সৈয়দ ফজলুল করিম
সৈয়দ ফজলুল করিম ( ১৯৩৫–২০০৬ খ্রি. ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। [১] তিনি পীর সাহেব চরমোনাই নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। ইসলামের আধ্যাত্মিক শিক্ষা চর্চার পাশাপাশি তিনি স্বীয় উস্তাদ মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জীর সাথে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং সেই সময় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সহ-সভাপতি হন। মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জীর মৃত্যুর পর তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে সমমনা নেতৃত্বস্থানীয় ইসলামপন্থী ব্যক্তি ও দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ (আই এ বি) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।[১][২]
সৈয়দ ফজলুল করিম | |
---|---|
উপাধি | আমীরুল মুজাহিদীন, মাওলানা, পীর সাহেব চরমোনাই |
জন্ম | ১৯৩৫ চরমোনাই, বরিশাল, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ২৫ নভেম্বর ২০০৬ চরমোনাই, বরিশাল, বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
যুগ | আধুনিক |
সম্প্রদায় | সুন্নি |
মাজহাব | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
মূল আগ্রহ | রাজনীতি |
লক্ষণীয় কাজ | ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ |
শিক্ষায়তন | জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ |
শিষ্য ছিলেন | সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | |
ওয়েবসাইট | pirsahebcharmonai.com |
জন্ম ও বংশ
সম্পাদনাসৈয়দ মুহম্মদ ফজলুল করিম ১৯৩৫ সালে বরিশাল জেলার কোতোয়ালী থানাধীন চরমোনাই নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাকও একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং তিনি ছিলেন চরমোনাই তরিকার প্রবর্তক।জানা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষ ( দাদার পরদাদা) সৈয়দ আলী আকবর বাগদাদ শহর হতে বাংলায় হিজরত করেন।[৩] অবশেষে পশুরীকাঠি গাঁয়ে তারা বসতি স্থাপন করেন। আলী আকবরের ছোট ভাই, যিনি সৈয়দ আলী আসগর নামে পরিচিত, তিনি কীর্তনখোলা নদীর পশ্চিমপাড় জুড়ে অবস্থিত লাকটিয়া গ্রামের সৈয়দ খান্দানের পূর্বপুরুষ।[৪]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতিনি পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা ও নিজ গ্রাম চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া বরিশালে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ঢাকায় এসে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে ১৯৫৭ সালে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন: মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী, আজিজুল হক, আব্দুল মজিদ (ঢাকুবী হুজুর), মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ (মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর) প্রমুখ। ছাত্রজীবনে তিনি নাছিরে মিল্লাত নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।[৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৫৮ সালে চরমোনাই জামিয়া রশীদিয়ায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ১৯৭২ সালে তিনি নিজ পিতার কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাকের মৃত্যুর পর তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সহ সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠা করেন।[৫]
তসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয়ভাবে গড়ে ওঠা সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারীর পদ থেকে উবায়দুল হক পদত্যাগ করলে জোটবদ্ধ শরিক দলসমূহের নেতাদের অনুরোধে তিনি সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি হাইকোর্ট ফতোয়া বিরোধী রায় দেয়ায় সর্বস্তরের আলেমদের নেতৃত্বে গঠিত ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল।[৫]
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ ক খ এইচ এম আবু বকর সিদ্দীক (২৫ নভেম্বর ২০২১)। "মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.), ক্ষণজন্মা এক সংগ্রামী সাধক"। যুগান্তর।
- ↑ মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "মাওলানা ফজলুল করিম রহ. এর জীবন ও কর্ম"। দৈনিক ইনকিলাব।
- ↑ al-Kumillai, Muhammad Hifzur Rahman (২০১৮)। "الشيخ الفاضل العالم الرباني السيّد فضل الكريم بن السيّد محمد إسحاق بن السيّد أمجد علي البريسالي"। كتاب البدور المضية في تراجم الحنفية (আরবি ভাষায়)। Cairo, Egypt: Dar al-Salih।
- ↑ Jakaria, Muhammad (২০২১)। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পীর-মাশায়িখের অবদান: একটি পর্যালোচনা (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। University of Dhaka। পৃষ্ঠা 336–343। ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ ক খ গ নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৩৭৫–৩৭৮। আইএসবিএন 112009250-7।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- জাকারিয়া, মুহাম্মদ (২০২১)। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পীর-মাশায়িখের অবদান: একটি পর্যালোচনা (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। বাংলাদেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৪১৮–৪৪৬। ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০২২।
- আতাউর রহমান, গাজী (২৯ নভেম্বর ২০১৬)। "পীর সাহেব চরমোনাই রহ.-এর 'ব্যতিক্রমী রাজনীতি'"। দৈনিক ইনকিলাব (১ম)।
- আতাউর রহমান, গাজী (৪ ডিসেম্বর ২০১৬)। "পীর সাহেব চরমোনাই রহ.-এর 'ব্যতিক্রমী রাজনীতি'"। দৈনিক ইনকিলাব (২য়)।
- মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "মাওলানা ফজলুল করিম রহ. এর জীবন ও কর্ম"। দৈনিক ইনকিলাব।
- মোঃ ইউসুফ, মাওলানা। পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ) এর জীবনী। ঢাকা: মুজাহিদ প্রকাশনী।
- খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ১৪১–১৪৫। আইএসবিএন 9789849591405।
- মোহাম্মদ ওমর, হাফেজ মাওলানা (২০১০)। মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম (রহ.) (পীর সাহেব চরমোনাই) (৬ সংস্করণ)। বাংলাবাজার, ঢাকা: বিশ্বকল্যাণ পাবলিকেশন্স।
- মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতী (২০১৫)। বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ৩২৯। আইএসবিএন 98483916605।
- মারুফ, শেখ ফজলুল করিম (২০২২)। পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর রাজনৈতিক দর্শন। নোঙর।