শোভা সিং (চিত্রশিল্পী)

ভারতীয় শিল্পী

শোভা সিং (২৯ নভেম্বর ১৯০১ - ২২ আগস্ট ১৯৮৬)[১] ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলের একজন শিল্পী।

শোভা সিং
২০০১ সালের ভারতীয় স্ট্যাম্পে শোভা সিং
জন্ম(১৯০১-১১-২৯)২৯ নভেম্বর ১৯০১
মৃত্যু২২ আগস্ট ১৯৮৬(1986-08-22) (বয়স ৮৪)
পি জি আই , চণ্ডিগড়
জাতীয়তাভারতীয়
আন্দোলনশোভা সিং আর্ট গ্যালারি, আন্দ্রেতা
পুরস্কারপদ্মশ্রী

জীবনের প্রথমার্ধ সম্পাদনা

সর্দার শোভা সিং ১৯০১ সালের ২৯ নভেম্বর পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার শ্রী হরগোবিন্দপুরে একটি শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দেব সিং ভারতীয় অশ্বারোহী বাহিনীতে ছিলেন। শোভা সিং ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একজন ড্রাফটসম্যান হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯২৩ সাল পর্যন্ত ইরাকে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন এবং সেই বছরেই অমৃতসরে তার নিজস্ব স্টুডিও খোলেন। লাহোর, প্রীত নগর, দিল্লি এবং বোম্বেতে থাকার পর শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের কারণে তিনি লাহোর ছেড়ে যেতে বাধ্য হন এবং আন্দ্রেতায় বসতি স্থাপন করেন কারণ । আন্দ্রেত্তা/ আন্দ্রেতা (পালমপুরের কাছে), হিমালয়ের পাদদেশে কাংড়া উপত্যকার একটি প্রত্যন্ত এবং স্বল্প পরিচিত গ্রাম কিন্তু শোভা সিং তার বিভিন্ন শৈল্পিক কাজের মাধ্যমে এই ছোট্ট গ্রামটিকে আন্তর্জাতিক শিল্প মানচিত্রে নিয়ে এসেছেন। শোভা সিংকে দারজি নামে ভালবেসে স্মরণ করা হয় এবং তার মেয়ে বিবি গুরচরণ কৌর, তার ছেলে ডঃ হৃদয় পল সিং এর সহায়তায়, আন্দ্রেতাকে শুধুমাত্র শিল্প উৎসাহীদের জন্যই নয়, তার কাজের অনুরাগীদের জন্য একটি চির-জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তরিত করেছে।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদনা

১৫ বছর বয়সে, শোভা সিং আর্ট এন্ড ক্রাফট (শিল্প ও নৈপুণ্যে) বিভাগে এক বছরের কোর্সের জন্য অমৃতসরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলে প্রবেশ করেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একজন ড্রাফটসম্যান হিসেবে যোগদান করেন এবং বাগদাদ, মেসোপটেমিয়া (বর্তমানে ইরাক ) এ কর্মদায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৩ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন এবং অমৃতসরে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি তার আর্ট স্টুডিও খোলেন। একই বছর বৈশাখীর দিনে তিনি বিবি ইন্দর কৌরকে বিয়ে করেন। তিনি অমৃতসর, লাহোর (১৯২৬) এবং দিল্লিতে (১৯৩১) তার যে স্টুডিও ছিল সেখান থেকে কাজ করেছিলেন।

১৯৪৬ সালে, তিনি লাহোরে ফিরে যান এবং আনারকলিতে তার স্টুডিও খোলেন এবং যখন তিনি দেশ ভাগের কারণে শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য হন সেইসময় একটি চলচ্চিত্রের শিল্প পরিচালক হিসাবে কাজ করছিলেন।[২] ১৯৪৯ সালে তিনি আন্দ্রেতা ( পালমপুরের কাছে), কাংড়া উপত্যকার একটি প্রত্যন্ত এবং তখন স্বল্প পরিচিত জায়গাতে বসতি স্থাপন করে, একজন চিত্রশিল্পী হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। এখন, শোভা সিং আর্ট গ্যালারি এবং যাদুঘরের কারণে এই জায়গাটি খুব পরিচিত। প্রয়াত শিল্পীর পরিবার চির-জনপ্রিয় 'গ্রো মোর গুড' কমপ্লেক্সে 'আর্টিস্ট রেসিডেন্সি' তৈরি করেছে।

 
ভারতের ২০০১ সালের পোস্টাল কভারে শোভা সিং এর আঁকা পেন্টিং

আন্দ্রেতাতে তাঁর ৩৯ বছর থাকার সময়কালে, এস শোভা সিং শত শত ছবি আঁকেন। তার প্রধান ফোকাস ছিল শিখ গুরু, তাদের জীবন ও কাজ। শিখ গুরুদের উপর তাঁর সিরিজগুলি এমন পরিমাণে আধিপত্য বিস্তার করেছে যে তাঁর চিত্রকর্মগুলি গুরু নানক দেব জি এবং গুরু গোবিন্দ সিং জি জনমানসে যেভাবে রয়েছেন সেই আদলকে প্রাধান্য দেয়। ১৯৬৯ সালে গুরু নানকের ৫০০ তম জন্মবার্ষিকীর সম্মানে তিনি যে প্রতিকৃতিটি তৈরি করেছিলেন তা বেশিরভাগ লোকেরা গুরু নানকের রূপ বলে বিশ্বাস করে। শোভা সিং অন্যান্য গুরুদের ছবিও এঁকেছিলেন, গুরু অমর দাস, গুরু তেগ বাহাদুর এবং গুরু হর কৃষ্ণের। তার আঁকা সোনি মহিওয়াল এবং হীর রাঞ্জাও খুব জনপ্রিয় ছিল। তিনি শহীদ ভগৎ সিং, কর্তার সিং সারাভা, মহাত্মা গান্ধী, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইত্যাদি জাতীয় বীর ও নেতাদের চিত্তাকর্ষক প্রতিকৃতিও এঁকেছেন।[৩] তাঁর ম্যুরালগুলি নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সংসদ ভবনের আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়। শিখ ইতিহাসের বিবর্তন চিত্রিত প্যানেলে গুরু নানককে একদিকে বালা এবং মারদানার সঙ্গে দেখানো হয়েছে; এবং অন্য দিকে ধ্যানরত গুরু গোবিন্দ সিং। শোভা সিং ভাস্কর্যের মধ্যেও কাজ করেছিলেন এবং কিছু বিশিষ্ট পাঞ্জাবি যেমন এমএস রান্ধাওয়া, পৃথ্বীরাজ কাপুর এবং নির্মল চন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি এবং পাঞ্জাবি কবি অমৃতা প্রীতমের একটি অসম্পূর্ণ আবক্ষ মূর্তি করেছিলেন। আন্দ্রেতার শোভা সিং আর্ট গ্যালারিতে তার মূলকাজের প্রদর্শনী করা হয়েছে। আন্দ্রেতায় তার স্টুডিও সাধারণ মানুষের জন্য খোলা। শোভা সিং ২২ আগস্ট ১৯৮৬ সালে চণ্ডীগড়ে মারা যান। আন্দ্রেতা (পালমপুর) শোভা সিং আর্ট গ্যালারির কারণে এত জনপ্রিয় যে পর্যটক সহ বিশ্বের অনেক গুনগ্রাহী তার শিল্প দেখতে আন্দ্রেতায় যান।

পুরস্কার সম্পাদনা

শোভাকে অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মান প্রদান করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৭৪ সালে পাঞ্জাব সরকারের রাজ্য শিল্পী এবং ১৯৮৩ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী [৪] পাতিয়ালা পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টর অফ লিটারেচার ( অনারিস কসা ) উপাধিতে ভূষিত করে। [৫]

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক তার জীবন ও কাজের উপর ভিত্তি করে পেইন্টার অফ দ্য পিপল নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনও ১৯৮৪ সালে তার উপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে। ভারত সরকার ২০০১ সালে শোভা সিংয়ের সম্মানে পোস্টাল স্ট্যাম্প জারি করে [৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ਰਛਪਾਲ ਸਿੰਘ ਗਿੱਲ (২০০৪)। ਪੰਜਾਬ ਕੋਸ਼ ਜਿਲਦ ਪਹਿਲੀ। ਭਾਸ਼ਾ ਵਿਭਾਗ ਪੰਜਾਬ। পৃষ্ঠা 430। 
  2. S. Sobha Singh Artist ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে. Sobhasinghartist.com. Retrieved on 20 November 2018.
  3. Katoch, Avnish (11 January 2006) Sardar Shoba Singh. himachal.us
  4. SOBHA SINGH (1901–1986). The Government Museum and Art Gallery Chandigarh, India
  5. Mohan, Vibhor (25 June 2006) Painter of people. The Sunday Tribune. Retrieved on 20 November 2018.
  6. Stamp on Sobha Singh to be released today. The Tribune, Chandigarh, India. 28 November 2001

বহিসংযোগ সম্পাদনা