ময়মনসিংহীয় উপভাষা
এই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
ময়মনসিংহীয় উপভাষা হলো বাংলাদেশের বৃৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল-এর প্রধান কথ্য ভাষা। এটি বাংলা ভাষার প্রধান উপভাষাসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই উপভাষায় প্রধানত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের লোকেরা কথা বলে।
ময়মনসিংহীয় উপভাষা | |
---|---|
মোমেনসিঙ্গা উপবাশা | |
দেশোদ্ভব | বাংলাদেশ, ভারত |
অঞ্চল | ময়মনসিংহ বিভাগ, ঢাকা বিভাগ, সিলেট বিভাগ, মেঘালয় ও অসম |
জাতি | বাঙালি জাতি |
মাতৃভাষী | |
ইন্দো-ইউরোপীয়
| |
বাংলা লিপি | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | – |
বিস্তার
সম্পাদনাবাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগ এর প্রায় সকল জেলাতেই এই ভাষাটি প্রচলিত। ময়মনসিংহ বিভাগের বাইরে কিশোরগঞ্জ ও টাংগাইল জেলার স্থানীয় অধিবাসীদের প্রধান কথ্য ভাষা এটি। এছাড়াও গাজীপুর ও সুনামগঞ্জ কিছু অঞ্চলের মানুষও এ ভাষায় কথা বলে।
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনা- শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:-
- অন্যসকল বঙ্গালী উপভাষার মতই "চ" ও "ছ" ধ্বনির উচ্চারণ ইংরেজি "S" (আ-ধ্ব-ব: /s/) এবং "জ", "ঝ" ও "য" ধ্বনির উচ্চারণ ইংরেজি "Z" (আ-ধ্ব-ব: /z/) এ পরিবর্তিত হয়ে যায়।
- "ই", "উ" স্বরধ্বনির অপিনিহিত ব্যবহার লক্ষ্যণীয়; যথা- "রাইখ্যা" (রেখে), "আইজ" (আজ)।
- "এ" এর উচ্চারণ অনেকসময় এ্যা হয়; যথা- "খ্যালা" (খেলা), "দ্যাশ" (দেশ)।
- "ও" ধ্বনির উচ্চারণ "উ" ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়; যথা- "দুয়া" (দোয়া), "লুক" (লোক)।
- কখনো কখনো অনুনাসিক স্বরধ্বনিতে অর্ধ-অনুনাসিকের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়; যথা- "চান্দ্" (চাঁদ), "আন্ধার" (আঁধার)।
- মহাপ্রাণ ঘোষ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ঘোষ ধ্বনিতে পরিবর্তন হয়; যথা- "দুদ" (দুধ), "বাত" (ভাত), "ম্যাগ" (মেঘ)।
- পদের আদ্যক্ষর "শ", "ষ" ও "স" ধ্বনি "হ" ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়; যথা- "হামুক" (শামুক), "হালা" (শালা), "হালিক" (শালিক)
- পদের শেষে "ট" ধ্বনির উচ্চারণ "ড" তে পরিবর্তিত হয়; যথা- "এডা" (এটা), "ব্যাডা" (ব্যাটা)।
- রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য-
- কর্মসম্পাদনের একবচনে "রে" বিভক্তি বসে; যথা- "হ্যারে কও" (তাকে বল)।
- ভবিষ্যৎ কালে উত্তম পুরুষের ক্রিয়াপদে "মু" বিভক্তি কিংবা "বাম" বসে; যথা- করমু, খাইমু, যাইমু, মারমু, করবাম, যাইবাম ইত্যাদি।
প্রমিত বাংলার সাথে পার্থক্য
সম্পাদনানিম্নে প্রমিত বাংলা ও ময়মনসিংহীয় উপভাষা মধ্য কিছু রূপতাত্ত্বিক পার্থক্য উপস্থাপন করা হলো:-
প্রমিত বাংলা | ময়মনসিংহীয় | আধ্বব |
---|---|---|
খাবো | খামু/খাইবাম | /'kamu/, /'kai̯bɐm/ |
সাথে, সঙ্গে | লগে | /lɔge/ |
সে | হে/হ্যা | /ɦɛ/ |
টাকা | ট্যাহা/টেহা | /'ʈɛɦa/ |
ঢাকা | ডাহা | /'ɖaɦa/ |
ভালো | বালা | /'bala/ |
ব্যাথা | ব্যাদ্না | /'bæd̪na/ |
ঔষধ | অসুদ | /oʃud̪/ |
লোক | ব্যাডা, লুক | /'bɛɖa/, /lʊk/ |
ছেলে | পুত | /pu̞t̪/ |
ঝাড়ু | হাছুন | /'ɦasun/ |
বাংলা মাসের নাম ময়মনসিংহীয় ভাষাতে-
প্রমিত বাংলা | ময়মনসিংহীয় |
---|---|
বৈশাখ | বইসাগ/বইসাক |
জৈষ্ঠ্য | জেড |
আষাঢ় | আসার |
শ্রাবণ | সাওন |
ভাদ্র | ভাদর |
আশ্বিন | আসিন |
কার্তিক | কাত্তিক/কাতি |
অগ্রহায়ণ | আগুণ |
পৌষ | ফুস |
মাঘ | মাগ |
ফাল্গুন | ফালগুণ |
চৈত্র | ছৈত |
অনুচ্ছেদ রূপান্তর
সম্পাদনানিম্নে একটি অনুচ্ছেদকে প্রমিত বাংলা ও ময়মনসিংহীয় বাংলায় উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রমিত বাংলা: বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম সীমানায় ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব সীমানায় মিয়ানমার; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সাবেক “বঙ্গ” বা “বাংলা” নামক ভূখন্ডের পূর্ব অংশ যা পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল সেটি বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্র। সুপ্রাচীন কালে বাংলাদেশে প্রথম মানব বসতি গড়ে উঠে। পর্যায়ক্রমে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম শাসনের পর বাংলা ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।
- ময়মনসিংহীয় বাংলা: বাংলাদেশ দহিন এশিয়ার একটা রাইষ্ট। দেসটার উত্তর, ফুব আর ফচ্চিম সীমানাদে ভারত আর দহিন-ফুব সীমানাদে মিয়ানমার; দহিনদে বঙ্গোপসাগর। আগের “বঙ্গ” বা “বাংলা” নামের দেসের ফুব হানি যেইডা ফুব বাংলা নামে চিনডাক আচিন এইডা অহন বাংলাদেশ রাইষ্ট। অনেক আগিলা কালে বাংলাদেশঅ ফইলা মাইনষের বসতি বানানি অইচিন। লাগালাগাই হিন্দু, বৌদ্ধ আর মুসলিম শাসনের ফরে বাংলা ব্রিটিশ উপনিবেশে ফইরত অইছিন।
- প্রমিত বাংলা: আমার বড় ভাইয়ের বিয়ের জন্যে মেয়ে দেখতে গিয়েছে।
- ময়মনসিংহীয় বাংলা: আমার বড় বাইয়ের বিয়ার লাইগগা ছেড়ি দেখত গেছে।