গেস্টরুম কালচার
গেস্টরুম কালচার বা গেস্টরুম সংস্কৃতি হলো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রদের ক্যাম্পাস ও হলে চলাচলের আদব-কায়দা শেখানোর ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি।[১] সাধারণত এই সংস্কৃতি সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের প্রাথমিক ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকলেও এটা অনেক সময় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক শাসন হিসাবে ব্যবহার হলে তাকে গেস্টরুম কালচার বলা যেতে পারে।[২] বাংলাদেশে ছাত্রলীগের গেস্টরুম সংস্কৃতিতে নানাসময় শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ সাধারণ শিক্ষার্থীগণ কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় পর্বে খুব বেশি অসুবিধা না হলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন কর্তৃক পরিচয় পর্বে অথবা শাসন পর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।[৩] সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের ঘটনার জন্য এই কালচারের শিক্ষাঙ্গনে ব্যপক সমালোচনা রয়েছে।[৪]
গেস্টরুম কালচার গেস্টরুম সংস্কৃতি | |
---|---|
ছাত্রসংগঠনের টর্চার সেল ও জোরপূর্বক দলীয়করণ-এর অংশ | |
স্থান | বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ |
লক্ষ্য | নির্দলীয় ও বিপরীত দলের শিক্ষার্থী |
কারণ | প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করানো |
শাব্দিক ও প্রায়োগিক অর্থ
সম্পাদনাগেস্টরুম কালচার (ইংরেজি: Guestroom Culture) একটি ইংরেজি শব্দ, এটির সাবলীল বাংলা অর্থ অভ্যর্থনাকক্ষের সংস্কৃতি, অতিথিকক্ষের আপ্যায়ন প্রভৃতি।[৫] তবে বাংলা ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষার্থীদের কাছে নিকটে গেস্টরুম কালচার মানে শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।[৬] শিক্ষার্থীদের পক্ষে থেকে জানা যায়, গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের মানসিক হেনস্তা, দলীয় কর্মী বানানোর চেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় হলের সিট বন্টন ও তদারকি, দলীয় সভা-সমাবেশে যেতে বাধ্য করা প্রভৃতি কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা বলেছে, আমরা গেস্টরুমে সবার সাথে মতবিনিময় করি, এখানে কাউকে জোর করে আনা হয়না।[৬]
গেস্টরুমের প্রকৃতি
সম্পাদনাগেস্টরুম বা অভ্যর্থনাকক্ষ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা হলেই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বা বহিরাগত কোন অতিথি শিক্ষার্থীর সাথে দেখা করতে আসলে এখানে অপেক্ষা করে থাকে। তবে রাতে এটা ক্ষমতাসীন ছাত্র নেতারা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংখ্যা ভেদে মোটামুটি দুই ধরণের গেস্টরুম দেখা যায়। সেটি বড় গেস্টরুম এবং ছোট গেস্টরুম। বেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় গেস্টরুম ব্যবহার করা হয়, এটি সপ্তাহে এক-দুইদিন হতে পারে। আর অল্প শিক্ষার্থীদের জন্য মিনি গেস্টরুম ব্যবহার করা হয়, এটি সপ্তাহে তিন-চারদিন হতে পারে। এটি সাধারণত রাত ১০টা থেকে রাত ১২টা বা অধিক সময় পর্যন্ত চলতে পারে।[৬] প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, পর্যায়ক্রমে সিনিয়ররা বসার অনুমতি পান। শিক্ষার্থীদের কথা মোতাবেক গেস্টরুম কালচারের দুইটা পর্ব থাকে। প্রথম পর্বে এক ব্যাচ বা দুই ব্যাচ সিনিয়ররা জুনিয়রদের নানান আদব-কায়দা, ম্যানার, চলাফেরার নিয়মনীতি প্রভৃতি ধমের শুরে শেখান। দ্বিতীয় পর্বে সবচেয়ে সিনিয়রা সকল জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেন।[৭]
গেস্টরুমে নির্যাতন
সম্পাদনাবাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের ছাত্র সংগঠন গেস্টরুম সংস্কৃতিকে নির্যাতন ও দলীয় কর্মী বানানোর প্রথা হিসাবে গ্রহণ করে।[৮][৯] ১৯৯০ দশকের পর থেকেই গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া যায়।[১০] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের এক ছাত্রী বলেন,
“ | যারা রাজনৈতিকভাবে ওঠেন তাদের বাধ্যতামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়। নেত্রীদের নির্দেশনা মানতে হয়। না মানলে গেস্টরুমে ডাকা হয় এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। কেউ কেউ সহ্য করতে না পেরে ভেঙে পড়েন এবং হল ছেড়ে দেন। | ” |
— ঢাবির শামসুন নাহার হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী, https://www.dhakapost.com/campus/94412 |
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
সম্পাদনাবাংলাদেশ ছাত্রলীগ নানাসময়ে গেস্টরুম সংস্কৃতিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের সাথে জড়িত ছিলো, এটি আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন।[১১] বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাবি, রাবি, চবি, জাবি, ইবি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলো।[১২] তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেস্টরুম সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত ছিলো।[১৩] ২৩ জানুয়ারি ২০২০ সালে ঢাবির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ৪ জন শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আবাসিক শিক্ষকের সামনেই রাতভর মারধর করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন।[১৪] ২০২১ সালের শেষ তিন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।[১৩] ২৪ এপ্রিল ২০২৪ সালে ঢাবিতে গেস্টরুম নির্যাতনে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে অচেতন হয়ে যায়।[১৫][১৬] ১৯ জুন ২০২৩ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের পলিটিক্যাল ব্লকে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়।[১৭] একই বছরের ২১ আগস্ট জাবিতে গেস্টরুম নির্যাতনের ভিডিও করেছে, এমন সন্দেহে এক সাংবাদিককে পেটানো হয়।[১৮] ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের গেস্টরুমে এক ছাত্রকে উলঙ্গ করে নির্যাতন করা হয়,[১৯] এই ঘটনার প্রতিবাদে মানবাধিকার কমিশন প্রতিবাদ জানিয়েছে।[২০] ১১ জুন ২০২৪ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন করে এবং গুলি করার হুমকি দেন।[২১]
ছাত্রলীগের এই নির্যাতনের কারণে অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতির হল ছেড়ে দিয়েছেন।[২২][২৩] এবং ছাত্রলীগের সদস্যগণ সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
ছাত্রদল
সম্পাদনাবিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আবাসিক হল ও হোস্টেল ছাত্রদলের দখল করে রেখেছিলো।[২৪] সেই সময় ছাত্রদলের শিক্ষার্থীরা হল নিয়ন্ত্রণ ও হলের সিট বন্টন করতো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অত্যাচার, আক্রমণ এরকম নানা অভিযোগ এই সংগঠনের বিরুদ্ধে রয়েছে।
ছাত্রশিবির
সম্পাদনাবিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন এই ছাত্র সংগঠন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আবাসিক হল ও হোস্টেল নিজেদের দখলে রাখতো।[২৪] ২০১৬ সালে ছাত্রশিবিরের হোস্টেল দখলের ভয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শহীদ আকতার আলী মুন হল ৭ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পরে ছিলো,[২৫] এবং চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ৬টি আবাসিক হল দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে ছিলো।[২৬]
অন্যান্য
সম্পাদনা২৪ মে ২০২৪ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুমে না যাওয়ার কারনে ৪৭তম ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সিনিয়ররা বিছানার লোহার স্ট্যান্ড ও ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলো জুনিয়রদের।[২৭]
উল্লেখযোগ্য ঘটনা
সম্পাদনাবাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি কোন এক রাজনৈতিক দলের সাথে সহযোগী হিসাবে কাজ করে, এইজন্য নানাসময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।[২৮] এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্তৃক ২০১৯ সালে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।[২৯] এটি মূলত ছাত্রলীগের গেস্টরুম সংস্কৃতির একটা অংশ ছিলো,[৩০] তাকে ইসলামি ছাত্রশিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নির্বাচিত একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আবরার ফাহাদ এক ফেসবুক স্টাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফর নিয়ে পর্যালোচনামূলক একটি পোস্ট করেছিলেন।[৩১] এসব কিছুর জের ধরে থাকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে, তার হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে স্টাম্প দিয়ে মারা হয়। সন্ত্রাসীরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাগলের মত স্টাম্প দিয়ে তাকে আঘাত করে মারতে থাকেন।[৩২] আবরার ফাহাদ কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে ও নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন।[৩৩]
২০২৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্তৃক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরী খাতুন নামক এক ছাত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।[৩৪][৩৫] এটি মূলত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের একটি নির্যাতন ছিলো। এটিও ছাত্রলীগের গেস্টরুম সংস্কৃতির একটি উদাহরণ। ফুলপরীকে রাত ১১ টায় ডেকে নিয়ে রাত ৩.৩০ মিনিট পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়।[৩৬] তাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পর ও অশ্লীল গালিগালাজ করা হয়।[৩৭] আলপিন দিয়ে পায়ে ফুটা করা হয়, জোর করে ডাইনিংয়ের ময়লা গ্লাস চাটানো হয়। গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে শরীরে আঘাত করা এবং যৌন হয়রানি করা হয়।[৩৮] তাকে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখা হয়।[৩৯] এক পর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়।[৪০]এই ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রতিবাদ জানায় এবং এই কাজকে "বর্বর ও কুরুচিপূর্ণ" বলে অভিহিত করে।[৪১]
ইডেন মহিলা কলেজের কেলেঙ্কারি ২০২২ এর ছাত্রলীগের একটি অপকর্ম ও ধারাবাহিক ঘটনা। ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের মেয়েদের রুমে ডেকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ও নির্যাতন করতো।[৪২] ভিন্নমত পোষণকারী ছাত্রীরা যারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেয় না এবং ছাত্রাবাসের বাসিন্দারা যারা মাসিক 'প্রটেকশন মানি' দিতে ব্যর্থ হয় তাদের উপর নির্ধারিত রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হতো।[৪৩] আগস্টের শেষ দিকে দুই শিক্ষার্থীকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।[৪৪]
২০০২ সালের দিকে বিএনপি সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন ঢাবির শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের মেয়েরা সিট বন্টন করতো।[৪৫] মূলত ছাত্রদলের হলের সিট বন্টন ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের রেশ ধরে কিছু মেয়েরা সিট বন্টনের বিরুদ্ধে হল প্রশাসনের বিরোধিতা করলে, ছাত্রদল ও পুলিশ মিলে এই অভিযান পরিচালনা করে।[৪৬] এই অভিযানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। ফলস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী ও প্রক্টর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।[৪৭][৪৮]
প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনা২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে ঢাবি সাদা দলের একজন শিক্ষক অধ্যাপক লুৎফর রহমান তার বক্তব্যে আবাসিক হলসমূহে গেস্টরুম কালচার ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন।[৪৯] তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মাদ আখতারুজ্জামান গেস্টরুম নির্যাতন শব্দযুগল প্রত্যাহার করে দেন।[৫০] ফলে প্রতিবাদ হিসাবে দুইজন শিক্ষক তৎক্ষণাৎ সিনেট অধিবেশন বর্জন করেন।[৫১][৫২] এই উপাচার্যের এই আচরণে অনেক দল সংগঠন প্রতিবাদ করেছে।[৫৩] কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আব্দুস সালাম গেস্টরুম নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে শাস্তির আশ্বাস প্রদান করেন।[৫৪] শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম নির্যাতন, বুলিং র্যাগিং, হেনস্তা প্রতিহত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ আইন জারি করেন এবং গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করেন।[৫৫]
২২ নভেম্বর ২০২৩ সালে গেস্টরুমে ছাত্র নির্যাতনের বিরোধিতা করে টিএসসিতে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এক শিক্ষার্থী।[৫৬] ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করার এই সংস্কৃতি দ্রুত বন্ধে প্রয়োজনে আইন করা উচিত।[৭] জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।[৫৭] ইবিতে ছাত্র উলঙ্গ করে নির্যাতনের ঘটনায় ইসলামী ছাত্রশিবির নিন্দা জানিয়েছে।[৫৮] ১৫ মার্চ ২০২২ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ গেস্টরুম নির্যাতনবিরোধী আইনের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।[৫৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ছানাউল্লাহ, মো (২০২২-০২-০১)। "গেস্টরুম ও র্যাগিং কালচার: যার নেই আদবকায়দা, সেই শেখায় অন্যকে"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৮।
- ↑ "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'গেস্ট রুম কালচার' আসলে কী?"। www.campustimes.press। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: আতঙ্কের নাম গেস্টরুম"। www.shomoyeralo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ হৃদয়, আমজাদ হোসেন (২০২২-০১-২৯)। "কেন বন্ধ হচ্ছে না ঢাবির 'গেস্টরুম নির্যাতন'?"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯।
- ↑ "Definition of GUEST ROOM"। www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ ক খ গ "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলের 'গেস্টরুমে' কী হয়?"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯।
- ↑ ক খ হাওলাদার, আসিফ (২০২২-০২-১২)। "নবীন শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক 'গেস্টরুম'"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "রাবিতে তিন দশকে ২৯ খুন, বিচার হয়নি একটিরও"। bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "বন্ধ করা হবে গেস্টরুম টর্চার ও প্রটোকল"। দৈনিক ইনকিলাব। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ "'গেস্টরুম' প্রথায় নির্যাতন"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯।
- ↑ "ছাত্রলীগ আ'লীগের অঙ্গসংগঠন নয়, ভ্রাতৃপ্রতীম"। banglanews24.com। ২০১৪-০২-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯।
- ↑ প্রতিবেদক, বিশ্ববিদ্যালয় (২০২২-০৩-১১)। "ছাত্রলীগের গেস্টরুম যেন একটি 'আদালত' : নির্যাতিত শিক্ষার্থী"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ ক খ "ঢাবির 'গেস্টরুম নির্যাতন' সংস্কৃতি"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "ঢাবির গেস্টরুমে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর ছাত্রলীগের নির্যাতন"। Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ প্রতিবেদক (২০২৪-০৪-২৪)। "ছাত্রলীগের 'গেস্টরুমে' অচেতন শিক্ষার্থী, তদন্তে কমিটি"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "গেস্টরুমে 'ছাত্রলীগের র্যাগিংয়ে' অচেতন ঢাবি শিক্ষার্থী, তদন্ত কমিটি গঠন"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২৪ এপ্রিল ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ BonikBarta। "জাবির গেস্টরুমে নির্যাতন গড়াল মামলায়, অভিযুক্ত আট ছাত্রলীগ নেতা"। বণিকবার্তা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "জাবিতে গেস্টরুমের 'ভিডিও করেছে' সন্দেহে সাংবাদিককে পেটাল ছাত্রলীগ"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২১ আগস্ট ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "ইবি ছাত্রকে উলঙ্গ করে র্যাগিং, ধামাচাপার চেষ্টা ছাত্রলীগের"। Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "ইবি ছাত্রকে র্যাগিং, কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চায় মানবাধিকার কমিশন"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৬ জুন ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ অফিস, যশোর (২০২৪-০৬-১১)। "শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি মানতে না পেরে ঢাবি ছাড়লেন শিক্ষার্থী"। Barta24 (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৩-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "ছাত্রলীগের 'গেস্টরুম' অত্যাচারে হল ছাড়ছেন জাবি শিক্ষার্থীরা"। মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ ক খ মুহাম্মাদ, আনু (এপ্রিল ২০১৮)। "বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি: সরকারি উৎপীড়ন ও শিক্ষার্থী সক্রিয়তার নানারূপ" (পিডিএফ)। সর্বজন কথা: পৃষ্ঠা ৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ "শিবিরের ভয়ে সাত বছর ধরে হল বন্ধ"। www.kalerkantho.com। ২৬ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৬-১০-১৭)। "আবাসনসংকটে সাড়ে ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "গেস্টরুমে যেতে না চাওয়ায় জুনিয়রদের কক্ষে ঢুকে পেটালেন সিনিয়ররা"। thedailycampus.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি: বাস্তবে শিক্ষার্থীদের কতটা কাজে আসছে ছাত্র রাজনীতি?"। বিবিসি বাংলা। ২০১৯-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "9 held over Buet student Abrar murder"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "আবরারকে পেটানোর সিদ্ধান্ত গেস্টরুমে"। www.kalerkantho.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১১।
- ↑ "BUET student 'beaten dead' in dorm"। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "9 held over Buet student Abrar murder"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "BUET student Abrar's mother repeatedly phoned him that night"। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৩-০২-১৪)। "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্রীকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা নির্যাতন, নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেত্রী"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২১।
- ↑ "অবশেষে ক্ষমা চাইলেন ইবির অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা – DW – 23.02.2023"। dw.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২২।
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ৫ নেতা-কর্মীর সিট বাতিল – DW – 27.02.2023"। dw.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২২।
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব; কুষ্টিয়া (২০২৩-০২-১৪)। "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২২।
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন: হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন, ৬ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত"। ভিওএ। ২০২৩-০২-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৩-০২-১৪)। "'চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ? আমরা তোর কী করতে পারি জানিস?'"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২১।
- ↑ ওয়ারা, গওহার নঈম (২০২৩-০২-২৪)। "যৌন হয়রানিকে র্যাগিং বলবেন না"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৩-০২-১৬)। "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নির্যাতন: 'বর্বর', 'কুরুচিপূর্ণ' বলল মানবাধিকার কমিশন"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২১।
- ↑ "Eden College principal believes solutions to students' 'mistakes' is in 'counselling'"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ "'If I do not allot seats, which of your fathers will do?'"। Prothom Alo (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ আগস্ট ২০২২। ২৪ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ "'We were confined, tortured for six hours'"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ আগস্ট ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ TV, News24 (২০২৩-১১-২৬)। "শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদলের বর্বরতা যেন ভুলে না যাই"। news24bd.tv। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "Call to punish perpetrators"। The Daily Star। ২০০৯-০৭-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪।
- ↑ "When politics prevails over merit"। The Daily Star। ২০০৩-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪।
- ↑ "14th anniv of DU Shamsunnahar hall tragedy observed"। New Age। ২০২২-০৭-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৪।
- ↑ bdnews24.com। "'গেস্ট রুম নির্যাতন' নিয়ে বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে বিতর্ক"। বিডি নিউজ.২৪ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ প্রতিবেদক (২০২৩-০৬-২১)। "'গেস্টরুম নির্যাতনের' কথা বলায় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "ঢাবি সিনেটে 'গেস্টরুম নির্যাতন' শব্দযুগল এক্সপাঞ্জ, ২ শিক্ষকের ওয়াকআউট"। সমকাল। ২১ জুন ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ "ঢাবির সিনেটে 'গেস্টরুম নির্যাতন' এক্সপাঞ্জ, সভা বর্জন বিএনপিপন্থী ২ শিক্ষকের"। Dainikbangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৩-০৬-২২)। "'গেস্টরুম নির্যাতনের আলোচনা এক্সপাঞ্জ করা দখলদারত্বের প্রতি প্রশাসনিক সমর্থনের প্রমাণ'"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "ইবিতে গেস্টরুম নির্যাতন হলেই ব্যবস্থা"। www.campustimes.press। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "ব্যতিক্রম ঢাবির গেস্টরুম"। amarsangbad.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ প্রতিবেদক (২০২৩-১১-২২)। "'গেস্টরুমে' ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে টিএসসিতে অবস্থান, হলে তুললেন প্রাধ্যক্ষ"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "জাবিতে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ"। দৈনিক ইত্তেফাক। ১৭ জানুয়ারি ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।
- ↑ "ইবিতে নবীন ছাত্রকে ছাত্রলীগের নির্যাতন, শিবির নেতৃবৃন্দের নিন্দা"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "গেস্টরুম নির্যাতনবিরোধী আইন চায় ছাত্র অধিকার পরিষদ"। জাগো নিউজ.২৪। ১৫ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১০ অগাস্ট ২০২৪।