রস গ্রিগরি

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

রস জেরাল্ড গ্রেগরি (ইংরেজি: Ross Gregory; জন্ম: ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৬ - মৃত্যু: ১০ জুন, ১৯৪২) ভিক্টোরিয়ার মালভার্নে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[১] অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

রস গ্রিগরি
১৯৪০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে রস গ্রিগরি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামরস জেরাল্ড গ্রিগরি
জন্ম(১৯১৬-০২-২৭)২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬
মালভার্ন, ভিক্টোরিয়া,[১] অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু১০ জুন ১৯৪২(1942-06-10) (বয়স ২৬)
গফরগাঁও, বাংলা, ব্রিটিশ ভারত[২]
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগব্রেক
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৫৯)
২৯ জানুয়ারি ১৯৩৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট৩ মার্চ ১৯৩৭ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩৩/৩৪-১৯৩৮/৩৯ভিক্টোরিয়া বুশর‍্যাঞ্জার্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৪
রানের সংখ্যা ১৫৩ ১,৮৭৪
ব্যাটিং গড় ৫১.০০ ৩৮.২৪
১০০/৫০ ০/২ ১/১৭
সর্বোচ্চ রান ৮০ ১২৮
বল করেছে ২৪ ৩,৭০৯
উইকেট ৫০
বোলিং গড় ৩৫.৩৪
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ০/১৪ ৫/৬৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ২০/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, লেগ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন রস গ্রেগরি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

ভিক্টোরিয়ার মেলবোর্নের উপশহর মালভার্ন এলাকায় রস গ্রেগরির জন্ম। পড়াশোনা করেন মেলবোর্নের ওয়েসলি কলেজে। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ভিক্টোরিয়ার পক্ষে অভিষেক ঘটে তার। ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে ২১ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। এর পূর্বে নিজ রাজ্য দলের সদস্য হিসেবে গাবি অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে ১২৮ রানের মনোরম ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এটিই তার খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৩ খেলায অংশ নিয়ে ১৭টি অর্ধ-শতকের ইনিংস খেলেন ও লেগ ব্রেক এবং গুগলি বোলিংয়ে উইকেট পান ৫০টি।

টেস্ট ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুই টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান তিনি। ২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৭ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে রস গ্রিগরির। ক্রিকেট কিংবদন্তি ডন ব্রাডম্যান ছিলেন তার ক্যাপ্টেন। সে সময়ের ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, রস গ্রিগরি ছিলেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম আবিষ্কার। ১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাসেজ সিরিজে তিনি দুটি টেস্ট খেলেন - তিন ইনিংসে তার মোট রান ছিল ১৫৩, সর্বোচ্চ স্কোর ৮০, গড় ৫১। সেই সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও পরে ৩-২ ব্যবধানে অ্যাশেজ জয় করে অস্ট্রেলিয়া দল।

জীবনাবসান সম্পাদনা

রস গ্রিগরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্সে তালিকাভূক্ত হন ও পাইলট অফিসার পদবী ধারণ করেন।[২] ১০ জুন, ১৯৪২ তারিখে ২৬ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে পূর্ব বাংলার (বর্তমানে ময়মনসিংহ ,বাংলাদেশ) গফরগাঁওয়ের একটি গ্রামে জাপানিদের সাথে বিমানযুদ্ধে তিনি নিহত হন।[৩]

রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্সে যোগদান ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি টেস্ট ইনিংসে ৫১ গড়ে ১৫৩ রান করার পরেও বিস্ময়করভাবে মাস কয়েক পর ১৯৩৮ সালের ইংল্যান্ড সফরের দলে তিনি জায়গা পাননি। কয়েকমাস পর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

ধারণা করা হয়, ১৯৪২ সালের ১০ জুন বার্মার আকিয়াব বন্দরের একটি জাপানি স্থাপনায় বোমা হামলা করে ফেরার সময় রস গ্রেগরির বিমানটি একটি জাপানি বিমানের পাল্টা আক্রমণের শিকার হয়। সেই সময় গফরগাঁও ইসলামিয়া হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আবুল হাশেম ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আমীর আলী ছিলেন সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাদের বর্ণনা মতে, সকালে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। বগামারা চর ও গফরগাঁও সদরের মানুষ দেখতে পেল পূর্ব আকাশে একটি যুদ্ধবিমান আরেকটিকে তাড়া করছে। এক বিমান আরেক বিমানকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ পেছনের বিমানটি থেকে ছোড়া গোলা গিয়ে লাগল সামনেরটির গায়ে। ব্রিটিশ সরকারের "ইনিয়ন জ্যাক" চিহ্ন আঁকা বিমানটি মুহূর্তে গোত্তা খেয়ে নিচের দিকে পড়তে শুরু করল। আকাশে কালো ধোঁয়া আর আগুনের কুণ্ডলী ছড়াতে ছড়াতে তিরবেগে সেটা ধেয়ে আসতে শুরু করল ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন এলাকার দিকে। নিচে কৌতূহলী হয়ে আকাশে দুই বিমানের এই অবাক কাণ্ড দেখছিল যারা, তারা এবার আতঙ্কিত হয়ে ছুটতে শুরু করল নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে। বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ, ছাই তখন চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে শুরু করেছে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে। সাত সকালেই এ রকম অভূতপূর্ব একটা ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখার ধাক্কা গফরগাঁওয়ের মানুষের কাটতে খানিকটা সময় লাগল। বিস্ফোরণের শব্দ থেমে যাওয়ার পর ব্রহ্মপুত্র নদের কাছে গিয়ে তারা দেখল, বগামারা চরের কাছে পানির রং কোথাও নীল আবার কোথাও লাল হয়ে গেছে। যুদ্ধবিমানটির মূল অংশটি যেখানে পড়েছে, সেখানে তৈরি হয়েছে বিশাল এক গর্তের। আর পানির নিচ থেকে তখনো বুদ্বুদ আর গুড়গুড় শব্দে ছোট ছোট বিস্ফোরণের শব্দ উঠে আসতে থাকে। পানিতে বিমানের টুকরোর সঙ্গে ভাসতে থাকে মানুষের হাত-পা ও শরীরের নানা অঙ্গপ্রতঙ্গ।

ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পর ময়মনসিংহ মহকুমা সদর থেকে সদলবলে হাজির হন তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার ক্রেক ও তার হাতির দল। তার হুকুমে পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। উড়োজাহাজের ভাঙা টুকরো আর মৃত সেনাদের খণ্ডিত লাশ নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ আর হাতিসমেত ফিরে যায় ময়মনসিংহে। পরে গ্রামবাসীর কেউ কেউ ওই নদের মধ্যে ভাসতে থাকা যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ, আর নদীর তীরে পানি থেকে তুলে আনা বিমানের নানা আকৃতির লোহা, চুম্বকের টুকরো বাড়ি নিয়ে আসে।আবুল হাশেমের মনে আছে, সেদিন একটি লাশের সঙ্গে চামড়ার একটি ব্যাগে পাওয়া গিয়েছিল একটি চিঠিও। গফরগাঁও ইসলামিয়া হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক নির্মল রায় ইংরেজিতে লেখা সেই চিঠি বাংলায় অনুবাদ করে সবাইকে শুনিয়েছিলেন। আবুল হাশেমের যত দূর মনে পড়ে, সেই চিঠির ভাষা ছিল এ রকম : ‘তুমি দেশে কবে আসবে? তোমার দুই ছেলেমেয়ে শুধু তোমাকে খোঁজে; পাখি দেখলে বাগানে ছুটে যায়; ফুল ছিঁড়ে, পাখিকে তাড়া করে, আর শুধু তোমার কথা বলে। তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি আসো।’

সে বার বর্ষা শেষে যখন শীত আসে, পানি নেমে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে যায় পানির নিচ থেকে তখন বেরিয়ে এসেছিল বিশাল এক লোহার গোলাকার পাত্র। আবুল হাশেম বলেন, ওই গোল লৌহপাত্রে রাখালেরা গরু বেঁধে রাখত। বাচ্চারা খেলত। পরে জেলা প্রশাসনের লোকেরা জাহাজপড়া চরের সেই লোহার খণ্ড পড়ে থাকার খবর জানতে পেরে আবারও পুলিশ নিয়ে গফরগাঁওয়ে আসে। তাদের কাছ থেকেই গ্রামবাসী জানতে পারে, ওটি আসলে একটি শক্তিশালী বোমা। গ্রামবাসীকে সরিয়ে দিয়ে সেই বোমা পানিতে এনে বিস্ফোরণ ঘটায় ব্রিটিশ সেনারা। বোমার সেই বিকট শব্দে পুরো ময়মনসিংহ যেন কেঁপে উঠেছিল সেদিন।

রস গ্রেগরির বিমান যে চরের উপর বিদ্ধস্ত হয়েছিল ১৯৪২ সালের সেই ঘটনার পর সেই চরের নাম হয় জাহাজপড়া চর।[৪]

ডেভিড ফ্রিথ এবং দ্য রস গ্রেগরি স্টোরি সম্পাদনা

২০০৫ সালের মে মাসে লর্ডসে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচে প্রথম আলোর ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রের সাথে বিখ্যাত ক্রিকেট লেখক ও ক্রিকেট ইতিহাসবিদ ডেভিড ফ্রিথের পরিচয় হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক শুনে তিনি উৎপলকে প্রশ্ন করেন ‘আপনি গফরগাঁও চেনেন? গিয়েছেন কোনো দিন?’ এমন একজন ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও নামক অখ্যাত এক জায়গার নাম শুনে বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে উৎপল উত্তর দেন, ‘ট্রেনে আমার বাড়িতে যাওয়ার পথেই গফরগাঁও স্টেশন পড়ে। তবে নামিনি কখনো। গফরগাঁও বড় বড় গোল বেগুনের জন্য খুব বিখ্যাত।’ শুনে ফ্রিথের হো হো হাসি, ‘আপনার কি ধারণা, বেগুন আমার খুব প্রিয় সবজি? এ কারণেই গফরগাঁও নিয়ে আগ্রহ?’ উৎপল বললেন, ‘সেটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি দেখছি না। তবে আপনার মুখে গফরগাঁওয়ের কথা শুনে একটু অবাকই হয়েছি। ঘটনা কী?’

ফ্রিথ ঘটনা খুলে বললেন। ১৯৩৭ সালের অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্ট, কিংবদন্তি ডন ব্রাডম্যান তখন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। অ্যাডিলেডের সেই টেস্টে অভিষেক হয় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম আবিষ্কার রস গ্রেগরির। রস সিরিজের শেষ দুটি টেস্টে অংশ নিয়ে তিন ইনিংসে ৫১ অ্যাভারেজে করেন ১৫৩ রান, শেষ টেস্ট ইনিংসে ৮০ - অথচ বিস্ময়করভাবে মাস কয়েক পর ১৯৩৮ সালের ইংল্যান্ড সফরের দলে জায়গা পাননি। এরপর তো শুরু হয়ে গেল বিশ্বযুদ্ধই। সেটিই রস গ্রেগরির গল্পটাতে যোগ করেছে অন্য মাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিমানের পাইলট ছিলেন গ্রেগরি, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন। মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে ফ্রিথ এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন রস গ্রেগরি-বৃত্তান্ত। কিন্তু এখানে গফরগাঁও আসছে কোত্থেকে? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ফ্রিথ নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন, ‘রস গ্রেগরির বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল আপনাদের গফরগাঁওয়ে।’ উৎপল শুভ্র তার নিজের ক্রিকেট ইতিহাস সম্পর্কিত জানাশোনা নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু রস গ্রেগরি নামটার সঙ্গে সেই প্রথম তার পরিচয় হলো।

যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন রস গ্রিগরি। ব্যক্তিগত সেই ডায়েরিতে রস লিপিবদ্ধ করেছেন ঘটনাবহুল বিশ্বযুদ্ধের রুদ্ধশ্বাস সব স্মৃতি। রস এই ডায়েরি কর্তৃপক্ষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বস্ত এক বন্ধুর মারফত দেশে পাঠাতেও সক্ষম হন। লন্ডনের বিখ্যাত নিলাম আয়োজক প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টির ক্যাটালগ থেকে ডেভিড ফ্রিথ প্রথম রস গ্রেগরির সেই ডায়েরির কথা জানতে পারেন। এরপর রস গ্রেগরির এই ডায়েরি ও তার স্মৃতিবিজরিত অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ডাকে নিলামে অংশ নেন ডেভিড। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে - ছিটিয়ে থাকা রস গ্রেগরির আত্মীয়স্বজন - বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করে গ্রেগরি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করেন; খুঁজে পান তার দুর্লভ সব ছবি। সেগুলো উপজীব্য করে ডেভিড রচনা করেন আকর্ষণীয় মনোহর এবং খানিকটা বিদ্রোহী স্বভাবের রস গ্রেগরিকে নিয়ে একটি বই, দি রস গ্রেগরি স্টোরি। দুই পর্বের এই বইয়ে স্থান পেয়েছে ক্রিকেটার রস গ্রেগরি ও তার বর্ণাঢ্য জীবন, বিশ্বযুদ্ধকালীন লেখা তার ডায়েরি এবং ১৯৩০-৪০ সালের প্রথমভাগের অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ও ক্রিকেট ঘিরে সে সময়ের সামাজিক অবস্থা। রস গ্রেগরির ওয়েলিংটন বম্বার বিধ্বস্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিন তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঝুলে ছিল, ডেভিড ফ্রিথের এই বই অস্ট্রেলিয়ার অজানা নায়কের জীবন বিস্তারিতভাবে উন্মোচিত হয় পাঠকের সামনে। দুই বছরের অক্লান্ত গবেষণাকর্মের একপর্যায়ে ডেভিড ফ্রিথ বাংলাদেশেও আসেন। তার বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়েই সমাধান ঘটে রস গ্রেগরির মৃত্যুরহস্যের। ডেভিড ফ্রিথের আগে অস্ট্রেলীয়রাও ভালো ভাবে জানতেন না, রসের ঠিক কোথায় মৃত্যু হয়েছিল; কাগজপত্রে কেবল উল্লেখ ছিল তার মৃত্যু হয়েছে ভারতে। কিন্তু নাম জানা না থাকলেও রস গ্রেগরির নিহত হওয়ার ঘটনা ভালো ভাবেই মনে রেখেছেন গফরগাঁওবাসী। ব্রিটিশ সেই যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই চরের নাম বদলে গিয়ে হয়েছে ‘জাহাজপড়া চর’। এই নাম ময়মনসিংহ জেলা ভূমি রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের নথিতেও অন্তর্ভুক্ত হয়ে স্থায়ী রূপ পেয়েছে।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Frith, pp. 3–4. Gregory believed his birthdate was 28 February but the birth was registered as 27 February. The birth was also registered as "Gerald Ross" rather than "Ross Gerald". His birthplace is often listed as the small country town of Murchison, Victoria—the normal family residence—but he was actually born in the eastern Melbourne suburb of Malvern, Victoria.
  2. Frith, p. 299.
  3. Frith, p. 297. Many cricket texts place Gaffagaon in Assam, that is not correct.
  4. মাহমুদ, ইফতেখার (২০১১-০৭-১৫)। "জাহাজপড়া চর"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা: মতিউর রহমান। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. শুভ্র, উৎপল (২০১১-০৭-১৫)। "তুমি গফরগাঁও চেনো?"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা: মতিউর রহমান। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা