তাঞ্জাবুর

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ঐতিহাসিক শহর

তাঞ্জাবুর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি শহর, যেটি অতীতে তানজোর[] নামে পরিচিত ছিল। তাঞ্জাবুর দক্ষিণ ভারতীয় ধর্ম, শিল্প ও স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিখ্যাত চোল মন্দিরের বেশিরভাগই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিস্তম্ভ, যেগুলি থাঞ্জাভুরের আশেপাশে অবস্থিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বৃহদীশ্বর মন্দিরটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। তাঞ্জাবুর এই অঞ্চলের অনন্য চিত্রশৈলী তাঞ্জাবুর চিত্রকর্মেরও কেন্দ্র।

তাঞ্জাবুর
তাঞ্জোর
শহর
A montage image showing temple complex with temple tower in the centre, Maratha palace, paddy field, Rajarajachola Mandapam and Tamil University.Even though Thanjavur is 11 largest city In actual case Thanjavur is the 7th biggest city in Tamilnadu.The city's real size is hidden due to non extension of corporation limit
বৃহদীশ্বর মন্দিরের দৃশ্য, মারাঠা প্রাসাদ, ধান ক্ষেত, রাজারাজন মণিমণ্ডপম (বেল টাওয়ার) ও তামিল বিশ্ববিদ্যালয়, শিবগঙ্গা উদ্যান.
তাঞ্জাবুর তামিলনাড়ু-এ অবস্থিত
তাঞ্জাবুর
তাঞ্জাবুর
স্থানাঙ্ক: ১০°৪৭′০০″ উত্তর ৭৯°৮′১০″ পূর্ব / ১০.৭৮৩৩৩° উত্তর ৭৯.১৩৬১১° পূর্ব / 10.78333; 79.13611
রাষ্ট্র ভারত
রাজ্যতামিলনাড়ু
অঞ্চলচোলনাড়ু
জেলাতাঞ্জাবুর
অঞ্চলকাবেরী বদ্বীপ
সরকার
 • ধরনপৌর সংস্থা
 • শাসকতাঞ্জাবুর সিটি পৌর সংস্থা
আয়তন
 • মোট১২৮.০২ বর্গকিমি (৪৯.৪৩ বর্গমাইল)
এলাকার ক্রম১১
উচ্চতা৮৮ মিটার (২৮৯ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,৯০,৭২৪
 • জনঘনত্ব২,৩০০/বর্গকিমি (৫,৯০০/বর্গমাইল)
বিশেষণতানজোরবাসী
ভাষা
 • দাপ্তরিকতামিল
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন৬১৩ ০XX
টেলিফোন কোড০৪৩৬২
যানবাহন নিবন্ধনটিএন-৪৯

তাঞ্জাবুর হল তাঞ্জাবুর জেলার সদর দফতর। শহরটি কাবেরী বদ্বীপে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি কেন্দ্র এবং তামিলনাড়ুর ধানের বাটি হিসাবে পরিচিত। ২০১১ সালের হিসাবে ১২৮.০২ বর্গ কিমি (৪৯.৪৩ বর্গ মাইল) আয়তন ও ২,৯০,৭২০ জন জনসংখ্যা বিশিষ্ট তাঞ্জাবুর শহরটি একটি পৌর কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত হয়। শহরটিতে রেল যোগাযোগ থাকলেও সড়কপথগুলি পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নিকটতম বিমানবন্দর তিরুচিরাপল্লী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা শহর থেকে ৫৯.৬ কিমি (৩৭.০ মাইল) দূরে অবস্থিত। নিকটতম সমুদ্রবন্দরটি কারাইকল, যেটি তাঞ্জাবুর থেকে ৯৪ কিমি (৫৮ মাইল) দূরে অবস্থিত।

চোলা রাজত্বকালে এই শহর প্রথম সুনাম অর্জন করে, যখন এটি সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। চোলদের পতনের পরে শহরটি পাণ্ড্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, মাদুরাই নায়ক, তাঞ্জাবুর নায়ক, তাঞ্জাবুর মারাঠাব্রিটিশ সাম্রাজ্য সহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যের দ্বারা শাসিত হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে এটি স্বাধীন ভারতের একটি অংশ।

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
১৯৯৫ সালে থাঞ্জাভুর শহরের মানচিত্র

সঙ্গম কালীন (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে চতুর্থ শতাব্দী) তামিল নথিগুলির কোনওটিতেই থাঞ্জাভুরের কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় নি, যদিও কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে শহরটি সেই সময় থেকেই বিদ্যমান ছিল। কোভিল ভেন্নি, যা শহরের পূর্বদিকে ১৫ মাইল (২৪ কিমি) দূরে অবস্থিত ছিল, এটি চোল রাজা করিকল এবং জোটবদ্ধ চেরপান্ড্যদের মধ্যে সংগঠিত ভেন্নি যুদ্ধের স্থান ছিল। [৪] চোলরা খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে কলাভ্রদের আক্রমণের সম্মুখীন হয়, এর পরে রাজ্যটি বিলিন হয়ে যায়। মুথারাইয়ার বর্তমান থাঞ্জাভুরের আশেপাশের অঞ্চলটি ষষ্ঠ শতাব্দীতে জয় করেন, যিনি এটি ৮৪৯ অবধি শাসন করেন।

প্রায় ৮৫০ সালে মধ্যযুগীয় চোল রাজা বিজয়ালয়ের (৮৪১-৮৭৮) উত্থানের মধ্য দিয়ে চোলরা আরও একবার খ্যাতি লাভ করে। [৫] বিজয়ালয় মুথারাইয়ার রাজা ইলেঙ্গো মুথারাইয়ারের কাছ থেকে থাঞ্জাভুর জয় করেন এবং হিন্দু দেবী নিসুম্ভাসুদনীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একটি মন্দির নির্মাণ করেন। তাঁর পুত্র প্রথম আদিত্য (৮৭১-৯০১) এই শহরটি নিজের অধিনে রাখেন। 5 চোল রাজা প্রথম পরন্তকের (৯০৭-৯৫০) সমসাময়িক রাষ্ট্রকূত রাজা দ্বিতীয় কৃষ্ণ (৮৭৮-৯১৪) দাবি করেন যে তিনি থাঞ্জাভুর জয় করেছিলেন, কিন্তু এই দাবির পক্ষে কোনও দলীল নেই। ধীরে ধীরে, থাঞ্জাভুর চোল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে ওঠে এবং প্রায় ১০২৫ সালে গঙ্গাইকান্দা চোলাপুরামের উত্থানের পূর্ব পর্যন্ত শহরটি চোল সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। [8] একাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে চোল রাজা প্রথম রাজা রাজা (৯৮৫-১০১০) থাঞ্জাভুরে বৃহদিশ্বর মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি তামিল স্থাপত্যের অন্যতম সেরা নমুনা হিসাবে বিবেচিত হয়। [10] [১১] [১২] [১৩]

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যখন চোল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়, দক্ষিণ থেকে প্রথমে ১২১৮-১৯ সালে ও পরে ১২৩০ সালে পান্ড্যরা দু'বার থাঞ্জাভুর আক্রমণ ও দখল করে। দ্বিতীয় আক্রমণ চলাকালীন, চোল রাজা তৃতীয় রাজারাজা (১২১৬–৫৬) নির্বাসিত হন এবং তিনি থাঞ্জাভুরকে পুনরুদ্ধার করার জন্য হৈসল রাজা দ্বিতীয় বীর নরসিংহের (১২২০-৩৫) সাহায্য চান। [১৪] থাঞ্জাভুর অবশেষে ১২৭৯ সালে পান্ড্য রাজা প্রথম মারাবর্মণ কুলাসেকার পান্ড্য (১২৬৮-১৩০৮) দ্বারা বাকি চোল রাজ্যের সাথে দখলকৃত হয় এবং চোল রাজারা পান্ড্যদের রাজত্ব মেনে নিতে বাধ্য হন। [১৫] মালিক গফুরের (১২৯৬-১৩০৬) বাহিনী দ্বারা আক্রমণ ও পরে দিল্লী সালতানাত দ্বারা দখলকৃত হওয়ার পূর্বে পান্ড্যরা ১২৮৯ সাল থেকে ১৩১১ সাল পর্যন্ত থাঞ্জাভুরকে শাসন করেন। সালতানাতটি ১৩১১ সাল থেকে ১৩৩৫ সাল পর্যন্ত সরাসরি জয়যুক্ত অঞ্চলগুলির উপর এবং তারপরে ১৩৩৫ সাল থেকে ১৩৭৮ সাল পর্যন্ত আধা-স্বতন্ত্র মাদুরাই সালতানাতের মাধ্যমে তার কর্তৃত্ব প্রসারিত করে। ১৩৫০-এর দশকে মাদুরাই সালতানাত ক্রমবর্ধমান বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিলিন হয়।

অর্থনীতি

সম্পাদনা
 
থাঞ্জাভুর জেলায় ধানের ক্ষেত

শহরের বাসিন্দাদের প্রধান পেশা হল পর্যটন ও পরিষেবামুখী শিল্প, অন্যদিকে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পেশা কৃষি কাজ।

থাঞ্জাভুর "তামিলনাড়ুর ভাতের বাটি" হিসাবে পরিচিত।[][] ধান হল প্রধান শস্য এবং অন্যান্য ফসলগুলি হল মাষকলাই, কলা, নারকেল, তিল, রাগি, অড়হর, মুগ, আখভুট্টা। মোট জমির ৫৮% জমি চাষের জন্য উপযুক্ত। থাঞ্জাভুরে কৃষির জন্য তিনটি ঋতু রয়েছে - কুরুভাই (জুন থেকে সেপ্টেম্বর), সাম্বা (আগস্ট থেকে জানুয়ারি) ও থালাদি (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, মার্চ)।[] চালের মোট উৎপাদন ১০.৬১৫ এল.এম.টি. ও ৭.০৭ এল.এম.টি. এর মধ্যে বজায় রাখা হয়েছে। শহরটি কাবেরী বদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চলগুলি থেকে পরিবহন করা খাদ্যশস্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে কাজ করে। জৈব চাষ ধীরে ধীরে থাঞ্জাভুরের কৃষকদের কাছে পরিচিতি লাভ করছে। কৃষি উৎপাদন সর্বাধিক করার জন্য জৈব চাষ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জনসংখ্যার মাত্র ৭% কৃষিকাজের সাথে জড়িত, যদিও কৃষিকাজটি শহরের মূল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ঘটায়। এখানে অনেকগুলি কৃষি সম্পর্কিত বাণিজ্য রয়েছে, যা শহরের মূল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে রূপ দেয়।[]

জনসংখ্যার উপাত্ত

সম্পাদনা
ধর্মীয় আদমশুমারি
ধর্ম শতাংশ(%)
হিন্দু
  
৮২.৮৭%
মুসলিম
  
৮.৩৪%
খ্রিস্টান
  
৮.৫৮%
শিখ
  
০.০১%
বৌদ্ধ
  
০.০১%
জৈন
  
০.০৬%
অন্যান্য
  
০.১১%
কোন ধর্ম নেই
  
০.০১%

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, থাঞ্জাভুরের জনসংখ্যা হল ২,২২,৯৪৪ জন, যেখানে লিঙ্গ-অনুপাত প্রতি এক হাজার পুরুষের বিপরীতে ১,০৪২ জন মহিলা, যা জাতীয় গড় ৯২৯ জনের তুলনায় অনেক বেশি। [৫৯] মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১৯,৮৬০ জন ছয় বছরের কম বয়সী, যার মধ্যে ১০,২৭৭ জন পুরুষ ও ৯,৬২৩ জন মহিলা। জনসংখ্যার মধ্যে যথাক্রমে ৯.২২% ও ০.২১% তফশিলী জাতি ও তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় গড় ৭২.৯৯% এর তুলনায় শহরটির সাক্ষরতার হার ৮৩.১৪% ছিল। [৫৯] শহরে মোট ৮৩,০০৫ জন শ্রমিক রয়েছেন, যার মধ্যে ৮০৩ জন কৃষক, ২,৩৩১ জন প্রধান কৃষি শ্রমিক, ২ হাজার ৭৪৬ জন গার্হস্থ্য শিল্পে, ৬৫,২১১ জন অন্যান্য শ্রমিক, ৬,৯১৪ জন প্রান্তিক শ্রমিক, ১১০ প্রান্তিক কৃষক, ২৩৫ প্রান্তিক কৃষি শ্রমিক, গৃহ শিল্পে ৩২২ প্রান্তিক শ্রমিক এবং ৬,২৭৭ জন অন্যান্য প্রান্তিক কর্মী রয়েছেন। [58] ২০১১ সালের ধর্মীয় জনগণনা অনুসারে, থাঞ্জাভুরের (এম) জনসংখ্যার ৮২.৮৭% হিন্দু, ৮.৩৪% মুসলমান, ৮.৫৮% খ্রিস্টান, ০.০১% শিখ, ০.০১% বৌদ্ধ, ০.০6% জৈন, ০.০১% অন্যান্য ধর্ম ও ০.০১% কোন ধর্ম অনুসরণ করে না । [60]

পরিবহন

সম্পাদনা

জাতীয় সড়ক ৬৭, ৪৫সি, ২২৬ ও সম্প্রসারিত ২২৬ থাঞ্জাভুর শহরের মধদিয়ে অগ্রসর হয়েছে। [[]৪] শহরটি নিয়মিত বাস পরিষেবাগুলির মাধ্যমে নাগপট্টিনাম, তিরুভরুর, চেন্নাই, কয়ম্বতুর, এরোড, করুর, তিরুপুর, ভেলোর, পেরামবালুর, আরিয়ালুর, মাইসুরু, সেলাম, কুদ্দলোর, বিলুপুরম, তিরুচিরপল্লি, মাদুরাই, কুম্বকোনম, মায়িলাদুথুরাই, কড়াইকাল, মান্নারগুদি, তিরুথুরাইপুন্দি, বেদারাণ্যম, পাতুককোটাই, দিন্দিগুল, ওডদানচরাম, পালানী, পুডুককোটাই, কড়াইকুডি, তিরুনেলভেলি, বেঙ্গালুরু, এরনাকুলাম, নাগরকোয়েল, ত্রিভেন্দ্রম ও উটির সাথে সংযুক্ত।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Pletcher 2010, p. 195
  2. Frankel, Francine R. (২০১৫)। India's Green Revolution: Economic Gains and Political Costs। Princeton University Press। আইএসবিএন 978-1-4008-6902-2 
  3. Suresh Chandra Babu; P.K. Joshi (১৫ জুন ২০১৯)। Agricultural Extension Reforms in South Asia: Status, Challenges, and Policy Options। Elsevier Science। আইএসবিএন 978-0-12-818753-1 
  4. Mukhopadhyay 1990, pp. 370–371
  5. Urban Infrastructure Report 2008, pp. 4–5
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 2011census নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা