জাহাপুর জমিদার বাড়ি

জাহাপুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি

জাহাপুর জমিদার বাড়ি
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকুমিল্লা জেলা
অবস্থান
অবস্থানমুরাদনগর উপজেলা
দেশবাংলাদেশ
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীগৌর মোহন রায়

ইতিহাস সম্পাদনা

জাহাপুর জমিদার বাড়িটির জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয় আঠারশত বাষট্টি সালের দিকে। তবে জমিদার বাড়ির বংশধররা প্রায় চারশত বছর আগেই এখানে বসতি স্থাপন করেন। জমিদার বাড়ির প্রাপ্ত তথ্যূসূত্র থেকে জানা যায় এ বাড়ির প্রথম পুরুষ শ্রী কানাই লাল রায়। তবে জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় নবম পুরুষ শ্রী গৌর মোহন রায়ের আমলে। তাঁর উক্ত কাজে সহযোগিতা করেছেন তার সহোদর ভাই শ্রী মথুরা মোহন রায় এবং তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতা শ্রী রামদয়াল রায় ও শ্রী কমলা কান্ত রায়। জমিদার বাড়ি এবং জমিদার বাড়ির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র এখনো টিকে আছে। কেননা জমিদার বাড়ির তেরোতম বংশধররা এখনো এখানে বসবাস করতেছেন। জমিদার বংশধররা জমিদারি পাওয়ার আগে থেকেই অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক ছিলেন। তারা মূলত ছিলেন পাট ব্যবসায়ী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা পাটের ব্যবসা করতেন। এই জমিদার বাড়ির সকল জমিদারদের নাম জমিদার বাড়ির শ্মশানে তাদের সমাধিতে উল্লেখ আছে। চৌদ্দ পুরুষের ভিটেবাড়ির বংশ পরম্পরায় যারা যারা গত হয়েছেন তন্মধ্যে্ ১।কানাই ২।নাগর ৩।শান্তিরাম ৪।বুধাই ৫।জগন্নাথ ৬।নন্দরাম ৭।রামমোহন ৮।কৃষ্ণমোহন ৯। গৌর মোহন রায়, রামকান্ত রায়, রামগঙ্গা রায়,কমলাকান্ত রায়,রাম দয়াল রায়,১০।আনন্দ চন্দ্র রায়,রাজ চন্দ্র রায়, গিরীশ চন্দ্র রায় ১১। অশ্বীনি কুমার রায়। এছাড়াও জমিদারদের কয়েকজন স্ত্রীর নাম জানা যায়। তারা হলেন শ্রী রাই কিশোরী চৌধুরানী,শ্রী শ্যামা সুন্দরী চৌধুরানী,শ্রী নন্দ রাণী রায় চৌধুরানী,শ্রী মহামায়া রায় চৌধুরানী। রাণী মহলের সামনে একটি পুকুর ছিল, রাণীরা এই পুকুরটিতে জাফরান মিশিয়ে স্নান করতেন। বর্তমানে জমিদার বংশধরের মধ্যে যারা এখন এ বাড়িতে বসবাস করছেন তাঁরা হলেন শ্রী আশীষ কুমার রায়,শ্রী সমরেন্দ্র রায়,শ্রী অজিত কুমার রায়, প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়, অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার রায় ও তাদের পরিবারবর্গ। তারাই এখন এই বিশাল বাড়িটি দেখাশুনাসহ বসবাস করতেছেন। এছাড়াও জমিদারদের আরো দুইটি পরিবার এখানে বসবাস করতেছেন। তবে ওই পরিবারগুলোর অধিকাংশ সদস্যই জীবিকার তাগিদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতেছেন। দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিও শেষ হয়। [১]

জমিদার বাড়ির গঠনশৈলি সম্পাদনা

জমিদার বাড়িতে ঢুকতে বাড়ির প্রথম ফটকে দুইটি সিংহের মূর্তি রয়েছে। এই জমিদার বাড়িতে মোট ১০টি প্রাসাদ বা ভবন আছে। প্রথম ভবনটি তিনতলা আর সবগুলোই দুইতলা বিশিষ্ট। এর মধ্যে দুইটি ভবন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আর কয়েকটি লতাপাতায় জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। বাকীগুলো মোটামুটি এখনো ভালো আছে। জমিদার বাড়ির সর্বশেষ ভবনটি তৈরি করেন বর্তমান বংশধর প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়ের ও অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার রায়েরপিতামহ জমিদার শ্রী অশ্বীনি কুমার রায়। এছাড়াও তিনি এখানে এলাকার লোকজনের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয়, জগন্নাথ দেবের রথ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সবগুলো ভবনেই বিভিন্ন ধরনের ফুলের নকশা রয়েছে। এমনকি জানালার গ্রীলগুলোতেও নকশা রয়েছে। জানা যায় বাড়িগুলোর নকশা তৈরি করতে ঢাকার বিক্রমপুরের মিস্ত্রিদের আনা হয়েছিল। ভবনগুলোর নকশাগুলো মুঘল রীতিতে তৈরি করা হয়েছে। ভবনগুলো ইংরেজি বর্ণ I এবং L টাইপে করা হয়েছে।

জমিদার বাড়ির আসবাবপত্র সম্পাদনা

বর্তমানে জমিদার বাড়িটিতে জমিদারদের ব্যবহৃত সৌখিণ খাট, নকশা করা চেয়ার, গাঁ এলিয়ে দেয়া ইজি চেয়ার, কারুকার্যখচিত ফুলদানী,ঝারবাতি,গ্রামফোনসহ আরো অনেক ধরনের আসবাবপত্র আছে। এছাড়াও এখানে একটি রূপার হাতলের কারুকার্যখচিতছাতা রয়েছে। যা জমিদাররা তাদের জমিদারি দেখার জন্য বাহিরে বের হলে ব্যবহার করতেন।

অবদান সম্পাদনা

জাহাপুরে এই জমিদার বংশধরদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের জমিদারি পরগনায় বহু রাস্তা, ব্রিজ, মাদ্রাসা,প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, পোস্ট অফিস ও দাতব্য চিকিৎসালয় হয়েছে। যা এলাকার উন্নয়নে সহায়ক।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মুরাদনগর এক্সপ্রেস/ ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেসে চড়ে সরাসরি জাহাজপুর জমিদার বাড়ি পৌছাতে পারবেন অথবা কোম্পানীগঞ্জগামী বিভিন্ন বাসে করেময়নামতি সংলগ্ন ক্যান্টেনমেন্টে পৌঁছবেন কুমিল্লা শহরের আগে মাত্র ২ ঘণ্টায়। কোম্পানীগঞ্জের বাসে উঠলে আর বাস পরিবর্তন করতে হবে না। কুমিল্লার বাসে উঠলে ময়নামতিতে নামতে হবে। এখান থেকে আবার কোম্পানীগঞ্জের বাসে উঠে দেবিদ্বারের পান্নারপুলে নামতে হয়। সেখান থেকে বাখরাবাদ রোডে ১০ কিলোমিটার গেলেই জাহাপুর জমিদার বাড়ির অবস্থান।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা