জক ক্যামেরন

দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার

হোরেস ব্রাকেনরিজ ক্যামেরন (ইংরেজি: Jock Cameron; জন্ম: ৫ জুলাই, ১৯০৫ - মৃত্যু: ২ নভেম্বর, ১৯৩৫) পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

জক ক্যামেরন
Jock Cameron.jpg
১৯৩১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জক ক্যামেরন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামহোরেস ব্রাকেনরিজ ক্যামেরন
জন্ম(১৯০৫-০৭-০৫)৫ জুলাই ১৯০৫
পোর্ট এলিজাবেথ, দক্ষিণ আফ্রিকা
মৃত্যু২ নভেম্বর ১৯৩৫(1935-11-02) (বয়স ৩০)
জুবার্ট পার্ক, জোহেন্সবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১১৩)
২৪ ডিসেম্বর ১৯২৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৭ আগস্ট ১৯৩৫ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৬ ১০৭
রানের সংখ্যা ১২৩৯ ৫৩৯৬
ব্যাটিং গড় ৩০.২১ ৩৭.৪৭
১০০/৫০ ০/১০ ১১/২৮
সর্বোচ্চ রান ৯০ ১৮২
বল করেছে ১৬
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩৯/১২ ১৫৫/৬৯
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৪ অক্টোবর ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স ও গটেং দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও ডানহাতে মাঝারিসারির মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন ‘হার্বি ক্যামেরন’ ডাকনামে পরিচিত জক ক্যামেরন

প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

নিজস্ব দশম জন্মবার্ষিকীতে ক্রিকেটের প্রতি তার যথেষ্ট নিপুণতা লক্ষ্য করা যায়। উইকেট-রক্ষক ও ব্যাটসম্যান - উভয় বিভাগেই বেশ দক্ষ হয়ে নিজেকে গড়ে তোলেন। এরপর তিনি হিল্টন কলেজে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম একাদশের অন্যতম সদস্যরূপে নিজেকে ঠাঁই করে নেন স্ব-মহিমায়।[১]

ট্রান্সভাল দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। তবে, ১৯২৫-২৬ মৌসুম থেকে উইকেট-রক্ষক হিসেবে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী অব্যাহত রাখেন। এছাড়াও ব্যাট হাতে শক্তিশালী মারের কারণে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন জক ক্যামেরন।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে অকালমৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা পেয়েছিলেন। মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবেও তার যথেষ্ট পরিচিতি ও সুনাম ছিল।

টেস্ট ক্রিকেটসম্পাদনা

ঘরোয়া ক্রিকেটে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা দলে যুক্ত হন ও ১৯২৭-২৮ মৌসুমে ইংল্যান্ড গমন করে পাঁচ টেস্টে গড়া সিরিজের প্রত্যেকটিতেই সপ্রতিভ ভূমিকা রাখেন। ফলশ্রুতিতে ১৯২৯ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড গমনের জন্য মনোনীত হন তিনি। এ সময়ে তিনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। ৯৫১ রান ও ৫৭টি ডিসমিসালের সাথে নিজ নামকে জড়ান জক ক্যামেরন। কিন্তু, লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে হ্যারল্ড লারউডের বলে সজোরে পাঁজরে আঘাত হানলে বেশ আহত হন তিনি। এ সফরের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল সমারসেটের বিপক্ষে সাতটি ডিসমিসাল ঘটিয়েছিলেন।

টেস্টে নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা লাভের পর ব্যবসায়িক কারণে পরের মৌসুমে ট্রান্সভাল থেকে ইস্টার্ন প্রভিন্সে স্থানান্তরিত হন। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে একটি খেলায় অংশগ্রহণের পর ১৯৩০-৩১ মৌসুমে সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন জক ক্যামেরন। তিনি তার মনোনয়নকে স্বার্থক করে তুলতে ৬৯ রানের লড়াকু ও মূল্যবান ইনিংস খেলে দলকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। ঐ মৌসুমে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলার জন্য ইংল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে। তৃতীয় টেস্টের পর নামি ডিনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি।

 
আনুমানিক ১৯৩০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জক ক্যামেরন

অস্ট্রেলিয়া গমনসম্পাদনা

১৯৩১-৩২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্ব দেন। তবে টেস্টগুলোয় তার ব্যাটিংয়ে বেশ প্রভাব পড়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১৫.৫০ গড়ে রান তুলেন। ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং ও গ্রিমেটের বিস্ময়কর বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারী দল পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই পরাজিত হলে হোয়াইটওয়াশ হয় তার দল।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ট্রান্সভালের পক্ষে খেলেন। পরবর্তী দুই মৌসুমে কেবলমাত্র একবারই জ্বলে ওঠেছিলেন তিনি। তবে, ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে পুনরায় নিজেকে খেলার জগতে মেলে ধরেন। এ মৌসুমে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ১৮২ রান তুলেন। এছাড়াও উইকেট-রক্ষণে বেশ দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন জক ক্যামেরন।

ইংল্যান্ড গমনসম্পাদনা

১৯৩৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দলের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন তিনি। শক্তিশালী ব্যাটিং নির্ভরতার কারণে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে তার দল। বাদ-বাকি চার টেস্ট ড্র হলেও ইংরেজ দল সুবিধাজনক পর্যায়ে অবস্থান করেছিল।

লর্ডসে স্পিনারদের উপযোগী উইকেটে ফলাফল নির্ধারণী খেলায় প্রথম ইনিংসে জক ক্যামেরন তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ টেস্ট রান ৯০ করেছিলেন।[২] এক পর্যায়ে দলের সংগৃহীত ৬০ রানের মধ্যে আধা ঘণ্টায় তিনি ৫৮ রান করেছিলেন।[৩] দ্য ক্রিকেটার সাময়িকী এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে যে, আমরা কদাচিৎ কোন ব্যাটসম্যানকে খুবই জোরেশোরে ও অল্প প্রচেষ্টায় রান তুলতে দেখতে পাই।[৩]

একবার হেডলি ভেরিটি’র এক ওভারে ত্রিশ রান তুলেছিলেন তিনি। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে তার সেরা ইনিংস সম্পর্কে জানা যায় যে, হেডলি ভেরিটিকে ক্যামেরন দুইভাবে মনে গেঁথে রেখেছিলেন। হয় চার মারবেন; নয় ছক্কা হাঁকাবেন। এছাড়াও দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী দল ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ১৩২ ও শ্রিম্প লেভেসন গাওয়ার একাদশের একটি দলের বিপক্ষে ১৬০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।[৪] লুইস ডাফাস তার ১৯৩৫ সালে ইংল্যান্ড সফর সম্পর্কে লিখেছেন যে, ওরচেস্টার মাঠে বলকে মাঠের বাইরে ফেলে সফরের সূচনা করেন ও মে মাসের প্রথম দিন থেকেই ইংল্যান্ডের মাঠগুলোর সর্বত্র ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন।[৫]

দেহাবসানসম্পাদনা

তবে, ইংল্যান্ড সফর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে আসার পরপরই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন। আপ্রাণ প্রচেষ্টা ও চিকিৎসাদি করা স্বত্ত্বেও দুই মাসেরও কম সময়ে ২ নভেম্বর, ১৯৩৫ তারিখে ৩০ বছর বয়সে তার অকালমৃত্যু হয়।

১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে খেলতে আসে। এ পর্যায়ে দলটি জক ক্যামেরনের পরিবারকে সহায়তাকল্পে ওয়ান্ডারার্সে ট্রান্সভাল বেসবল ক্লাবের বিপক্ষে বেসবল খেলায় অংশ নেয়। ঐ খেলায় প্রায় ৪০০ পাউন্ড-স্টার্লিং সংগৃহীত হয়।[৬]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Jock Cameron"ESPNCricInfo.com। ESPN EMEA Ltd.। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৩ 
  2. "England v South Africa, Lord's 1935"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  3. "H. B. Cameron", The Cricketer Annual 1935-36, p. 85.
  4. "HDG Leveson-Gower's XI v South Africans 1935"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  5. Louis Duffus (1946) Cricketers of the Veld, Sampson Low, Marston & Co, London, p. 39.
  6. W. H. Ferguson, Mr Cricket, Nicholas Kaye, London, 1957, p. 94.

আরও দেখুনসম্পাদনা

বহিঃসংযোগসম্পাদনা