বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত
বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত (১৮ অগস্ট ১৯০০ – ১ ডিসেম্বর ১৯৯০) ছিলেন একজন ভারতীয় কূটনৈতিক ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন জওহরলাল নেহেরুর বোন,[১] ইন্দিরা গান্ধীর পিসি ও রাজীব গান্ধীর পিসি-ঠাকুরমা।
জন্ম | এলাহাবাদ, উত্তরপশ্চিম প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত | ১৮ আগস্ট ১৯০০
---|---|
মৃত্যু | ১ ডিসেম্বর ১৯৯০ | (বয়স ৯০)
দাম্পত্যসঙ্গী | রঞ্জিত সীতারাম পণ্ডিত |
সন্তান | নয়নতারা সেহগল |
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাবিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের বাবা মতিলাল নেহেরু (১৮৬১ – ১৯৩১) ছিলেন কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায়ভুক্ত এক ধনী ব্যারিস্টার। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন। তার মা স্বরূপরাণী থুস্সু (১৮৬৮ – ১৯৩৮) ছিলেন লাহোরে বসবাসকারী এক বিখ্যাত কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে।[২] স্বরূপরাণী ছিলেন মতিলাল নেহেরুর দ্বিতীয়া পত্নী। তার প্রথমা স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। বিজয়লক্ষ্মী ছিলেন জওহরলাল নেহেরুর (জন্ম ১৮৮৯) এগারো বছরের ছোটো এবং তার ছোটোবোন কৃষ্ণা হাথিসিং-এর (জন্ম ১৯০৭) থেকে সাত বছরের বড়ো। কৃষ্ণা হাথসিং ছিলেন বিশিষ্ট লেখিকা। তিনি তার দাদা সম্পর্কে অনেক বই লিখেছিলেন।
বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিতের প্রথম স্বামী ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কূটনৈতিক সাইয়িদ হুসাইন, মতিলাল নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপে তা বিচ্ছেদ ঘটে।
(তথ্য সূত্র- বিবিসি হিন্দি
তারিখ, ২৬/০৮/২০২৩)
১৯২১ সালে বিজয়লক্ষ্মীর সঙ্গে রঞ্জিত সীতারাম পণ্ডিতের বিবাহ হয়। তার স্বামী ছিলেন কাথিয়াওয়াড়ের এক সফল মহারাষ্ট্রীয় ব্যারিস্টার এবং সংস্কৃত ভাষাবিদ। তিনি কলহনের ঐতিহাসিক মহাকাব্য রাজতরঙ্গিনী সংস্কৃত থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি কারারুদ্ধ হন এবং লখনউ-এর জেলে ১৯৪৪ সালেমারা যান। তাদের তিন কন্যা ছিল: চন্দ্রলেখা মেহতা, নয়নতারা সেহগল ও রীতা ডর। ১৯৯০ সালে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত প্রয়াত হন।
বিজয়লক্ষ্মীর কন্যা নয়নতারা সেহগল ছিলেন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক। তিনি পরে দেরাদুনে তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। তার কন্যা গীতা সেহগল হলেন একজন নারীবাদ, মৌলবাদ ও জাতিবাদ-বিষয়ক লেখিকা, সাংবাদিকা, বিভিন্ন পুরস্কার-জয়ী তথ্যচিত্রের পরিচালিকা এবং মানবাধিকার কর্মী।
রাজনৈতিক কর্মজীবন
সম্পাদনাবিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত প্রথম ভারতীয় নারী ক্যাবিনেট মন্ত্রী। ১৯৩৭ সালে তিনি যুক্তপ্রদেশের প্রাদেশিক আইনসভায় নির্বাচিত হন এবং স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাস ও জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী হন। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এবং পরে ১৯৪৬-৪৭ সালে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি যুক্তপ্রদেশ থেকে ভারতের গণপরিষদে নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের রাষ্ট্রদূত হন। ১৯৪৭-৪৯ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে, ১৯৪৯-৫১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো, ১৯৫৫-৬১ সালে আয়ারল্যান্ডে (এই সময় তিনি যুক্তরাজ্যেও ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন) এবং ১৯৫৮-৬১ সালে স্পেনে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রসংঘে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম নারী সভাপতি হন।[৩] (এজন্য ১৯৭৮ সালে তিনি আলফা কাপ্পা আলফা সোরোরিটির এক সাম্মানিক সদস্য হয়েছিলেন [৪])
ভারতে তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ছিলেন। এরপর তিনি ফুলপুর থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন। ফুলপুর ছিল জওহরলাল নেহেরুর লোকসভা কেন্দ্র। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত তিনি এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন। বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত তার ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কঠোর সমালোচক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বিজয়লক্ষ্মী সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি হিমালয়ের পাদদেশে দুন উপত্যকার দেরাদুনে এসে বসবাস শুরু করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ভারতীয় প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। এরপর তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে বসবাস শুরু করেন। তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দি ইভোলিউশন অফ ইন্ডিয়া (১৯৫৮) ও দ্য স্কোপ অফ হ্যাপিনেস: আ পার্সোনাল মেময়ার (১৯৭৯)।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ President of 62nd session, General Assembly of United Nations। "Vijay Lakshmi Pandit (India)"। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১২।
- ↑ Zakaria, Rafiq A Study of Nehru, Times of India Press, 1960, p. 22
- ↑ Oxford Dictionaries, online। "Vijay Lakshmi Pandit"। ১৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১২।
- ↑ "Alpha Kappa Alpha 1978"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪।
আরও পড়ুন
সম্পাদনাGupta, Indra। India’s 50 Most Illustrious Women। আইএসবিএন 81-88086-19-3।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- একটি ফিল্ম ক্লিপ "Longines Chronoscope with Mme. Vijaya Lakshmi Pandit" ইন্টারনেট আর্কাইভ-এ উপলভ্য
কূটনৈতিক পদবী | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী Asaf Ali |
Indian Ambassador to the United States 1949–1952 |
উত্তরসূরী Gaganvihari Lallubhai Mehta |
পূর্বসূরী Lester B. Pearson |
President of the United Nations General Assembly 1953 |
উত্তরসূরী Eelco N. van Kleffens |