জন মরিস

ইংরেজ ক্রিকেটার

জন এডওয়ার্ড মরিস (ইংরেজি: John Morris; জন্ম: ১ এপ্রিল, ১৯৬৪) চেশায়ারের ক্রিউ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্নে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

জন মরিস
১৯৮৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জন মরিস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজন এডওয়ার্ড মরিস
জন্ম (1964-04-01) ১ এপ্রিল ১৯৬৪ (বয়স ৬০)
ক্রিউ, চেশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান, ধারাভাষ্যকার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৪৫)
২৬ জুলাই ১৯৯০ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২৩ আগস্ট ১৯৯০ বনাম ভারত
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১০৯)
১ ডিসেম্বর ১৯৯০ বনাম নিউজিল্যান্ড
শেষ ওডিআই১০ জানুয়ারি ১৯৯১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮২ - ১৯৯৩ডার্বিশায়ার
১৯৯৪ - ১৯৯৯ডারহাম
২০০০ - ২০০১নটিংহ্যামশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩৬২ ৩৫০
রানের সংখ্যা ৭১ ১৬৭ ২১,৫৩৯ ৮,৩৬২
ব্যাটিং গড় ২৩.৬৬ ২৩.৮৫ ৩৭.৩২ ২৭.০৬
১০০/৫০ ০/০ ০/১ ৫২/১০৪ ১০/৫০
সর্বোচ্চ রান ৩২ ৬৩* ২২৯ ১৪৫
বল করেছে ১,০৩৪ ৮১
উইকেট
বোলিং গড় ১১৯.৭৫ ৬৬.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ১/৬ ১/৪৪
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/– ২/– ১৫৬/– ৮৩/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহাম, ডার্বিশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন জন মরিস

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৮২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জন মরিসের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ধ্রুপদী ক্রীড়ানৈপুণ্যের অধিকারী তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার মাঝে অপার সম্ভাবনা থাকলেও তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ডার্বিশায়ার, ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ডারহাম এবং ২০০০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নটিংহ্যামশায়ার দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন।

ক্রিকেট লেখক কলিন বেটম্যান মন্তব্য করেন যে, জন মরিস প্রতিভাবান ও মাঝারিসারির সম্ভাব্য মারকূটে ব্যাটসম্যান হিসেবে চিত্রিত হয়েছিলেন।[১] ডার্বিশায়ারে এগারো বছর অবস্থানের পর ১৯৯৩ সালে ডারহামে চলে আসেন। ১৯৮০ সালে জন মরিস ডার্বিশায়ারে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডে সফররত পাকিস্তানি একাদশের বিপক্ষে ডার্বিশায়ারের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। এরপর থেকে পরবর্তী একুশ বছর দলের প্রথম একাদশের নিয়মিত সদস্য ছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্ট ও আটটিমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন জন মরিস। সবগুলো টেস্টই ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। ২৬ জুলাই, ১৯৯০ তারিখে লর্ডসে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৩ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে ওভালে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৯০ সালে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে তিন টেস্ট নিয়ে গড়া টেস্ট সিরিজ খেলার জন্যে তাকে ইংল্যান্ড দলের সদস্য করা হয়। লর্ডসে অভিষেক ঘটা টেস্টে ইংল্যান্ড দল সহজেই জয় পায়। প্রথম খেলায় তিন ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, ঐ খেলায় তিনি খুব কম ভূমিকা রাখেন। তার বিপরীতে গ্রাহাম গুচের ৩৩৩ রান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টেও বেশ বড় ধরনের রান সংগ্রহের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে রিটায়ার হার্ট হতে হয়। ওভালের তৃতীয় টেস্টে ফলো-অনের কবলে পড়ে মানানসই ৩২ রান করলেও এ সিরিজে তার তেমন ভূমিকা ছিল না। এটিই তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল।

অস্ট্রেলিয়া গমন সম্পাদনা

১৯৯০-৯১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে তাকে দলের সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়। দলের সাথে অ্যাশেজ সফরে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন তিনি। অন্য কারণে নিজেকে সংবাদ শিরোনামে নিয়ে আসেন। বিশ্ব সিরিজের আট খেলার সবকটিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। প্রস্তুতিমূলকখেলায় যথেষ্ট ভালোমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। তন্মধ্যে, চতুর্থ টেস্টের পূর্বে কুইন্সল্যান্ড বুলসের বিপক্ষে দূর্দান্ত শতরানের ইনিংস খেলেন। তবে, কারারায় কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা চলাকালীন সাবেক টেস্ট অধিনায়ক ডেভিড গাওয়ারের সাথে তামাশার এক পর্যায়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন। গাওয়ারকে খেলা চলাকালীন ছোট বিমানে মাঠের উপর দিয়ে যাচ্ছেন ও মরিস সহঃচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তবে, কিছু প্রতিবেদনে গাওয়ারকে দ্রুত মাঠ ছেড়ে যাবার কথা উল্লেখ করা হয়। ইংল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে মরিসকে কোন টেস্টে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এমনকি আর তাকে কোন টেস্টে খেলানো হয়নি।[১] উভয় খেলোয়াড়কে £১,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিং জরিমানা করা হয়। সংখ্যার দিক দিয়ে চুক্তির সর্বোচ্চ শর্তে ছিল। পিটার লাস ও সফরের অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ উভয়কেই দেশে ফেরৎ পাঠানোর কথা বিবেচনায় এনেছিলেন।[২]

সফরের শেষদিকে একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলার জন্যে তাকে মনোনীত করা হয়। অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা সত্ত্বেও তার দল পরাজয়বরণ করেছিল। অন্য সাতটি ওডিআইয়ে তিনি কেবলমাত্র একবার ২০-এর অধিক রান তুলতে পেরেছিলেন। এ সফরের পর তাকে আর ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলতে দেখা যায়নি।

অবসর সম্পাদনা

দীর্ঘদিন ডার্বিশায়ারের পক্ষে খেলার পর ১৯৯৪ সালে ডারহামে চলে যান। একই বছরে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে খেলাকালীন ব্রায়ান লারা তার বল থেকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। ২০০০ সালে নটিংহ্যামশায়ারে যোগ দেন ও ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী জন মরিস ডানহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ৩৬২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৫২টি শতরানের ইনিংসসহ ৩৭.৭২ গড়ে ২১,৫৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। লিস্ট এ ক্রিকেটে ৩৫০টি খেলায় ১০টি শতরানসহ ২৭.০৬ গড়ে ৮,৩৬২ রান তুলেছিলেন।[৩]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ডার্বিশায়ারে ক্রিকেট প্রধান হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু, মে, ২০১১ সালে ক্লাবের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে এসেক্সের বিরুদ্ধে খেলাচলাকালীন তাকে বরখাস্ত করা হয়।[৪] বর্তমানে তিনি স্কাই টিভিতে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। ২০১৮ সালে স্বীয় সন্তানকে নিয়ে ডার্বিশায়ারের ডাফিল্ডে পানশালা চালু করেন।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা