শৈব উপনিষদ হল হিন্দুধর্মের ছোট উপনিষদ, শিব ধর্মতত্ত্বের (শৈবধর্ম) জন্য নির্দিষ্ট। ১০৮টি উপনিষদের মুক্তিকা সংকলনে ১৪টি শৈব উপনিষদ রয়েছে।[১] এগুলি, অন্যান্য ক্ষুদ্র উপনিষদের সাথে, সাধারণত বৈদিক ঐতিহ্যের মূলে থাকা তেরটি প্রাচীন মূখ্য উপনিষদ থেকে আলাদা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[২]

শৈব উপনিষদগুলি ছোট উপনিষদের অন্যান্য গোষ্ঠীর থেকেও বৈপরীত্য, যেমন সামন্য উপনিষদ যা সাধারণ প্রকৃতির, সন্ন্যাস উপনিষদ যা হিন্দু ত্যাগ এবং সন্ন্যাস অনুশীলনের দিকগুলিকে তুলে ধরে, যোগ উপনিষদ যোগে সম্পর্কিত, বৈষ্ণব উপনিষদ যা বিষ্ণুর দিকগুলিকে তুলে ধরে, এবং শাক্ত উপনিষদ যা শাক্তবাদকে তুলে ধরে।[৩][৪]

শৈব উপনিষদগুলি শিবকে আধিভৌতিক ব্রহ্মআত্মা (আত্ম, স্ব) হিসাবে প্রশংসা করে।[৫] অথর্বশীরস উপনিষদের মতো কয়েকটি পাঠে রুদ্রের মতো বিকল্প পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এবং দৃঢ়ভাবে সব দেবতাই রুদ্র, সবাই ও সবকিছুই রুদ্র, এবং রুদ্র হল সমস্ত কিছুতে পাওয়া নীতি, তাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সমস্ত বাস্তবতার অন্তর্নিহিত সারাংশ।[৫] কিছু শৈব উপনিষদে শৈবধর্মের পোশাক, আচার ও উপাসনার বস্তু সম্পর্কে প্রতীকী বিভাগ রয়েছে।[৬]

কালপঞ্জি সম্পাদনা

শৈব উপনিষদ ও অন্যান্য গৌণ উপনিষদগুলি তেরোটি প্রধান মূখ্য উপনিষদ থেকে পৃথক উপগোষ্ঠী যা খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম ও প্রথম শতাব্দীর মধ্যে আরও প্রাচীন বলে বিবেচিত হয়; যাইহোক, ক্ষুদ্র উপনিষদের অনুমান পরিবর্তিত হয়।[৭] মাহনির মতে, ক্ষুদ্র উপনিষদগুলি প্রায় ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১১০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।[৭] প্যাট্রিক অলিভেল বলেন যে অথর্ববেদের সাথে সংযুক্ত সাম্প্রদায়িক উপনিষদ সম্ভবত ১৬ শতক পর্যন্ত দ্বিতীয় সহস্রাব্দে রচিত হয়েছিল।[৮]

তেরোটি প্রধান উপনিষদের মধ্যে একটি, যথা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে শিব, রুদ্র, হর ও অন্যান্য বৈদিক দেবতাদের পাশাপাশি সাংখ্য-যোগবেদান্ত দর্শনের উল্লেখ রয়েছে।[৯][১০][১১] শ্বেতাশ্বতরকে শৈব বা গৌণ উপনিষদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।[৯][১২][১৩]

ডিউসেন মন্তব্য করেছেন, নীলরুদ্র উপনিষদ হল গুরুত্বপূর্ণ শিব-কেন্দ্রিক উপনিষদ, পাঁচটি ক্ষুদ্র উপনিষদের দল থেকে যা আত্মার প্রতীক হিসেবে দেবতা শিবকে দাবি করে।[১৪] এগুলি হল প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থ, নীলরুদ্র সম্ভবত প্রাচীনতম (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের কাছাকাছি রচিত), কিন্তু নীলরুদ পাঁচটির মধ্যে অন্য চারটির মতো মুক্তিকা দ্বারা ১০৮টি উপনিষদের সংকলনে অন্তর্ভুক্ত নয়।[১৪]

১৪টি শৈব উপনিষদের তালিকা সম্পাদনা

মুক্তিকা সংকলন অনুসারে শৈব উপনিষদের তালিকা
শিরোনাম মুক্তিকা ক্রমিক সংযুক্ত বেদ রচনার সময়কাল
কৈবল্য উপনিষদ ১২ কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ ১ম খৃষ্টপূর্ব সহস্রাব্দ
অথর্বশীরস উপনিষদ ২২ অথর্ববেদ ৫ম খৃষ্টপূর্ব সহস্রাব্দ
অথর্বশিখা উপনিষদ ২৩ অথর্ববেদ ১ম খৃষ্টপূর্ব সহস্রাব্দ
বৃহজ্জবাল উপনিষদ ২৬ অথর্ববেদ মধ্যযুগের শেষের দিকে, ১৩ শতকের পরে
কালাগ্নিরুদ্র উপনিষদ ২৮ কৃষ্ণ যজুর্বেদ অজানা
দক্ষিণামূর্তি উপনিষদ ৪৯ কৃষ্ণ যজুর্বেদ অজানা
শরভ উপনিষদ ৫০ অথর্ববেদ অজানা
অক্ষমালিকা উপনিষদ ৬৭ ঋগ্বেদ মধ্যযুগের শেষের দিকে, ১২ শতকের পরে
রুদ্রহৃদয় উপনিষদ ৮৫ কৃষ্ণ যজুর্বেদ অজানা
ভস্মজাবাল উপনিষদ ৮৭ অথর্ববেদ মধ্যযুগের শেষের দিকে, ১২ শতকের পরে
রুদ্রাক্ষজাবাল উপনিষদ ৮৮ অথর্ববেদ ১০ম শতাব্দীর পরে
পঞ্চব্রহ্মা উপনিষদ ৯৩ কৃষ্ণ যজুর্বেদ প্রায় ৭ম শতাব্দী
জাবালি উপনিষদ ১০৪ সামবেদ অজানা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Deussen 1997, পৃ. 556।
  2. Mahony 1998, পৃ. 271।
  3. William K. Mahony (১৯৯৮)। The Artful Universe: An Introduction to the Vedic Religious Imagination। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 271। আইএসবিএন 978-0-7914-3579-3 
  4. Moriz Winternitz; V. Srinivasa Sarma (১৯৯৬)। A History of Indian Literature। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 217–224 with footnotes। আইএসবিএন 978-81-208-0264-3 
  5. Deussen, Bedekar এবং Palsule (tr.) 1997, পৃ. 769।
  6. Klostermaier 1984, পৃ. 134, 371।
  7. Mahony 1998, পৃ. 290।
  8. Olivelle 2008, পৃ. xxxiii।
  9. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 301–304, 317
  10. R Tsuchida (1985), Some Remarks on the Text of the Svetasvatara-Upanisad, Journal of Indian and Buddhist Studies (印度學佛教學研究), Vol. 34, No. 1, pages 460–468, Quote: "The Svetasvatara-Upanisad occupies a highly unique position among Vedic Upanisads as a testimony of the meditative and monistic Rudra-cult combined with Samkhya-Yoga doctrines."
  11. Max Muller, Shvetashvatara Upanishad, The Upanishads, Part II, Oxford University Press, pages 238-241
  12. Robert Hume (1921), Shvetashvatara Upanishad, The Thirteen Principal Upanishads, Oxford University Press, pages 400–402 with footnotes
  13. M Chakravarti (1995), The Concept of Rudra-Śiva Through the Ages, Motilal Banarsidas, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০০৫৩৩, pages 20–23 and Chapter 1
  14. Deussen 1997, পৃ. 769 footnote 1, 783-787।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা