পুলস্ত্য
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, পুলস্ত্য (তামিল: புலத்தியர், সংস্কৃৃত: पुलस्त्य) ছিলেন ব্রহ্মার দশ মানসপুত্র তথা দশ প্রজাপতির একজন৷[২] আবার তিনিই ছিলেন প্রথম মন্বন্তরের সপ্তর্ষির (সাতজন মহাঋষি) একজন৷[৩]
পুলস্ত্য | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | ব্রহ্মা (পিতা) |
দম্পত্য সঙ্গী | মানিনী (হবির্ভূ নামেও পরিচিতা), প্রীতি[১] |
সন্তান | বিশ্রবা, অগস্ত্য, রাক্ষসগণ ও কিন্নরগণ |
মহাভারত অনুসারে, রাক্ষসকুল এবং কিন্নরকুল উভয়ই ছিলে মুনি পুলস্ত্যেরই সন্তান৷
কিংবদন্তি
সম্পাদনাউৎপত্তি
সম্পাদনাভাগবত পুরাণে ঋষি ব্রহ্মার কান থেকে আবির্ভূত হয়েছেন বলে কথিত আছে।[৪]
সন্তানাদি
সম্পাদনারামায়ণে মানিনীর সাথে পুলস্ত্যের বিবাহ এবং তার পুত্র বিশ্রবার জন্মের বর্ণনা রয়েছে। একবার পুলস্ত্য মেরু পর্বতের ঢালে তৃণবিন্দুর আশ্রমে তপস্যায় নিয়োজিত ছিলেন। যখন তিনি নির্জনে তপস্যায় নিমগ্ন ছিলেন, বেশ কয়েকটি যৌবনবতী কুমারী—অন্যান্য ঋষিদের কন্যা, নাগা দাসী এবং অপ্সরাদের দ্বারা বিরক্ত হয়েছিলেন। তারা তাদের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচতে থাকে, তার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করে দিতে। ক্ষিপ্ত হয়ে পুলস্ত্য ঘোষণা করলেন তাদের মধ্যে যেই তার দৃষ্টির নিচে পড়বে সে অবিলম্বে গর্ভবতী হবে। ব্রাহ্মণের অভিশাপে আতঙ্কিত হয়ে মেয়েরা তড়িঘড়ি পালিয়ে গেল। সে মুহূর্তে, তৃণবিন্দুর কন্যা মানিনী, যিনি অভিশাপ দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন না, ঋষির চারপাশে ঘুরে ঘুরে, তার বন্ধুদের সন্ধান করতে লাগলেন। তিনি নিজেকে গর্ভবতী দেখতে পান, এবং তার বাবাকে তার অবস্থা জানাতে ছুটে যান। ঋষি তৃণবিন্দু পুলস্ত্যকে তার কন্যাকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ করলেন, এবং তিনি তাতে রাজি হন, এবং তাই দুজনে আশ্রমে একসাথে থাকতে লাগলেন। তার স্ত্রীর সৎ আচরণে খুশি হয়ে পুলস্ত্য ঘোষণা করেছিলেন যে তাদের সন্তান তার গুণের উত্তরাধিকারী হবে এবং তার নাম হবে বিশ্রবা।[৫]
বিশ্রবার দুই স্ত্রী ছিল: একজন হলেন কৈকেসী যিনি রাবণ, শূর্পণখা, কুম্ভকর্ণ এবং বিভীষণকে জন্ম দিয়েছিলেন; আর একজনের নাম ছিল ইলাবিদা এবং কুবের নামে একটি পুত্রও ছিল।
পুলস্ত্য অগস্ত্যেরও পিতা হন।[৬]
ভীষ্মের সাক্ষাৎ
সম্পাদনাএকসময়, ভীষ্ম গঙ্গা নদীর পবিত্র উৎসের কাছে বাস করতেন, যাকে গঙ্গাদ্বার বলা হয়। পুলস্ত্য তার তপস্যা দ্বারা খুশি হয়ে ভীষ্মের সামনে তার উপস্থিতি জানান। ভীষ্ম জল নিবেদন করেন এবং ঋষিকে শ্রদ্ধা জানান। খুশি হয়ে, পুলস্ত্য ভীষ্মকে ধর্মের পথ সম্পর্কে নির্দেশ দেন, যা তাকে ব্রহ্মা নিজেই শিখিয়েছিলেন।[৭][৮]
বর্ণনাকারী
সম্পাদনাতিনি কিছু পুরাণ মানবজাতিকে জানানোর মাধ্যম হিসেবে ছিলেন।[৯] তিনি ব্রহ্মার কাছ থেকে বিষ্ণু পুরাণ পেয়েছিলেন এবং পরাশরকে তা জানিয়েছিলেন, যিনি তা মানবজাতিকে জানিয়েছিলেন।
পুলস্ত্য কিংবদন্তির আখ্যানগুলো আবৃত্তি করে বামন পুরাণে নারদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
রামাকিয়েন
সম্পাদনাথাই জাতীয় মহাকাব্য রামাকিয়েন-এ, পুলস্ত্যকে বলা হয় লাতসাতিয়ান। তিনি ছিলেন লঙ্কার দ্বিতীয় রাজা এবং থটসাকানের পিতা।[১০]
পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন
সম্পাদনাভারতের হরিয়ানার কাইথাল জেলার থেহ পোলারের আংশিক খননকৃত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঢিবি পুলস্ত্যের সাথে সম্পর্কিত।[১১]
শ্রীলঙ্কার পোলোনারুয়া অঞ্চলে মাটি খনন করে গ্রানাইট পাথরের তৈরী একটি মানবমূর্তী পাওয়া যায়৷ প্রাথমিক ভাবে ঐতিহাসিকগণ মূর্তিটিকে প্রথম পরাক্রমবাহু বলে আন্দাজ করলেও পরে তা পুলস্ত্য মুনির মূর্তি বলে অনুমান করা হয়৷ এই মূর্তি যে রাজা পরাক্রমবাহুর নয়, তা অধ্যাপক সেনারথ পরাণবিতান প্রমাণ করেন৷ এটি ছাড়া পুলস্ত্য মুনির অন্যকোনো মূর্তি, খোদাই, চিত্র বা কারুকার্য সিংহল দ্বীপে এখনো অবধি পাওয়া যায় নি৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
-
শ্রীলঙ্কার পোলোনারুয়াতে প্রাপ্ত পুলস্ত্য মুনির মূর্তি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তবে, পরক্রমবাহু যে শহর থেকে রাজত্ব করতেন সেটিকে সিংহলি ইতিহাসে পুলস্তিনগর নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।[১২]
পৌরাণিক সাহিত্যে উল্লেখ
সম্পাদনাতার উদ্যোগেই বেশ কিছু পুরাণ মানবস্বার্থে রচিত হয়েছিলো এবং তা মানবকুলের সংযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছিলো৷[১৩] তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মার থেকে বিষ্ণুর কাহিনী বিষ্ণুপুরাণ সংগ্রহ করেন এবং তা পরাশর মুনিকে শ্রুতিস্বরূপ শোনান৷ তিনি তাকে(পরাশর) পুরাণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান মানবকল্যাণে ব্যবহার করার আদেশ দেন৷
তার পুত্র ছিলন ঋষি বিশ্রবা এবং বিশ্রবাপুত্র অর্থাৎ তার পৌত্ররা ছিলেন ধনদেবতা কুবের এবং রামায়ণে প্রধান খলচরিত্র রাবণ ইত্যাদি৷ যক্ষরাও পুলস্ত্য মুনির ঔরসজাত বলে মনে করা হয় পুলস্ত্য মুনি ঋষি কর্দমের নবকন্যার মধ্যে একজনকে পত্নী হিসাবে গ্রহণ করেন, যিনি হবির্ভূ নামে পরাচিত ছিলেন৷ পুলস্ত্যপুত্র বিশ্রবার দুই পত্নী ছিলেন যথা দেববর্ণিনী এরং নিকষা৷ দেববর্ণিনীর পুত্র কুবের হলেন ধনদেবতা এবং নিকষা পুত্র রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ ছিলেন রাক্ষস এছাড়া তার শূর্পণখা নামে একটি রাক্ষসী কন্যাও ছিলো৷
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "History of Kubera"। Manuscrypts। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১১।
- ↑ Kisari Mohan Ganguli (1883 - 1896)। "The Mahabharata"। Sacred texts।
- ↑ Inhabitants of the Worlds Mahanirvana Tantra, translated by Arthur Avalon, (Sir John Woodroffe), 1913, Introduction and Preface. The Rishi are seers who know, and by their knowledge are the makers of shastra and "see" all mantras. The word comes from the root rish Rishati-prapnoti sarvvang mantrang jnanena pashyati sangsaraparangva, etc. The seven great Rishi or saptarshi of the first manvantara are Marichi, Atri, Angira, Pulaha, Kratu, Pulatsya, and Vashishtha. In other manvantara there are other saptarishi. In the present manvantara the seven are Kashyapa, Atri, Vashishtha, Vishvamitra, Gautama, Jamadagni, Bharadvaja. To the Rishi the Vedas were revealed. Vyasa taught the Rigveda so revealed to Paila, the Yajurveda to Vaishampayana, the Samaveda to Jaimini, Atharvaveda to Samantu, and Itihasa and Purana to Suta. The three chief classes of rishi are the Brahmarshi, born of the mind of Brahma, the Devarshi of lower rank, and Rajarshi or Kings who became rishi through their knowledge and austerities, such as Janaka, Ritaparna, etc. Thc Shrutarshi are makers of Shastras, as Sushruta. The Kandarshi are of the Karmakanda, such as Jaimini.
- ↑ www.wisdomlib.org (২০১৯-০১-২৮)। "Story of Pulastya"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ www.wisdomlib.org (২০২০-০৯-২৭)। "The Birth of Vishravas [Chapter 2]"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ www.wisdomlib.org (২০১২-০৬-১৫)। "Agastya, Āgastya: 32 definitions"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ www.wisdomlib.org (২০১৯-০৭-৩০)। "Contents of the Section on Creation (Sṛṣṭi-khaṇḍa) [Chapter 2]"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ "The" Mahabharata of Krishna-Dwaipayana Vyasa Translated Into English Prose (ইংরেজি ভাষায়)। Bhārata Press। ১৮৮৪। পৃষ্ঠা 238।
- ↑ John Dowson (৫ নভেম্বর ২০১৩)। A Classical Dictionary of Hindu Mythology and Religion, Geography, History and Literature। Routledge। পৃষ্ঠা 244–। আইএসবিএন 978-1-136-39029-6।
- ↑ "ความรู้เรื่อง'ทศกัณฐ์'จาก อ.อักษรศาสตร์ จุฬาฯ-'วัฒนธรรมย่อมเปลี่ยนไปตามผู้เสพ'" (থাই ভাষায়)। Matichon Online। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ Monuments & Sites in Haryana, Archaeological Survey Of India, page 34-35.
- ↑ Geiger, Wilhelm। Culawamsa: being the recent version of Mahavamsa।
- ↑ John Dowson (৫ নভেম্বর ২০১৩)। A Classical Dictionary of Hindu Mythology and Religion, Geography, History and Literature। Routledge। পৃষ্ঠা 244–। আইএসবিএন 978-1-136-39029-6।
গ্রন্থঋণ
সম্পাদনা- বক, উইলিয়াম। Ramayana (রামায়ণ) বার্কলে: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, ১৯৭৬।
- ডাওসন, জন (১৮২০-১৮৮১)। A classical dictionary of Hindu mythology and religion, geography, history, and literature. (হিন্দু পুরাণ এবং ধর্ম, ভূগোল, ইতিহাস এবং সাহিত্যের একটি শাস্ত্রীয় অভিধান) London: Trübner, ১৮৭৯ [Reprint, London: Routledge, ১৯৭৯]। এই বইটি সর্বজনীন ডোমেনে রয়েছে (এবং সর্বশেষ সংস্করণে কোন কপিরাইট বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শিত হয় না)।