রঞ্জন বেজবড়ুয়া
রঞ্জন কুমার বেজবড়ুয়া (অসমীয়া: ৰঞ্জন বেজবৰুৱা) হচ্ছেন ভারতের আসামের একজন গায়ক, গীতিকার, অনুবাদক, শিক্ষক, সঙ্গীতানুরাগী ও শিক্ষাবিদ। তিনি আধুনিক সংস্কৃত গীতিসাহিত্যের প্রচারণায় নিয়োজিত আছেন৷[১][২] কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও তথা আকাশবাণী, দিল্লি দূরদর্শন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন। ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বরে 'সুধাকন্ঠ ডা. ভূপেন হাজারিকা মেমোরিয়াল ইন্টিগ্রেশন অ্যাওয়ার্ড' পাওয়ার পাশাপাশি তিনি ২০২০ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে 'রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত গীতিকবি' সম্মাননা লাভ করেন।[৩]
রঞ্জন কুমার বেজবড়ুয়া | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | কটন কলেজ গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | বর্ণালী পরাশর |
সন্তান | ময়ূখী (কন্যা) জিষ্ণু (পুত্র) |
পিতা-মাতা | রোহিত চন্দ্র বেজবড়ুয়া (বাবা) শ্রী সুভদ্রা বেজবড়ুয়া (মা) |
পুরস্কার | 'সুধাকণ্ঠ ডা. ভূপেন হাজারিকা মেমোরিয়াল ইন্টিগ্রেশন অ্যাওয়ার্ড' (২০১৪) 'সংস্কৃত গায়ক' (২০১৯ ) 'রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত গীতিকবি' (২০২০) |
প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা
রঞ্জন বেজবড়ুয়া ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট আসামের নগাঁও জেলার হাতিচোঙের চাকালাঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রোহিত চন্দ্র বেজবড়ুয়া একজন শিক্ষাবিদ ও লেখক এবং তার মা শ্রী সুভদ্রা বেজবড়ুয়া একজন শিক্ষক ও শিল্পী। বেজবড়ুয়া ২০০২ সালে তেজপুর-জামুগুরিহাটের বর্ণালী পরাশরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ছেলের নাম জিষ্ণু ও কন্যার নাম ময়ূখী।[১]
সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্পাদনা
তিনি শ্রীমন্ত শঙ্করদেব থেকে শুরু করে ভূপেন হাজারিকার মতো অসমীয়া সঙ্গীতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির রচিত গানের সংস্কৃত উপস্থাপনা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আল্লামা ইকবাল, কবি প্রদীপের মতো সঙ্গীতগুরুদের রচিত বেশ কয়েকটি দেশাত্মবোধক ভারতীয় গানের সংস্কৃত সংস্করণও তিনি উপস্থাপন করেছেন। এছাড়াও তিনি কয়েকটি জনপ্রিয় গজল এবং ভজনের পাশাপাশি কয়েকটি বিরল হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে কেএল সায়গল ও এ আর রহমানের গানের সংস্কৃত অনুবাদে কন্ঠ দিয়েছেন।
তিনি বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতের লোক ও রাগের সুরের উপর ভিত্তি করে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত বেশ কয়েকটি মৌলিক সংস্কৃত গানের রচনা করেছেন। তার গানের মেজাজ এবং বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যময়; যেমন: ভক্তিমূলক, দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী ইত্যাদি। এসব গান আসাম, কলকাতা, মুম্বই, পুনে, বেঙ্গালুরু এবং নয়াদিল্লির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার গানগুলো বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সহ গণ্যমান্য ব্যক্তি শিল্প ও সংস্কৃতির উৎসাহীদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
তাছাড়াও এই সংস্কৃত গানগুলো সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা হিসেবে ভারত ও ভারতের বাইরের বিভিন্ন স্থানে যেমন কলকাতা, দিল্লি, কানপুর, আলমোড়া, হরিদ্বার, গুজরাত, রাজস্থান, পুনে, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ও অ্যারিজোনা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও রাস আল খাইমা সহ যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অসমীয়া তথা ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে এই ধরনের প্রচেষ্টা প্রথমবারের মতো করা হয়েছে। ভারতীয় গানের এই অনুবাদ প্রক্রিয়া ১৯৯৯ সাল থেকে চলছে।
তিনি ২০১৬ সালের ১৪ ই আগস্ট ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের জাতীয় প্রচার মাধ্যম ডিডিনিউজ-দিল্লির প্রযোজনায় আল্লামা ইকবালের দেশাত্মবোধক গান 'সারে জাহান সে আচ্ছা'র সংস্কৃত উপস্থাপনা করেন।[১] রঞ্জন বেজবড়ুয়া অনূদীত এই গানটি তিনি সহ আরও বেশ কয়েকজন কণ্ঠশিল্পীর সমন্বয়ে গানটি গাওয়া হয়। এটি ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক বিবেচিত হয়।
তিনি ২০১৭ সালে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম তথা পুরো ভারতের দ্বিতীয় সংস্কৃত 'প্রাচ্যা' প্রতিষ্ঠা করেন।[৪]
পুরস্কার সম্পাদনা
পুরস্কার | স্থান | বছর | মন্তব্য |
---|---|---|---|
সুধাকন্ঠ ডা. ভূপেন হাজারিকা মেমোরিয়াল ইন্টিগ্রেশন অ্যাওয়ার্ড | জোরহাট, আসাম | ২০১৪ | |
সংস্কৃত গায়ক | ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় | ২০১৯ | |
রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত গীতিকবি | লোকভাষা প্রচার সমিতি, ভুবনেশ্বর | ২০২০ | [২][৩] |
সংবর্ধনা সম্পাদনা
তিনি আসামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছ থেকে বেশ কিছু সংবর্ধনা পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি অসম সাহিত্য সভার 'হিতৈষী সদস্য' এবং আসম কবি সম্মেলনের আজীবন সদস্য।
সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা
- 'গীতা-সংস্কৃতম' শিরোনামের মৌলিক ও অনূদিত সংস্কৃত সঙ্গীত-সংকলন (প্রকাশ: ২০১৭)। [১]
- তিনি অসম নাট্য সম্মেলন কর্তৃক ২০০২ সালে প্রকাশিত ভরত মুনি রচিত সংস্কৃত 'নাট্যশাস্ত্র' গ্রন্থের ১ম ও ২য় খণ্ডের অসমীয়া অনুবাদ সম্পাদনা করেছেন।
- ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যের উপর তার রচিত 'আনন্দ সুধাকর' নামে প্রবন্ধের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। [১]
- ২০০৭ সাল থেকে নগাঁওয়ের সংস্কৃত ভাষা বিকাশ মঞ্চের বার্ষিক স্মারক 'অভিজ্ঞানম' সম্পাদনা করে আসছেন।
- তিনি বিভিন্ন জার্নাল ও সাময়িকীতে ভারতীয় নানান ভাষায় রচিত বিখ্যাত ছোট গল্পের অসমীয়া অনুবাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চিন্তাপ্রবণ ও গবেষণা মূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "সাক্ষাৎকাৰ- সংগীত সমুদ্ৰত অৱগাহন: এক ব্যতিক্ৰমী পথেৰে শিল্পী ৰঞ্জন বেজবৰুৱা"। xahitya.org (Assamese ভাষায়)। ২০২০-১১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- ↑ ক খ BHATTACHARYYA, SMITA (২০২০-০৮-২৮)। "Rashtriya Sanskrit Geetikavi title bestowed on Assam's Ranjan Bezbaruah"। NORTHEAST NOW। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- ↑ ক খ "Assams Ranjan Bezbaruah Conferred Rashtriya Sanskrit-Geetikavi-Title"।
- ↑ Bhattacharyya, Smita (২০১৭-০১-০৭)। "Fresh words, familiar music"। Telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- Mazumdar, Prasanta (২০১৯-১০-০১)। "Sanskrit voice to Mahatma's favourite 'Vaishnava Jana To'"। Newindianexpress.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- Karmakar, Rahul (২০১৯-১১-০৫)। "Bangladesh national anthem goes Sanskrit on Bhupen Hazarika death anniversary"। Thehindu.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- Karmakar, Rahul (২০১৯-১০-০১)। "Gandhiji's favourite bhajan 'Vaishnava Jana To', now in Sanskrit"। Thehindu.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- "Saare jahan se accha in Sanskrit on I-Day"। Telegraphindia.com। ২০১৬-০৮-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।
- "Ramdhun in Sanskrit: Tribute on Gandhi Jayanti"। Thehillstimes.in। ২০২০-১০-০২। ২০২১-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৯।