নিখিল আসাম বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদ

সংস্থা

নিখিল আসাম বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদ (এই নামেও পরিচিতঃ সারা আসাম বাঙালী যুব-ছাত্র ফেডারেশন) হলো আসামের একটি বাঙালি ছাত্র সংগঠন।এটি আসামে বাঙালির জন্য আন্দোলন করছে। এই সংগঠনটি আসামের ৭.২ মিলিয়ন বাঙালি হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য জনমত গঠন করেছে।[১]

নিখিল আসাম হিন্দু বাঙালি ছাত্র পরিষদ
সংক্ষেপেAABYSF
ধরনঅরাজনৈতিক
আইনি অবস্থাসক্রিয়
উদ্দেশ্যবাঙালি হিন্দুদের নিরাপত্তায় জনমত গঠন
অবস্থান
যে অঞ্চলে কাজ করে
আসাম
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা ভাষা

ইতিহাস সম্পাদনা

"নিখিল আসাম বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদ" সংগঠনটি ৬ই বৈশাখ ১৩৯৭ বঙ্গাব্দে (১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল) আনুষ্ঠানিক ভাবে গঠিত হয়৷ ভাষাগত সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদ ভেঙে উন্নয়নমূলক বরাদ্দ তহবিলের বকেয়া অর্থমূল্য দানে দেরী এবং সরকারী গাফিলতির বিরুদ্ধে সংগঠনটি ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচী সফল করে৷ সংগঠনটি ১৫ নং জাতীয় সড়ক (ঐ সময়ে ৫২ নং জাতীয় সড়ক) অবরোধ করলে তা নৃৃশংসতা ও হানাহানির আকার নেয়৷[২]

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আসামের করিমগঞ্জ জেলার মোল্লাগঞ্জে নির্বাচন পদযাত্রার পরে জনসভার সময় রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিং বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে আসা বাঙালি হিন্দুদেরকে বহিরাগত ও বিদেশী বলে তকমা দেন৷[৩] দিগ্বিজয় সিং এর এই দায়িত্বজ্ঞানশূণ্য উত্তেজক মন্তব্যের বিরোধীতা করে ঐ বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি নিখিল আসাম বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে বিক্ষাপ্তভাবে পথসভা ও বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নেয়৷[৩] ফলস্বরূপ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি সংগঠনটি আসামের শিবসাগরডিব্রুগড় শহরে দিগ্বিজয় সিঙের কুশপুত্তলিকাদহন করে৷[৩]

দাবী সম্পাদনা

সংগঠনটি বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী লাখ লাখ বাঙালি হিন্দুদের বিদেশী তথা অবৈধ বাংলাদেশি তকমা দেওয়া বা ঐ অযুহাতে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রেরণ ও স্থানীয় বাঙালি হিন্দুদের নানা অছিলায় হয়রানি করা বন্ধ করার দাবিতে আসাম সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে৷[৪][৫] এছাড়া সংগঠনটি শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের বিরূদ্ধে বাঙালি হওয়ার জন্য আদালত ও উচ্চ আদালতে আপিল করা সমস্ত প্রকার নাগরিক অবৈধতা ও জমি-সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবী তোলেন এবং ঐসকল আগত শরণার্থীদের নির্বিঘ্নে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেয়৷[৬] তাদের তৃৃতীয় দাবীটি ছিলো ডি ভোটার নামাঙ্কিত সমস্ত বাঙালি হিন্দুদেরকে (প্রায় ১৫০,০০০ জন) সংবিধানস্বীকৃতভাবে দেশের নাগরিক হিসাবে ভোট দেওয়ার অনুমতিদান ও সমস্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা দান করা৷[১][৭]

আসামে ভাষাগত সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদে বাঙালি হিন্দুদের উপস্থাপকদের সংখ্যা ও তাদের উপস্থিতি প্রায় নগণ্য৷ পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে ৮০%ই প্রায় অবাঙালি তথা নেপালি, মণিপুরী, বোড়ো, রাভা প্রভৃতি জাতি, চা-শ্রমিক উপজাতি ও বিভিন্ন অন্যান্য উপজাতির সদস্য; যেখানে আসামের ৬০% অনসমীয়াই জাতিতে বাঙালি৷ সংগঠনটি এই ভাষাগত সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের অবলুপ্তি ঘটিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি সংখ্যাভিত্তিক মুখাপেক্ষী পরিষদ গঠনের দাবী তোলেন৷[১]

সুকুমার বিশ্বাস বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি এবং প্রশাসনিক সাধারণ সম্পাদক হলেন নির্মলকান্তি শীল৷

ডিব্রুগড় জেলার সভাপতি নির্মলকান্তি শীল, সচিব বাপি সরকার এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সচিব টিটু কুমার শীল৷

বঙাইগাঁও জেলাটি যুবমোর্চাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ সম্রাট ভাওয়াল এই জেলার সভাপতি এছাড়াও আরো অনেক সহকর্মী তার সাথে এই জেলার উন্নয়নের কাজে নিযুক্ত৷ এই জেলাতে সংগঠনটির বিশেষ পরামর্শদাতা হলেন বিপুল রায় মহাশয়৷ সংগঠনটির প্রতিজন সদস্য একত্রে আসামে প্রতিটি জেলাতে বাঙালি তথা বাঙালি হিন্দুদের সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক সমস্যার সমাধানে বদ্ধপরিকর৷

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পাদনা

আসামের ওদালগুরি জেলা এবং তারপরে খারুপেটীয়া অঞ্চলে ঘটে যাওয়া জাতিবিদ্বেষের ঘটনা উপলক্ষ্যে নিখিল আসাম বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদের শিবসাগর জেলা শাখার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মতে, "আসাম রাজ্য সরকার সমস্ত বৈধ নাগরিকদের রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু সরকার তাদেরকে প্রতিরক্ষা দিতে না পারায় স্থানীয়রা নাগরিকত্বের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে"৷ তিনি আরো বলেন যে, ভারতীয় নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় পঞ্জীকরণের রাজ্য সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলা ত্রুটিহীন রাষ্ট্রীয় পঞ্জীকরণে ব্যর্থ৷[৮]

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম-এর দ্বারা তিনসুকিয়া জেলাতে বাঙালি-জাতি বিদ্বেষে ৫ জন বাঙালি হিন্দুর মৃত্যুর প্রতিবাদে সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদ সংগঠনটি বারোঘণ্টা অবরোধ মিছিল করে৷ এ বিষয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতা শুভঙ্কর দেব দলেন, "ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক৷ কেন্দ্রীয় সরকির বাঙালিদের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি আগে থেকেই দিয়েছিলেন, যদিও তা নিরর্থক প্রমাণিত হয়েছে৷ দলীয় উচ্চপদস্থ নেতাদের উচিত তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া, এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া৷" তার মতে, "কিছু মানুষ মিথ্যা রটিয়ে উচ্চ ও নিম্ন আসামে ভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষদের মধ্যে চিড় ধরাতে চাইছেন৷ আমরা আসামবাসী, আসামেই জন্ম এবং এই মাটির জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত৷ গত বৃহষ্পতিবার অপহতরা আসামেরই স্থানীয় ছিলেন, বাংলাদেশী নয়৷ গুলি করে হত্যা করা কোনো শান্তিপূর্ণ প্রস্তাব না৷ আসাম সরকারের উচিত আসামের বাঙালি জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, শুধু তাই নয় পুলিশ প্রশাসনও স্থানীয় বাঙালিদের সঠিক নিরাপত্তা দিতে অপারক৷"[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Hindu Bengali youth body flays 'government neglect'"The Sentinel। জানুয়ারি ৩, ২০১১। ২০১১-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  2. "Arson rerun during 12-hr Assam bandh"The Telegraph। জানুয়ারি ৩, ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  3. "AABYSF lambasts Digvijay Singh for comments on Hindu-Bengalis"The Sentinel। ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১১। ২০১১-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  4. "Different strokes on Hindu migrants"The Telegraph। মার্চ ৭, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  5. Karmakar, Rahul (মার্চ ৮, ২০১১)। "From Muslims, focus shifts to Hindu migrants"Hindustan Times। মার্চ ১২, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  6. "CM help sought to protect Bengali Hindus"The Assam Tribune। জানুয়ারি ৪, ২০১১। জানুয়ারি ৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  7. "Bengali youth body fumes over 'neglect' of Bengali-Hindus"The Sentinel। ডিসেম্বর ২৬, ২০১০। সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১১ 
  8. "All Assam Bengali Youth Students' Federation (AABYSF) Slams Government"www.sentinelassam.com। ৩০ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৯ 
  9. https://www.edexlive.com/news/2018/nov/02/all-assam-bengali-youth-students-federation-calls-for-bandh-as-a-protest-against-the-killings-commit-4336.html