মাজারে ইকবাল

পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত সমাধিসৌধ

আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের মাজার বা মাজারে ইকবাল (উর্দু: مزار اقبال‎‎) হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের হুজুরি বাগে অবস্থিত একটি সমাধি সৌধ।

আল্লামা ইকবালের মাজার
مزار اقبال
মাজারে ইকবাল
বাদশাহি মসজিদের প্রেক্ষাপটে মাজারের দৃশ্য
মানচিত্র
সাধারণ তথ্যাবলী
ধরনস্মৃতিসৌধ
স্থাপত্যশৈলীমুঘল
অবস্থানলাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
নকশা ও নির্মাণ
স্থপতিনওয়াব জৈন ইয়ার জঙ্গ বাহাদুর

প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

আল্লামা ইকবাল পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম প্রবাদপুরুষ ছিলেন। পাকিস্তানে তাকে মুফাক্কিরে পাকিস্তান (পাকিস্তানের চিন্তক) ও শাইরে মাশরিক (প্রাচ্যের কবি) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[] আল্লামা ইকবাল ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল ৬০ বছর বয়সে লাহোরে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এই কবি ও দার্শনিককে শ্রদ্ধা জানাতে এই মাজারে আসেন।[] কথিত আছে যে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক আল্লামা ইকবালের সমাধিতে ছিটানোর জন্য জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমির কবর থেকে মাটি পাঠান।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ইকবালের মৃত্যুর পরপরই চৌধুরী মুহাম্মদ হুসেনের নেতৃত্বে একটি সমিতি গঠন করা হয়।[]

স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি বৃহৎ সমস্যা ছিল অর্থের অভাব। সমিতির সদস্যরা স্থানীয় ও রাজ্য সরকারের অনুদান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় আল্লামা ইকবালের বন্ধু, প্রশংসক ও অনুসারীদের থেকে অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।[]

স্থাপত্যশৈলী

সম্পাদনা

সমাধিসৌধের স্থাপত্যে বিভিন্ন শৈলীর সমাবেশ ঘটানো হলেও এতে মূলত মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রাধান্য রয়েছে। সম্পূর্ণ সৌধটি লোহিত বালিপাথরে (লাল পাথর) নির্মিত,[] যা ব্রিটিশ ভারতের জয়পুর থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়া রাজপুতানার মাকরানা থেকে আনা মার্বেল পাথরও আনা হয়েছিল। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর ভারত কর্তৃক আরোপিত অবরোধের কারণে লাল পাথর আমদানি ব্যাহত হয় এবং এ কারণে সৌধের নির্মাণকাজও বাধাপ্রাপ্ত হয়।

সমাধি সৌধের অভ্যন্তরভাগে আল্লামা ইকবালের জবুরে আজম থেকে একটি গজলের ছয়টি দ্বিপদী শ্লোক খোদাই করা আছে।[] ভবনের বাইরে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত একটি ছোট বাগান রয়েছে। সমাধির মূল স্থপতি ছিলেন তৎকালীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রধান স্থপতি নওয়াব জৈন উয়ার জঙ্গ বাহাদুর। প্রায় এক লক্ষ (১,০০,০০০) পাকিস্তানি রুপি খরচ করে তেরো বছরে সৌধটি নির্মিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত কর্তৃক আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে জয়পুর থেকে লাল পাথরের আমদানি ব্যাহত হওয়ার কারণেই মূলত নির্মাণকাজে বিলম্ব ঘটে।[]

সমাধি ও সমাধি স্তম্ভ

সম্পাদনা

আয়তাকার সৌধের পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্তে দুইটি মার্বেল নির্মিত ফটক রয়েছে। সমাধিস্তম্ভটিও শ্বেত মার্বেল পাথরে নির্মিত। সমাধির পাথরটি আফগানিস্তানের জনগণের পক্ষ থেকে উপহারস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছিল। ল্যাপিস লাজুলিতে নির্মিত সমাধিফলকে আফগানিস্তান থেকে কুরআনের আয়াত থেকে ক্যালিগ্রাফি খোদাই করা হয়েছিল।

সংরক্ষণ

সম্পাদনা

সমাধিসৌধটি পাঞ্জাবের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত ঐতিহ্য স্থানের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।[]

চিত্রশালা

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Annemarie Schimmel, Muhammad Iqbal 1873–1938: The Ascension of the Poet, Die Welt des Islams, New Ser., Vol. 3, Issue 3/4. 1954. pp. 145–157
  2. Mushirul Hasan, H., A Nationalist conscience: M. A. Ansari, the Congress and the Raj, Manohar New Delhi. 1987
  3. Iqbal’s final resting place ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে, Amna Nasir Jamal, 20 April 2002, Dawn
  4. Muhammad Baqir, Lahore, Past and Present. University of the Panjab. Panjab University Press. 1952. p.429
  5. A great eastern poet, philosopher, Subhash Parihar, The Tribune India, 10 July 1999
  6. Mohammad Waliullah Khan, Lahore and Its Important Monuments, Department of Archaeology and Museums, Government of Pakistan. 1964. p.89-91
  7. Annemarie Schimmel, Islam in the Indian Subcontinent (Handbuch Der Orientalistik), Brill. 1980. আইএসবিএন ৯৭৮-৯০-০৪-০৬১১৭-০
  8. Pakistan Environmental Protection Agency। "Guidelines for Critical & Sensitive Areas" (পিডিএফ)। Government of Pakistan। পৃষ্ঠা 12, 47, 48। ১৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা