কৃষ্ণচন্দ্র রায়
কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০ – ১৭৮৩) ছিলেন নদিয়ার মহারাজা।[১] বাংলা সাহিত্য, বাংলার সংস্কৃতি ও বাঙালি ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। নদিয়া রাজপরিবারের শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসেবে পরিগণিত। তিনি বিদ্বান, সংস্কৃত ও ফার্সি ভাষায় শিক্ষিত, সংগীতরসিক ছিলেন। তীব্র রক্ষণশীল রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন শাক্তপদাবলিকার রামপ্রসাদ সেন, অন্নদামঙ্গল কাব্য প্রণেতা ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড় প্রমুখ বাংলার প্রবাদপ্রতিম গুণী ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষক। অন্নদামঙ্গল কাব্য তাঁর রাজসভার ফরমাসে রচিত হয়। কৃষ্ণনগরের জগদ্বিখ্যাত মৃৎশিল্পের সূত্রপাত তাঁর সময়ে তাঁরই উদ্যোগে ঘটে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় | |||||
---|---|---|---|---|---|
মহারাজ ও নদীয়ার জমিদার | |||||
নদীয়া জেলার রাজা | |||||
রাজত্ব | ১৭২৮ – ১৭৮৩ | ||||
পূর্বসূরি | রাজা রঘুরাম রায় | ||||
উত্তরসূরি | শিবচন্দ্র রায় | ||||
জন্ম | আনু. ১৭১০ রেউইগ্রাম, নদীয়া রাজ (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) | ||||
মৃত্যু | আনু. ১৭৮৩ (বয়স ৭২–৭৩) নদীয়া রাজ (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) | ||||
| |||||
রাজবংশ | নবদ্বীপ রাজবংশ | ||||
পিতা | রঘুরাম রায় | ||||
ধর্ম | হিন্দু |
কৃষ্ণচন্দ্র রায় ছিলেন একজন কূটকৌশলী ব্যক্তি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হলে তিনি ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করেন। পরবর্তী নবাব মীর কাশিমের সময় তাঁকে বন্দী করা হয়। ইংরেজদের হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি লাভ করেন। কোম্পানি সরকার তাঁর আনুগত্যের জন্য মহারাজা উপাধিতে ভূষিত করেন।[২]
উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব
সম্পাদনাবাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজা ও নবদ্বীপে শাক্তরাস প্রচলন তাঁরই কৃতিত্ব। জনশ্রুতি অনুসারে বাংলার নবাব আলীবর্দী খানকে রাজকর দিতে না পারায় কারাগারে বন্দি হয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র ১৭৫৪ সালে। সময়টা ছিল দুর্গোৎসবের কাছাকাছি। নবাবের কারাগার থেকে অবশেষে তিনি যখন মুক্ত হলেন তখন দুর্গোৎসব প্রায় সমাপ্ত, কৃষ্ণনগর ফেরার পথে রাজা বুঝলেন, সে দিন বিজয়া দশমী। রাজা নৌকার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এবং সেখানেই স্বপ্নে দেখেছিলেন যে এক রক্তবর্ণা চতুর্ভুজা কুমারী দেবী তাঁকে বলছেন আগামী কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে তাঁর পুজো করতে। ফলে প্রচলন হয় জগদ্ধাত্রী পূজার। এর পরের বছর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজার প্রচলন হয় তাঁর সুহৃদ ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত দিয়ে[৩]। এছাড়াও, মালোপাড়া বারোয়ারি জগদ্ধাত্রীর (মা জলেশ্বরী) প্রতিমার পূজার সূচনা করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Rodrigues, Hillary (২০০৩)। Ritual Worship of the Great Goddess: The Liturgy of the Durga Puja with Interpretations। SUNY Press। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 978-0-7914-8844-7।
- ↑ সমবারু চন্দ্র মহন্ত (২০১২)। "মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য (নভেম্বর ১, ২০১৪)। "কৃষ্ণচন্দ্র ও জগদ্ধাত্রী পুজো"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৫, ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (সংশোধিত চতুর্থ সংস্করণ), প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০২।