ভালোবাসার রঙ
ভালোবাসার রঙ হচ্ছে ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন পরিচালক জুটি শাহীন-সুমন ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন শীষ মনোয়ার। এতে অভিনয় করেছেন বাপ্পী চৌধুরী, মাহিয়া মাহী, রাজ্জাক, আলীরাজ, অমিত হাসান প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি বাপ্পী চৌধুরী ও মাহিয়া মাহী অভিষেকের জন্য উল্লেখযোগ্য।[২] এটি ২০১০ সালের তেলুগু চলচ্চিত্র বাভা'র অনানুষ্ঠানিক পুনঃনির্মাণ।
ভালোবাসার রঙ | |
---|---|
পরিচালক | শাহীন-সুমন |
প্রযোজক | শীষ মনোয়ার |
রচয়িতা | আবদুল্লাহ জহির বাবু |
চিত্রনাট্যকার | শাহীন-সুমন |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | শওকত আলী ইমন ইমন সাহা (আবহসঙ্গীত) |
চিত্রগ্রাহক | কামরুল আহমেদ পনির |
সম্পাদক | তৌহিদ হোসেন চৌধুরী |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | জাজ মাল্টিমিডিয়া[১] |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৫৬ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
চলচ্চিত্রটি ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর মুক্তি পায়। এটির মাধ্যমে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে অমিত হাসান এবং আবদুল্লাহ জহির বাবু সেরা সংলাপ রচয়িতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।[৩]
কাহিনি সংক্ষেপ
সম্পাদনাবাপ্পি তার বন্ধুদের নিয়ে গ্রামে দস্যিপনা করে বেড়ায়। কাবিলা মামার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া বা কারো মুরগীর খামার নষ্ট করে তার সময় কাটে। তার বাবাও তাকে উৎসাহ যোগায়। একদিন তার এক বন্ধুর সাহায্যে সামসুদ্দিন চৌধুরী বাড়িতে ঢোকে। সেখানে চৌধুরীর নাতনী মাহীকে দেখে তার প্রেমে পড়ে। মাহীর প্রেম লাভের আশায় সে চৌধুরীর ছড়ি এবং মাহীর চাচীর প্রিয় টেপ রেকর্ডার চুরি করে। চুরি করে পালানোর পথে খড়ের গাদায় লুকিয়ে থাকার সময় বর্শার আঘাতে আহত হয়। আহত বাপ্পির অবস্থা দেখে এবং মাহীর প্রতি তার ভালোবাসার টান থেকে মাহীও তাকে পছন্দ করে।
এরই মধ্যে আবির্ভাব হয় সালাম জোয়ার্দারের। সে চৌধুরীর পালিত নাতনী মাহী/ফারিয়াকে তুলে নিতে আসে। কিন্তু চৌধুরীর বাধার কারণে সে ফিরে যায় এবং এ কাজের জন্য সন্ত্রাসী তুফানকে ভাড়া করে। তুফানের হাত থেকে বাঁচাতে বাপ্পি মাহীকে নিয়ে নির্জন পাহাড়ে চলে যায়।
কুশীলব
সম্পাদনা- মাহিয়া মাহী - মাহী/ফারিয়া
- বাপ্পি চৌধুরী - বাপ্পী
- রাজ্জাক - সামসুদ্দিন চৌধুরী, মাহীর দাদা
- অমিত হাসান - তুফান
- মিজু আহমেদ - সালাম জোয়ার্দার
- আসিফ ইকবাল - আসিফ, তুফানের ভাই
- আলীরাজ - ইউনুস, বাপ্পীর বাবা
- সুব্রত বড়ুয়া - মাহীর চাচা
- রেবেকা - মাহীর চাচী
- গুলশান আরা পপি - মমতা, বাপ্পীর মা
- কাবিলা - কাবিলা মামা
- নাসরিন - নাসরিন
- ইলিয়াস কোবরা - কামাল
- শিবা সানু
- ববি - সালাম
- বিপাশা কবির - আইটেম গান (বিশেষ উপস্থিতি)
- কথা - কথা (শিশু শিল্পী)
- পিয়াল - পিয়াল (শিশু শিল্পী)
- পূজা চেরি - পূজা (শিশু শিল্পী)
- শিপু - শিপু (শিশু শিল্পী)
নির্মাণ
সম্পাদনাএই চলচ্চিত্রের গল্প সম্পর্কে জাজ মাল্টিমিডিয়ার নির্বাহী প্রযোজক আব্দুল আজিজ বলেন, এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পূর্বে হুমায়ূন আহমেদের একটি গল্প নেওয়ার চিন্তা করা হয়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার গল্পের স্বত্ব দেন নি। পরে কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত মাসুদ রানা সিরিজের কোন গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবেন। তিনিও তাদের কোন গল্পের স্বত্ব দেন নি। পরে তারই একটি গল্পের কাহিনি নিয়ে এবং তেলুগু ছবি বাভার গল্পকে সমন্বয় করে এই ছবির কাহিনি লিখেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু।[৪]
চিত্রগ্রহণে ছিলেন কামরুল ইসলাম পনির। ছবিটি রেড মিস্টেরিয়াম ক্যামেরায় ধারণ করা হয়।[৫]
মুক্তি
সম্পাদনাভালোবাসার রঙ চলচ্চিত্রটি ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশের ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল ও ৩৫ মিমি ফরম্যাটে মুক্তি পায়।[৬]
সঙ্গীত
সম্পাদনাভালোবাসার রঙ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত | |
---|---|
কর্তৃক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত | |
মুক্তির তারিখ | ২০১২ (বাংলাদেশ) |
শব্দধারণের সময় | ২০১০ |
ঘরানা | চলচ্চিত্রের সঙ্গীত |
সঙ্গীত প্রকাশনী | জাজ মাল্টিমিডিয়া |
প্রযোজক | শওকত আলী ইমন ও ইমন সাহা |
ভালোবাসার রঙ চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শওকত আলী ইমন ও ইমন সাহা। আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ফুয়াদ আল মুক্তাদির ও আলী আকরাম শুভ। গীত রচনা করেছেন কবির বকুল, শওকত আলী ইমন, ইমন সাহা, ও বিপ্লব সরকার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি, সায়মন, কিশোর দাস, দিলশাদ নাহার কনা, মিলা, রন্টি দাস।[৭]
গানের তালিকা
সম্পাদনানং. | শিরোনাম | রচয়িতা | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|---|
১. | "গভীরে আরো গভীরে" | কবির বকুল | সায়মন ও নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি | ৫:৫৩ |
২. | "ভালোবাসার চেয়ে একটু বেশি" | সায়মন ও নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি | ৫:৫২ | |
৩. | "প্রেম রসিয়া" | মিলা ও সায়মন | ৫:০৭ | |
৪. | "কলিজাতে টান" | কনা ও কিশোর | ৫:০৭ |
মূল্যায়ন
সম্পাদনাসমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাদৈনিক সমকাল-এ লেখা এক পর্যালোচনায় চলচ্চিত্র সমালোচক নাজমুল হাসান দারাশিকো এই চলচ্চিত্রটিকে ৫ এ ৩.৫ দিয়েছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির চলচ্চিত্র হলেও তিনি এই চলচ্চিত্রকে গতানুগতিক ধারার চলচ্চিত্র বলেই উল্লেখ করেছেন এবং কাহিনির অসামঞ্জস্যতার কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র মাহী-বাপ্পির রসায়নের অভাব থাকলেও তারা কাহিনি ও সংলাপের তুলনায় ভালো অভিনয় করেছেন এবং রাজ্জাকের চরিত্রে কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন গানের চিত্রায়ন ও মারপিঠে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া থাকলেও তা পরিপক্ব নয়।[৮] ওয়াশিংটন বাংলা রেডিওর এক চলচ্চিত্র সমালোচনায় পুরনো ও একঘেঁয়ে ধরন থেকে বেরিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনত্ব নিয়ে আসার প্রশংসা করেছে। এছাড়া পরিচালক জুটি শাহীন-সুমনের ভালো কিছু করার আগ্রহ, কেন্দ্রীয় চরিত্রে মাহী ও বাপ্পীর অভিনয়ের প্রশংসা করে।[৯]
পুরস্কার
সম্পাদনা- বিজয়ী: সেরা পার্শ্ব অভিনেতা - অমিত হাসান
- বিজয়ী: সেরা সংলাপ রচয়িতা - আব্দুল্লাহ জহির বাবু
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Release Bangladeshi Movie Bhalobasar Rong"। jaaz-multimedia.com। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "'ভালোবাসার রঙ' নিয়ে আসছেন বাপ্পি-মাহী"। দৈনিক প্রথম আলো। ৩০ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ সিদ্দিকা, মিথি (২৮ ডিসেম্বর ২০১৪)। "বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪"। সময়.২৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "কাজী আনোয়ারের থিম চুরি করে 'ভালোবাসার রঙ'"। বাংলা মুভি ডেটাবেজ। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "৫০টি ডিজিটাল প্রেক্ষাগৃহে আসছে 'ভালোবাসার রঙ'"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ""Bhalobashar Rong" goes digital"। দ্য ডেইলি স্টার। ৯ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "bhalobasar rong bangla movie video song"। bdmusiccafe.com। ১৯ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "ভালোবাসার রং"। দারাশিকো। ৫ অক্টোবর ২০১২। ১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Film Preview: Mahi - Bappi in Bhalobashar Rong (2012) - Sleek Bangladeshi Movie Breaks Digital Barrier"। ওয়াশিংটন বাংলা রেডিও। ৯ অক্টোবর ২০১২। ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ভালোবাসার রঙ (ইংরেজি)
- বাংলা মুভি ডেটাবেজে ভালোবাসার রঙ