জৈব পিগমেন্ট

রাসায়নিক যৌগ

জৈব পিগমেন্ট হল এমন পদার্থ যা আরও সহজভাবে শুধু পিগমেন্ট বা বায়োক্রোম [১] নামে পরিচিত এবং নির্বাচিত কিছু রং শোষনের মাধ্যমে রংযুক্ত জীবিত জীব থেকে ঊৎপন্ন হয়। জৈব পিগমেন্টের মধ্যে উদ্ভিদ পিগমেন্ট এবং ফুলের পিগমেন্ট অন্তর্ভুক্ত । অনেক জীবতাত্ত্বিক গঠন যেমন চামড়া, চোখ, পালক, লোমচুলের বিশেষায়িত কোষ ক্রোমাটোফোরে মেলানিন নামক এক ধরনের পিগমেন্ট থাকে। পিগমেন্টের রঙ গঠনগত রংয়ের চেয়ে ভিন্ন হয় কারণ এটা সকল দিক থেকে দেখতে একই রকম কিন্তু বিভিন্নস্তরের গঠনের কারণে গঠনগত রং নির্বাচিত প্রতিফলনপ্রতিসরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – সাধারণত প্রজাপতির ডানায় গঠনগত রং থাকে, যদিও অনেক প্রজাপতির কোষে পিগমেন্টেও থাকে। [২]

বাজরিগার পাখি psittacofulvin পিগমেন্ট থেকে এদের হলুদ রং পায় এবং একই হলুদ রংয়ের পিগমেন্ট ও গঠনগত নীল রংয়ের সমন্বয়ের ফলে সবুজ রং পায়। পটভূমির নীল-সাদা পাখিতে হলুদ পিগমেন্টের অভাব রয়েছে। উভয় পাখিতে কালো রংয়ের দাগগুলি কালো রংয়ের পিগমেন্ট ইউমেলানিনের জন্যে হয়ে থাকে।

জৈব পিগমেন্ট সম্পাদনা

ইলেকট্রনের বন্ধন রসায়নের জন্য conjugated systems (সংযুক্ত ব্যবস্থা) দেখুন যা এসব পদার্থে পিগমেন্ট সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে।

উদ্ভিদে পিগমেন্ট সম্পাদনা

 
ক্লোরোফিলের Space-filling মডেল।
 
অ্যান্থোসায়ানিন এই প্যানসি ফুলগুলোকে বেগুনী পিগমেন্টেশন প্রদান করে।

পিগমেন্টগুলোর প্রাথমিক কাজ হল সালোকসংশ্লেষণ যা যথাসম্ভব বেশি আলো শক্তি হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে সবুজ রংয়ের ক্লোরোফিল পিগমেন্টের পাশাপাশি কিছু লাল ও হলুদ রংয়ের পিগমেন্টও ব্যবহার করে।

উদ্ভিদ পিগমেন্টের অন্যান্য কাজগুলোর মধ্যে ফুলের পরাগায়নকে তরান্বিত করার জন্যে কীট-পতঙ্গকে আকৃষ্ট করা অন্তর্ভুক্ত।

উদ্ভিদ পিগমেন্টের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যৌগ যেমন- পরফাইরিন, ক্যারোটিনয়েড, অ্যান্থোসায়ানিন এবং বিটালেইন অন্তর্ভুক্ত। সকল জৈব পিগমেন্টই নির্বাচিতভাবে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে যখন অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত করে। [৩][৪]

যে সকল প্রধান পিগমেন্ট এসবের জন্যে দায়ী সেগুলো হলঃ

  • ক্লোরোফিল উদ্ভিদের প্রাথমিক পিগমেন্ট; এটা এক প্রকার ক্লোরিন যেটা হলুদ এবং নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে শোষণ করে যখন সবুজ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে প্রতিফলিত করে। ক্লোরোফিলের উপস্থিতি এবং প্রাচুর্যতা উদ্ভিদকে সবুজ রং প্রদান করে। সকল স্থলজ উদ্ভিদ এবং সবুজ শৈবালে এই পিগমেন্টের দুইটি ধরন থাকতে পারে: ক্লোরোফিল এ এবং ক্লোরোফিল বি। কেলপ (সামুদ্রিক শ্যাওলা), ডায়াটম এবং সালোকসংশ্লেষণকারী হেটারোকোন্টে ক্লোরোফিল বি এর পরিবর্তে ক্লোরোফিল সি থাকে যেখানে লাল রংয়ের শৈবালে শুধুমাত্র ক্লোরোফিল এ থাকে। সকল ক্লোরোফিলের প্রাথমিক কাজ হল সালোকসংশ্লেষণের জ্বালানী যোগানের জন্যে আলোকে গ্রহণ করা।
  • ক্যারোটিনয়েড সাধারণত লাল, কমলা অথবা হলুদ রংয়ের টেট্রাটারপিনয়েড। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সময় এদের কাজ হল আলোককে একত্রীভূত (সহায়ক পিগমেন্ট হিসেবে) করা, ফটোপ্রোটেকশন বা আলোকজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা (অন্ধকার পর্যায়ের মাধ্যমে আলোকশক্তিকে কমানো এবং অক্সিজেন মৌলকে পৃথক করার মাধ্যমে ফটোঅক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা ) এবং প্রোটিনের গঠনগত উপাদানকে যোগান দেওয়া। উচ্চস্তরের উদ্ভিদে এরা উদ্ভিদ হরমোন অ্যাবসিসিক এসিডের পূর্ব উপাদান যোগান দেয়।

সাধারণত উদ্ভিদে ছয় প্রকার সর্বজনস্বীকৃত ক্যারোটিনয়েড বিদ্যমান: নিওজ্যান্থিন, ভাইয়োল্যাক্স্যান্থিন, অ্যান্থেরাজ্যান্থিন, জিয়াজ্যান্থিন, লুটেইন এবং বিটা-ক্যারোটিন[৫] লুটেইন ফল ও শাকসবজিতে প্রাপ্ত হলুদ রংয়ের পিগমেন্ট এবং এটা উদ্ভিদের সবথেকে বেশি প্রাচুর্যপূর্ণ ক্যারোটিনয়েড। লাইকোপেন লাল বর্ণের পিগমেন্ট যা টমেটোর রংয়ের জন্যে দায়ী। উদ্ভিদে কম পরিমাণে পাওয়া যায় এরকম কিছু ক্যারোটিনয়েডের মধ্যে লুটেইন ইপোক্সাইড (বিভিন্ন কাষ্ঠল প্রজাতির মধ্যে পাওয়া যায়), ল্যাকটোকাজ্যান্থিন (লেটুসে পাওয়া যায়) এবং আলফা ক্যারোটিন (গাজরে পাওয়া যায়)। [৬] সায়ানোব্যাকটেরিয়াতে অন্যান্য আরও ক্যারোটিনয়েড বিদ্যমান যেমন- ক্যানথাজ্যান্থিন, মাইক্সোজ্যান্থিন, সিনেকোজ্যান্থিন এবং একিনেনোনDinoflagellates এর মতো শৈবাল ফটোট্রফগুলো আলোক প্রক্রিয়াকরণের পিগমেন্ট হিসেবে পেরিডিনিন ব্যবহার করে। ক্যারোটিনয়েডকে যেমনি ক্লোরোফিল বাইণ্ডিং প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় যেমন- সালোকসংশ্লেষণ বিক্রিয়ার কেন্দ্রে এবং আলোক প্রক্রিয়াকরণ যৌগে পাওয়া যায় তেমনি একে বিশেষ ক্যারোটিনয়েড যৌগ যেমন কমলা ক্যারোটিনয়েড প্রোটিনে পাওয়া যেতে পারে।

  • অ্যান্থোসায়ানিন (সরাসরি ফুলের নীল রং) পানিতে দ্রবীভূত ফ্লাভোনয়েড পিগমেন্ট যা পিএইচ অনুসারে লাল থেকে নীল রংয়ে দৃষ্টিগোচর হয়। এরা উঁচুস্তরের উদ্ভিদের প্রায় সকল কলা বা টিস্যুতে বিদ্যমান এবং পাতা, কাণ্ড, মূল, ফুল এবং ফলে রং প্রদান করে থাকে, যদিও সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকার কারণে দৃশ্যমান হয় না। অ্যান্থোসায়ানিন বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের পাপড়িতে সবথেকে বেশি দৃশ্যমান হয়। [৪]
 
বাগানবিলাসের পুষ্পমঞ্জুরী বিটালেইন থেকে তাদের রং পেয়ে থাকে
  • বিটালেইন লাল অথবা হলুদ রংয়ের পিগমেন্ট। এরা অ্যান্থোসায়ানিনের মত এবং পানিতে দ্রবীভূত হয় কিন্তু এরা টাইরোসিন থেকে সংশ্লেষিত হয় যা অ্যান্থোসায়ানিনের মত নয়। এই শ্রেণীর পিগমেন্টগুলো শুধুমাত্র ক্যারিফাইলেইল (ক্যাকটাস এবং কচু অন্তর্ভুক্ত) বর্গে পাওয়া যায় এবং কখনো উদ্ভিদে অ্যান্থোসায়ানিনের সাথে থাকে না। [৪] বীটের গাঢ় লাল রংয়ের জন্যে বিটালেইন দায়ী।

শরৎকালে উদ্ভিদের পাতায় দৃশ্যমান পিগমেন্টেশনের (রং সৃষ্টি) প্রকাশ ঘটে এবং এটা অনেক পত্রঝরা এবং গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের সবুজ পাতাকে প্রভাবিত করে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন রকম যেমন- লাল, হলুদ, বেগুনী এবং বাদামী রং হিসেবে দৃষ্টিগোচর করে। [৭] ক্লোরোফিল বর্ণহীন টেট্রাপাইরোলে পরিণত হয় যা নন-ফ্লুরোসেন্ট ক্লোরোফিল ক্যাটাবোলাইটস (NCC) নামে পরিচিত। [৮] যখন প্রধান ক্লোরোফিল ক্ষয় হয়ে যায়, তখন লুকিয়ে থাকা হলুদ জ্যান্থোফিল এবং কমলা বিটা-ক্যারোটিন প্রকাশিত হয়। এই পিগমেন্টগুলো সারাবছর জুড়েই উপস্থিত থাকে কিন্তু ক্লোরোফিল অর্ধেক ক্ষয় হওয়ার পর লাল অ্যান্থোসায়ানিন ডি নভো প্রক্রিয়ায় একেবারে পুরোটা সংশ্লেষিত হয়। আলোক প্রক্রিয়াকরণ যৌগ হতে অ্যামিনো অ্যাসিড নির্গত হয় এবং পরবর্তী বসন্ত না আসা পর্যন্ত গাছের মূল, শাখা-প্রশাখা, কাণ্ড এবং গুঁড়িতে জমা থাকে এবং পরবর্তী বসন্তকালে নতুন পাতাতে পুনব্যবহৃত হয়।

প্রাণীতে পিগমেন্ট সম্পাদনা

অনেক প্রাণী নিজেদের সুরক্ষা যেমন- ছদ্মবেশ, অনুকরণ অথবা সতর্কীকরণের রং প্রদর্শনের জন্যে পিগমেন্টেশন ব্যবহার করে। কিছু প্রাণী যেমন- মাছ, উভচর প্রাণী এবং শামুক প্রভৃতি পিগমেন্ট হিসেবে ক্রোমাটোফোর ব্যবহার করে যা তাদেরকে পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির সাথে রং পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করতে সাহায্য করে।

পিগমেন্টেশন প্রাণীদের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কোর্টশিপ এবং প্রজনন আচরণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শামুক জাতীয় প্রাণী যোগাযোগের জন্যে ক্রোমাটোফোর ব্যবহার করে।

আলোক-পিগমেন্ট রোডোপসিন আলোকে দৃষ্টিগোচর হওয়ার প্রথম ধাপেই শোষণ করে নেয়।

চামড়া বা ত্বকের পিগমেন্ট মেলানিন সূর্যরশ্মি থেকে পোড়ে যাওয়া এবং অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ থেকে টিস্যু বা কলাকে রক্ষা করে।

কিন্তু প্রাণীর কিছু জৈবিক গঠন যেমন- হিম গ্রুপ যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে এবং গঠনের জন্যে এটা লাল রংয়ের হয়ে থাকে। সুরক্ষা এবং সংকেত আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের রংয়ের কোন ভূমিকা নেই।

রোগ-ব্যাধি এবং অস্বাভাবিক অবস্থা সম্পাদনা

মানুষ বা প্রাণীতে অনেক ধরনের রোগ-ব্যাধি এবং অস্বাভাবিক অবস্থা পিগমেন্টেশনের সাথে জড়িত, এগুলো পিগমেন্টেশন বা পিগমেন্ট কোষের অনুপস্থিতি বা অভাবের জন্যে হতে পারে অথবা পিগমেন্টের অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেও হতে পারে।

  • অ্যালবিনিসম (অস্বাভাবিক শ্বেতচর্ম প্রাণী) একটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ যা মেলানিনের সম্পূর্ণ বা আংশিক অভাবে হয়ে থাকে। মানুষ বা প্রাণী যারা অ্যালবিনিসমে আক্রান্ত তাদেরকে অ্যালবিনিস্টিক (কখনো কখনো 'অ্যালবিনু' বলা হয় কিন্তু এটা মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে আক্রমণাত্বক মনে হয়) বলা হয়।
  • ল্যামেলার ইকথায়োসিসকে "মাছের আঁইশ রোগ" ও বলা হয়।। এটা একপ্রকার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ যার একটা লক্ষণ হল অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন। চামড়া সাধারণের চেয়ে অনেক কালো এবং ছোপ-ছোপ, আঁশযুক্ত ও কালো দাগযুক্ত হয়ে থাকে।
  • মেলাসমা একটা অবস্থা যাতে মুখ-মণ্ডলে গাঢ় দাগযুক্ত পিগমেন্ট দেখা যায় এবং এটা হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়। যখন এটা গর্ভধারণের সময় সৃষ্টি হয় তখন একে মাস্ক অব প্রেগন্যান্সি বলা হয়।
  • অ্যাকুলার (দৃষ্টি সংক্রান্ত) পিগমেন্টেশনে চোখের ভেতর পিগমেন্ট জমা হতে থাকে এবং এটা চোখের অভ্যন্তরের চিকিৎসার জন্যে হতে পারে। [৯]
  • ভিটিলিগু (ধবল বা শ্বেতী রোগ) হল এমন একটা অবস্থা যখন ত্বকের কোথাও পিগমেন্ট উৎপাদনকারী মেলানোসাইট কোষ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তখন সৃষ্টি হয়।

সামুদ্রিক প্রাণীতে পিগমেন্ট সম্পাদনা

ক্যারোটিনয়েড এবং ক্যারোটিনোপ্রোটিন সম্পাদনা

ক্যারোটিনয়েড প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সব থেকে প্রাচুর্যপূর্ণ পিগমেন্ট।[১০] প্রায় ৬০০ এর বেশি বিভিন্ন ধরনের পিগমেন্ট প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অণুজীবে পাওয়া যায়।

প্রাণীরা নিজেদের দরকারী ক্যারোটিনয়েড উৎপাদন করতে অক্ষম তাই তারা এই পিগমেন্টের জন্যে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। ক্যারোটিনোপ্রোটিনগুলি বিশেষভাবে সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে বেশি প্রচলিত। এই যৌগগুলো সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের সঙ্গম ক্রিয়া এবং ছদ্মবেশের বিভিন্ন রং (লাল, বেগুনী, নীল, সবুজ ইত্যাদি) প্রদান করার জন্যে দায়ী। প্রধানত দুই ধরনের ক্যারোটিনোপ্রোটিন রয়েছে: টাইপ এ এবং টাইপ বি। টাইপ এ এর মধ্যে ক্যারোটিনয়েড (ক্রোমোজেন) আছে যা নির্দিষ্ট অনুপাতে প্রোটিনের (গ্লাইকোপ্রোটিন) সাথে যুক্ত। দ্বিতীয় প্রকার হল টাইপ বি, এর মধ্যেও ক্যারোটিনয়েড আছে এবং একটি লিপোপ্রোটিনের সাথে যুক্ত এবং কম স্থিতিশীল। টাইপ এ সাধারণত সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণীর বহিঃআবরণে (খোলস বা ত্বক) পাওয়া যায় এবং টাইপ বি ডিম, ডিম্বাশয় এবং রক্তে পাওয়া যায়। ক্যারোটিনোপ্রোটিন যৌগগুলোর রং এবং বৈশিষ্টগত শোষণ ক্ষমতা ক্রোমোজেন এবং প্রোটিন সাব ইউনিটের রাসায়নিক বন্ধনের উপর নির্ভর করে।

উদাহরণ- নীল ক্যারোটিনোপ্রোটিন, লিনকিয়াসায়ানিন এর প্রতি অণুতে ১০০-২০০ টি ক্যারোটিনয়েড মৌল থাকে। [১১] আরো বলা যায় এসকল পিগমেন্ট-প্রোটিন যৌগ তাদের রাসায়নিক গঠনেও পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সালোকসংশ্লেষণিক গঠনের মধ্যে যেসব ক্যারোটিনোপ্রোটিন রয়েছে সেগুলি বেশি প্রচলিত এবং জটিল হয়ে থাকে। সালোকসংশ্লেষণিক গঠনের বাইরে যেসব পিগমেন্ট-প্রোটিন যৌগ রয়েছে সেগুলি কম প্রচলিত কিন্তু সহজতর গঠন রয়েছে। উদাহরণ- জেলিফিস এবং Velella velella তে মাত্র দুইটি অ্যাসটাজ্যান্থিন প্রোটিন রয়েছে এবং প্রতিটি যৌগে ১০০টি ক্যারোটিনয়েড রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

প্রাণীতে প্রাপ্ত একটি প্রচলিত ক্যারোটিনয়েড হল অ্যাসটাজ্যান্থিন যা বেগুনী-নীল এবং সবুজ পিগমেন্ট প্রদান করে। অ্যাসটাজ্যান্থিন যৌগ প্রোটিনের সাথে একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সজ্জিত হয়ে এর রং সৃষ্টি করে। উদাহরণ- ক্রাসটোক্রিন এর মধ্যে কমপক্ষে ২০টি অ্যাসটাজ্যান্থিন অণু আছে যা প্রোটিনের সাথে বন্ধন গঠন করে রয়েছে। যখন এই যৌগগুলি exciton-exciton মিথক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে, তখন এদের শোষণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রংয়ের পিগমেন্টে পরিবর্তিত হতে থাকে।

লবস্টারে অনেক ধরনের অ্যাসটাজ্যান্থিন-প্রোটিন যৌগ বর্তমান আছে। প্রথমটি হল ক্রাস্টাসায়ানিন (সর্বোচ্চ ৬৩২ ন্যানোমিটার), এটি একটি ধূসর-নীল রংয়ের পিগমেন্ট যা লবস্টারের খোলসে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়টি হল ক্রাসটোক্রিন (সর্বোচ্চ ৪০৯ ন্যানোমিটার), এটি একটি হলুদ রংয়ের পিগমেন্ট যা খোলসের বহিঃআবরণে পাওয়া যায়। সর্বশেষ হল লিপোগ্লাইকোপ্রোটিন এবং ওভোভার্ডিন যা হালকা সবুজ পিগমেন্ট গঠন করে এবং খোলস ও ডিমের বহিঃআবরণে পাওয়া যায়। [১২][১৩]

টেট্রাপাইরোল সম্পাদনা

টেট্রাপাইরোল পরবর্তী সবথেকে সহজপ্রাপ্ত পিগমেন্টের শ্রেণী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তাদের চারটি পাইরোল রিং আছে, প্রতিটি রিং C4H4NH নিয়ে গঠিত। টেট্রাপাইরোলের প্রধান ভূমিকা হল জৈব জারণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। ইলেকট্রন পরিবহন এবং অনেক এনজাইমকে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামুদ্রিক প্রাণীর টিস্যু বা কলার পিগমেন্টেশনেও তাদের ভূমিকা রয়েছে।

মেলানিন সম্পাদনা

মেলানিন [১৪] হল এক শ্রেণীর যৌগ যা পিগমেন্ট প্রদান করে এবং সামুদ্রিক প্রাণীর বিভিন্ন গঠনে কালো, ট্যান, হলুদাভ/লালচে পিগমেন্টের জন্যে দায়ী। এটা অ্যামিনু এসিড টাইরোসিনের মেলানিনে রূপান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয় যা চামড়া, চুল এবং চোখে পাওয়া যায়। এটা হল পলিমার যা ফেনলের স্ববাত জারণের মাধ্যমেও সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন ধরনের মেলানিন রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয় এবং এরা নাইট্রোজেন ঘটিত মেলানিনের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুতে একত্রীভূত হয়ে অবস্থান করে। দুই ধরনের পিগমেন্ট রয়েছে: অদ্রবীভূত কালো এবং ধূসর রংয়ের ইউমেলানিন যা টাইরোসিনেজ এর উপস্থিতিতে টাইরোসিন থেকে স্ববাত জারণের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। এবং ক্ষারে দ্রবীভূত ফিউমেলানিন যার রংয়ের ব্যপ্তি হলুদ থেকে লাল-বাদামী পর্যন্ত এবং সিসটিন এবং/ অথবা গ্লুটাথায়োনের উপস্থিতিতে ইউমেলানিন পাথওয়ের বিচ্যুতির মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। ইউমেলানিন সাধারণত চামড়া এবং চোখে পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যতিক্রমধর্মী মেলানিনের মধ্যে মেলানোপ্রোটিন (গাঢ় বাদামী মেলানিন যা উচ্চ ঘনমাত্রায় সামুদ্রিক সীল Sepia officinalis এর ইঙ্ক স্যাক এ জমা থাকে), ইকহিনোইডিয়া (স্যাণ্ড ডলার এবং সী অর্চিন এর হৃৎপিণ্ডে পাওয়া যায়), হলোথোরোইডিয়া (সী কিউকাম্বারে পাওয়া যায়) এবং অফিউরোইডিয়া (ব্রিটল এবং স্নেক স্টারে পাওয়া যায়) অন্তর্ভুক্ত। এই মেলানিনগুলি সাধারণত পলিমার যা দ্বি বা বহুমুখী কার্যক্রম সম্পন্নকারী মনোমারিক ইন্টারমিডিয়েটস (মধ্যবর্তী বস্তু) এবং উচ্চ আণবিক ভরসম্পন্ন যৌগের সংযোজনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন ধরনের মেলানিন রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয় এবং এরা নাইট্রোজেন ঘটিত মেলানিনের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুতে একত্রীভূত হয়ে অবস্থান করে।

জৈব প্রতিপ্রভা বা বায়োফ্লুরোসেন্ট সম্পাদনা

গভীর সমুদ্রে আলোর একমাত্র উৎস হল সামুদ্রিক প্রাণীর নিঃসৃত দৃশ্যমান আলোকশক্তি যাকে জৈব প্রতিপ্রভা বলে [১৫] এবং এটি রাসায়নিক প্রতিপ্রভার একটি অংশ। এটি এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া যাতে রাসায়নিক শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এটা অনুমান করা হয় যে, ৯০% গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণী কিছু পরিমাণ হলেও জৈব প্রতিপ্রভা উৎপন্ন করে। এটা ধারণা করা হয় যে, দৃশ্যমান আলোক বর্ণালীর বৃহৎ অংশ গভীর সমুদ্রে পৌঁছানোর পূর্বেই শোষিত হয় এবং সামুদ্রিক প্রাণীর নির্গত আলোর অধিকাংশ নীল অথবা সবুজ। কিন্তু কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল এবং অবলোহিত আলো নির্গত করে এবং একটি গণ খুঁজে পাওয়া গেছে যারা হলুদ প্রতিপ্রভা নির্গত করে। যে অঙ্গ প্রতিপ্রভা নিঃসরনের জন্যে দায়ী যা ফটোফোর নামে পরিচিত। এটা শুধুমাত্র স্কুইড এবং মাছে বর্তমান আছে যা তাদের উদরীয় অংশকে আলোকিত করার জন্যে ব্যবহৃত হয় এবং এদেরকে শিকারীর কাছ থেকে আড়াল রাখে। বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীভেদে ফটোফোরের ব্যবহার বিভিন্ন রকম হয়, যেমন আলোর অতিশয্য নিয়ন্ত্রণকারী লেন্স হিসেবে অথবা বেশি পরিমাণ আলো উৎপন্ন করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। এই উভয় অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে স্কুইডে ফটোফোর এবং ক্রোমাটোফোর অবস্থিত। জৈব প্রতিপ্রভা নির্গত করার জন্যে আরও একটা জিনিস দায়ী যার ফলে জেলিফিশ থেকে প্রচুর পরিমাণ আলো নির্গত হয়, এটা শুরু হয় লুসিফেরিন (একটি ফটোজেন) থেকে এবং শেষ হয় আলোক বিকিরণকারীর (একটি ফোটাগোগিকন) মাধ্যমে। লুসিফেরিন, লুসিফেরাস, লবণ এবং অক্সিজেন সমন্বিতভাবে বিক্রিয়া করে এক ইউনিট ফটো-প্রোটিন তৈরি করে যা অন্য অণু যেমন ক্যালসিয়াম (Ca+) এর সাথে বিক্রিয়া করে আলোক উৎপন্ন করে। জেলিফিস এটা প্রতিরক্ষা কৌশলে ব্যবহার করে; যখন কোন ছোট শিকারী জেলিফিসকে আক্রমণ করতে উদ্ধত হয়, তখন এটি আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করে যা বড় শিকারীকে প্রলুব্ধ করে এবং ছোট শিকারীকে দূরে তাড়িয়ে দেয়।

প্রাচীর সৃষ্টিকারী প্রবাল এবং সামুদ্রিক পুষ্পসদৃশ প্রাণীরা প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে, তারা এক তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলোক শোষণ করে অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যে নির্গত করে। এই পিগমেন্টগুলি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে, সালোকসংশ্লেষণে সাহায্য করে, সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সঙ্গীকে আকর্ষিত করে, প্রতিদ্বন্ধীকে সতর্ক কিরে অথবা শিকারীকে হতভম্ব করে।

ক্রোমাটোফোর সম্পাদনা

ক্রোমাটোফোর হল রং পরিবর্তনকারী কোষ যা সেন্ট্রাল মোটর নিউরোন দ্বারা সরাসরি উদ্দিপীত হয়। তারা ছদ্মবেশের উদ্দেশ্যে খুব দ্রুত পরিবেশে অভিযোজনের জন্যে ব্যবহৃত হয়। ত্বকে পিগমেন্টের রং পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বিকশিত ক্রোমাটোফোর বা উন্নত কোষ যেমন- পেশী, স্নায়ু, গ্লাইয়াল এবং শীথ কোষের উপর নির্ভরশীল। ক্রোমাটোফোর সংকুচিত হয় এবং এর মধ্যে ভেসিকেল (বুদবুদ) নিহিত থাকে যা তিনটি ভিন্ন রকমের তরল পিগমেন্ট সংরক্ষণ করে। প্রতিটি রং তিন ধরনের ক্রোমাটোফোর দ্বারা নির্দেশিত হয়: ইরাইথ্রোফোর, মেলানোফোর এবং জ্যান্থোফোর। প্রথম ধরন হল ইরাইথ্রোফোর যার মধ্যে লালচে রংয়ের পিগমেন্ট যেমন- ক্যারোটিনয়েড এবং টেরিডাইন নিহিত থাকে। দ্বিতীয় ধরন হল মেলানোফোর যার মধ্যে কালো এবং বাদামী বর্ণের পিগমেন্ট মেলানিন নিহিত থাকে। তৃতীয় ধরন হল জ্যান্থোফোর যার মধ্যে ক্যারোটিনয়েড রূপে হলুদ বর্ণের পিগমেন্ট মেলানিন নিহিত থাকে। ক্রোমাটোফোরের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে বিভিন্ন রং তৈরি হয়। এই কোষগুলো সাধারণত প্রাণীর ত্বক বা স্কেলের নিচে অবস্থিত। এই কোষগুলি থেকে দুই ধরনের রং সৃষ্টি হয়- বায়োক্রোম এবং স্কিমাটোক্রোম। বায়োক্রোম রাসায়নিকভাবে গঠিত আনুবীক্ষণিক রং যা প্রাকৃতিক পিগমেন্টও হতে পারে। তাদের রাসায়নিক গঠন এমন হয় যে তারা কিছু রং গ্রহণ করে এবং বাকিগুলি প্রতিফলিত করে। অপরপক্ষে, স্কিমাটোক্রোম (গঠনগত রং) বর্ণহীন তলে আলোর প্রতিফলন এবং টিস্যুতে আলোর প্রতিসরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। স্কিমাটোক্রোম অনেকটা প্রিজমের মত আচরণ করে যা এর চারপাশের প্রতিসরিত এবং বিচ্ছুরিত দৃশ্যমান আলোকরশ্মি হতে নির্দিষ্ট রংয়ের আলোর প্রতিফলন ঘটায়। ক্রোমাটোফোরের মধ্যে পিগমেন্টের গতিবিধির দ্বারা এই শ্রেণীগুলি নির্ধারিত হয়। শারীরতাত্ত্বীয় রংয়ের পরিবর্তন অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে এবং দ্রুত হয় যা মাছের মধ্যে দেখা যায় এবং পরিবেশের কোন পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীর সাড়াদানের মাধ্যমেও বোঝা যায়। অপরদিকে অঙ্গসংস্থানিক রংয়ের পরিবর্তন দীর্ঘ পরিসরে হয় যা ক্রোমাটোফোরের সংখ্যার পরিবর্তনের কারণে প্রাণীর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটতে পারে। পিগমেন্টের রং, স্বচ্ছতা বা অস্বচ্ছতা পরিবর্তন করার জন্যে কোষ তাদের গঠন এবং আকার, অথবা তাদের বাইরের আবরণের প্রসারণ বা সংকোচন ঘটাতে পারে।

আলোক-প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট সম্পাদনা

UV-A এবং UV-B রশ্মির ক্ষয়ক্ষতির কারণে সামুদ্রিক পানিতে এমন যৌগের সৃষ্টি হয় যা অতিবেগুনী (UV) আলো শোষণ করে এবং সানস্ক্রিনের কাজ করে। মাইকোস্পোরিনের মত অ্যামিনু এসিডগুলি ৩১০-৩৬০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে। মেলানিন আরও একটি বহুল পরিচিত অতিবেগুনী রশ্মির রক্ষাকারক। অক্সিজেনের ফ্রি রেডিক্যাল সৃষ্টি বন্ধ করার মাধ্যমে ক্যারোটিনয়েড এবং ফটোপিগমেন্ট প্ররোক্ষভাবে আলোক প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্ট হিসেবে কাজ করে। এরা সালোকসংশ্লেষণিক পিগমেন্টের যোগান দেয় যা নীল রংয়ের অঞ্চল হতে আলোকশক্তি শোষণ করে।

পিগমেন্টের প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা সম্পাদনা

এটা জানা গেছে যে, বিভিন্ন প্রাণী শিকারীদের সতর্ক করার জন্যে রংয়ের নমুনা ব্যবহার করে কিন্তু এদের মধ্যে এক ধরনের স্পঞ্জ লক্ষ্য করা হয় যা রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরন করে এবং অ্যাম্ফিপোডা বর্গের শিকারদের স্পঞ্জের উপর খোলস নির্মোচন নিয়ন্ত্রণ করে। যখন অ্যাম্ফিপোডা বর্গের প্রাণী এই স্পঞ্জ খায় তখন রাসায়নিক পিগমেন্ট তাদের নির্মোচনে বাধা দেয় এবং তারা মৃত্যুবরণ করে।

রংয়ের উপর পরিবেশের প্রভাব সম্পাদনা

বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী রঙিন হওয়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে পানির গভীরতা, তাপমাত্রা, খাদ্যের উৎস, পানির স্রোত, ভৌগোলিক অবস্থান, আলোর প্রাচুর্যতা এবং পলি। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট সামুদ্রিক অ্যানিমোনে (পুষ্পরূপ প্রাণী) ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণ তত কমতে থাকে যত সমুদ্রের গভীরে যাওয়া হয়। এজন্যে যেসব প্রাণী সাগরের অগভীর (পর্যাপ্ত আলোযুক্ত) পানিতে বদবাস করে তাদের থেকে গভীর পানিতে বসবাসকারী প্রাণী পিগমেন্টের স্বল্পতার কারণে কম উজ্জ্বল হয়ে থাকে। ট্রিটিডিডেনাম সোলিডাম এবং তাদের মিথোজীবী অ্যাসিডিয়ান সায়ানোফাইট এর কলোনীর রং তাদের বসবাসকারী জায়গার আলোকপ্রাপ্তির সময়ের উপর নির্ভর করে ভিন্নরকম হতে পারে। যেসব কলোনী পূর্ণ আলোর সংস্পর্শে আসে সেগুলো অধিক ক্যালসিফাইড, অপেক্ষাকৃত ঘন এবং সাদা হয়ে থাকে। অপরদিকে যেসব কলোনী ছায়াযুক্ত স্থানে বসবাস করে তাদের ফাইকোসায়ানিন (পিগমেন্ট যা লাল রং শোষণ করে) এর তুলনায় অধিক ফাইকোইরাইথ্রিন (পিগমেন্ট যা সবুজ রং শোষণ করে) আছে, তাই তারা অপেক্ষাকৃত সরু এবং বেগুনী বর্ণের হয়ে থাকে। ছায়াযুক্ত কলোনীর বেগুনী বর্ণ হওয়ার প্রধান কারণ হল শৈবালের ফাইকোবিলিন পিগমেন্ট যা আলোর সংস্পর্শের ভিন্নতার কারণে কলোনীর পরিবর্তন ঘটায়।

অভিযোজনের রং সম্পাদনা

অ্যাপোসেমাটিসম হল সতর্কবার্তার জন্য প্রদর্শিত রং যা সম্ভাব্য শিকারীদের দূরে থাকার সংকেত দেয়। অনেক ক্রোমোড্ররিড নিউডি ব্রাঞ্চগুলি স্পঞ্জ থেকে নিঃসৃত বিপজ্জনক এবং বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ করে এবং তাদের রিপাগন্যাটোরিয়াল গ্রন্থিতে (ম্যান্টেল প্রান্তের চারদিকে অবস্থিত) জমা রাখে। অনেক ক্রোমোড্ররিড নিউডি ব্রাঞ্চের শিকারীরা এসব নিউডি ব্রাঞ্চের উজ্জ্বল রংয়ের ধরন দেখে তাদের এড়িয়ে চলে। অনেক শিকার বিভিন্ন রকম জৈব এবং অজৈব যৌগের মাধ্যমে নিজেদেরকে এসব বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে।

শারীরতাত্ত্বিক কার্যক্রম সম্পাদনা

সামুদ্রিক প্রাণীদের পিগমেন্টের প্রতিরক্ষামূলক কাজ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের উদ্দেশ্য আছে। কিছু পিগমেন্ট অতিবেগুনী রশ্মি থেকে সুরক্ষার জন্যে পরিচিত (আলোক-প্রতিরক্ষামূলক পিগমেন্টে দেখুন)। নিউডি ব্রাঞ্চ নেমব্রোথা কুরারিয়ানাতে টেট্রাপাইরোল পিগমেন্ট ১৩ পাওয়া যায় যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (অণুজীব-বিরোধী) উপাদান হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে ট্যামজ্যামিয়ান A, B, C, D, E এবং F আছে যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, টিউমার বিরোধী এবং ইমিউনোসাপ্রেসিভ কার্যক্রম প্রদর্শন করে।

সেসকুইটারপিনয়েডকে তাদের নীল এবং বেগুনী রংয়ের জন্যে পরিচিত যা বিভিন্ন জৈব কার্যক্রম প্রদর্শন করে যেমন- ব্যাকটেরিয়াবিরোধী, ইমিউনো নিয়ন্ত্রণকারী, অণুজীব বিরোধী ও সাইটোটক্সিক এবং সামুদ্রিক অর্চিন ও অ্যাসিডিয়ানের নিষিক্ত ডিম্বাণুর কোষ বিভাজনের বাধাদানকারী উপাদানকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যান্য কিছু পিগনমেন্ট রয়েছে সেগুলো সাইটোটক্সিক হয়ে থাকে। আসলে Phakellia stelliderma এর স্পঞ্জ থেকে দুইটি নতুন ক্যারোটিনয়েড পৃথক করা হয়েছে যেগুলো ইঁদুরের লিউকেমিয়া কোষের বিরুদ্ধে মৃদু সাইটোটক্সিসিটি প্রদর্শন করে। আরও কিছু পিগমেন্ট যেমন- স্কাইটোনেমিন, টপসেনটিন এবং ডেব্রোমোহাইমেনিয়ালডাইসিন ইত্যাদির চিকিৎসার সাথে সমপৃক্ততা আছে এবং এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যৌগ আছে যা প্রদাহ, গেঁটে বাত ও হাড়ের বাতে ভূমিকা রাখে। এটা প্রমাণ হয়েছে যে, টপসেনটিন ইমিউনোজেনিক স্ফীতির একটি শক্তিশালী উপাদান এবং টপসেনটিন ও স্কাইটোনেমিন স্নায়বিক প্রদাহের শক্তিশালী নিরোধক হিসেবে কাজ করে।

ব্যবহার সম্পাদনা

পিগমেন্টকে পৃথক করে রং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পিগমেন্টকে (যেমন- অ্যাসটাজ্যান্থিন এবং লাইকোপেন) পৃথক করে ডায়েটারী সাপ্লিমেন্ট (সুষম খাদ্যের সম্পূরক সংযোজক) হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "biochrome - biological pigment". Encyclopædia Britannica. Retrieved 27 January 2010.
  2. Stavenga, D. G.; Leertouwer, H. L.; Wilts, B. D. (2014). "Coloration principles of nymphaline butterflies - thin films, melanin, ommochromes and wing scale stacking". Journal of Experimental Biology. 217 (12): 2171. doi:10.1242/jeb.098673. PMID 24675561
  3. Grotewold, E. (2006). "The Genetics and Biochemistry of Floral Pigments". Annual Review of Plant Biology. 57: 761. doi:10.1146/annurev.arplant.57.032905.105248.
  4. Lee, DW (2007) Nature's palette - the science of plant color. University of Chicago Press
  5. Young AJ, Phillip D, Savill J. Carotenoids in higher plant photosynthesis. In: Pessaraki M, ed. Handbook of Photosynthesis, New York, Taylor and Francis, 1997: pp. 575-596.
  6. García-Plazaola JI, Matsubara S, Osmond CB. The lutein epoxide cycle in higher plants: its relationships to other xanthophyll cycles and possible functions. Funct. Plant Biol. 2007; 34: 759-773.
  7. "The Science of Color in Autumn Leaves".
  8. Hortensteiner, S. (2006). "Chlorophyll degradation during senescence". Annual Review of Plant Biology. 57: 55–77. doi:10.1146/annurev.arplant.57.032905.105212. PMID 16669755.
  9. Rang, H. P. (2003). Pharmacology. Edinburgh: Churchill Livingstone. ISBN 0-443-07145-4. Page 146
  10. Nadakal A. M.. "Carotenoids and Chlorophyllic Pigments in the Marine Snail, Cerithidea Californica Haldeman, Intermediate Host for Several Avian Trematodes." Marine Biological Laboratory. JSTOR, n.d. Web. 26 May 2010.
  11. Milicua, JCG. "Structural characteristics of the carotenoids binding to the blue carotenoprotein from Procambarus clarkii." Structural characteristics of the carotenoids binding to the blue carotenoprotein from Procambarus clarkii. N.p., 25 Oct. 1984. Web. 24 May 2010.
  12. ZAGALSKY, Peter F. . "The lobster carapace carotenoprotein, a-crustacyanin." A possible role for tryptophan in the bathochromic spectral shift of protein-bound astaxanthin. N.p., n.d. Web. 25 May 2010.
  13. CHANG, KENNETH. "Yes, It's a Lobster, and Yes, It's Blue." The New York Times - Breaking News, World News & Multimedia. NY Times, 15 Mar. 2005. Web. 24 May 2010. Bandaranayake, Wickramasinghe. "The nature and role of pigments of marine
  14. Bandaranayake, Wickramasinghe. "The nature and role of pigments of marine invertebrates." Natural Products Report. Cambridge, n.d. Web. 25 May 2010.
  15. Webexhibits. "Bioluminescence | Causes of Color." WebExhibits. Web. 2 June 2010.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:উদ্ভিদে পিগমেন্ট