দিব্যা দত্তা
দিব্যা দত্তা (জন্ম ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭) হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও মডেল। তিনি বলিউড ও পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে সফল কর্মজীবন প্রতিষ্ঠা করেছেন, পাশাপাশি তিনি মালয়ালম ও ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। তিনি বিভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে তার বৈচিত্রপূর্ণ চরিত্রাভিনয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুইবার আইফা পুরস্কার ও দুইবার জি সিনে পুরস্কার অর্জনসহ একাধিক পুরস্কার ও মনোনয়ন লাভ করেছেন।
দিব্যা দত্তা | |
---|---|
জন্ম | [১] | ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭
পেশা | |
কর্মজীবন | ১৯৯৪-বর্তমান |
ওয়েবসাইট | divyadutta |
পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণকারী দিব্যার বলিউডে অভিষেক ঘটে ১৯৯৪ সালে ইশ্ক মেঁ জিনা ইশ্ক মেঁ মরনা চলচ্চিত্র দিয়ে। এরপর তিনি ১৯৯৫ সালের নাট্যধর্মী বীরগতি চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে এবং কয়েকটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৯৯ সালে পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র শহিদ-এ-মোহাব্বত বুটা সিং-এ জয়নব চরিত্রে অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন। চলচ্চিত্রটি বিস্ময়করভাবে হিট হয় এবং দত্তা এরপর আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রণয়ধর্মী-নাট্য চলচ্চিত্র বীর-জারা-তে শাব্বো চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়নসহ একাধিক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০০৮ সালে হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর-এ অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন এবং ২০০৯ সালে নাট্যধর্মী দিল্লি-সিক্স চলচ্চিত্রে জালেবি চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে আইফা পুরস্কার অর্জন করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাদত্তা ১৯৭৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা ডক্টর নলিনী দত্তা একজন ডাক্তার এবং সরকারী কর্মকর্তা। সাত বছর বয়সে দিব্যার পিতা মারা যাওয়ার পর তার মা তাকে ও তার ভাইকে একা লালনপালন করে বড় করেন। দিব্যা তার মাকে একজন "অকুতোভয় ও পেশাদার" এবং "বাড়িতে আনন্দপ্রদায়ক জননী" বলে বর্ণনা করেন। তিনি ২০১৩ সালের নাট্যধর্মী গিপ্পি চলচ্চিত্রে একক মাতা চরিত্র পাপ্পির ক্ষেত্রে তার মায়ের থেকে অনুপ্রাণিত হন।[২] তিনি ও তার ভাই তার মায়ের কবিতার সংকলন প্রকাশ করেন এবং তার মাকে উপহার দেন।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৯৪-১৯৯৮: বলিউডে অভিষেক
সম্পাদনাদিব্যা ১৯৯৪ সালে ইশ্ক মেঁ জিনা ইশ্ক মেঁ মরনা চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে আগমন করেন। পরের বছর তিনি সুনীল শেঠি, অদিত্য পঞ্চোলি, সাইফ আলি খানের সাথে সুরক্ষা চলচ্চিত্রে বিন্দিয়া চরিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর তিনি সালমান খানের বিপরীতে নাট্যধর্মী বীরগতি চলচ্চিত্রে সন্ধ্যা চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয়।[৪]
পরের বছর তিনি তিনটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলি হল জ্যাকি শ্রফ, নানা পাটেকর ও মনীষা কৈরালার সাথে অগ্নি সাক্ষী, গোবিন্দা ও শিল্পা শেঠীর সাথে ছোটে সরকার এবং রাম অউর শ্যাম। ১৯৯৭ সালে তিনি রানী মুখার্জীর সাথে রাজা কি আয়েগি বরাত চলচ্চিত্রে শারদার বোন চরিত্রে, এবং অক্ষয় কুমার ও রবীনা ট্যান্ডনের সাথে দাবা চলচ্চিত্রে দীপা চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৮ সালে দত্তা অভিনীত চারটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, তন্মধ্যে তিনি ঘরওয়ালি বাহারওয়ালি ও বড়ে মিয়াঁ ছোটে মিয়াঁ চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে এবং ইস্কি টোপি উসকে সর চলচ্চিত্রে মিলি চরিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন।[৫] এছাড়া তিনি ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের পটভূমিতে নির্মিত পামেলা রুকসের নাট্যধর্মী ট্রেন টু পাকিস্তান চলচ্চিত্রে একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৯৯-২০০৩: পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে অভিষেক ও সাফল্য
সম্পাদনা১৯৯৯ সালে শহিদ-এ-মোহাব্বত বুটা সিং-এ অভিনয়ের মধ্যে তার পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এটি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন ও শিখ বুটা সিঙের বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত। এতে তিনি গুরদাস মানের বিপরীতে একজন মুসলমান স্ত্রী জয়নব চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি সমাদৃত হয় এবং বিস্ময়করভাবে হিট হয়। দত্তা এতে অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন এবং সকলের নজর কাড়েন।[৬] দত্তা এরপর আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করেন, সেগুলো হল সমর, রাজাজী, ও তাবাহি-দ্য ডেস্ট্রয়ার।
২০০৪-২০০৮: বলিউডে অধিকতর খ্যাতি
সম্পাদনা২০০৪ সালে তিনি শাহরুখ খান, প্রীতি জিন্টা, রানী মুখার্জীর সাথে যশ চোপড়ার প্রণয়ধর্মী-নাট্য চলচ্চিত্র বীর-জারা-তে শাব্বো চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক সমাদৃত হন এবং বক্স অফিসে সর্বকালের সেরা ব্লকবাস্টার হয়। দত্তা তার অভিনয়ের জন্য ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। প্ল্যানেট বলিউড-এর আকাশ গান্ধী লিখেন, "তিনি অনবদ্য কাজ করেছেন, যিনি দুই প্রেমিক-প্রেমিকাকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন।"[৭] তার এই কাজের জন্য তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং জি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন।
দত্তার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অমিতাভ বচ্চন, প্রীতি জিন্টা ও অর্জুন রামপালের সাথে ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্য লাস্ট লিয়ার চলচ্চিত্রে সেবিকা আইভি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। চলচ্চিত্রটি টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্রটি মিশ্র সমালোচনা অর্জন করে, কিন্তু দত্তার অভিনয় প্রশংসিত হয়, বিশেষ করে অপরাজিতা ঘোষ তাকে "এক কথায় অসাধারণ" বলে উল্লেখ করেন[৮] কিন্তু জোক্সিলি জন বলেন, তার চরিত্রটি "একটি চরিত্রের অপব্যবহার, যা চলচ্চিত্রটিতে কোন গুরুত্ব যোগ করে নি।"[৯]
২০০৮ সালে তিনি অজয় দেবগন ও কাজলের সাথে ইউ মি অউর হাম চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর-এ অভিনয় করে সমাদৃত হন ও স্টার সবসে ফেভারিট কৌন পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৯-২০১২: দিল্লি-৬ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি
সম্পাদনা২০০৯ সালে দত্তা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার নাট্যধর্মী দিল্লি-৬। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয় এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে। দত্তা জালেবি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন, তরণ আদর্শ তার অভিনয়কে "প্রশংসাযোগ্য" বলে উল্লেখ করেন,[১০] এবং বিহাইন্ডউডস লিখে, দত্তাসহ পার্শ্ব অভিনয়শিল্পীগণ "চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রবিন্দু" ছিলেন।[১১] দত্তা এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে আইফা পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৩-বর্তমান: ভাগ মিলখা ভাগ ও অন্যান্য
সম্পাদনা২০১৩ সালে দত্তা এই বছরের কয়েকটি সমাদৃত ও হিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই বছরে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল অক্ষয় কুমার ও কাজল আগরওয়ালের সাথে নীরজ পাণ্ডের থ্রিলারধর্মী স্পেশাল ২৬। চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক ও বাণিজ্যিক উভয় দিক থেকেই সফল হয়। শান্তি চরিত্রে তার কৌতুকপূর্ণ অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তার অভিনয় সম্পর্কে মধুরিতা মুখার্জী বলেন, "দত্তা আমাদের হাস্যরসে নিক্ষিপ্ত করেন।"[১২] তার পরের চলচ্চিত্র ছিল করণ জোহর প্রযোজিত নাট্যধর্মী গিপ্পি, এতে তিনি একজন একক মাতা চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি তার কন্যাকে নিয়ে সংগ্রাম করছেন। দত্তার এই কাজের অনুপ্রেরণা ছিল তার মা। তার অভিনয় মিশ্র পর্যালোচনা লাভ করেন এবং রেডিফ.কম মন্তব্য করে, "তার অভিনয় ঠিক ছিল",[১৩] কিন্তু ইন.কম মন্তব্য করে যে "দত্তা মায়ের চরিত্রে অল্পের জন্য ব্যর্থ হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন।"[১৪] চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে মধ্যমমানের ব্যবসা করে, তবে দত্তা তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি রণবীর সিং ও সোনাক্ষী সিনহার সাথে প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র লুটেরায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি সমাদৃত হলেও বক্স অফিসে গড়পড়তা ব্যবসা করে।
২০১৭ সালে তিনি নাসিরুদ্দিন শাহ্ ও আরশাদ ওয়ার্সীর সাথে সামাজিক নাট্যধর্মী ইরাদা চলচ্চিত্রে মন্ত্রী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[১৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Divya Dutta's birthday made 'very special' by Shabana Azmi"। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। আইএএনএস। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Divya Dutta's mother inspires her Gippi character" (ইংরেজি ভাষায়)। এনডিটিভি। ১০ এপ্রিল ২০১৩। ১৯ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Meri Mommy: Divya Dutta"। ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Veergati"। বক্স অফিস ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Iske Topi Uske Sarr: Review"। প্ল্যানেট বলিউড। ১৭ জুলাই ১৯৯৮। ৭ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Silver lining in the cloud of partition" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ট্রিবিউন। ১৭ এপ্রিল ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ গান্ধী, আকাশ। "Veer Zaara - movie review by Aakash Gandhi - Planet Bollywood"। প্ল্যানেট বলিউড (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "The Last Lear Review" (ইংরেজি ভাষায়)। আপুন কা চয়েস। ২৭ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "The Last Lear Review" (ইংরেজি ভাষায়)। প্ল্যানেট বলিউড। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ আদর্শ, তরণ। "Delhi-6 Review"। বলিউড হাঙ্গামা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Delhi-6 Review"। বিহাইন্ড উডস। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Special 26 Movie Review {3.5/5}: Critic Review of Special 26 by Times of India"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Review: Gippi is both funny and embarrassing!"। রেডিফ.কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Movie Review: Gippi is adorable"। ইন.কম। ১২ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।
- ↑ "National Film Awards 2018: Divya Dutta wins Best Supporting Actress for Irada, says 'my first nod after 100 odd films'- Entertainment News, Firstpost"। ফার্স্টপোস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০।