গোপাল ভাঁড়
গোপাল ভাঁড় ছিলেন মধ্যযুগে নদিয়া অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত রম্য গল্পকার, ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী।[১] তাঁর আসল নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়া জেলার প্রখ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় নিযুক্ত ছিলেন।[২] রাজা তাঁকে তাঁর সভাসদদের মধ্যকার নবরত্নদের একজন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেই আমলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের সামনে নির্মিত তাঁর একটি ভাস্কর্য এখনো সেখানে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগর পৌরসভার সীমানায় ঘূর্ণীতে গোপাল ভাঁড়ের নতুন মূর্তি স্থাপিত হয়েছে।
গোপাল ভাঁড় | |
---|---|
![]() গোপাল ভাঁড়ের মূর্তি | |
জন্ম | গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক কৃষ্ণনগর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | নদিয়া, ভারত |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
পেশা | রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এর রাজসভার রম্য গল্পকার ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী |
গল্পসম্পাদনা
প্রায় দুইশত বছরেরও অধিক আবহমানকাল ধরে প্রচলিত তার জীবন-রস সমৃদ্ধ গল্পগুলো পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে, লোককথায় এখনো স্বমহিমায় টিকে আছে। কতগুলি গল্প প্রায় প্রবাদের ন্যায় ব্যবহৃত হয়। তাকে মোল্লা নাসিরুদ্দিন ও বীরবলের সমতুল্য হিসাবে পরিগণনা করা হয়।
ইতিহাস ও বিতর্কসম্পাদনা
গোপাল ভাঁড় চরিত্রটি ঐতিহাসিক, গবেষক ও ভাষাবিদদের কাছে বিতর্কের বিষয় বহুকাল থেকে। গোপালের গল্পগুলি সমাজে চুড়ান্ত জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত হলেও গোপাল ভাঁড় বাস্তবে ছিলেন কিনা সে নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকেই মনে করেন গোপাল ভাঁড় নামে কেউ নির্দিষ্ট করে ছিলেননা। তবে কোনো না কোনো বিদূষক রাজার প্রিয়পাত্র হন। সেরকম গোপাল নাম্নী নাপিত বংশীয় কোনো ব্যক্তি ছিলেন। গোপালের জন্ম কত বঙ্গাব্দে তা কোথাও লেখা নেই। তার জন্মস্থানের পক্ষেও কোনো নথি নেই, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা হিসেবে তার সম্পত্তির কিংবা জায়গা-জমির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। গোপালের বাবার নাম জানা গেলেও তার মা ও স্ত্রী সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। নগেন্দ্রনাথ দাসের মতে গোপালের পদবী ছিল 'নাই'। মহারাজ তাকে হাস্যার্ণব উপাধী দান করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ সুকুমার সেন বলেছেন ‘গোপাল ভাঁড় সম্পর্কে আধুনিক বাঙালির কৌতুহল থাকার ফলে বাস্তব অথবা কল্পিত ব্যক্তিটির সম্পর্কে যে জনশ্রুতি জাতীয় ঐতিহ্য গজিয়ে উঠেছে ও উঠছে তার বীজ হচ্ছে ভাঁড় নামের অংশটি, গোপাল ভাঁড়ের ভাঁড়টুকু সংস্কৃত শব্দ ভাণ্ডারের ‘ভাণ্ড’-জাত মনে করে অনেক গোপালের জাতি নির্ণয় করেছেন। পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তি যাই হোক, গোপাল ভাঁড় বাঙালি রসিক ও লৌকিক সংস্কৃতিতে অমলিন হয়ে আছেন। [৩]
টেলিভিশন অনুষ্ঠানসম্পাদনা
- তাঁকে কেন্দ্র করে সনি আট টিভিতে গোপাল ভাঁড় নামে একটি এনিমেশন কার্টুন নির্মিত হয়ে প্রচারিত হচ্ছে।
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ সিরাজুল ইসলাম (২০১২)। "গোপাল ভাঁড়"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Siegel, Lee (1987). Laughing Matters: Comic Tradition in India. University of Chicago Press, United States. আইএসবিএন ০-২২৬-৭৫৬৯১-২. pp. 314-318.
- ↑ শোয়েব সর্বনাম (১৩ মে ২০১৬)। "গোপাল ভাঁড়ের খোঁজে"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭।
অধিক পঠনসম্পাদনা
- Dutta, Swapna (২০০৪)। Tales of Gopal the Jester। আইএসবিএন 81-7806-059-0।
- Sinha, Seema (২০০৫)। Gopal Bhand। আইএসবিএন 81-7011-975-8।