মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর

বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

মো. শাহজাহান ওমর (জন্ম: ২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭)[১] হচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ।[২][৩][৪] স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[৫]

মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর
শাহজাহান ওমর
আইন প্রতিমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৭ এপ্রিল ২০০৩ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীআবদুস সাত্তার ভূঞা
ঝালকাঠি-১ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৫ মার্চ ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬
পূর্বসূরীজাহাঙ্গীর কবির
কাজের মেয়াদ
২৮ অক্টোবর ২০০১ – ২৭ অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীআনোয়ার হোসেন মঞ্জু
উত্তরসূরীবজলুল হক হারুন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1947-12-24) ২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ (বয়স ৭৫)
রাজাপুর, ঝালকাঠি
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
সামরিক পরিষেবা
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদমেজর

জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

মো. শাহজাহান ওমরের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সাংগর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল হামিদ এবং মায়ের নাম লালমন বেগম। তার স্ত্রীর নাম মেহজাবিন ফারজানা ওমর। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

কর্মজীবনসম্পাদনা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেনা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান ওমর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে কর্মরত ছিলেন। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যান এবং যুদ্ধে যোগ দেন। তাকে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাব-সেক্টরের বরিশাল বেইজের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বরিশাল এলাকায় একের পর এক পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের দিশেহারা করেন। চাচৈর যুদ্ধের কয়েক দিন পর রাজাপুরের যুদ্ধে তিনি আহত হন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাসম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বররাতে মো. শাহজাহান ওমরসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা নৌকাযোগে রওনা হন চাচৈরের উদ্দেশে। এর অবস্থান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। তিনি তাদের সার্বিক নেতৃত্বে। ভোরে সবার আগে তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ পৌঁছান চাচৈরের কাছে। পৌঁছেই তিনি খবর পান যে ওই এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসেছে। তারা কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিয়ে আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের দলগুলো তখনো সেখানে এসে পৌঁছায়নি। তার পরও মো. শাহজাহান ওমর সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করার। তখন তার দলের কাছে মাত্র একটি এসএলআর, একটি দুই ইঞ্চি মর্টার ও একটি ২২ বোর রাইফেল ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না। এর মধ্যে দুটি উপদল এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। একটি দলকে তিনি পাঠান চাচৈর স্কুলে, অপর দলকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান সড়কে তিনি নিজে অবস্থান নেন। সকাল আনুমানিক নয়টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল ক্যাপ্টেন আজমত এলাহীর নেতৃত্বে স্কুলে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা ওই দলকে পাল্টা আক্রমণের পর ধাওয়া করে প্রধান সড়কে আসে। ওমর সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। থেমে থেমে সারা দিন ধরে যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা তার নেতৃত্বে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন। সন্ধ্যার পর পাকিস্তানি সেনারা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন (আউয়াল) শহীদ ও দু-তিনজন আহত হন। পরদিন ১৪ নভেম্বর সকালে বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে নতুন সেনা এসে যোগ দেয় চাচৈরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আগের দলের সঙ্গে। মো. শাহজাহান ওমর এতে বিচলিত হননি, মনোবলও হারাননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। তাকে দেখে উজ্জীবিত হন অন্য সব সহযোদ্ধা। ওমর অগ্রভাগে থেকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা বিপুল শক্তি নিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ১৪ নভেম্বরও সারা দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। খাল পার হতে গিয়ে আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রাণ হারায়। সন্ধ্যার পর রাতের আঁধারে পাকিস্তানি সেনারা একেবারে পালিয়ে যায়। কয়েকজন মূল দলের সঙ্গে পালাতে না পেরে লুকিয়ে ছিল একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের খুঁজে বের করার পর আটক করে। এই যুদ্ধের সংবাদ তখন আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। [৬]

পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Profile Mr. M. Shahjahan Omar"tritiyomatra.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  2. "Barrister Shahjahan Omar's mother dies"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  3. "Contribution of Zia recalled"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ জানুয়ারি ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  4. "BNP's ex-army officers meet"Banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  5. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৮-০৯-২০১২"। ২০২০-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  6. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫৫। আইএসবিএন 9789849025375 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা