মধ্যযুগের কৃষিকাজ বলতে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের ৪৭৬ থেকে প্রায় ১৫০০ অবধি চাষাবাদ পদ্ধতি, ফসল সমূহ, প্রযুক্তি এবং কৃষি অবস্থা সেই সাথে গোটা ইউরোপের অর্থনীতিকে বুঝায়। মধ্যযুগ বলতে মূলত মধ্যযুগের সময়সীমাকেই বুঝায়। মধ্যযুগকে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয় যেমন মধ্যযুগের সূচনা, মাঝামাঝি এবং মধ্যযুগের শেষ। প্রারম্ভিক আধুনিক যুগ অনেকটাই মধ্যযুগকে অনুসরণ করে আসে।

মধ্যযুগে[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] কৃষিকাজ

মহামারী এবং শীতল জলবায়ু ষষ্ঠ শতাব্দীতে ইউরোপীয় জনসংখ্যার ব্যাপকহারে হ্রাস ঘটায়। রোমান আমলের তুলনায় পশ্চিম ইউরোপে মধ্যযুগে নিজেদের স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য কৃষিকাজকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সামন্তকাল শুরু হয়ে প্রায় ১০০০ সালের দিকে। সামন্তবাদের অধীনে কৃষি জনসংখ্যা নিয়ে উত্তর ইউরোপ সংগঠিত হয় ম্যানর। কয়েক শত জমি বা তার বেশি একর নিয়ে সভাপতিত্ব করেন জমিদার, তার সাথে থাকে রোমান ক্যাথলিক গির্জা এবং যাজক। ম্যানরে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষজন ছিল কৃষক বা বর্গাচাষী যারা নিজেদের জন্য ফসল ফলাতেন বা তাদের মালিক এবং গির্জার জন্য শ্রমিক হিসেবে শ্রম দিত আর না হয় তাদের জমির জন্য ভাড়া পরিশোধ করত। বেশিরভাগ ইউরোপীয় অঞ্চলে যব এবং গম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফসল ছিল; বিভিন্ন জাতের শাকসবজি এবং ফলমূলের পাশাপাশি ওটস এবং রাইও ফলানো হতো। গরু এবং ঘোড়া অনুষাঙ্গিক কাজে ব্যবহার করা হতো। পশমের জন্য মেষ পালন করা হতো এবং মাংসের জন্য পালন করতো শূকর।

খারাপ আবহাওয়ার কারণে খাদ্য শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয় মধ্যযুগে এছাড়াও ছিল নানা ধরনের দুর্ভিক্ষ। এতসব অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ রয়েছে যে মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পুরুষরা পূর্ববর্তী রোমান সাম্রাজ্যের এবং পরবর্তী আধুনিক যুগের পুরুষদের চেয়ে লম্বা ছিল (খুব সম্ভবত ভাল খাদ্যাভ্যাসের জন্যে)।

নিচু অঞ্চলের দেশগুলিতে আরও নিবিড় ভাবে কৃষি কাজের বিকাশ হলেও ১৪শ শতাব্দীতে মধ্যযুগীয় কৃষি পদ্ধতিটি ভেঙে যেতে শুরু করে এবং ১৩৪৭-১৩৫১ সালে কালো মৃত্যুর মহামারির জন্য জনসংখ্যা হ্রাস পায়। পরে সীমিত সংখ্যক কৃষকদের জন্য চাষাবাদের জমির পরিমান বেড়ে যায়। যদিও মধ্যযুগীয় কৃষিকাজের চর্চা স্লাভিক অঞ্চল এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তই হালকা কিছু পরিবর্তন ঘটেই এগিয়ে যাচ্ছিল।

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

 
শেষ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] পশ্চিম রোমান সম্রাটের পতনের পরে ৪৭৬ সালে ইউরোপ এবং মধ্য প্রাচ্যর চিত্র

ইউরোপে তিনটি ঘটনা এই প্রেক্ষাপট তৈরি করে যেগুলো বহু যুগ ধরে ইউরোপের কৃষিকাজকে প্রভাবিত করে যাবে। প্রথমটি ছিল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন যা ৪০০ শতাব্দীতে "বার্বেরিয়ান" আক্রমণকারীদের কাছে তাদের রাজ্য হারানো। পশ্চিমের সর্বশেষ রোমান সম্রাটের ৪৭৬ সালে রাজ্য ছেড়ে দেওয়া [১] এরপরে, পূর্ব পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের জমি এবং লোকদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত করা, যাদের শাসন একদমই স্বল্পস্থায়ী ছিল। ইউরোপকে একত্র করণের কারণ গুলো ছিল বেশিরভাগ ইউরোপীয়ান ক্রমান্বয়ে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে যাওয়া [২] এবং পশ্চিম ইউরোপে লাতিনকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, বৃত্তি এবং বিজ্ঞানের একটি সাধারণ ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা। [৩] পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যে গ্রীকেরও একই অবস্থা ছিল। [৪]

দ্বিতীয়ত বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা হ্রাস পেতে শুরু করে যা ৫৩৬ সালে শুরু হয়ে আনুমানিক ৬৬০ এর দিকে শেষ হয়। এই শীতলতার কারণ ছিল ৫৩৬, ৫৪০ এবং ৫৪৭ সালে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ। বাইজেন্টাইন ঐতিহাসিক প্রোকোপিয়াস বলেছিলেন যে "সূর্য উজ্জ্বলতা ছাড়াই তার আলো প্রসারিত করে।" ইউরোপে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা প্রায় ২.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৪.৫ ° ফাঃ) নেমে গিয়েছিল এবং ১৮ মাস ধরে বায়ুমণ্ডলে আগ্নেয়গিরির ধুলো থেকে আকাশ ঢেকে গিয়েছিল। যা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্ভিক্ষের জন্যে যথেষ্ট ছিল। তাপমাত্রা পূর্ববর্তী রোমান সময়ের চেয়ে একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে কম ছিল। বিলম্বিত প্রাচীন ছোট বরফ যুগ এর সূচনা, মানুষের দেশান্তরিত হওয়া এবং রাজনৈতিক অশান্তি সহ বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সে সময় এবং এগুলোর প্রভাব পড়ে। [৫][৬]

তৃতীয়ত, ৫৪১ সালের জাস্টিনিয়ার প্লেগ শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউরোপ জুড়ে এবং ৭৫০ পর্যন্ত এর প্রভাব চলতে থাকে। মহামারীতে পূর্ব রোমান বা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ২৫ শতাংশ মানুষ এবং পশ্চিম এবং উত্তর ইউরোপের প্রায় একই পরিমানে মানুষ মারা যায়। জলবায়ু শীতলতা এবং প্লেগের প্রভাব দিগুণ হারে পড়ে জনসংখ্যার উপর। এর ফলে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। [৭] গ্রামীণ অঞ্চলে যাতায়াতের বিবরণ দিতে ইফিষের জন উল্লেখ করেন যে "গম পেকে মাঠ জুড়ে সাদা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু গম কাটা বা সংরক্ষণের মত কেউ ছিল না" এবং "আঙ্গুর ক্ষেতে আঙ্গুর পাকার মৌসুম পার হয়ে গেলেও কেউ এগুলো নিতে আসেনি। জন "তীব্র শীত" এর কথা উল্লেখ করে বলেছিল যা সম্ভবত আগ্নেয়গিরির ধুলোর কারণে সৃষ্টি হয়েছিল [৮]

এই কারণগুলির পরিণতি হ'ল ইউরোপের জনসংখ্যা এতই কমে যায় যে ৫০০ শতাব্দীতে যা ছিল ৬০০ শতাব্দীতে এসে আরও কমে যায় জনসংখ্যা। একজন পণ্ডিত অনুমান করেন যে ইতালীর উপদ্বীপে জনসংখ্যা ৫০০ শতাব্দীতে ১১ মিলিয়ন থেকে হ্রাস পেয়ে ৬০০ শতাব্দীতে ৮ মিলিয়নে নেমে যায় এবং প্রায় ৩০০ বছর ধরে এটি অপরিবর্তিত ছিল। [৯] ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল গুলোতেও জনসংখ্যার হ্রাস খুব সম্ববত একই রকম ছিল।

অন্ধকার যুগ সম্পাদনা

জনপ্রিয় মতামতটি হচ্ছে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলে পশ্চিম ইউরোপে একটি "অন্ধকার যুগ" এর আবির্ভাব ঘটে। যেখানে "জ্ঞান এবং নাগরিকতা", "সভ্য শিল্প" এবং "প্রয়োজনীয় শিল্প কলা" উপেক্ষিত হয় বা হারিয়ে গিয়েছিল। [১০] তবে বিপরীতে, মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি সংখ্যক ছিল কৃষক [১১] যারা রোমান সাম্রাজ্যের পরবর্তী সময়ে উন্নতি সাধন করে। রোমের পতন সাক্ষী হয়ে ছিল "করের বোঝা কমে যাওয়া, অভিজাতদের দুর্বল হওয়া এবং ফলস্বরূপ কৃষকদের জন্য বৃহত্তর স্বাধীনতা"। রোমান সাম্রাজ্যের পল্লীগুলি "ভিলা" বা এস্টেট দিয়ে আঁকা ছিল, প্লিনি দ্য এল্ডার চিত্রিত করেন "ইতালির ধ্বংসযজ্ঞ"। বেশিরভাগ সম্পদ ধনী অভিজাতদের মালিকানাধীন ছিল এবং কিছু অংশে দাসদের দিয়ে কাজ করানো হত। [১২] একমাত্র ইংল্যান্ডে ১,৫০০ এরও বেশি ভিলা বিদ্যমান ছিল বলে জানা যায়। [১৩] রোমের পতনের সাথে সাথে ভিলাগুলি পরিত্যক্ত বা অভিজাতদের ব্যবহারের জন্য না রেখে দরকারী কাজে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। "ততদিনে পশ্চিম ইউরোপে আমরা রোমান সাম্রাজ্যের বাজার, সেনাবাহিনী এবং করের বোঝা থেকে মুক্তি এবং স্থানীয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে আরও ব্যাপক ভাবে কৃষির দিকে ফিরে আসার প্রভাব দেখতে পেয়েছি।" [১৪]

ষষ্ঠ শতাব্দীর জনসংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গিয়েছিল যার ফলে দেখা দেয় শ্রমের অভাব এবং গ্রামীণ লোকদের মধ্যে বৃহত্তর ভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যারা আগে হয় দাস ছিল বা রোমান আইনের আওতায় জমির জন্য দায় বদ্ধ ছিল। [১৫]

 
৮১৪[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] সালে চার্লম্যাগনের মৃত্যুতে ইউরোপের চিত্র।

পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য । মধ্যযুগের প্রথমদিকে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের কৃষিক্ষেত্র পশ্চিম ইউরোপের চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিল। ৫ম এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বাজারমুখী এবং শিল্প চাষ, বিশেষত জলপাই তেল এবং ওয়াইনের বিস্তৃতি এবং তেল এবং ওয়াইন কারখানার মতো নতুন প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে দেখা গেছে। পূর্বের বন্দোবস্তের ধরনগুলিও পশ্চিমের চেয়ে আলাদা ছিল। পশ্চিমে রোমান সাম্রাজ্যের ভিলার চেয়ে পূর্বের কৃষকরা এমন গ্রামে বাস করতেন যার স্থায়িত্ব ছিল বেশি এবং এমনকি এটি বাড়ানোও হয়েছিল। [১৬]

আইবেরিয়ান উপদ্বীপ আইবেরিয়ান উপদ্বীপে মনে হয় পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের চেয়ে আলাদা অভিজ্ঞতা ছিল। জনগোষ্ঠীর কারণে কৃষিজমি পরিত্যাগ ও পুনর্নির্মাণের প্রমাণ রয়েছে, তবে ঘোড়া, খচ্চর এবং গাধা পালন এবং বিক্রির জন্য পশুপালন করতেও দেখা যায়। আইবেরিয়ান উপদ্বীপের অর্থনীতি বাকী ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং পরিবর্তে, এটি পঞ্চম শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকার একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠে [১৭] এটি ৭১১ সালে উমাইয়া উপদ্বীপ বিজয়ের বহু আগের ঘটনা।

আইবেরিয়ায় মুসলমানদের কৃষিকাজ সম্পাদনা

 
[[কর্দোবা|স্পেনের[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] কর্ডোভাতে

একটি রোমান সেতু এবং সেচের জন্য মুসলমাদদের নির্মিত জলের চাকা।]]

ঐতিহাসিক অ্যান্ড্রু ওয়াটসন আরব কৃষি বিপ্লবকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, আল আন্ডালাসের বেশিরভাগ আরব ইসলামী শাসকরা (১৫ শতাব্দীর মধ্যে ৮তম অবস্থানে থাকা) আইবারিয়ান উপদ্বীপে ( স্পেন এবং পর্তুগাল ) বিপুল সংখ্যক নতুন ফসল এবং নতুন কৃষি প্রযুক্তি চালু বা জনপ্রিয় করে। আরবদের দ্বারা প্রবর্তিত শস্যগুলির মধ্যে রয়েছে আখ, চাল, শক্ত গম (দুরুম), সাইট্রাস, তুলা এবং ডুমুর। এর মধ্যে অনেকগুলি ফসলের জন্য সেচ, জল ব্যবস্থাপনা এবং "কৃষি প্রযুক্তি যেমন ফসল মাড়াই করণ, কীটপতঙ্গ দূরকরণ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ফসলের সার দেওয়ার প্রয়োজনীয় পরিশীলিত পদ্ধতির প্রয়োজন হয়।" [১৮] কিছু পণ্ডিত প্রশ্ন তুলেছিল যে আরবদের (বা মুসলিম) কৃষিক্ষেত্রে অবদান কতখানি এবং রোমান শাসনের সময়ে মধ্য প্রাচ্যে প্রযুক্তির পুনর্জাগরণ ও প্রসারে কতটা ভূমিকা ছিল। উদ্ভাবনের কৃতিত্ব বেশিরভাগই মধ্য প্রাচ্যের লোকদের রোমান সাম্রাজ্যের সময়ে। অথবা আরবদের আগমনের ক্ষেত্রেই হোক না কেন, "আইবেরিয়ান ভূদৃশ্য গভীরভাবে পরিবর্তিত হয়েছে" অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে। [১৯]

সামন্তবাদ সম্পাদনা

ধীরে ধীরে ভিলা এবং কৃষি জমি আংশিকভাবে দাস বা শ্রমিক ব্যবহারের রোমান পদ্ধতিটি মনোরালিজম এবং ভূমিদাসত্ব এ পরিবর্তিত হয়। ঐতিহাসিক পিটার স্যারিস ষষ্ঠ শতাব্দীর ইতালি এবং এমনকি এর আগে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং মিশরে সামন্ত সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করেছেন। ভিলা এবং মধ্যযুগীয় ম্যানোর এর মধ্যে পার্থক্যের মধ্যে একটি হ'ল ভিলার কৃষি বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রির জন্য বিশেষভাবে করা হত আর ম্যানোর নিজেদের স্বনির্ভরতা জন্য পরিচালিত হত। [২০]

দাসত্ব রোমান সাম্রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ১১০০ সালে পশ্চিম ইউরোপে এটি বিলীন হয়ে যায়। [২১] রোমান সাম্রাজ্যের দাসদের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হত অনেকটাই গৃহপালিত পশুর মতো, যাদের কোন অধিকার ছিল না এবং তাদের মালিকের ইচ্ছায় বিক্রি বা কেনাবেচা করা যেত। একইভাবে, দাসগুলো জমির সাথে আবদ্ধ ছিল এবং তারা দাসত্ব ছাড়তে পারেনি। তবে জমিতে তাদের অধিকার সংরক্ষিত ছিল। যদি ম্যানোর মালিকদের পরিবর্তন করে তবে ভূমিদাসরা জমিতেই থেকে যায়। ভূমিদাসদের সম্পত্তির অধিকার সীমিত ছিল, যদিও তারা তাদের মালিকের কাছে শ্রম বা ভাড়া খাটতো তবুও তাদের চলাফেরার স্বাধীনতাও সীমিত আকারে ছিল । [২২]

সাম্রাজ্যবাদ পুরো উত্তর ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে ১০০০ সালের মধ্যে পুরোদমে ছিল এবং এর কেন্দ্রভূমি ছিল ফ্রান্সের সাইন উপত্যকা এবং ইংল্যান্ডের টেমস উপত্যকার সমৃদ্ধ কৃষিজমি। মধ্যযুগীয় জনগোষ্ঠীকে তিনটি দলে বিভক্ত করা হয়েছিল: প্রথম দল প্রার্থনা করত, অন্য দল লড়াই করত এবং অন্য আরেক দল কাজ করত। [২৩] ভূমিদাস এবং কৃষক শ্রমিক এবং করের সমর্থিত পাদরীবর্গ যারা প্রার্থিত এবং উচ্চশ্রেণীর রাজকর্মচারী, নাইট এবং সৈনিক যারা যুদ্ধ করত। এর বিনিময়ে তারা কৃষক আরোহী এবং ভারী সাঁজোয়া সৈন্যদের দ্বারা ধর্ম এবং সুরক্ষার সুবিধা (বা কোন কিছু থেকে মুক্তি) পেত। চার্চটি তার দশমাংশ (খাজনারুপে প্রদেয় এক দশমাংশ) নিত এবং সৈন্যদেরও একটি বিশাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগের প্রয়োজন ছিল। পুরোহিত, নাইট এবং কৃষকের মধ্যে একটি সামাজিক এবং আইনি চুক্তি ছিল। তদুপরি, ক্যারোলিংগীয় সাম্রাজ্যের সমাপ্তির পরে (৮০০-৮৮৮), রাজাদের শক্তি হ্রাস পায় এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে খুব কমই অনুভূত হয়। সুতরাং, ইউরোপীয় গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ কৃষক, কিছু তুলনামূলকভাবে সমৃদ্ধ, কিছু জমি অধিকারী এবং কিছু ভূমিহীন শাসনকর্তা ক্ষুদ্র, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ফিফডমদের প্রভু এবং পাদ্রিদের শাসনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। [২৪]

 
ওপেন-ফিল্ড[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] সিস্টেমের সাথে একটি প্রকল্পিত ইউরোপীয় মধ্যযুগের ম্যানোর পরিকল্পনা।
 
কৃষকরা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] সাধারণত প্রায় এক ডজনেরও বেশি লম্বা এবং সরু রেখাংশা এবং সেতুর খাঁজের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমির মালিক হন

বেশিরভাগ ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের সমাপ্তির ক্ষেত্রে অবদান রাখার একটি প্রধান কারণ ছিল ১৩৪৭–-১৩৫১ এর কালো মৃত্যু এবং মহামারী পরবর্তী অবস্থা যেটিতে ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। ব্ল্যাক ডেথ এর পরে জমি ছিল অনেক কিন্তু শ্রম ছিল কম এবং কৃষকদের মধ্যেও সুসম্পর্ক ছিল না। সেই সাথে গির্জা, এবং আভিজাত্যে অনেক পরিবর্তন আসে। [২৫] সামন্ততন্ত্রকে সাধারণত ১৫০০ সালের দিকে পশ্চিমা ইউরোপে সমাপ্তি হিসাবে গণ্য করা হয়, যদিও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ায় ১৮৬১ সাল পর্যন্ত ভূমিদাসদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। [২৬]

ম্যানোর । সামন্ততন্ত্রের অধীনে মধ্যযুগে কৃষিকাজ সাধারণত ম্যানোরে করা হত। মধ্যযুগীয় এক একটি ম্যানোর কয়েকশ (বা কখনও কখনও হাজার) একর জমি নিয়ে গঠিত। একটি বড় ম্যানোরে আংশিক বা খন্ডকালীন ভিত্তিতে কাজ করা হত। কিছু ম্যানোর ক্যাথলিক গির্জার বিশপ বা অ্যাবটসের কর্তৃত্বাধীন ছিল। কিছু জমির মালিকের একাধিক ম্যানোর ছিল এবং চার্চ বৃহত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করত। ম্যানোরে জমির মধ্যে, একটি প্যারিশ গির্জা এবং একটি নিউক্লিকেটেড গ্রাম কৃষকদের বাসবাসের জন্য ছিল বা সাধারণত ম্যানোর বাড়ির কাছাকাছি ছিল। ম্যানোর ঘর, গির্জা এবং গ্রাম চারদিকে চাষাবাদ ও পতিত জমি, কাঠ এবং চারণভূমি দ্বারা বেষ্টিত ছিল। কিছু জায়গা ছিল মালিকের কার্যক্ষেত্র; কিছু কৃষকদের জন্য আলাদা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল, এবং কিছু পারিশ ধর্মযাজকদের দেওয়া হয়েছিল। কিছু কাঠ এবং চারণভূমির মত ছিল এবং সেখানে পশু চারণ এবং কাঠ সংগ্রহ করা হত। বেশিরভাগ ম্যানারের মধ্যে শস্য পিষানোর জন্য একটি কল এবং রুটি বানানোর জন্য একটি ওভেন ছিল। [২৭][২৮]

জমির ধরন সম্পাদনা

 
মধ্যযুগীয়[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ইউরোপে তিন ধরনের জমি ছিল
 
স্কটল্যান্ডের[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] এই উন্মুক্ত মাঠে মধ্যযুগের স্বতন্ত্র শৈলশিরা এবং খাঁজের অংশ বিশেষ টিকে আছে।

মধ্যযুগীয় ইউরোপের জমির ধরন উন্মুক্ত-মাঠ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত ছিল, এমনটা ছিল কারণ বিভিন্ন কৃষকের জমির মধ্যে কোনও সীমানা ছিলনা। জমি গুলো দেখতে বেশ বড় এবং একাধারে একটি বড় জমির মতই ছিল। এর প্রত্নতাত্ত্বিক আকারে, চাষাবাদ করা জমিটিতে একটি লম্বা, সরু রেখাচিত্র শৈলশিরা এবং খাঁজ কাটা সেতু বন্ধন নকশার মত ছিল। এর কারণ ছিল কৃষকরা চাষের জায়গার চারপাশে নিজস্ব মালিকানায় খামারের মত করেছিল। জমির ছড়িয়ে থাকার কারণ স্পষ্টতই ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য ছিল; যাতে একটি মাঠের ফসল নষ্ট হয়, তবে এটি অন্য মাঠে সাফল্য লাভ করতে পারে। গির্জার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পারিশ ধর্মযাজকের মতো ম্যানোরের মালিকও মাঠের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমির দেখাশুনা করত। উন্মুক্ত ক্ষেত্র ব্যবস্থার জন্য সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের সাথে মালিক এবং ধর্মযাজকদের সম্মিলিত সহযোগিতার প্রয়োজন হত। "যদিও জমির খন্ডাংশ গুলো আলাদা আলাদা চাষ করা হত, তবুও সাম্প্রদায়িক আবর্তনের এবং (সাধারণত) ফসলের সাম্প্রদায়িক নিয়ন্ত্রণের বিষয় ছিল।" [২৯][৩০]

দুই ধরনের চাষের ব্যবস্থা উন্মুক্ত মাঠ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ছিল। প্রথমদিকে, আবাদি জমিটি দুটি জমিতে বিভক্ত ছিল। একটি অর্ধেক চাষ করা হত এবং অন্যটি প্রতি বছর পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। প্রতি বছর দুটি মাঠের মধ্যে ফসল পালটা পালটি করে চাষ করা হত। পতিত ক্ষেতটি তার উর্বরতা ফিরে পাওয়ার জন্য ফেলে রাখা হত এবং ফসলের জন্য উপযুক্ত না হলে পশু চারণের জন্য ব্যবহৃত হত। মধ্য-যুগে শুষ্ক-গ্রীষ্মের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে যেখানে দ্বি-ক্ষেত্র শস্যের ফসল চাষাবাদ হয় এবং বসন্তকালে কাটা হয়, গ্রীষ্মকালে প্রচুর গরম থাকতো যাতে বসন্তের জন্য ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। [৩১]

উত্তর ইউরোপের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে এর জলের আবহাওয়ার সাথে এই তিন-ধরনের পদ্ধতি আদর্শ ছিল। একটি ক্ষেত শরত্কালে রোপণ করা হয়, একটি ক্ষেত বসন্তে রোপণ করা হয় এবং তৃতীয় ক্ষেতটি ফেলে রাখা হয়। একেক বছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চাষ করা হত। যার ফলে দ্বি-ক্ষেত্র চাষাবাদের ধরনে চাষাবাদ আরও নিবিড় ছিল। উভয় নিদর্শনেই কাঠ এবং চারণভূমির সাধারণ অঞ্চলের পাশাপাশি পতিত ক্ষেত্রগুলিকে সাম্প্রদায়িক চারণ এবং কাঠ সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হত। [৩১]

সাধারণ জমি নিয়ে গঠিত কাঠ এবং চারণভূমিগুলি ম্যানরের সমস্ত কৃষকদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল, তবে পশুর সংখ্যা কঠোরভাবে নির্ধারিত ছিল ফলে কেউই অতিরিক্ত ভাবে চারণভূমিতে পশু পালন করতে পারত না। অনাবাদি জমি গুলোও পশু ফালনের জন্য উন্মুক্ত ছিল। [৩২]

উন্মুক্ত ক্ষেত্র ব্যবস্থায় আরও স্বাতন্ত্র্যবাদী, কম-সাম্প্রদায়িক বৈচিত্র ছিল যা সাধারণত কৃষির জন্য কম উৎপাদনশীল ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হত। খন্ডিত জমির ফসল গুলো বেশ ভাল হতো আবার কখনো কখনোও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমির চেয়ে একক জমিতে ভাল হত। ফসল সংক্রান্ত যে কোন সিদ্ধান্ত প্রায়শই পুরো গ্রামের মধ্যে ব্যক্তি বিশেষ বা কৃষকদের একটি ছোট দল নিয়ে থাকত। একজন কৃষক উন্মুক্ত মাঠ চাষাবাদের জমির পাশাপাশি, কাঠ এবং চারণভূমির অধিকারী হতে পারত। প্রত্নতাত্ত্বিক উন্মুক্ত ক্ষেত্র ব্যবস্থার মতো গ্রামগুলি প্রায়শই একত্রিত না থেকে রাস্তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠে। [৩৩]

 
দক্ষিণ-পশ্চিম[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ইংল্যান্ডে একটি পাথরের মুখোমুখি বাঁধ বিভাজন ক্ষেত্র।

একটি বদ্ধ ক্ষেত্র ব্যবস্থার মধ্যে বেশিরভাগ যাজকদের দেখাশুনার অঞ্চল, মিশ্র কৃষিকাজ এবং চারণভূমির অঞ্চল এবং আরও প্রান্তিক কৃষিক্ষেত্র হিসেবে পাওয়া গেছে। বদ্ধ মাঠ পদ্ধতিতে পৃথক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈশিষ্ট ছিল। কৃষকরা সাধারণত তাদের জমিটি বাঁধ, পাথর বা গাছ দ্বারা ঘিরে রাখত। গ্রামের গির্জা প্রায়শই একটি বিশিষ্ট স্থানে ছিল এবং বাড়িগুলিকে কোনও গ্রামে কেন্দ্রীয় করণের চাইতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়া হয়েছিল। এই স্বতন্ত্রবাদী চাষের ব্যবস্থাটি পূর্ব ও দক্ষিণ - পশ্চিমা ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের নর্ম্যান্ডি এবং ব্রিটনিতে এবং পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। [৩৪]

কৃষকদের অধিকার সম্পাদনা

কৃষকদের চাষাবাদ কৃত পুরো জমির উপরে সমান ভাবে অধিকার ছিল না। ১২৭৯-সালে সাতটি ইংরেজি প্রদেশের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্ভবত পুরো ইউরোপের সাধারণত ৪৬ শতাংশ কৃষকের জমির পরিমান ছিল ১০ একর (৪.০ হেক্টর) এর কম, যা একটি পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। কিছু পুরোপুরি ভূমিহীন ছিল, বা তাদের বাড়ির সংলগ্ন কেবল একটি ছোট বাগান ছিল। এই দরিদ্র কৃষকরা প্রায়শই ধনী কৃষকদের কাজ করে দিত, বা কৃষিকাজ ছাড়াও খামারের অন্য কাজ গুলো করত। [৩৫]

৩৩ শতাংশ কৃষক প্রায় অর্ধেক অনাবাদি জমি ( ১২ একর (৪.৯ হেক্টর) থেকে ১৬ একর (৬.৫ হেক্টর) জমির অধিকারি ছিল। যা বছরে একটি পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট। ২০ শতাংশ কৃষক পুরো একটি অনাবাদি জমির মালিক ছিল। যা একটি পরিবার চালিয়ে আরো বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল। কয়েকজন কৃষক অনাবাদি জমির চেয়ে আরো বেশি জমির মালিক হয়ে যান যার ফলে তারা আরো ধনী হয়ে গেলেও মর্যাদার দিক থেকে অতটা উপরে উঠতে পারেনি। এই ধনী কৃষকরা তাদের জমি ভাড়া দিত এবং শ্রমিক দিয়ে তাদের জমিতে কাজ করিয়ে নিত [৩৫]

আবাদি জমির ৩২ শতাংশ জমির মালিকের হাতে থাকত। ম্যানরের কৃষকদের প্রতিবছর মালিকের জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন গুনে কাজ করতে হত বা তাদের কৃষিত জমির জন্য মালিকের কাছে ভাড়া দেওয়া লাগত। [৩৬]

ফসল সম্পাদনা

ইউরোপের শেষ দিকে রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল ছিল ইতালির রুটি গম এবং উত্তর ইউরোপ এবং বালকানদের বার্লি । ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে আঙ্গুর চাষ এবং জলপাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাই এবং ওটস কেবল মাত্রই প্রধান ফসল হয়ে উঠছিল। [৩৭] রোমানরা এবং উপত্যকার যেমন প্যারিস এর আরো উত্তর এলাকায় আঙুর চাষের প্রচলন করেন লোরেন এবং রাইন নদী এর কাছে। জলপাই এর চাষ মধ্যযুগের ফ্রান্সে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ইতালি সীমানায় ঐতিহ্যবাহী ছিল, কিন্তু দৃশ্যত জলপাই চাষ ল্যাঙ্গুয়েডক এ ব্যাপক আকারে চাষাবাদ শুরু হয় ১৫শ শতাব্ধীর দিকে। [৩৮][৩৯][৪০]

রোমান যুগে, স্পেল্ট, এক ধরনের গম, জার্মানির সোয়াবিয়ার উপরের ডানুব নদীর উপর ফলিত সবচেয়ে সাধারণ শস্য গুলোর একটি। মধ্যযুগীয় সময়ে ইউরোপের অনেক অঞ্চলে স্পেল্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসাবে প্রচলিত হয়। সোয়াবিয়া এবং ইউরোপের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমার গমের গুরুত্ব অনেকটাই কম ছিল। রুটি গম সোয়াবিয়ায় তুলনামূলকভাবে গুরুত্বহীন ছিল। [৪১]

অষ্টম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে, উত্তর ফ্রান্সে, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফসল গুলোর মধ্যে ছিল (আনুমানিক ক্রমে) রাই ( সিকেলের সিরিয়াল ), রুটি গম, বার্লি এবং ওটস ( আভেনা স্যাটিভা )। বার্লি এবং ওটস নরম্যান্ডি এবং ব্রিটানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল ছিল। [৪২] রাই শীতকালীন সবজি এবং গমের চেয়ে অনুর্ভর মাটিতে হয়ে যেত বলে অনেক প্রান্তিক এবং উত্তরের ইউরোপীয় অংশে বেশি ফলানো হত। [৪৩] আরেকটি কষ্টসহিষ্ণু ফসল বেরে, এটি এক ধরনের বার্লি, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং ইংল্যান্ডে এবং বিশেষত স্কটল্যান্ডের প্রান্তিক কৃষিক্ষেত্রের মধ্যে জন্মাত। [৪৪]

নেদারল্যান্ডস এবং সংলগ্ন ফ্রান্সের নিম্নভূমির মাটি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফসল ফলাতে হত। বালুকাময় মাটিতে, তিন-ক্ষেত্র ব্যবস্থায় ফসল ফলান হত। গম শীতের ফসল হিসাবে রাইয়ের সাথে রোপণ করার জন্য অনুপযুক্ত ছিল এবং ওটস এবং বার্লি মূলত বসন্ত কালের ফসল ছিল। আরও উর্বর আঁশ যুক্ত দোআঁশ মাটিতে গম স্পেল্ট অনেক অঞ্চলে রাইয়ের পরিবর্তে আরও চাহিদা জনক হয়ে উঠে। অন্যান্য ফসলের মধ্যে ডাল (মটরশুটি এবং মটর) এবং ফলমূল এবং শাকসবজী অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলগা ও দো-আঁশযুক্ত মাটির কৃষকরা বালু যুক্ত মাটির চেয়ে ব্যাপক আকারে বিভিন্ন ফসল রোপণ করতে পারত। [৪৫]

উইল্টশায়ার ইংল্যান্ডে ১৩ এবং ১৪তম শতাব্দীতে, গম, বার্লি এবং ওটস এই তিনটি সাধারণ ফসল ছিল যে গুলো ম্যানরে ভিন্ন ভিন্ন শতাংশ হারে উৎপন্ন করা হত। সাধারণ জমিতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত লেগুম গাছ লাগানো হয়। [৪৬] উন্মুক্ত মাঠ ব্যবস্থার সাধারণ জমিতে শস্যের ফসল ছাড়াও কৃষকের বাড়ির কাছা কাছি একটি ছোট বাগান (ছোট জমি) থাকত যেখানে তারা বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, মটর এবং মটরশুটি জাতীয় সবজি জন্মাত; সেই সাথে থাকতো একটি আপেল, চেরি বা নাশপাতি গাছ; আর দু একটি শুকর কিংবা এক ঝাঁক হাঁস। [৪৭]

প্রাণিসম্পদ । ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের তুলনায় উত্তর ইউরোপে প্রাণিসম্পদ অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেননা গ্রীষ্মে শুষ্ক আবহাওয়াতে পশু পালনের চারণ ভূমি শুকিয়ে যেত। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, ভেড়া এবং ছাগল ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খামারী প্রাণী। উত্তর ইউরোপে গরু, শূকর এবং ঘোড়াও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। [৩৭] ভূমধ্যসাগরীয় জমিতে উত্তর ইউরোপে সাধারণ অঞ্চলের তুলনায় হালকা ছিল, ফলে সাধারণ ভাবেই পালনের জন্য গরু এবং ঘোড়ার প্রয়োজনীয়তা ভূমধ্যসাগরীয় কৃষকদের কম ছিল। [৪৮] পালনের জন্য গবাদি পশু হিসেবে, বিশেষত গরু উত্তর ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চাষের জন্য মাটি তৈরির জন্য আটটি ষাঁড় দিয়ে লাঙল বানানো হত। খুব কম সংখ্যক কৃষকেরই এতগুলো পশুর মালিক হওয়া সম্ভব ছিল যার ফলে কৃষকরা নিজেদের মধ্যে প্রাণী গুলো ভাগাভাগি করে প্রয়োজন মেটাত। রোমান আমলে ঘোড়া ছিল বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তির মালিকানাধীন। তবে প্রায় ১০০০ শতকের পর তারা ঘোড়ার পরিবর্তে গরু পালা শুরু করে। গরু পালা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সস্তা ছিল, আর ঘোড়া পালা ছিল কিছুটা কষ্টকর। [৪৯] মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ড এবং উত্তর ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে মাংসের উৎস হিসেবে শূকর ছিল সর্বাধিক পালিত পশু। শূকর পালা সহজ ছিল এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও কম করা লাগত। বাজারে ভেড়ার দাম শুকরের চেয়ে কম হলেও উল, চামড়া (লেখা এবং অন্যান্য কাজের জন্য), মাংস ও দুধের জন্য ভেড়া পালন করতেই হত। [৫০]

প্রমোদ সম্পাদনা

 
উন্মুক্ত[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] মাঠ বেষ্টিত মধ্যযুগীয় গ্রামের অনুরূপ একটি দৃশ্য। যেটিতে চিত্রিত করা হয় একটি আধুনিক দিনের প্রাকৃতিক দৃশ্য। যাতে দেখা যায় বড় বড় প্রতিটি মাঠকে বিভিন্ন কৃষকের চাষ করার জন্য জমি গুলো দীর্ঘ, সরু রেখাচিত্রে ভাগ করে রাখা হয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীর তুলনায় মধ্যযুগে ফসলের ফলন অত্যন্ত কম ছিল, যদিও সম্ভবত মধ্যযুগের পূর্ববর্তী রোমান সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ এবং মধ্যযুগের পরবর্তী যুগের প্রাথমিক যুগের চেয়ে খুব একটা কম নয়। [৫১] ফলন গণনা করার সর্বাধিক সাধারণ উপায় হ'ল রোপিত বীজের সংখ্যার তুলনায় কাটা বীজের সংখ্যা। উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডের সাসেক্স এ বেশ কয়েকটি ম্যানোরের উপর নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৩৫০-১৩৯৯ বছরের গড় ফলন ছিল গমের জন্য বপন করা প্রতিটি বীজের জন্য ৪.৩৪ বীজ, যবের জন্য ৪.০১ এবং ওটসের জন্য ২.৮৭ টি বীজ উৎপাদিত হয়। [৫২] (বিপরীতে, একবিংশ শতাব্দীতে গম উৎপাদন প্রতিটি বপনের জন্য ৩০ থেকে ৪০ টি বীজ সংগ্রহ করতে পারত। ) ইংল্যান্ডে ১২৫০ থেকে ১৪৫০ পর্যন্ত শস্যের ফসলের গড় ফলন ছিল একর প্রতি ৭ থেকে ১৫ টি বুশেল (প্রতি হেক্টরে ৪৭০ থেকে ১০০০ কেজি)। দুর্যোগপূর্ণ বছর গুলোতে, একর প্রতি ফলন কমে ৪ টি বুশেলে নেমে যেত। [৪৬] বিপরীতে, একবিংশ শতাব্দীতে ফলন একর প্রতি ৬০ বুশেল পর্যন্ত হত। [৫৩] ইংল্যান্ডে ফলন মধ্যযুগে ইউরোপের জন্যে সম্ভবত খুব একটা আহামরি ছিল না।

পন্ডিতরা প্রায়শই মধ্যযুগীয় কৃষিকে এর অদক্ষতা এবং কম উৎপাদনশীলতার জন্য সমালোচনা করেছেন। প্রচলিত ব্যবস্থার জড়তাকেই দোষ দেওয়া হয়েছিল। "প্রত্যেকে শস্য, ফসল সংগ্রহ ও গ্রামে বসবাসের নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হয়েছিল।" [৫৪] প্রধান উন্মুক্ত ক্ষেত্র ব্যবস্থার দুটি স্বনামধন্য অদক্ষতা হ'ল জমির সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থাপনা যার ফলস্বরূপ সম্পদের অনুকূল বরাদ্দের চেয়ে কম এবং কৃষকদের চাষাবাদ করার জন্য জমি ছিল ছোট এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। যার জন্য একটি অংশ থেকে অন্য অংশে যেতে সময় লেগে যেত বেশি। এই ধরনের অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও, উন্মুক্ত ক্ষেত্র ব্যবস্থাটি ইউরোপের বিশাল অংশে প্রায় এক হাজার বছর ধরে বিদ্যমান ছিল এবং ১৫০০ থেকে ১৮০০ সালের দিকে ধীরে ধীরে শেষ হতে লাগল। [৫৫] তদুপরি, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তির দ্বারা উন্মুক্ত ক্ষেত্র ব্যবস্থাটি প্রতিস্থাপন সমাজের অনেক উৎপাদন বাঁধা প্রাপ্ত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর পর থেকে কঠোর, আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং পুঁজিবাদী সমাজের "সাহসী নতুন বিশ্ব" খোলা-মাঠ ব্যবস্থায় জমির মেয়াদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা ধ্বংস করে দিয়েছে। [৫৬]

"পোস্তান থিসিস" এ মধ্যযুগীয় কৃষির নিম্ন উৎপাদনশীলতার একটি কারণ উল্লেখ করা হয়। জমি উৎপাদনশীল রাখতে অপর্যাপ্ত সার প্রয়োগের ফলে উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হয়েছে। একই সাথে খামারীদের জন্য চারণভূমির ঘাটতি এবং আবাদি জমিতে অধিক সার দেওয়ার ফলে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সারের ও সংকট ছিল। অধিকন্তু, ১০০০ সালের পর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে, প্রান্তিক জমি, চারণভূমি এবং কাঠ সংগ্রহের বন গুলোও আবাদি জমিতে রূপান্তরিত করা হয় যার ফলে পশু পালন এবং সারের পরিমানও কমে যায়। [৫৭]

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অগ্রগতির প্রথম প্রমাণ দেখা যায় ১৪শ ও ১৫শ শতাব্দীতে নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের নিচু অঞ্চলের দেশগুলিতে এবং উত্তর ফ্রান্সের ফ্ল্যান্ডার্স অংশে। সেখানে কৃষি কাজের মাধ্যেমে পতিত জমির কাছাকাছি ফলান হত কভার শস্য যেমন ছোলা, মটরশুটি, শালগম, স্পুরি এবং গুল্ম জাতীয় শস্য এবং উচ্চ মানের ফসল রাই সরিষা, লতাবিশেষ শস্য এবং হপস। মধ্যযুগীয় সময়ের একত্রে চাষাবাদের বিপরীতে, এই নতুন কৌশলটিতে ছোট ছোট খণ্ডে জমির নিবিড় চাষ করা হত। নিবিড় চাষের কৌশলগুলি ইংল্যান্ডের নরফোকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং এটি ইংল্যান্ডের কৃষি কাজের জন্য সর্বাধিক উন্নত অঞ্চল। [৫৮] এই অগ্রগতি ছাড়াও ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ কৃষি বিপ্লব নামে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছিল ১৭শ শতাব্দীর আগেই। [৫৯]

মধ্যযুগীয় নিম্ন স্তরের ফলন ১৯ শতাব্দী অবধি রাশিয়া এবং অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলে অব্যাহত ছিল। ১৮৫০ সালে, রাশিয়ায় শস্যের গড় ফলন ছিল হেক্টর প্রতি ৬০০ কিলোগ্রাম (একর প্রতি প্রায় ৬ টি বুশেল), ইংল্যান্ড এবং তৎকালীন নিচু অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এর অর্ধেকেরও কম ফলন হত। [৬০]

দুর্ভিক্ষ সম্পাদনা

ফসলের কম উৎপাদন এবং পরিবেশ গত কারণে খারাপ বছর গুলোতে দুর্ভিক্ষ মধ্যযুগীয় ইউরোপে চিরকালীন বিপদ ছিল। অন্য অঞ্চল থেকে শস্য আমদানি করে এক অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায়ই সম্ভব হত না কারণ ওভারল্যান্ডের পরিবহনের অসুবিধার কারণে ৫০ মাইল পরিবহন করতেই ফসলের মূল্য দিগুণ হয়ে যেত। [৬১]

একটি সমীক্ষায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ইউরোপে ৭৫০ থেকে ৯৫০ সালের মধ্যে প্রতি ২০ বছর গড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মূল কারণগুলি ছিল খারাপ আবহাওয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত অসঙ্গতি যা কৃষি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধ দুর্ভিক্ষের একটি বড় কারণ হিসাবে দেখা যায় নি। [৬২] ইংল্যান্ডের উইনচেস্টারে ১২৩২ থেকে ১৩৪৯ সাল পর্যন্ত ফসলের কম উৎপাদনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গমের জন্য প্রতি ১২ বছর গড়ে এবং বার্লি এবং ওটসের জন্য প্রতি ৮ বছরে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। স্থানীয় দুর্ভিক্ষ কয়েক বছর ধরে চলত যার ফলে এক বা একাধিক ফসলের ক্ষয় ক্ষতি হত। এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য আবহাওয়াকেই মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভবত ছোট্ট বরফযুগটি ১২৭৫ থেকে ১৩০০ এর মধ্যে শুরু হয়েছিল যার ফলে উৎপাদনের মৌসুমটি হ্রাস পায়। [৬৩]

আপাতদৃষ্টিতে ১২৪৩ থেকে ১২৪৫ সাল পর্যন্ত হাঙ্গেরিতে যুদ্ধকেই একটি বড় দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা যায়। এগুলি ছিল মঙ্গোল আক্রমণ এবং ব্যাপক ধ্বংসের পরবর্তী বছরগুলি। হাঙ্গেরির বিশ-পঞ্চাশ শতাংশ লোক ক্ষুধা ও যুদ্ধে মারা গেছে বলে অনুমান করা হয়। [৬৪]

মধ্যযুগের সর্বাধিক পরিচিত এবং সর্বাধিক বিস্তৃত দুর্ভিক্ষটি ছিল ১৩১৫–-১৩১৭ সালের বৃহত্তম দুর্ভিক্ষ (যা বাস্তবে ১৩২২ অবধি স্থায়ী ছিল) উত্তর ইউরোপের ৩০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, যার মধ্যে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ মারা গিয়েছিল। জনসংখ্যা ও সমৃদ্ধির তিন শতাব্দীর সমৃদ্ধ হওয়ার শেষের দিকে এসেছিল দুর্ভিক্ষ। কারণগুলি হ'ল "তীব্র শীত এবং বৃষ্টিপাত, ঝরনা এবং বন্যা" এবং ফসলের ফলন এক তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল। গবাদি পশু পাখিও ব্যাপক হারে মারা গিয়েছিল। ১৩৪৭-১৩৫২ এর ব্ল্যাক ডেথ আরও মারাত্মক ছিল, তবে মহা দুর্ভিক্ষ ছিল পরবর্তী মধ্যযুগের সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। [৬৫]

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সম্পাদনা

 
একটি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] মধ্যযুগীয় লাঙ্গল
 
ঘোড়া[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] চালির লাঙ্গল। সামনের দিকের ঘোড়ার বুকে একটি বন্ধনী দিয়ে পেছনের ঘোড়া সংযোগ করে রাখা হত

মধ্যযুগে কৃষিক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন হ'ল ১০০০ সালের দিকে ছাঁচ বোর্ড লাঙলের এবং এটির প্রায় কাছাকাছি সুবিধার ভারী লাঙল। এই দুটি লাঙ্গল মধ্যযুগীয় কৃষকদের উত্তর ইউরোপের উর্বর কিন্তু ভারী কাদামাটি চাষের উপযোগী করতে সক্ষম করেছিল। রোমান যুগে এবং হালকা মাটিতে অর্ড বা স্ক্র্যাচ লাঙ্গল যথেষ্ট ছিল। ছাঁচবোর্ড এবং ভারী লাঙলগুলি মাটির উপরে পরিণত আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং জমিতে মিশিয়ে দিত ফলে উর্বরতার বৃদ্ধি ঘটে। ছাঁচবোর্ডের লাঙন মধ্যযুগীয় ক্ষেত্রগুলির পরিচিত রিজ এবং ফুরো প্যাটার্ন তৈরি করেছিল যা অতিরিক্ত আর্দ্রতা নিষ্কাশন করতে সহায়তা করে। "উন্নত জমির জল নিষ্কাশন, সর্বাধিক উর্বর মাটি তৈরি এবং কৃষকের শ্রমের সাশ্রয় করার মাধ্যমে ভারী লাঙল খাদ্য উৎপাদনকে তরান্বিত করেছিল। যার ফলস্বরূপ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যান্য কাজ, নগরায়ণ এবং অবসর বিনোদন প্রভৃতি কাজে মনোনিবেশ সহজ ছিল" । '" [৬৬]

১০০০ সালের মধ্যে ইউরোপে সাধারণ ব্যবহারে আগত দুটি অতিরিক্ত অগ্রগতি হ'ল ঘোড়ার বন্ধনী এবং ঘোড়ার জুতা । ঘোড়ার বন্ধনী ঘোড়া দিয়ে মালামাল টানানোর ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আর ঘোড়ার জুতা খুর গুলোকে সুরক্ষিত রাখে। এই অগ্রগতির ফলে ঘোড়া ধীরে ধীরে চলমান বলদের পরিবর্তে গৃহ পালিত পশু হিসেবে পরিবহিনের কাজে ব্যবহার হতে লাগল। [৬৭][৬৮]

এই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং অতিরিক্ত কৃষিজ উৎপাদন তাদেরকে তরান্বিত করেছিল যার ফলে ইউরোপ জনসংখ্যার ১০০০ সাল থেকে (বা তারও আগের) থেকে ১৩০০ সালে বৃদ্ধি পেয়েছিল। যেটি একটি মহা দুর্ভিক্ষ এবং ১৪শ শতাব্দীর ব্ল্যাক ডেথ এর কারণে হ্রাস পেয়েছিল। [৬৯]

মধ্যযুগের লম্বা পুরুষ সম্পাদনা

যদিও মধ্যযুগকে প্রায়শই কৃষক এবং অন্যান্য শ্রমিকদের বঞ্চনা ও নিপীড়নের যুগ হিসাবে চিত্রিত করা হয়, তবে প্রমাণ রয়েছে যে মধ্যযুগীয় কৃষকের জীবন রোমান সাম্রাজ্যের গড় নাগরিকদের চেয়ে খুব একটা কঠিন ছিল না। বরং তার চেয়ে ভাল ছিল, মধ্যযুগের আগে এবং মধ্যযুগের পরে প্রাথমিক যুগ (খ্রি. ১৫০০ থেকে ১৮০০) এর আগে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কঙ্কাল পরীক্ষা করে দেখা যায়, উত্তর ইউরোপের ( স্ক্যান্ডিনেভিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং ইংল্যান্ড) পুরুষদের গড় উচ্চতা ১৭৩.৪ সেন্টিমিটার (৬৮.৩ ইঞ্চি) যারা ১০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে মারা গিয়েছিলেন। এরপরে উত্তর ইউরোপের গড় দৈর্ঘ্য হ্রাস পেয়েছে, ১৭তম এবং ১৮ তম শতকে পুরুষদের গড় উচ্চতা ১৬৭ সেন্টিমিটার (৬৬ ইঞ্চি)। জনসংখ্যার গড় উচ্চতা থেকে বুঝা যায় তাদের খাদ্য, পোশাক, আশ্রয় এবং চিকিৎসা যত্নের মতো প্রয়োজনীয় সুবিধার পর্যাপ্ততা ছিল। উনিশ শতক পর্যন্ত শহরগুলি অসম্ভব রকমের অস্বাস্থ্যকর ছিল এবং যার তুলনায় মধ্যযুগীয় কৃষকের গ্রামীণ জীবন অনেকটাই স্বাস্থ্যকর ছিল। [৭০]

সমগ্র ইউরোপ থেকে সংগৃহীত ৯,৪৭৭ টি কঙ্কালের পরীক্ষা করে একইরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গিয়েছিল যে মধ্যযুগের ইউরোপীয় পুরুষরা তাদের রোমান আদি পূর্বপুরুষ এবং আধুনিক উত্তরসূরীদের তুলনায় কিছুটা লম্বা ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের সময় পুরুষদের গড় উচ্চতা ছিল প্রায় ১৭০.০ সেন্টিমিটার (৬৬.৯ ইঞ্চি)। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে, রোমের পতনের ঐতিহ্যগত তারিখের অল্প সময়ের পরে, গড় উচ্চতা লাফিয়ে ১৭২.০ সেন্টিমিটার (৬৭.৭ ইঞ্চি) হয়ে যায়, এবং মধ্যযুগের পুরুষরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোমানদের তুলনায় গড়ে কিছুটা লম্বা ছিল। ইউরোপের পুরুষদের গড় উচ্চতা ১৬৯.০ সেন্টিমিটার (৬৬.৫ ইঞ্চি) এর কিছুটা কমে যায় ১৭শ শতাব্দীর দিকে। [৭১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Heather, Peter (2006), The Fall of the Roman Empire, Oxford: Oxford University Press, pp. 193-199, 429-430
  2. Caltron, J.H Hayas (1953),Christianity and Western Civilization, Palo Alto: Stanford University Press, p.2
  3. Dictionary of Medieval Latin," http://www.dmlbs.ox.ac.uk/british-medieval-latin/language/latin-in-the-middle-ages ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০৮-০৯ তারিখে, accessed 24 Jul 2018
  4. Dawkins, R.M. 1916. Modern Greek in Asia Minor. A study of dialect of Silly, Cappadocia and Pharasa. Cambridge: Cambridge University Press.
  5. Zielinski, Sarah (2015), Smithsonian Magazine, https://www.smithsonianmag.com/science-nature/sixth-century-misery-tied-not-one-two-volcanic-eruptions-180955858/, accessed 23 Jul 2018
  6. Büntgen, Ulf; Myglan, Vladimir S. (মার্চ ২০১৬)। "Cooling and societal change during the Late Antique Little Ice Age from 536 to around 660 AD": 231–236। ডিওআই:10.1038/ngeo2652 
  7. Horgan, John, "Justinian's Plague," Ancient History Encyclopedia, https://www.ancient.eu/article/782/justinians-plague-541-542-ce/, accessed 23 Jul 2018
  8. Little, Lester K., ed. (2007), Plague and the End of Antiquity: The Pandemic of 541-750, Cambridge: Cambridge University Press, p. 7
  9. Barbiera, Irene; Dalla-Zuanna, Gianpiero (২০০৯)। "Population Dynamics in Italy in the Middle Ages: New Insights from Archaeological Findings": 367–389। জেস্টোর 25487670ডিওআই:10.1111/j.1728-4457.2009.00283.x 
  10. Ward-Perkins, Bryan (2005), The Fall of Rome and the End of Civilization, Oxford: Oxford University Press, p. 2
  11. Eberling, Richard M., "Lords and Serfs in Medieval Europe," Foundation for Economic Education, https://fee.org/articles/lords-and-serfs-in-medieval-europe/, accessed 24 Jul 2018
  12. Pounds, N. J. G. (1990), An Historical Geography of Europe, Cambridge: Cambridge University Press, pp. 63-64
  13. "The Emergency of Villa Landscapes," https://www2.rgzm.de/transformation/unitedKingdom/villas/VillaeLandscapes.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে, accessed 24 Jul 2018
  14. Lewit, Tamara (১৬ জানুয়ারি ২০০৯)। "Pigs, presses and pastoralism: farming in the fifth to sixth centuries AD": 77–91। ডিওআই:10.1111/j.1468-0254.2009.00245.x 
  15. Maugh II, Thomas H. (6 May 2002), "An Empire's Epidemic," Los Angeles Times,, http://www.ph.ucla.edu/epi/bioter/anempiresepidemic.html, accessed 24 Jul 2018
  16. Lewit, pp. 85-89
  17. Lewit, pp. 88-91
  18. "Cities of Light: The Rise and fall of Islamic Spain," http://www.islamicspain.tv/Arts-and-Science/The-Culture-of-Al-Andalus/Agriculture.htm, accessed 28 Aug 2018
  19. Ruggles, D. Fairchild (2000), Gardens, Landscape, and Vision in the Palaces of Islamic Spain. University Park, PA: Penn State Press. p. 32
  20. Sarris, Peter (১ এপ্রিল ২০০৪)। "The Origins of the Manorial Economy: New Insights from Late Antiquity": 279–311। জেস্টোর 3490231ডিওআই:10.1093/ehr/119.481.279 
  21. Fynn-Paul, J. (৯ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Empire, Monotheism and Slavery in the Greater Mediterranean Region from Antiquity to the Early Modern Era": 3–40। জেস্টোর 40586930ডিওআই:10.1093/pastj/gtp036 
  22. "Serfdom in Europe," Khan Academy, https://www.khanacademy.org/humanities/world-history/medieval-times/european-middle-ages-and-serfdom/a/serfdom-in-europe, accessed 26 Jul 2018
  23. "Those who pray, those who work, and those who fight," Medievalists.net http://www.medievalists.net/2016/01/those-who-pray-those-who-work-those-who-fight/, accessed 27 Jul 2018
  24. Levine, David, (2001), At the Dawn of Modernity, Berkeley: University of California Press, pp. 18-21
  25. Levine, pp. 376-377
  26. Ruiz-Diaz, Katherine E.,"Peasant Life and Serfdom under Tsarist Russia," http://blogs.bu.edu/guidedhistory/historians-craft/katherine-ruiz-diaz/, accessed 28 Jul 2018
  27. Gies. Frances and Joseph (1990), Life in a Medieval Village, New York: Harper & Row, pp. 17-18
  28. Bennett, H. S. (1974), Life on the English Manor, Cambridge: Cambridge University Press, pp. 56-60, 130-136
  29. Hopcroft, Rosemary L. (1999), Regions, Institutions, and Agrarian Change in Europe History, Ann Arbor: University of Michigan Press, pp. 16-17
  30. McCloskey, Donald N. (১৯৯১)। "The Prudent Peasant: New Findings on Open Fields": 343–355। জেস্টোর 2122579ডিওআই:10.1017/S0022050700038985 
  31. Hopcroft, pp. 16-17
  32. Hanawalt, Barbara A. (1986), The Ties that Bind: Peasant Families in Medieval England, Oxford: Oxford University Press, pp. 22-23
  33. Hopcroft, pp. 20-22
  34. Hopcroft, pp. 22-24
  35. Giews, p. 72
  36. Giews, pp. 72-80
  37. Pounds, p. 63
  38. Ruas, Marie-Pierre (২০০৫)। "Aspects of early medieval farming from sites in Mediterranean France": 400–415। জেস্টোর 23419296ডিওআই:10.1007/s00334-005-0069-8 
  39. "(PDF) The olive industry in France"ResearchGate 
  40. Le Roy Ladurie, Emmanuel (1976), The Peasants of languedoc, Urbana: University of Illinois Press, p. 57
  41. Rösch, Manfred; Jacomet, Stefanie (১৯৯২)। "The history of cereals in the region of the former Duchy of Swabia (Herzogtum Schwaben) from the Roman to the Post-medieval period: results of archaeobotanical research": 193–231। জেস্টোর 23417098ডিওআই:10.1007/BF00189499 
  42. Ruas, pp. 406-407
  43. "Gramene Secale", http://archive.gramene.org/species/secale/rye_intro.html, accessed 2 Aug 2018
  44. "Bere (barley)," https://beerandbrewing.com/dictionary/izxSEht6Z2/bere-barl, accessed 2 Aug 2018
  45. Bakels, Corrie C. (২১ জুন ২০০৫)। "Crops produced in the southern Netherlands and northern France during the early medieval period: a comparison": 394–399। ডিওআই:10.1007/s00334-005-0067-x 
  46. "Field Systems and Demesne Farming on the Wiltshire Estates of Saint Swithun's Priory, Winchester, 1248-1340"। ১৯৯৫: 1–18। জেস্টোর 40275378 
  47. Bennett, pp. 231-232
  48. https://web.archive.org/web/20051110162413/http://scholar.chem.nyu.edu/tekpages/heavyplow.html, accessed 8 Aug 2018
  49. Moore, John H. (১৯৬১)। "The Ox in the Middle Ages": 90–93। জেস্টোর 3740550 
  50. Gies, pp. 147-148
  51. Erdkamp, Paul (2005), The Grain Market in the Roman Empire, Cambridge: Cambridge University Press, pp. 35-54. Erdkamp accepts 8 to l as an average yield on the best wheat lands on the best farms in Sicily and higher still in Egypt during the Roman Empire. Climatic conditions for growing grain in northern Europe were more difficult for medieval farmers.
  52. Brandon, P. F. (১৯৭২)। "Cereal Yields on the Sussex Estates of Battle Abbey during the Later Middle Ages": 403–420। জেস্টোর 2593429ডিওআই:10.1111/j.1468-0289.1972.tb02184.x 
  53. Food and Agricultural Organization.http://www.fao.org/docrep/006/y5146e/y5146e07.htm, accessed 11 Aug 2018
  54. Hopcroft, p. 48
  55. Dahlman, Carl J. (1980), The Open Field System and Beyond, Cambridge: Cambridge University Press, pp. 94-97
  56. Campbell, Bruce M.S., "The land" in A Social History of England, 1200–1500, ed. by Rosemary Horrox and W. Mark Ormrod. Cambridge: Cambridge University Press, 2006, p. 237
  57. Clark, Gregory (১৯৯২)। "The Economics of Exhaustion, the Postan Thesis, and the Agricultural Revolution": 61–84। জেস্টোর 2123345ডিওআই:10.1017/S0022050700010263 
  58. Campbell, Bruce M. S. (১৯৮৩)। "Agricultural Progress in Medieval England: Some Evidence from Eastern Norfolk": 26–46। জেস্টোর 2598896ডিওআই:10.1111/j.1468-0289.1983.tb01222.x 
  59. Clark, p. 80
  60. Blum, Jerome (১৯৬০)। "Russian Agriculture in the Last 150 Years of Serfdom": 3–12। জেস্টোর 3740859 
  61. Heather, pp. 110-111
  62. Newfield, Timothy P. (2013), "The Contours, Frequency and Causation of Subsistence Crises in Carolingian Europe (750-950 CE)" in Crisis Alimentarian en la Edad Media, Lleida, Spain: Universidad de Lleida, pp 118, 169
  63. Dury, G. H. (১৯৮৪)। "Crop Failures on the Winchester Manors, 1232-1349": 401–418। জেস্টোর 621777ডিওআই:10.2307/621777lay summary 
  64. Fara, Andrea (২০১৭)। "Production of and Trade in Food Between the Kingdom of Hungary and Europe in the Late Middle Ages and Early Modern Era (Thirteenth to Sixteenth Centuries): The Roles of Markets in Crises and Famines": 138–179। জেস্টোর 26370717 
  65. Jordan, William Chester in Ecologies and Economies in Medieval and Early Modern Europe, edited by Scott G. Bruce, Leiden: Brill, pp. 45-51
  66. Andersen, Thomas Barnebeck; Jensen, Peter Sandholt (জানুয়ারি ২০১৬)। "The heavy plow and the agricultural revolution in Medieval Europe": 133–149। ডিওআই:10.1016/j.jdeveco.2015.08.006 
  67. "Horse collar", https://www.britannica.com/technology/horse-collar, accessed 16 Aug 2018
  68. "Horses in the Middle Ages," http://horsehints.org/MiddleAgesHorse.htm, accessed 16 Aug 2018
  69. Pounds, pp. 119-123
  70. Steckel, Richard H. (৪ জানুয়ারি ২০১৬)। "New Light on the 'Dark Ages'": 211–229। ডিওআই:10.1017/S0145553200013134 
  71. "The biological standard of living in Europe during the last two millennia"European Review of Economic History