রাভা পশ্চিমবঙ্গ,মেঘালয় এবং আসামের একটি স্বল্প পরিচিত তপশিলি ভুক্ত উপজাতি। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং আসামের গোয়ালপাড়া এবং কামরূপ জেলায় রাভাভাষী মানুষ বাস করেন। রাভা অসমের পঞ্চম বৃহত্তম তপশিলি ভুক্ত উপজাতি। এ রাজ্যে দু লক্ষ সাতাত্তর হাজার রাভা মানুষ বাস করেন।[] রাভা সম্প্রদাযের মানুষেরা বৃহত্তর ইন্দো-মঙ্গলীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। রাভা জনজাতির মানুষেরা রাভা ভাষাতে কথা বলেন। বড়ো, গারো, কাছারী ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মানুষের সাথে এঁদের নৃতাত্ত্বিক যোগাযোগ রয়েছে।[] বলা হয় যে, রাভা সম্প্রদাযের মানুষের সাথে প্রকৃতি এবং জঙ্গলের একটি নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অতীতে তারা জুম চাষ করতেন। লাঙ্গলের সাহায্যে কৃষি কাজ তাদের অজানা ছিলো। বহু শতাব্দী ধরে রাভারা চাষ-আবাদ ও তাঁত বুনেই জীবন যাপন করে আসছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর ষষ্ঠ দশকে, ভারতের ইংরেজ শাষকেরা জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্স এবং অসমের জঙ্গলগুলোকে "সংরক্ষিত বনাঞ্চল" বলে ঘোষণা করার সাথেই রাভাদের এই জীবন ধারার পরিবর্তন শুরু হল। বন থেকে বিতাড়িত হলেন রাভারা, কারণ তাদের ঝুম চাষ জঙ্গলের ক্ষতি করে। বনবাসী রাভারা হলেন বনবস্তীর বাসীন্দা।[] ইউরোপীয় বন অধিকর্তাদের তথাকথিত "বিজ্ঞানসন্মত বনানিকরণ" প্র্কৃয়ায় সামিল হলেন কিছু রাভা, বাকিরা লাঙ্গল ধরলেন। বর্তমানে, রাভা সম্প্রদাযের মানুষেরা চাষাবাদ, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত আছেন। তবে, এখনো বেশীরভাগ মানুষই বনকর্মী অথবা কৃষক।[]

পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির একটি বনবস্তীতে নিজের বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন রাভা পুরুষ।

রাভারা প্রকৃতির উপাসক। রাভাদের মধ্যে প্রথাগত ভাবে মূর্তি পূজোর প্রচলন নেই। তবে বর্তমানে তারা মূল ধর্ম পালনের সাথে সাথে হিন্দু ধর্মের কিছু আচার আচরণ ও পালন করেন। রাভাদের প্রধান দেবতা হলেন "ঋষি" বা "মহাকাল"। সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এঁর পুজো অতি আবশ্যক।[] এছাড়া রাভাদের আরো দুই দেবী হলেন 'রঙ্গতুক' ও 'বসেক'। এঁদের ঋষি বা মহাকালের কন্যা বলে মনে করা হয়। 'রঙ্গতুক' ও 'বসেক' হলেন পারিবারিক ধন সম্পত্তির দেবী। রাভারা মূলত মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার অনুগামী, তাই পরিবারের জেষ্ঠা কন্যা পারিবারিক সূত্রে এই দুই দেবীর অধিকারী হন।[] বর্তমানে বহু রাভা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

নৃত্য ও গীত রাভাদের সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষে থাকে নাচ ও গান। বলা হয় যে সকল রাভা মহিলাই নৃত্য ও গীতে পারদর্শী। তারা মাঝে মাঝে এ নিয়ে নানা অনুষ্ঠানও করে থাকে।

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. "Assam-Data Highlights: THE SCHEDULED TRIBES, Census of India 2001, Census of India 2001" (PDF) 
  2. Mitra, A. (1953), West Bengal: District Handbooks: Jalpaiguri, Govt. of West Bengal, p. cxxxviii
  3. ঘোষ, সৌমিত্র (১৯৯০), “বনবাসী রাভারা”, দেশ, Vol 57 (12), January 20
  4. Raha, M.K. (1989), "Matriliny to Patriliny: A Study of the Rabha Society", Delhi, Gyan Publishing House.
  5. Karlsson, B.G. (2000), "Contested Belonging: An Indigenous People's Struggle for Forest and Identity in Sub-Himalayan Bengal", Routledge, p.162
  6. Raha, M.K. (1989), "Matriliny to Patriliny: A Study of the Rabha Society", Delhi, Gyan Publishing House.p. 112