জ্যাক ব্যাডকক

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

ক্লেভেল লিন্ডসে জ্যাক ব্যাডকক (ইংরেজি: Jack Badcock; জন্ম: ১০ এপ্রিল, ১৯১৪ - মৃত্যু: ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২) তাসমানিয়ার এক্সটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৮ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন ‘জ্যাক’ ডাকনামে পরিচিত জ্যাক ব্যাডকক

জ্যাক ব্যাডকক
১৯৩০-এর দশকের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জ্যাক ব্যাডকক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ক্লেভেল লিন্ডসে ব্যাডকক
জন্ম(১৯১৪-০৪-১০)১০ এপ্রিল ১৯১৪
এক্সটন, তাসমানিয়া
মৃত্যু১৩ ডিসেম্বর ১৯৮২(1982-12-13) (বয়স ৬৮)
এক্সটন, তাসমানিয়া
ডাকনামজ্যাক
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরন
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৫৫)
৪ ডিসেম্বর ১৯৩৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২০ আগস্ট ১৯৩৮ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৯৭
রানের সংখ্যা ১৬০ ৭,৫৬১
ব্যাটিং গড় ১৪.৫৪ ৫১.৫৪
১০০/৫০ ১/০ ২৬/২১
সর্বোচ্চ রান ১১৮ ৩২৫
বল করেছে
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/০ ৪১/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩০ জুলাই ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাসমানিয়া ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯২৯-৩০ মৌসুম থেকে ১৯৪০-৪১ মৌসুম পর্যন্ত জ্যাক ব্যাডককের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। তাসমানিয়ার ডেলোরেইন এলাকার এক্সটনে জন্মগ্রহণকারী জ্যাক ব্যাডকক তাসমানিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে মাত্র ১৫ বছর বয়সে অভিষেক ঘটে তার। এরফলে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন।[][] ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে লন্সেসটনে এমসিসি দলের বিপক্ষে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। তাসমানিয়ার সদস্যরূপে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ৫৭ ও অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।[]

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৮৯.২২ গড়ে ৮০৩ রান তুলেন।[] ভিক্টোরিয়া বুশর‍্যাঞ্জার্সের বিপক্ষে তিন খেলায় ২৪, ১০৭, ২৭৪, অপরাজিত ৭১, ১০৪ ও ৪০ রান তুলেন। ইংল্যান্ড গমনকল্পে অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে দুই খেলায় ১০৫, ২৪, ৪৭ ও ৬ রান সংগ্রহ করেন। ঐ মৌসুমে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ৯৮.৫০ গড় ১৯৭০ রান পেয়েছিলেন তিনি। ক্ল্যারি গ্রিমেটের পরামর্শক্রমে জুন, ১৯৩৪ সালে অ্যাডিলেডে চলে যান। সেখানে তিনি আসবাবপত্র বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন।[]

১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে প্রথম খেলেন। ৩৯.৭৬ গড়ে ৫১৭ রান পান। ১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে ৮৬.৭৫ গড়ে ৬৯৪ রান করেন। তন্মধ্যে, ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে মৌসুমের শেষ খেলায় ৩২৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ফলশ্রুতিতে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় তার দল।[] ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমের শুরুতে এমসিসির বিপক্ষে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া সম্মিলিত একাদশের সদস্যরূপে খেলেন। ১৬৭ রান তুলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন জ্যাক ব্যাডকক। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ তারিখে ব্রিসবেনে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২০ আগস্ট, ১৯৩৮ তারিখে ওভালে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়ায় গমন করে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। মাত্র আট রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। উভয় খেলাতেই তার দল পরাজয়বরণ করে। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট দল থেকে স্থানচ্যূত হন। শেফিল্ড শিল্ডে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ১৩৬ ও অপরাজিত ২৭ রান তুলে ছন্দে ফিরে আসেন। পুনরায় টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হন। সিরিজে দুই দুই সমতায় আসে। অ্যাশেজ করায়ত্ত্ব করার জন্যে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের প্রয়োজন ছিল। পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৮ রান তুলেন। এ পর্যায়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে রস গ্রিগরিকে সাথে নিয়ে ১৬১ রান যুক্ত করেন। অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।[]

১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে চার সেঞ্চুরি সহযোগে ৫১.২৯ গড়ে ৮৭২ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ড গমনের সুযোগ পান। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় বেশ সফল হন। চার সেঞ্চুরিসহ ৪৫.৮২ গড়ে ১,৬০৪ রান করেন। ঐ সফরে অস্ট্রেলীয় দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ সফলতম ব্যাটসম্যানের মর্যাদা লাভ করেন। তবে, অংশগ্রহণকৃত চার টেস্টের কোন ইনিংসেই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিস্ময়করভাবে ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে একটি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে, বাদ-বাকী ১১ ইনিংসের কোনটিতেই দুই অঙ্কের ইনিংস খেলতে পারেননি।

জাতীয় দল থেকে চলে আসার পর অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান সংগ্রহ করতে থাকেন। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপ নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে অপরাজিত ২৭১ ও ১৯৩৯-৪০ মৌসুমে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৬ রান করেছিলেন। পিঠের নিচের অংশে ব্যথার কারণে ১৯৪১ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেন।[] এরপর তিনি পরিবার নিয়ে এক্সটনে চলে যান ও পারিবারিক খামার দেখাশোনা করতে থাকেন।[] ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২ তারিখে ৬৮ বছর বয়সে তাসমানিয়ার এক্সটন এলাকায় জ্যাক ব্যাডককের দেহাবসান ঘটে।

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ব্যাডকক সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, ‘নিষ্কলুষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও পছন্দের ব্যক্তি তিনি। সেরা ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নতুবা, তাঁর রেকর্ড আরও স্ফীত হতে পারতো।’[১০] তাসমানীয় ক্রিকেট ইতিহাসবেত্তা রজার পেজ তার সম্পর্কে বলেন যে, ‘সচরাচর তিনি ধীরলয়ে ব্যাটিংকর্ম শুরু করতেন। আক্রমণের পূর্বে কোনরূপ ঝুঁকি গ্রহণ করতেন না। রক্ষণাত্মক কৌশলে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন, স্বাভাবিক মেজাজ নিয়ে পায়ের কারুকাজে দূর্বল বলগুলোকে যথেচ্ছভাবে আঘাত করতেন।’[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Rait, Basil (১৯৭৪)। The sporting history of Westbury, 1823–1973। Westbury: Westbury Council। পৃষ্ঠা 4। 
  2. "Curtly's original demolition job"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৮ 
  3. Tasmania v MCC 1932–33. Cricketarchive.com. Retrieved on 8 May 2018.
  4. Jack Badcock batting season by season. Cricketarchive.com. Retrieved on 8 May 2018.
  5. Page, Roger (1958) A History of Tasmanian Cricket, Government Printer, Hobart, pp. 102–103, 143.
  6. South Australia v Victoria 1935–36. Cricketarchive.com. Retrieved on 8 May 2018.
  7. Australia v England, Melbourne 1936–37. Cricketarchive.com. Retrieved on 8 May 2018.
  8. Wisden Cricketers' Almanack 1984, p. 1195.
  9. The Oxford Companion to Australian Cricket, Oxford, Melbourne, 1996, p. 44.
  10. Bradman, Don (1950) Farewell to Cricket, Hodder & Stoughton, London, p. 96.

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা