মইনাপরীয়া নামঘর

আসামের হিন্দু মন্দির

মইনাপরীয়া নামঘর, আসাম-এর যোরহাট শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এটি ৩৭ নং জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ২ কি.মি. দূরর মইনাপরীয়া গাঁওয়ে অবস্থিত।[১] ভক্তিধর্মের প্রচার, প্রসার এবং চর্চার কারণে মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব এবং শ্রীশ্রী মাধবদেব-এর সৃষ্টি করা সত্র-নামঘর পরবর্তী সময় ব্যাপক প্রসারতা লাভ করে আসামের কোণে-কোণে প্রতিষ্ঠা হওয়া নামঘরসমূহের মধ্যে মইনাপরীয়া নামঘর অন্যতম।

মইনাপরীয়া নামঘর
মইনাপরীয়া নামঘরের সম্মুখভাগ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাযোরহাট জেলা
অবস্থান
দেশভারত
ওয়েবসাইট
www.moinaporianamghar.org

ইতিহাস সম্পাদনা

মইনাপরীয়া একটি পুরানো গ্রাম। গ্রামটির পূ্র্বপুরুষরা আগে লখিমপুর অঞ্চলে বসবাস করতেন। ১৫৬২-৬৩ সালে কোচ রাজা নরনারায়ণ আহোম রাজ্যের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে সেই সময়ের আহোম রাজ্যের স্বর্গদেউ চুখামফা বা খোরারাজা কোচ রাজার হাতে পরাস্ত হয়ে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই সন্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সমগ্র উত্তর পার কোচদের অধীন হয়েছিল। নরনারায়ণের অভিযানের পরে ফিরে যাওয়া পরে কিছুসংখ্যক সৈন্য বাহিনীর লোক থেকে গিয়েছিল। প্রবাদ অনুসারে তাদের কয়েকজন লখিমপুরের নারায়ণপুরে থাকা মইন নামে একটি ছোট নদীর পারে ভূঞাদের সাথে সমাজ করে বাস করেছিলেন। সেই স্থানে কিছুকাল থাকার পরে বিভিন্ন কারণে ‌আনুমানিক সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে মরাচাল, বরকোচ, নেওগ, ভলুকাগুড়িয়া এবং কমার নামে পাঁচটি পরিবার ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পার পর্যন্ত চলে আসে। তাঁরা বর্তমানের গাওঁটি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর দিকে থাকা ফেহুমুকলি নামে স্থানে থাকতে শুরু করেছিল। পরে তাঁরা বর্তমান স্থানে আসে। ক্রমান্বয়ে এই পাঁচটি পরিবারের ছোট গাওঁয়ে ঘরগিরি, রাগীয়া, বারিক এবং ন-বরা নামে চারটি পরিবারের আগমন ঘটে।[২]

নামের উৎপত্তি সম্পাদনা

লখিমপুরের মইন নদীর পার থেকে ওঠে আসার কারণে কাছের গাওঁসমূহের নাগরিকরা পরিবারগুলিকে মইনপরীয়া বলে সম্বোধন করেছিলেন। পরে মইনপরীয়া নামের পরিবর্তন ঘটে গাওঁটির নাম মইনাপরীয়া হয়।

নামঘর সম্পাদনা

মইনাপরীয়া গাঁওয়ের একমাত্র নামঘরটি প্রায় ৩০০ বছর পুরানো।[১] এর প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে ভগবানের দশ অবতারের এক অবতার নৃসিংহ প্রভুর মূর্তি এবং নৃসিংহ যাত্রা ভাওনা। গাওঁবাসী দীক্ষা নিয়ে আসা শ্রীশ্রী পটিয়রি সত্রের প্রয়াত সত্রাধিকার শ্রী শ্রী লোকনাথ গোস্বামীদেবকে একবার স্বপ্নে নৃসিংহ প্রভু মইনাপরীয়া নামঘরে স্থায়ীভাবে থাকার ইচ্ছার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই অনুসারে নামঘরটিতে নৃসিংহ প্রভূর মূর্তি স্থাপন করা হয়। ১৯২৩ সাল থেকে প্রতি বছরে গাওঁবাসী ভাদ্র মাস-এর সংক্রান্তিতে নৃসিংহ যাত্রা ভাওনা অনুস্থিত করে আসছে।[৩]

নামঘরের কার্যসূচী সম্পাদনা

নামঘর নিয়মিতভাবে নাম-কীর্ত্তন, পাঠ-প্রসঙ্গ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত করা হয়। সেইমতো মহাপুরুষ দুজনের আবির্ভাব এবং তিরোভাব তিথি, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। এখানে পবিত্র ভাদ্র মাসে মাসজোড়া নাম-প্রসঙ্গের সাথে প্রতি মাসের সংক্রান্তি, শুক্লা একাদশী, কৃষ্ণা একাদশী, পূর্ণিমা, প্রতি দেওবার, প্রতি বৃহস্পতি বার এবং প্রতি অসমীয়া মাসের ১৫ তারিখে নাম প্রসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের জেঠ মাসে গাঁওয়ের আইরা নামঘরে নাম-প্রসঙ্গ আরম্ভ করেন। নামের শেষে বার্ষিক সবাহ করে সামরণি মরা হয়। এছাড়াও চ’ত মাসের দ্বিতীয় দেওবারে বার্ষিক বরসবাহ করা হয়। নামঘর পর্যন্ত যাওয়ার সময় অসমীয়া সাজে যাওয়া নিয়ম।

এই নামঘর পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা সমিতি আছে৷

অবস্থান এবং পরিবহন সম্পাদনা

মইনাপরীয়া নামঘরের অবস্থান হচ্ছে ২৬°২৯′ উত্তর ৯৪°১১′ পূর্ব / ২৬.৪৮° উত্তর ৯৪.১৮° পূর্ব / 26.48; 94.18

বিমানপথ

মইনাপরীয়া নামঘরের নিকটবর্তী বিমানবন্দর হচ্ছে: ররৈয়া বিমানবন্দর। দূরত্ব প্রায় ২৫ কি.মি.।[১]

রেলপথ

ঢেকীয়া খোয়া বর নামঘরের নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে যোরহাট রেলওয়ে স্টেশন। এটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

স্থলপথ

আসামের প্রায় সকল স্থানের সাথে যোরহাট জেলায় আসা-যাওয়া করার সু-ব্যবস্থা আছে। মইনাপরীয়া গাঁওয়ের কাছে থাকা যোরহাট মহানগর থেকে পূর্ব দিকে ৩৭ নং জাতীয় সড়কের প্রায় ১৪ কিলোমিটার গেলে লাহদৈগড় চারিআলি মেলে। লাহদৈগড় চারিআলি থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Moinaporiya Namghor"www.assaminfo.com। www.assaminfo.com। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৮, ২০১৯ 
  2. "সংক্ষেপ ইতিহাস"moinaporianamghar.org। ২০১৯-১১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৮ 
  3. "নামঘর"moinaporianamghar.org। ২০১৯-১১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা