চেঙ্গিজ (চলচ্চিত্র)

চেঙ্গিজ ২০২৩ সালের ভারতীয় বাংলা ভাষার অপরাধমূলক মারপিটধর্মী চলচ্চিত্র। নীরজ পান্ডের সাথে সহ লেখক ও পরিচালনা করছেন রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন জিৎ, গোপাল মদনানি ও অমিত জুমরানি। প্রধান প্রধান চরিত্রে ছিলেন জিৎ, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, রোহিত রায় ও শতাফ ফিগার। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন কৌশিক গুড্ডু এবং অনিক ধর, অ্যাকশন ধারাবাহিক নকশা করেছেন স্টান্ট সিলভা। চলচ্চিত্রের গল্প ৭০-এর দশক থেকে ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতার একজন গ্যাংস্টারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।

চেঙ্গিজ
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পোস্টার
চেঙ্গিজ: যার না আছে কোনো সীমানা না কোনো পরিধি
পরিচালক	রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়
প্রযোজক	জিৎ অমিত জুমরানি গোপাল মাদনানী
রচয়িতা	রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায় নীরজ পান্ডে
কাহিনিকার	নীরজ পাণ্ডে
শ্রেষ্ঠাংশে	জিৎ সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় রোহিত বোস রায়
সুরকার	কৌশিক গুড্ডু অনিক ধর
চিত্রগ্রাহক	মানস গাঙ্গুলী
সম্পাদক	মলয় লাহা
প্রযোজনা কোম্পানি	গ্রাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট জিৎ ফিল্মওয়ার্কস
পরিবেশক	জিৎ ফিল্মওয়ার্কস (বাংলা) এএ ফিল্মস (হিন্দি)
মুক্তি	২১ এপ্রিল ২০২৩ (2023-04-21)
স্থিতিকাল	১৫৩ মিনিট
দেশ	ভারত
ভাষা	বাংলা
নির্মাণব্যয়	আনু. ₹ ৪ কোটি

চেঙ্গিজ ২০২৩ সালের ২১শে এপ্রিল হিন্দিতে ডাব করা সংস্করণ সহ বাংলায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এটি বাংলা ও হিন্দি ভাষায় একসঙ্গে মুক্তি পাওয়া প্রথম বাংলা ছবি।

পটভূমি

১৯৭৬ সালে জয়দেব সিং তার বাবা-মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রশিদ খানকে শেষ করে এবং ১৬ বছর বয়সে কলকাতার আন্ডারওয়ার্ল্ডে পা রাখেন। যেখানে তিনি একজন শক্তিশালী গ্যাংস্টার ওমর খালিদ ওরফে নল্লি ভাইয়ের জন্য কাজ শুরু করেন এবং চেঙ্গিজ নামে তার নাম পরিবর্তন করেন। নল্লী ভাইয়ের সাথে কাজ করার পরে চেঙ্গিজ বাংলা, ইউপি এবং বিহার জুড়ে তার নিজের অপরাধের বলয় প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। কিন্তু তার জীবন একটি মোড় নেয় যখন তাকে তার মামা এসিপি সমীর সিনহার সাথে মোকাবিলা করতে হয়, যিনি চেঙ্গিজের অপরাধের বলয় নির্মূল করার জন্য নিযুক্ত হন।

অভিনয়শিল্পী

• দ্বৈত চরিত্রে জিৎ -
  • জয়দেব সিং বা চেঙ্গিজ, কলকাতার ভয়ংকর গুন্ডা
  • ড্যানিয়েল ডি'সুজা, সফটওয়্যার প্রকৌশলী
    • তরুণ জয়দেব সিং চরিত্রে আয়ুষ দাস

• রোহিত রায় - এসিপি সমীর সিংহা
• সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় - নন্দিনী সেন
• শতাফ ফিগার - ওমর খালিদ ওরফে নল্লি ভাই, মধ্য কলকাতার গ্যাংস্টার
• সুদীপ মুখোপাধ্যায় - কমিশনার অমিত ধর হিসেবে
• বিশ্বরূপ বিশ্বাস - শার্পশুটার কাল্লুর
• রুকমা রায় - দেবজানী, দেবু ও রূপালীর মেয়ে
• ইন্দ্রজিৎ মজুমদার - মুঘল আব্বাস
• সুদীপ মুখোপাধ্যায় - কমিশনার অমিত ধর
• বিশ্বরূপ বিশ্বাস - কাল্লু
• ইনস্পাহানীর স্ত্রী পূবালী চরিত্রে অ্যানিন সেন
• অ্যান্ড্রুর স্ত্রী সোনালীর চরিত্রে আয়েশা ভট্টাচার্য
• দেবুর স্ত্রী রূপালী চরিত্রে মৌসুমী দাস
• ইস্পাহানি চরিত্রে অভ্রজিৎ চক্রবর্তী
• অ্যান্ড্রু চরিত্রে স্যাম মুখার্জি
• সুভস্মিতা মুখোপাধ্যায়

নির্মাণ

চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ কলকাতায় করা হয়েছে। কলকাতার রাস্তাঘাট, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস সহ একাধিক এলাকার নাম, উঠে এসেছে হলুদ ট্যাক্সি, রেসকোর্স, ডক এরিয়া থেকে মোহনবাগানের মাঠ, লালবাজার সহ বিভিন্ন জায়গা চিত্রায়িত করা হয়েছে।

সঙ্গীত

সাউন্ডট্র্যাকটিতে অনিক ধর এবং কৌশিক গুড্ডু দ্বারা রচিত তিনটি মৌলিক গান রয়েছে, যথা, "উইদ্দা", "এভাবে কে ডাকে" এবং "রাগদা"। গানের কথা লিখেছেন প্রাঞ্জল দাস এবং প্রসেন।

প্রথম গান "উইদ্দা" বাংলা এবং হিন্দিতে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলায় দ্বিতীয় গান "এভাবে কে ডাকে" এবং হিন্দিতে "তেরি মেরি বাতেঁ" একই বছর ৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। যশ রাজ স্টুডিওতে সমস্ত যন্ত্র এবং কণ্ঠ ডাব করা হয়েছে। তৃতীয় গান "রাগদা" বাংলা ও হিন্দিতে ১৩ এপ্রিল মুক্তি পায়।

বাংলা সংস্কার:

নং.	শিরোনাম	গীতিকার	কণ্ঠশিল্পী	দৈর্ঘ্য
১.	"উইদা"	প্রাঞ্জল দাস	দিব্যা কুমার	৩:১৬
২.	"এভাবে কে ডাকে"	প্রসেন	অরিজিৎ সিং	৪:১৪
৩.	"রাগদা"	প্রাঞ্জল দাস	মিকা সিং	৩:০৮
মোট দৈর্ঘ্য:				১০:৩৮

হিন্দি সংস্করণ:

নং.	শিরোনাম	গীতিকার	কণ্ঠশিল্পী	দৈর্ঘ্য
১.	"উইদা"	পাঁচি জলনভি	দিব্যা কুমার	৩:১৬
২.	"তেরি মেরি বাতেঁ"	কুণাল ভার্মা	সঞ্জিত হেগড়ে	৪:১৪
৩.	"রাগদা"	শাব্বির আহমেদ	মিকা সিং	৩:০৮
মোট দৈর্ঘ্য:				১০:৩৮

প্রচার

চলচ্চিত্রটি অফিসিয়াল বাংলা টিজার ২০২২ সালের ৩০শে নভেম্বর এবং অফিসিয়াল হিন্দি টিজার ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশ করা হয়।

চলচ্চিত্রটির অফিসিয়াল বাংলা এবং হিন্দি ট্রেলারটি ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছিল।

মুক্তি

২০২৩ সালে ২১শে এপ্রিল বাংলা ও হিন্দি ভাষায় প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পায়।

প্রদর্শনী এবং পরিসংখ্যান

চেঙ্গিজ সমগ্র ভারতে আনুমানিক ৭৭৪ টিরও বেশি পর্দায় ১২৩২+ প্রদর্শনীসহ মুক্তি পেয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে একটি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ। ভারতে প্রায় ৩০০টি প্রদর্শনী সহ ১২০টিরও বেশি পর্দায় বাংলা সংস্করণ প্রিমিয়ার হয়। হিন্দি সংস্করণটি ৮০০ টিরও বেশি প্রদর্শনীসহ ৬৫০ টিরও বেশি পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে বলে জানা যায়।

অভ্যর্থনা

সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া

টাইমস অব ইন্ডিয়ার উজ্জয়িনী রায় ছবিটিকে ৫ স্টারের মধ্যে ৩ রেট দিয়েছেন এবং লিখেছেন "এটি নির্মাণ ব্যয় এবং বর্ণনার দিক বেশ সুন্দর, যা চেঙ্গিজ দলকে গর্বিত করতে পারে। স্টান্ট সিলভা দ্বারা চিত্রগ্রহণ করা মারপিটধর্মী দৃশ্যগুলি চটকদার ও বেশ ভাল সম্পাদনা করা হয়েছে। যা অনায়াসে জিতের সাথে মারো-এ-মারো যুদ্ধের দৃশ্যে পারদর্শী। ক্লাইম্যাক্সের দিকে দীর্ঘ বন্দুকযুদ্ধের ক্রম অবশ্য অনেক আগ্রহ নিয়ে আসে। এটি চলচ্চিত্র সম্পর্কেও বলা যেতে পারে; এটির উন্নয়নে অনেক কলাকুশলী রয়েছে এবং সবাই চলচ্চিত্রটির উন্নয়নে সাহায্য করেছে। একটা সময় পরে, আপনি কে কম বা বেশি অপরাধী তা নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করতে পারেন।"

হিন্দুস্তান টাইমসের রনিতা গোস্বামী লিখেছেন "কিছু ভুল থাকলেও এই ছবি বক্স অফিসে বাজি রাখার দাবি রাখেন বৈকি। এর আগে এধরনের আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প নিয়ে কোনও অ্যাকশন নির্ভর মশালাদার ছবি বাংলায় সেভাবে হয়নি। গল্পের প্রেক্ষাপট ও ডিটেলিংয়ে বেশকিছু গোলযোগ ও রিসার্চের অভাব রয়েছে। 'চেঙ্গিজ' কেন আন্ডার ওয়ার্ল্ডে থেকে গেল? সেবিষয়টি চিত্রনাট্যে স্পষ্ট নেই। এখানে পুরো ছবিটিই 'চেঙ্গিজ' কেন্দ্রিক। এখানে একটা প্রেমের গল্পও রয়েছে, যেখানে জিৎ-এর নায়িকা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর সঙ্গে জিতের রোম্যান্সের দৃশ্য ছবিতে খুব বেশি নেই। সবথেকে বড় কথা বাণিজ্যিক ও মাশাদার ছবির মূল বিষয়-ই হল 'ডায়ালগ'। দু'একটা ছাড়া এখানে সেভাবে কোনও চটকদার ডায়ালগ নেই। ছবির দ্বিতীয় ভাগ বড় বেশি লম্ব, সেটা সম্পদনার কারিকুরিতে আরেকটু ছোট হয়ত করাই যেত। তবে ছবির অ্যাকশন দৃশ্যে বরবরের মতোই জিৎ নজর কেরেছে। সুপুরুষ চেহারায় গোটা পর্দা জুড়ে তিনিই দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছেন।"

সংবাদ প্রতিদিনের নির্মল ধর ৫ এর মধ্যে ৩.৫ রেটিং দিয়েছেন এবং লিখেছেন "জিতের ছবি মানেই যুক্তিহীন মারপিট, রক্তারক্তি, দু’ছটাক প্রেম, এক ছটাক গান। কে বা কারা কেমন অভিনয় করলেন, তার চাইতে বড় কথা জিৎ পাঁচ কোটির বাজি জিতবেন তো! সেই প্রশ্নটা রয়েই গেল। সত্যিই, বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য জিতের এমন মানসিক, শারীরিক পরিশ্রম ও আর্থিক বিনিয়োগ সার্থক হোক, নইলে যে সাড়ে সর্বনাশ!"

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সায়নিতা চক্রবর্তী ৫ এর মধ্যে ৪ রেটিং দিয়েছেন এবং লিখেছেন "জিতের জয়দেব সিং থেকে চেঙ্গিজ হয়ে ওঠার কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘চেঙ্গিজ’। ছবি জুড়ে রয়েছে বহু অ্যাকশন দৃশ্য। দর্শকদের ভালোবাসা পেতে সফল হলেন কিনা জিৎ এটাই এখন দেখার পালা।"

ওটিটিপ্লে - এর শময়িতা চক্রবর্তী ৫ এর মধ্যে ৩ রেটিং দিয়েছেন এবং লিখেছেন "চেঙ্গিজের চমৎকার একটি পটভূমি ও অ্যাকশন সিকোয়েন্স রয়েছে। তবে এটিতে বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপনার অভাব রয়েছে। সিনেমাটি অগোছালো অভিনয় দিয়ে শুরু হয় এবং এটি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গবেষণার একটি অংশ প্রতিফলিত করে। একটি পিরিয়ড চলচ্চিত্র হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে ৯০-এর দশকের কোলকাতা দেখানো হয়েছে, কিন্তু নির্মাতা পিরিয়ডটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য কোন চেষ্টা করেনি।"

বক্স অফিস

উদ্বোধনী দিনে চেঙ্গিজ বিশ্বব্যাপী মোট ₹ ০.৩৫ কোটি - ₹ ০.৩৭ কোটি সংগ্রহ করেছে। চলচ্চিত্রটির হিন্দি ডাব করা সংস্করণটি প্রাথমিকভাবে ভারত জুড়ে ৮০০ টিরও বেশি প্রদর্শনীসহ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং প্রথম দিনে ভারতীয় বক্স অফিসে ₹ ০.১০ কোটি আয় করে। হিন্দি ডাব করা সংস্করণটি প্রথম সপ্তাহে বক্স অফিসে ₹ ১.২৫ কোটি সংগ্রহ করেছে।

বহিঃসংযোগ

• ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে চেঙ্গিজ (ইংরেজি)