শেখ রাসেল

শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ছোট ছেলে
এটি একটি পরীক্ষিত সংস্করণ, যা ২৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে পরীক্ষিত হয়েছিল।

শেখ রাসেল (১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র।[] ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবকে হত্যার সময় সপরিবারে তাকেও হত্যা করা হয়।

শেখ রাসেল
শেখ রাসেলের স্থিরচিত্র।
শেখ রাসেল
জন্ম
শেখ রাসেল

(১৯৬৪-১০-১৮)১৮ অক্টোবর ১৯৬৪
বঙ্গবন্ধু ভবন, ধানমন্ডি, ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৫ আগস্ট ১৯৭৫(1975-08-15) (বয়স ১০)
ধানমন্ডি, ঢাকা
মৃত্যুর কারণহত্যা
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ববাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তনইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ[]
পরিচিতির কারণশেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র
পিতা-মাতা
আত্মীয়শেখ হাসিনা
শেখ কামাল
শেখ জামাল
শেখ রেহানা[]

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

শেখ রাসেল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা অঞ্চলের ধানমন্ডিতে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে ১৮ অক্টোবর, ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[][] বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’[]। এই নামকরণে মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে রাসেল সর্বকনিষ্ঠ। ভাই-বোনের মধ্যে অন্যরা হলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ শেখ রেহানা[] শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।[]

হত্যাকাণ্ড

সম্পাদনা
 
শেখ রাসেল

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডিস্থ ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলে শেখ মুজিব, তার পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।[][] শেখ মুজিবের নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর সময় ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ রাসেলকে অভ্যুত্থানকারীরা আটক করে। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, "আমি মায়ের কাছে যাব"।[] পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন "আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দাও"।[] ব্যক্তিগত কর্মচারী এএফএম মহিতুল ইসলামের ভাষ্যমতে,[]

"রাসেল দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে। আমাকে বললো, ভাইয়া আমাকে মারবে না তো? ওর সে কণ্ঠ শুনে আমার চোখ ফেটে পানি এসেছিল। এক ঘাতক এসে আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে ভীষণ মারলো। আমাকে মারতে দেখে রাসেল আমাকে ছেড়ে দিল। ও (শেখ রাসেল) কান্নাকাটি করছিল যে 'আমি মায়ের কাছে যাব, আমি মায়ের কাছে যাব'। এক ঘাতক এসে ওকে বললো, 'চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি'। বিশ্বাস করতে পারিনি যে ঘাতকরা এতো নির্মমভাবে ছোট্ট সে শিশুটাকেও হত্যা করবে। রাসেলকে ভিতরে নিয়ে গেল এবং তারপর ব্রাশ ফায়ার।"[]

নামকরণ

সম্পাদনা

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র

সম্পাদনা
 
শেখ রাসেলের নামে স্কেটিং স্টেডিয়াম

শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগরূক রাখার জন্য শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বাংলাদেশের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ক্লাবটি।[]

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ

সম্পাদনা

শেখ হাসিনা ১৯৮৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারিতে “শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ” এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের মাধ্যমে শিশু শেখ রাসেলের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। সংগঠনটির উদ্বোধন করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

সম্পাদনা

তার নামানুসারে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর নামকরণ করা হয়েছে।[১০] হাসপাতালটি ৩১ অক্টোবর ২০১৮ তে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা[১১] আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই হাসপাতালের নামের পরিবর্তন করা হয়েছে।[১২]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "শেখ রাসেলের জন্মদিন"। ishwardi.com। ২০১৩-১০-১৮। ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০২ 
  2. "শেখ রাসেলের জন্মদিন আজ"। alltimenews24.com। ২০১৩-১০-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ 
  4. হারুন-অর-রশীদ (২০১২)। "রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  5. ফ্র্যাঙ্ক, ক্যাথরিন (২০০২)। Indira: The Life of Indira Nehru Gandhi। যুক্তরাষ্ট্র: হাউটন মিফলিন। পৃষ্ঠা 388আইএসবিএন 0-395-73097-X 
  6. "শেখ রাসেলের জন্মদিন"। dailyjanakantha.com। ২০১২-১০-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. চৌধুরী, শাহেদ (১৫ আগস্ট ২০১৮)। "'আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দাও'"দৈনিক সমকাল। ২৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  8. "শেখ মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন"বিবিসি বাংলা। ১৫ আগস্ট ২০১৭। ১৪ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০ 
  9. রাসেলের উৎসব[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], কালের কণ্ঠ
  10. "শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন"www.bhorerkagoj.com। ২০২৩-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৬ 
  11. "শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল উদ্বোধন"www.jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৬ 
  12. "শেখ হাসিনা বার্নসহ ১৪ হাসপাতালের নাম পরিবর্তন"ইত্তেফাক। ৩ নভেম্বর ২০২৪। 

গ্রন্থসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

  উইকিমিডিয়া কমন্সে শেখ রাসেল সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।