টম হেওয়ার্ড

ইংরেজ ক্রিকেটার

টমাস ওয়াল্টার হেওয়ার্ড (ইংরেজি: Tom Hayward; জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৮৭১ - মৃত্যু: ১৯ জুলাই, ১৯৩৯) কেমব্রিজে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৮৯০-এর দশক থেকে শুরু করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দৃপ্ত পদচারণা ছিল তার। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন টম হেওয়ার্ড[] দলে তিনি মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। অফ ড্রাইভ অভিমুখেই সবিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি।

টম হেওয়ার্ড
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৮৭১-০৩-২৯)২৯ মার্চ ১৮৭১
কেমব্রিজ
মৃত্যু১৯ জুলাই ১৯৩৯(1939-07-19) (বয়স ৬৮)
কেমব্রিজ
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৫ ৭১২
রানের সংখ্যা ১,৯৯৯ ৪৩,৫৫১
ব্যাটিং গড় ৩৪.৪৬ ৪১.৭৯
১০০/৫০ ৩/১২ ১০৪/২১৮
সর্বোচ্চ রান ১৩৭ ৩১৫*
বল করেছে ৮৯৩ ২০,৯৯২
উইকেট ১৪ ৪৮১
বোলিং গড় ৩৬.৭১ ২২.৯৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৮
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/২২ ৮/৮৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৯/০ ৪৯৩/০
উৎস: ক্রিকইনফো, ৩ মার্চ ২০১৭

কেবলমাত্র ডব্লিউজি গ্রেসের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শতরান করার মাইলফলক স্পর্শ করেন।[] ১৯০৬ সালের ইংরেজ মৌসুমে তিনি ৩,৫১৮ রান তুলে রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে কেবলমাত্র ডেনিস কম্পটনবিল এডরিচ তার এ অর্জনকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন।[]

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

এক ক্রিকেট পরিবার থেকে এসেছেন হেওয়ার্ড। দাদা, বাবা ও কাকাদের সকলেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।[] ১৮৯৩ সালে সারে দলের পক্ষে অভিষেক ঘটে তার। এরপর খুব দ্রুত নিজেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেন। ১৮৯৪ সালে দলের ক্যাপ পান। পরের মৌসুমেই উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা পান তিনি।

১৮৯৫ সাল থেকে ১৯১৪ সালে তার শেষ মৌসুম পর্যন্ত হেওয়ার্ড কখনো ১,০০০ প্রথম-শ্রেণীর রানের নিচে পৌঁছেননি। দশবার ২,০০০ এবং ১৯০৪ ও ১৯০৬ সালে দুইবার ৩,০০০-এর অধিক রান তুলেছেন। তন্মধ্যে, ১৯০৬ সালে ১৩টি শতক সহযোগে ৬৬.৩৭ গড়ে ৩,৫১৮ রান সংগ্রহ করেন। ১৯৪৭ সালে ডেনিস কম্পটন ও বিল এডরিচের এ রান অতিক্রম করার পূর্ব-পর্যন্ত রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৮৯৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩১৫ রান তুলেন। ১৮৯৯ সালে তিনি ও ববি অ্যাবল চতুর্থ উইকেটে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৪৪৮ রানের জুটি গড়েন। তাদের এ জুটিটি অদ্যাবধি যে-কোন উইকেটে সারে দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ১৯০০ সালে মে মাসের পূর্বেই ১,০০০ রান তুলেন যা বেশ দূর্লভ ঘটনা।

নেভিল কারদাস মন্তব্য করেছেন যে, তিনি তার সর্বোত্তম কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্রিকেটের ইতিহাসে যে-কোন সময়ের তুলনায় সর্বাপেক্ষা উচ্চ স্তরের ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।[]

খেলোয়াড়ী জীবন

সম্পাদনা

১৮৯৫-৯৬ মৌসুমে লর্ড হকের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। পোর্ট এলিজাবেথে তার টেস্ট অভিষেক হয়। জোহেন্সবার্গে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ১২২ রান তুলে ইংল্যান্ডকে ইনিংসের ব্যবধানে জয়ী হতে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩৫ টেস্টে অংশ নেন। ১৯০৯ সালে সর্বশেষ ইনিংসটি খেলেন। খেলায় তিনি ছয় রান তুলে রান-আউটের শিকার হন। এরফলে তার সমগ্র টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে মাত্র এক রানের জন্য ২,০০০ রানের কোটা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হন। ১৮৯৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টে মনোজ্ঞ ১৩০ রান তুলেন। ছয় নম্বরে ব্যাটিং করতে নামেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে তখন দলের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৪৭/৪। এরপর তিনি দলকে ৩৭২ রানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। রাল্ফ বার্কার এ ইনিংসটিকে তার দেখা অন্যতম সেরা টেস্ট ইনিংসরূপে আখ্যায়িত করেন।[] এরপর ওভালের পঞ্চম টেস্টে ১৩৭ রান সংগ্রহ করেন। প্রথম উইকেটে এফএস জ্যাকসনের সাথে ১৮৫ রান তুলেন। সিরিজে উভয় দলের মধ্যে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। সর্বমোট সাত ইনিংসে ৬৮.৮৩ গড়ে ৪১৩ রান তুলেছিলেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯০৫ সালে জ্যাক হবসের সারে দলে অভিষেক হবার পর তারা উভয়েই কাউন্টি দলের পক্ষে কার্যকরী উদ্বোধনী জুটি গড়েন। এ জুটি প্রথম উইকেটে ৪০-এর অধিক বার শতরান বা ততোধিক রানের জুটি গড়ার সক্ষমতা দেখান।[] তবে এ জুটি ইংল্যান্ডের পক্ষে কেবলমাত্র একবারই খেলেছেন। ১৯০৯ সালে লর্ডসে খেলার জন্য পুনরায় আমন্ত্রিত হন যা তার শেষ টেস্ট ছিল।

খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ দিকে শারীরিক কার্যক্ষমতা হারালেও চল্লিশ বছর বয়সে কার্যকরী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছিলেন। জুন, ১৯১৩ সালে নিজস্ব শততম প্রথম-শ্রেণীর শতকের সন্ধান পান। ডব্লিউজি গ্রেসের পর এটি দ্বিতীয় ছিল। আগস্ট, ১৯১৪ সালে লর্ডসে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ১০৪তম ও শেষ শতক তুলে নেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সারে দল তাদের অনেকগুলো খেলা এ মাঠেই খেলতো। কিন্তু শেষ ইনিংসে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে তিনি মাত্র এক রান করে বিদায় নেন। তার চূড়ান্ত মৌসুমে সারে দল কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করে। আগস্টে দলের পেশাদারী পর্যায়ে[] ডোনাল্ড নাইটপার্সি ফেন্ডারের ন্যায় তরুণ শৌখিন খেলোয়াড়দেরকে সুযোগ দিতে নিয়মিত অধিনায়ক সিরিল উইলকিনসনের অনুপস্থিতিতে ছয় খেলায় অধিনায়কত্ব করার গৌরব অর্জন করেন।[]

ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পেলেও হেওয়ার্ড তার খেলোয়াড়ী জীবনের মাঝামাঝি সময়ে কার্যকরী বোলার হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরেন। ১৮৯৭ সালে ১,৩৬৮ রান ও ১১৪ উইকেট নিয়ে ডাবল পান ও ১৮৯৯ সালে দুইবার হ্যাট্রিক করেন। ১৯০১ সালে এজবাস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা ৮/৮৯ পান।

১৯২০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বনাম এসেক্সের মধ্যকার একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় তিনি আম্পায়ার হিসেবে খেলা পরিচালনা করেন। ১৯ জুলাই, ১৯৩৯ তারিখে ক্যামব্রিজে ৬৮ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Surrey players". CricketArchive. Retrieved 27 May, 2017.
  2. Barclays World of Cricket – 2nd Edition, 1980, Collins Publishers, আইএসবিএন ০-০০-২১৬৩৪৯-৭, p172.
  3. Wisden Cricketers' Almanack, 2008 edition, p281.
  4. His grandfather Daniel played (1832–1851) for Cambridge Town Club, Surrey and MCC; his father (also Daniel) played (1852–1869) for Cambridge Town Club, Surrey and Cambridgeshire. Hayward's famous uncle, Thomas Hayward, was a leading batsman who played 1854–1872 for Cambridge Town Club, Cambridgeshire and numerous representative teams including the England team that made the inaugural overseas tour to North America in 1859.
  5. Barker, Ralph & Rosenwater, Irving, England v Australia: A compendium of Test cricket between the countries 1877–1968, B.T. Batsford, 1969, আইএসবিএন ০-৭১৩৪-০৩১৭-৯, p80.
  6. Surrey County Cricket Club First-Class Records 1846–2000, Limited Overs Records 1963–2000, compiled by The Surrey Statistics Group, published by Surrey County Cricket Club, p61.
  7. Its rarity is indicated by the fact that when Leicestershire appointed Ewart Astill as their captain for the 1935 season he became the first professional to regularly captain any county during the twentieth century. Barclay's World of Cricket – 2nd Edition, 1980, Collins Publishers, আইএসবিএন ০-০০-২১৬৩৪৯-৭, p397.
  8. Scorecard of the first of the matches in August, 1914 in which Hayward captained Surrey

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা