বাংলাদেশ আনসার

বাংলাদেশী আধা-সামরিক বাহিনী
(বাংলাদেশ আনসার (আনসার বহিনী) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একটি বাংলাদেশী আধাসামরিক বাহিনী। বাহিনীটি দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও অনন্য বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করে। অঙ্গীভুত আনসার এবং ভিডিপি সদস্য ও ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়ে বাংলাদেশ আনসার বাহিনী গঠিত।

বাংলাদেশ আনসার
আনসার ও ভিডিপির লোগো
সক্রিয়১৯৪৮–বর্তমান
দেশ পাকিস্তান (১৯৪৮–১৯৭১)
 বাংলাদেশ (১৯৭১–বর্তমান)
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখাঅঙ্গীভূত আনসার
আনসার ব্যাটালিয়ন
ভিডিপি
ধরনআধাসামরিক
আকারঅঙ্গীভূত আনসার: ৯৫ হাজার
ভিডিপি: ৫৮ লক্ষ ৮৭ হাজার
ব্যাটালিয়ন আনসার: ১৮ হাজার
সর্বমোট: ৬০ লক্ষ
গ্যারিসন/সদরদপ্তরঢাকা, বাংলাদেশ
ডাকনামবাংলাদেশ আনসার,
গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী
পৃষ্ঠপোষকরাষ্ট্রপতি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
নীতিবাক্যশান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, নিরাপত্তায় সর্বত্র আমরা
রং     লাল
     সবুজ
কুচকাত্তয়াজজাতীয় সমাবেশ
(১২ই ফেব্রুয়ারি)
বার্ষিকী১২ ফেব্রুয়ারি
(বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী)
সরঞ্জামাদিটাইপ-৫৬ এসল্ট রাইফেল,
টাইপ-৫৬ এস এম জি,
টাইপ-৫৬ লাইট মেশিনগান,
এম-২ ভারি মেশিনগান,
৬০মিঃ মর্টার,
৮০মিঃ মর্টার,
টাইপ-৫৬ কার্বাইন,
মিলস বোম্ব গ্রেনেড,
পাম্প-অ্যাকশন শটগান,
এম-৪ শটগান,
টাইপ-৫৪ পিস্তল,
লি এনফিল্ড রাইফেল (রিটায়ার্ড),
থ্রী নট থ্রী (রিটায়ার্ড)
যুদ্ধসমূহপার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
বাংলা ভাষা আন্দোলন
সজ্জা১. বীর শ্রেষ্ঠ
২. বীর উত্তম
৩. বীর বিক্রম
৪. বীর প্রতীক
ওয়েবসাইটhttps://ansarvdp.gov.bd
কমান্ডার
মহাপরিচালকমেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক স্বপন
এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি[১]
অতিরিক্ত মহাপরিচালকব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজিম উদ্দিন
বিজিবিএম, পিবিজিএম (বার), এনডিসি[১]
কমান্ড্যান্টমোঃ নূরুল হাসান ফরিদী[১]
উপ-মহাপরিচালক (প্রশাসন)কর্নেল মোহাম্মদ রফিকুল হাসান
পি এস সি[১]
মোঃ নূরুল হাসান ফরিদী[১]

বাহিনীর সফলতা সরুপ ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বাহিনীকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রদান করেন।

ইতিপূর্বে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) নামে আনসার বাহিনীর নতুন একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। যারা গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের নিরাপত্তা এবং সরকারের বিশেষ বিশেষ কাজে নিয়োজিত থাকে।

বাহিনীর আইন সম্পাদনা

আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩ দ্বারা আনসার ব্যাটালিয়ন গঠিত।

সাধারণ আনসার-১৯৯৫ আইন দ্বারা সাধারণ আনসার গঠিত এবং ভিডিপি-১৯৯৫ আইন দ্বারা গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠিত।


মহান ভাষা আন্দোলন সম্পাদনা

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন মুহূর্তে আনসার বাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। মহান ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহের আনসার প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বার শহীদ হন।যার আত্নত্যাগ ও অবদানে এ বাহিনী গর্বিত।


পার্বত্য এলাকা সম্পাদনা

পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর সাথে ১৯৭৬ সাল হতে বাহিনীর আনসার ব্যাটালিয়ন দায়িত্বপালন করিতেছে। দায়িত্ব পলন করতে গিয়ে ১৯ জন সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। এছাড়া প্রায় তিনশত সদস্য বিভিন্ন কারনে অকাল মৃত্যুবরন করেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক হিল আনসার ও হিল ভিডিপি সদস্য পার্বত্যাঞ্চলে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে ও সংঘাতে নিহত হন।


ক্রীড়া সম্পাদনা

ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। খেলাধুলার চর্চা ও জাতীয় ক্রীড়া  বিকাশে উল্লেখযোগ্য আবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে এ বাহিনী ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করে। বাহিনীর ক্রীড়াদল পর পর ৫ বার বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। গত বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস-২০২০ ও জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এ বাহিনীর ক্রীড়াদল ১৩৩ টি, স্বর্ণ, ৫৭ টি রৌপ্য ও ৮০ টি ব্রোঞ্জপদক সহ ১০ টি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে ০৯টি স্বর্ণ, ০৭টি রৌপ্য, ও ১১টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় ভারতীয় গার্ডের কিছু সদস্য, যারা পরবর্তীতে পাকিস্তানের নাগরিক হয়, সেখান থেকে বের হয়ে আনসার বাহিনী গঠন করে। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান আনসার আইন দ্বারা আনসার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান আনসার হিসাবে গঠিত এবং ১৯৪৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে[৩]

স্বাধীনতা পূর্ব সম্পাদনা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, আনসারের বেশির ভাগ সদস্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর গেরিলা সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, বাংলাদেশ আইন দ্বারা আনসার বাহিনী আবার পুনর্গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর সরকার আনসার বাহিনীর ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে আনসার বাহিনীকে জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসেবে মনোনীত করেন।[৪]

বাহিনীর নাম পরিবর্তন প্রস্তাব সম্পাদনা

সম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্ড করার প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।[৫]

মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদনা

মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে (মুজিবনগরে) গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহনকালে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর সাথে ১২ জন বীর আনসার সদস্য ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৩ জন কর্মচারী ও ৬৫৮ জন আনসার সদস্য শহিদ হন। এ বাহিনীর ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল শক্তি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বাহিনীর ১ জন সদস্য বীর বিক্রম এবং ২ জন সদস্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।

নির্বাচন সম্পাদনা

জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে জননিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা। বিশেষ করে মহিলা নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েনের ফলে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে মহিলা ভোটারের উপস্থিতি বর্তমানে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আমাদের অনেক সদস্য-সদস্যা গুরুতর আহত ও নিহত হয়েছেন। গত বছর ০৫ জন ভিডিপি মহিলা সদস্যসহ ০১জন পুরুষ সদস্য বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপালনকালে নিহত হন।

আভিযানিক সম্পাদনা

এছাড়া হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার, সম্মুখ যুদ্ধ, নাশকতার ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক সদস্য-সদস্যা গুরুতর আহত হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পাদনা

মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এ বাহিনী গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছে। বিশেষ করে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ত্রান ও পুর্নবাসন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন।

দায়িত্ব পালন সম্পাদনা

রেলপথ ও রেলরক্ষা

অপারেশন রেলরক্ষা ২০১৩/১৪ কার্যক্রমে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরিক্ষা বাহিনীর প্রায় ৮,৩২৮ জন সদস্য ৩৬টি জেলার ১,০৪১টি ঝুঁকিপূর্ন পয়েন্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে সকলের আস্থা অর্জন করেছে।২০১৫ সালেও সরকারের নির্দেশে এ বাহিনীর ৮,৮৯৬ জন সদস্য ৩৭টি জেলার ১,১১২টি পয়েন্টে রেল নিরাপত্তা রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে। গত বছর বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ০৭ জন সদস্য নিহত হয়। সড়ক ও মহাসড়ক

সড়ক ও মহাসড়ক

রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের লক্ষ্যে ২০১৩ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারাদেশের সড়ক ও মহাসড়কের ৯৯৩টি ঝুঁকিপূর্ন পয়েন্টে ১২ জন করে ১১,৯১৬ জন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। গত বছর দায়িত্বপালনরত অবস্থায় ১১ জন গুরুতরসহ ২৮ জন সদস্য আহত হয়। বিমান ও স্থল বন্দর

বিমান ও স্থল বন্দর

দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ স্থল বন্দরগুলোতে সাধারন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য-সদস্যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকালে অসীম সাহসিকতার সাথে সন্ত্রাসী মোকাবেলা করতে গিয়ে সাধারন আনসার সদস্য সোহাগ আলী নিহত হন। অতি সম্প্রতি বেনাপোল স্থল বন্দরে চোরাকারবারীর ছুরিকাঘাতে সাধারন আনসার সদস্য ফিরোজ হোসেন নিহত হন।

প্রকাশনা সম্পাদনা

বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি একাডেমি থেকে মাসিক, ত্রি-মাসিক, ষান্মাসিক প্রকাশনা বের করে থাকে।

  • প্রতিরোধ শিরোনামে একটি মাসিক প্রতিবেদনমূলক সাময়িকী বা ম্যাগাজিন।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. [১]
  2. "আমাদের গর্ব" 
  3. "Take a look at the history"www.ansarvdp.gov.bd। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৫ 
  4. "War of Liberation"www.ansarvdp.gov.bd। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৫ 
  5. "আনসারে চাকরি ৬ বছরে স্থায়ী বিদ্রোহে মৃত্যুদণ্ড"সমকাল। ২০২২-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা