরিক কর্মকর্তার একজন, যারা সর্বোচ্চ সামরিক পদবী ফিল্ড মার্শাল অর্জন করেছেন। অন্যজন হলেন কোদানদেরা মদপ্পা কারিয়াপ্পা। প্রায় ৪ দশক সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। এর মধ্যে মোট চারটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন যার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩]

সেনা জীবন সম্পাদনা

১৯৩৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে শ্যাম ভারতীয় সেনা একাডেমীর মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন, তার সেনা কমিশন দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে নথিতে লিখা হয়েছিলো ১৯৩৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।[৪] শ্যাম কমিশন পেয়েছিলেন ১২তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের ৪র্থ ব্যাটেলিয়নে, কমিশন পাওয়ার পরেই তিনি তার ইউনিটে যোগ দিতে পারেননি, তাকে একটি ইংরেজ সেনাদলে (রয়্যাল স্কটস) কাজ শিখতে হয়েছিলো।[৫][৬][৭]

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজিত হলে শ্যামের রেজিমেন্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনী পেয়ে যায়, শ্যাম তখন ভারতীয় রেজিমেন্ট ৮ম গোর্খা রাইফেলসে যোগ দেবার আদেশ পান। ভারতের স্বাধীনতার আগে ১৯৪৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্যাম মেজর হন এবং তিনি সেনাবাহিনী সদর-দপ্তরের সামরিক অভিযান পরিদপ্তরে জেনারেল স্টাফ কর্মকর্তা ১ (জিএসও ১) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।[৮] ১৯৪৭ সালের শেষে শ্যাম ভারপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল হন এবং একটি ব্যাটেলিয়নের (৫ম গোর্খা রাইফেলসের ৩য় ব্যাটেলিয়ন) অধিনায়ক হন, ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে কর্নেল পদবীতে পদোন্নতি দিয়ে ১৬৭ ব্রিগেডের অধিনায়ক করা হয়।[৯] খুব শীঘ্রই তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার হন এবং এমহাউয়ের পদাতিক বিদ্যালয়ের আদেশদানকারী প্রধান কর্মকর্তা হয়ে যান। ১৯৫৭ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার থেকে প্রকৃত (স্থায়ী) ব্রিগেডিয়ার হন এবং ব্রিটেনে যান ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজে অধ্যায়ন করতে।[৯][১০]

দেশে ফিরে এসে ২০ ডিসেম্বর ১৯৫৭ তারিখে শ্যাম ভারপ্রাপ্ত মেজর-জেনারেল হিসেবে ২৬তম ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) নিযুক্ত হন।[১১] তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল কে এস থিমাইয়া। ১৯৫৯ সালের ১ মার্চ শ্যাম স্থায়ী মেজর-জেনারেল হন এবং স্টাফ কলেজ, তামিলনাড়ুতে প্রধান (আদেশদানকারী প্রধান কর্মকর্তা বা কমান্ড্যান্ট) হিসেবে যোগ দেন।[১২]

১৯৬২ সালে শ্যাম ভারপ্রাপ্ত লেঃ জেনারেল হয়ে ৪র্থ কোরের কোর-কমান্ডার হন যেটার সদর আসাম প্রদেশের তেজপুরে ছিলো।[১৩] চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের পর জেনারেল শ্যাম এই কোরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং সৈনিক সংখ্যা একেবারেই কম ছিলো এটা নিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধানের সাথে। ১৯৬৩ সালের ২০শে জুলাই শ্যাম স্থায়ী লেঃ জেনারেল হন।

১৯৬৯ সালে জেনারেল পরমশিব প্রভাকর কুমারমঙ্গল লেঃ জেনারেল শ্যামের নাম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেন যে শ্যাম খুব দক্ষ একজন সেনাপ্রশাসক এবং সৈনিক; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তার অবদানের কথা বলা হয় যেখানে শ্যাম আহত হয়েছিলেন; সেনাপ্রধান হবার পূর্বে শ্যাম পশ্চিম সেনা কমান্ডের কমান্ডার ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ৮ জুন ইন্দিরা গান্ধী শ্যামকে সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন।[১৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Indian military officers of five-star rank hold their rank for life, and are considered to be serving officers until their deaths.
  2. Sam Bahadur: A soldier's general ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-১০-২২ তারিখে, Times of India, 27 June 2008. Retrieved 30 June 2008.
  3. Gokhale, Nitin (৩ এপ্রিল ২০১৪)। "Remembering Sam Manekshaw, India's greatest general, on his birth centenary"NDTV। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  4. Singh 2005, পৃ. 188–189।
  5. Singh 2002, পৃ. 237–259।
  6. Saighal, Vinod (৩০ জুন ২০০৮)। "Field Marshal Sam Manekshaw"The Guardian। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৬ 
  7. Tarun, Vijay (৩০ জুন ২০০৮)। "Saluting Sam Bahadur"The Times of India। ২২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০০৮ 
  8. Singh 2005, পৃ. 192।
  9. "Part I-Section 4: Ministry of Defence (Army Branch)"। The Gazette of India। ২৪ মার্চ ১৯৫৬। পৃষ্ঠা 57। 
  10. "Part I-Section 4: Ministry of Defence (Army Branch)"। The Gazette of India। ১৫ জুন ১৯৫৭। পৃষ্ঠা 152। 
  11. "Part I-Section 4: Ministry of Defence (Army Branch)"। The Gazette of India। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮। পৃষ্ঠা 35। 
  12. "Part I-Section 4: Ministry of Defence (Army Branch)"। The Gazette of India। ১৯ মার্চ ১৯৬০। পৃষ্ঠা 65। 
  13. "Part I-Section 4: Ministry of Defence (Army Branch)"। The Gazette of India। ৫ জানুয়ারি ১৯৬৩। পৃষ্ঠা 2। 
  14. Singh 2005, পৃ. 201।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
পরমশিব প্রভাকর কুমারমঙ্গল
সেনাবাহিনী প্রধান
১৯৬৯–১৯৭৩
উত্তরসূরী
গোপাল গুরুনাথ বেউর