বরেন্দ্র
বরেন্দ্র বা বরিন্দ বাংলার একটি ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল,[১] যা প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র এবং গৌড় রাজ্যের অংশ ছিলো, বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ বিভাগের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। আজও বাংলাদেশের বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, নওগাঁ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে বিশেষ লাল রঙের ভূমি প্রকৃতির ও তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যে দেশীভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় (যেমন খিয়াড়) আর এসব এলাকা আজও বরিন্দী বাংলার সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বহন করে।
আলেকজান্ডার কানিংহাম অনুযায়ী, বরিন্দের সীমানা পশ্চিমে গঙ্গা ও মহানন্দা, পূর্বে করতোয়া, দক্ষিণে পদ্মা আর উত্তরে কুচবিহার এবং তেরাই-এ মাঝে ছিল।
পৌরাণিক বিবরণ
সম্পাদনাদৈত্যরাজ বলির পত্নী সুদেষ্ণার গর্ভে দীর্ঘতমা মুনির ঔরসে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, ওড্র এবং পুন্ড্র নামে পাঁচটি ক্ষেত্রজ পুত্র জন্মায়। তারা প্রত্যেকে স্বনামখ্যাত এক একটি রাজ্য স্থাপন করেন।
মালদহ জেলার অন্তর্গত পান্ডুয়া নগরের চার পাশের স্থান পুন্ড্রের অধিকারভুক্ত ছিল। তার নাম থেকেই একে পৌন্ড্র এবং এর রাজধানীকে পৌন্ড্রপট্টন বলা হত। কালক্রমে বরেন্দ্র নামের একজন ক্ষত্রিয় পৌন্ড্র রাজ্য জয় করে এই রাজ্যের নাম বরেন্দ্রভূমি রাখেন, এবং রাজধানী পৌন্ড্রপট্টন থেকে সরিয়ে গৌরবনগরে সংস্থাপিত করেন।[২] যদিও বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতানুসারে পুন্ড্রের আসল অবস্থান ছিল অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার অন্তর্গত মহাস্থানগড় নগরে। [৩][৪][৫]
ঐতিহাসিক বিবরণ
সম্পাদনাকালক্রমে এই ভূমি মগধ সাম্রাজ্যের অধীনে ক্ষত্রিয়শূন্য হয়। বৌদ্ধদের প্রাধান্যের সময় পালবংশীয় রাজারা মগধরাজ্যের অধীনে এখানে রাজত্ব করতেন। সেই সময়ে পৌন্ড্রপট্টনের নাম পান্ডুয়া, গৌরবনগরের নাম গৌড়, এবং বাকি বরেন্দ্রভূমির নাম বরিন্দ হয়েছিল।
মদনপাল এই বংশের শেষ রাজা।তার পত্নী মন্ত্রীর সহযোগে বিষপ্রয়োগে স্বামী-হত্যা করেছিলেন। কিন্তু সেনাপতি শূরসেন নামক বৈদ্য সেই দুষ্টা রাণী সহ মন্ত্রীকে বন্দী করে অগ্নিতে দগ্ধ করেন এবং মৃত রাজার কোন সন্তান না থাকায় নিজেই রাজা হন।
তখন থেকে গৌড়ে বৈদ্যরাজ্য (সেন) স্থাপিত হল; কিন্তু বাকি বরিন্দ ভূমির উত্তর ও পূর্বপ্রান্তে তখনও পালবংশীয় কোন কোন রাজার আধিপত্য ছিল। বৈদ্যরাজগণ ক্রমে ক্রমে পালরাজ্য ধ্বংস করে সমস্ত বরেন্দ্র অধিকার করেছিলেন।[২]
১৭৬৫ সালে পরবর্তীতে দিওয়ানী প্রাপ্ত ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক বিভাজিত হয়ে ‘রাজশাহী বিভাগ’ হলে সে সময় সমগ্র বাংলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত আটটি জেলা এই রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেগুলি হল ১। দার্জিলিং ২।জলপাইগুড়ি ৩। মালদহ ৪। দিনাজপুর ৫। রংপুর ৬। বগুড়া ৭। পাবনা এবং ৮। বৃহত্তর রাজশাহী জেলা সমূহ (রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ History of Ancient Bengal, Ramesh Chandra Majumdar, 1971
- ↑ ক খ বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাস, দুর্গাচন্দ্র সান্যাল, মডেল পাবলিসিং হাউস, ISBN 81-7616-067-9
- ↑ Hossain, Md. Mosharraf, Mahasthan: Anecdote to History, 2006, Preface, Dibyaprakash, 38/2 ka Bangla Bazar, Dhaka, ISBN 984 483
- ↑ Brochure: Mahasthan – the earliest city-site of Bangladesh, published by the Department of Archaeology, Ministry of Cultural Affairs, Government of the People’s Republic of Bangladesh, 2003
- ↑ Majumdar, Dr. R.C., History of Ancient Bengal, First published 1971, Reprint 2005, p. 10, Tulshi Prakashani, Kolkata, আইএসবিএন ৮১-৮৯১১৮-০১-৩.
- রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৯৪৩)। বাংলার ইতিহাস। ঢাকা: বি আর পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ১৬–১৮, ১৩৪–১৩৫। আইএসবিএন 81-7646-237-3।
- নগেন্দ্র কে আর, সিং (২০০৩)। বাংলাদেশের এনসাইক্লোপিডিয়া। আনমোল প্রকাশনা প্রাইভেট লিমিটেড। আইএসবিএন 81-261-1390-1।