দেয়াল (উপন্যাস)
দেয়াল বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা একটি ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাস যার ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। এটি তার রচিত সর্বশেষ উপন্যাস যা তার মৃত্যুর এক বছর পর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবার পূর্বেই এই উপন্যাস নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয় এবং তা আদালত পর্যন্তও গড়ায়। হাইকোর্টের পরামর্শানুযায়ী লেখক উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশিত রূপের কিছু পরিবর্তন সাধন করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানতম রাজনৈতিক চরিত্র এবং ঘটনাবলি এ উপন্যাসের উপজীব্য।[১]
লেখক | হুমায়ূন আহমেদ |
---|---|
প্রচ্ছদ শিল্পী | মাসুম রহমান |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
বিষয় | মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের হত্যা, জিয়াউর রহমানের সেনা অভ্যুত্থান ও ক্ষমতাদখল |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশিত | ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ |
প্রকাশক | অন্যপ্রকাশ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রিত গ্রন্থ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১৯৮ (প্রথম প্রকাশ) |
আইএসবিএন | ৯৭৮-৯৮৪-৫০২১-২৭-২ |
২০১১ সালের মাঝামাঝিতে হুমায়ুন আহমেদ দেয়াল রচনা শুরু করেন। সে সময় উপন্যাসের পাঁচটি পর্ব ধারাবাহিকভাবে অন্যদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর বেশ কিছুদিন বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রে তার ক্যানসার চিকিৎসা চলাকালে তিনি নতুন করে এটি রচনায় মনোনিবেশ করেন, যদিও শেষ পর্যন্ত উপন্যাসটির চূড়ান্ত রূপ দেয়ার সুযোগ পান নি।[২] বইটি লেখার ক্ষেত্রে তিনি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ইতিহাস নিয়ে লিখিত বহু গ্রন্থকে তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস রচিত বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ গ্রন্থটি অন্যতম।
সারাংশ
সম্পাদনাউপন্যাসটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের পটভুমিতে রচিত। এখানে লেখক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে সমসাময়িকভাবে নিজেকেও উপস্থাপন করেছেন। এই উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্র হল: অবন্তি, শফিক, সরফরাজ খান, ইসাবেলা, পীর হামিদ কুতুবি, ক্যাপ্টেন শামস, হাফেজ জাহাঙ্গীর, মেজর ফারুক, মেজর ইশতিয়াক, শেখ মুজিবুর রহমান, খালেদ মোশাররফ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, মোশতাক আহমেদ, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ডোরা রাসনা, ছানু ভাই, আওয়ামী লীগার মোজাম্মেল, মেজর নাসের, মেজর রশীদ, আন্ধা পীর, মেজর ডালিম, ভারতীয় গুপ্তচর কাও, রাধানাথ, চা বিক্রেতা কাদের মোল্লা, শামীম শিকদার প্রমুখ।[৩]
বিতর্ক
সম্পাদনা২০১২ সালের মে মাসে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে উপন্যাসটির দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হয়।[৪] সেখানে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার বিবরণে তথ্যগত ভুল থাকায় আদালত তা সংশোধনের নির্দেশ দেয় এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।[৫] এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ভাষ্যমতে,
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে খন্দকার মোশতাক আহমেদ জড়িত ছিলেন বলে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে এসেছে। কিন্তু মোশতাক আহমেদ কিছুই জানতেন না, এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে ঐ উপন্যাসে।[৬]
এছাড়াও প্রকাশের আগে বইটির একটি অংশের ঐতিহাসিক তথ্যের সঠিকতা নিয়ে নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল,[৭] যা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ বাংলাদেশ অভ্যুত্থানে শেখ রাসেল হত্যার সাথে সম্পর্কিত ছিল, এবং এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশ উচ্চ আদালতে একটি মামলা করেন। হাইকোর্টের আদেশ ছিল যে, বইটির প্রথম অংশ পরিবর্তন করতে হবে এবং হুমায়ূন আহমেদকে রাসেল হত্যার রায়ের একটি অনুলিপি সরবরাহ করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তিনি ঐতিহাসিক তথ্যগত ভুলত্রুটি সংশোধন করতে পারেন।[৮][৯]
তবে এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, "দেয়াল কোনো রাজনৈতিক উপন্যাস নয়, এ এক ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস৷ এতে ইতিহাসের খলনায়কদেরকে খলনায়ক হিসেবেই দেখানো হয়েছে"।[১০] পরবর্তীকালে হুমায়ূন আহমেদ কর্তৃক সংশোধিত বইটি অন্যপ্রকাশ ২০১৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করে।[১১][১২]
প্রাপ্তি
সম্পাদনাদেয়াল ২০১৪ সালের একুশে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বই ছিল।[১৩][১৪] ২০১৩ সালে বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বাংলাদেশ উচ্চ আদালতের এর শেখ মো. জাকির হোসেন কর্নেল আবু তাহের হত্যাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রায় জারি করেছিলেন, যেখানে তারা দেয়াল উপন্যাস হতে এ সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করেন।[১৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ হুমায়ুন আহমেদ (২০১৩)। দেয়াল। অন্যপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 978-984-5021-27-2।
- ↑ হুমায়ুন আহমেদ। "দেয়াল"। রকমারি। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-১৬।
- ↑ "দেয়াল - হুমায়ূন আহমেদ"। archive.prothom-alo.com। ২৭ জুলাই ২০১২। ২০২০-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-০৬।
- ↑ "দেয়াল"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ জুলাই ২০১২। ২০১৮-১২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "হুমায়ূন আহমেদের 'দেয়াল' উপন্যাস প্রকাশে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা"। দৈনিক সংগ্রাম। ১৬ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ কল্লোল, কাদির (১৫ মে ২০১২)। "'দেয়াল' উপন্যাস নিয়ে আদালতের নির্দেশ"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "'দেয়াল': আদালতের নির্দেশনা ও লেখকের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৬।
- ↑ "A novelist's dilemma"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৫-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৬।
- ↑ "'Deyal' publication after correction, HC hopes"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৬।
- ↑ সোমা, আফরোজা (২০ জুলাই ২০১২)। "হুমায়ূন আহমেদের 'দেয়াল' 'রাজনৈতিক উপন্যাস নয়'"। ডয়চে ভেলে। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "অবশেষে বইমেলায় হুমায়ূনের শেষ উপন্যাস 'দেয়াল'"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ জামিল, নওশাদ (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৩ - আগ্রহের কেন্দ্রে 'দেয়াল'"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Humayun Ahmed's works sell big at Ekushey Book Fair"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০২-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৬।
- ↑ "Amar Ekushey Book Fair: Humayun Ahmed still main attraction for book lovers"। Dhaka Tribune। ২০১৯-০২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৬।
- ↑ Niloy, Suliman (২০১৩-০৫-২০)। "'Zia staged trial to kill Col Taher'"। bdnews24। ২০১৩-০৮-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৬।