খসড়া:জিয়া উদ্দিন মাহমুদ

মন্তব্য: লেখাটিতে আরও নির্ভরযোগ্য উৎস প্রদানের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন।–TANBIRUZZAMAN (💬) ১৯:১৪, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ (ইউটিসি)

আমার নিবন্ধটির বিষয়বস্তু হচ্ছে একজন কবিয়ালের জীবনী

বীর মুক্তিযোদ্ধা কবিয়াল
জিয়া উদ্দিন মাহমুদ
কবিয়াল, বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম
কাজের মেয়াদ
১৯৮৮ – বর্তমান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1955-08-03) ৩ আগস্ট ১৯৫৫ (বয়স ৬৮)
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
দাম্পত্য সঙ্গীমুসাম্মাৎ ফিরোজা বেগম
পিতামাতামোঃ আলতাফ মিয়াঁ (পিতা) মুসাম্মাৎ জোহুরুন নিগা (মাতা)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীআনোয়ারা ডিগ্রী কলেজ
জীবিকাকবিয়াল

লোকজ সংস্কৃতির গর্বিত উত্তরাধিকার কবিয়াল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ (মাসুম) ৩রা আগস্ট ১৯৫৫ ইং. (১৯শে শ্রাবণ ১৩৬২ বঙ্গাব্দ ও ১৪ই জিলহজ্ব ১৩৭৪ হিজরী) তারিখে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাধীন শিলাইগড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোঃ আলতাফ মিয়াঁ ছিলেন একজন সরকারী চাকুরিজীবী। সিনিয়র স্টেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সে। মাতা মুসাম্মাৎ জোহুরুন নিগা ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আরবি-বাংলা শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় মায়ের হাতে। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক পাঠ নেন স্থানীয় পশ্চিম বারখাইন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং আনোয়ারা ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

কবিয়াল জিয়া উদ্দিন মাহমুদের বড় পরিচয় হল তিনি বাঙ্গালির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা[১] নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় প্রগতিশীল ছাত্র ইউনিয়নের (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) পতাকাতলে সমবেত হয়ে চলে যান দেশমাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে। সাহচর্যে আসেন কমান্ডার কমরেড শাহ আলম, সার্জেন্ট মাহি আলম, বাহউদ্দিন খালেক শাহজী, কাজী মোঃ ইদ্রিচ (হাজীগাঁও), শামসুল আলম মাস্টার (মালঘর), আবুল হাশেম মাস্টার (বারখাইন), শামসুজ্জামান হীরা (সাবেক চাকসু ভিপি) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধার। অংশ নেন বেশ কিছু গেরিলা অপারেশন ও সম্মুখ যুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে অসমাপ্ত পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরতে চাকুরী জীবনে পদার্পণ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সর্বশেষ চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড হতে অবসর গ্রহণ করেন। চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন ফায়ার এন্ড সেইফটি শাখায়, ফায়ার স্কোয়াড্রন লিডার হিসেবে। চাকুরীরত অবস্থায় দুর্ঘটনা মোকাবেলায় কর্তব্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশন কর্তৃক সম্মানিত হন।

ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান সম্পাদনা

 

কবিয়াল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ একজন ক্রীড়াবিদও ছিলেন। ফুটবল খেলা ছিল প্রিয় খেলা। চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের ফুটবল টিমসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন খেলোয়াড় হিসেবেই, খেলেছেন চিটাগং ডিভিশনেও। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও স্বীকৃতি আছে তাঁর। অর্জন ছিল দেশের হয়ে। ১৯৮৩ সালে ১৭ টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ২৬ মাইল আন্তর্জাতিক ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশের হয়ে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক স্বর্ণপদকে সম্মানিত হন।[২]

কবিয়াল সম্পাদনা

১৯৭৭ সালে বুরিশ্চর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রাউজান থানাধীন পথের হাটের নোয়াপাড়া নিবাসী কবিয়াল রাখাল মালাকারের সাথে কবিয়াল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই প্রথম লড়াইয়ে তিনি অসংখ্য দর্শক-শ্রোতাদের কাছে নন্দিত হয়ে ওঠেন অপ্রত্যাশিতভাবেই। এরপর থেকে তিনি চট্টগ্রামের বহু অনুষ্ঠানে কবিগান শুনিয়ে মাতিয়েছেন অসংখ্য দর্শক শ্রোতাকে। চাকুরীর পাশাপাশি কবিগানের ডালি নিয়ে ছুটে যেতেন গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে। লড়েছেন প্রখ্যাত সব কবিয়ালদের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কবিয়াল ফণী বড়ুয়া, সাধন আচার্য, রমেশ শীল পুত্র যজ্ঞেশ্বর শীল, বিভূতি রঞ্জন নাথ, মনীন্দ্র দাশ, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ ছৈয়দ, মোস্তাক আহমেদ উল্লেখযোগ্য। তিনি পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতেন কবিয়াল রমেশ শীল, নিরঞ্জন সাধু, ফণী বড়ুয়া, মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ প্রথিতযশা কবিয়ালদের।[৩]

 
 
 

বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে কবিয়াল হিসেবে নিবন্ধিত হন ১৯৮৮ সালে। ২০০৪ সালে নিবন্ধিত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে (বিটিভি চট্টগ্রাম)। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় ভরা নদীর বাঁকে অনুষ্ঠানসহ আরো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশনা করেছেন। চট্টগ্রাম কবিয়াল সমিতির সাঙ্গঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[৪][৫]

প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পাদনা

রচনা করেছেন “সময়ের সাথে” নামের একটি গ্রন্থ। সহস্রাধিক গানের রচনা করেছেন তিনি, যার প্রায় বেশীরভাগ প্রচারিত হয়েছে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্র হতে। আরেকটি গানের সঙ্কলন প্রকাশের পথে। একটি উল্লেখযোগ্য গানের অবতারণা এখানে করা যায়।

বীর চট্টলা নামে আছে যার সুনাম
সেই আমাদের পুণ্যভূমি বারো আউলিয়ার স্থান
সেই আমাদের জন্মভূমি জিলা চট্টগ্রাম।।

শেখ ফরিদ, সুলতান বায়েজিদ, শাহ আমানত
দেশ-বিদেশের মানুষ এসে করে জিয়ারত,
আহমদ উল্ল্যা মাইজভান্ডারী ভান্ডারের কান্ডার
গোলামুর রহমান, জিয়াউল হক, শফিউল বাশার,
আনোয়ারায় শাহ মোহছেন, পটিয়ায় শাহ চাঁন
ভক্তবৃন্দ জিয়ারতে পুরায় মনস্কাম।।

শাহ বদর জ্বালাই বাতি নাশিল আঁধার
সবার চোখে আজো খাড়া চেরাগীর পাহাড়,
স্বাধীনতার বাণী প্রচার কালুরঘাট বেতারে
দেশ-বিদেশের জাহাজ ভিড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে,
প্রাচ্যের রাণী বলে যার রয়েছে সুনাম
এই চট্টলায় জন্ম নিয়া ধন্য যে হলাম।।

আব্দুল করিম নামে ছিল সাহিত্য বিশারদ
আলাওল-রমেশ, এয়াকুব-ফণীর মুখরিত পদ,
কাজেম আলী, বিপ্লবী বীর মাস্টারদা সূর্যসেন
কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা, জে এম সেন,
মহিমা দাস, মতি ট্যাঁকরা, আরো বীরের জন্মস্থান
দেশের স্বার্থ রক্ষায় স্বীয় জীবন করেন দান।।

কুতুবদিয়ার সাগর বুকে আছে বাতিঘর
মিটি মিটি বাতি জ্বলে পরে নাবিকের নজর,
কক্সবাজার সোনাদিয়ায় রাঙ্গাবালীর চরে
লবণ, শুটকি, চিংড়ী মাছ পাই জনম ভরে,
কর্ণফুলীর শঙ্খ নদী লুসাই জন্মস্থান
কতো মাঝি সাম্পান চালায় গায় আঞ্চলিক গান।।

দেয়াং পাহাড় সৌন্দর্যে ঘেরা অপরূপ জানি
তার উপরে রহিয়াছে মেরিন একাডেমী,
আলো জ্বালায় চন্দ্র-সূর্য আরো জোনাকী
দোয়েল-কোয়েল, ডাকে ডাহুক কতো সুখ পাখি,
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় দেশের মান
বাণিজ্যিক রাজধানী কতো নয়নাভিরাম।।

রায় মোহন, রায় গোপাল ফণী, নিরঞ্জন সরকার
আগের যুগে তারাই ছিল কবির মনোয়ার,
আঞ্চলিক গানে নাসির, শ্যাম সুন্দর-শেফালী
লক্ষীপদ, এম এন আখতার, আব্দুল গফুর হালী,
করিম বখস, আস্কর আলী ভরিয়ে তুলতো প্রাণ
জারী-বাউল, পুঁথি-গাজী, পল্লী-কবিগান।।

ড. জামাল নজরুল ইসলাম ও বিনোদ বিহারী
ড. অনুপম সেন, এ কে খান, বদি আহমদ চৌধুরী,
আবুল ফজল, ওয়াজি উল্ল্যা, মুহাম্মাদ সগীর
আহমদ শরীফ, ইব্রাহিম ও আব্দুল হক বীর,
চিত্র জগতে শাবানার আছে অবদান
মডেলে নোবেল আর মৌটুসির স্থান।।

সংস্কৃতিতে আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিত, প্রবাল চৌধুরী
সন্দীপন আর পার্থ বড়ুয়ার নাই কোন জুড়ি,
ক্রীড়াতে তামিম ইকবাল, আকরাম খান
সর্বদিকে এই চট্টলার রয়েছে সুনাম,
দেশ বরেণ্য শিল্পী-কবি আরো বীরের জন্মস্থান
নানান ঐতিহ্যে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ব খ্যাতিমান।।

এই চট্টলার সিংহ-পুরুষ এম এ আজিজ ভাই
জহুর আহমেদ চৌধুরীর তুলনা নাই,
নুরুল ইসলাম বিএসসি, এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী
আরো আছেন চট্টলবীর আলহাজ আখতারুজ্জামান চৌধুরী,
কায়সার ভাই ছিলেন যিনি আতাউর রহমান খান
রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁদের রয়েছে সুনাম।।

বিদেশী পর্যটক যখন এই চট্টলায় আসে
আত্মহারা হয়ে যায় চাটগাঁর পরিবেশে,
পাহাড়, পর্বত, নদী প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম
খাগড়াছড়ি, আনোয়ারা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান,
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত মুগ্ধ করে প্রাণ
চট্টগ্রাম ভ্রমণে জিয়াউদ্দিন জানাই আহ্বান।।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান সম্পাদনা

স্কুল জীবন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ছিলেন কবিয়াল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু'র স্নেহভাজন ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন আনোয়ারা থানা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক হিসেবে। চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে চাকুরীকালীন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) এর নেতৃত্ব দেন দীর্ঘদিন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। কাজ করেন মেহনতি জনতার অধিকার আদায়ে।

সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান সম্পাদনা

বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হন। শিলাইগড়া জনকল্যাণ সমিতি, সম্যসাথী ক্লাব, শিলাইগড়া গণপাঠাগার, ঝি. বা. শি. উচ্চ বিদ্যালয়, বন্ধন শিল্পী গোষ্ঠী (রাঙ্গাদিয়া), চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এমপ্লয়ীজ ক্লাব (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) ইত্যাদি তাঁরই হাতে গড়া।

সংবর্ধনা সম্পাদনা

 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  2. উদ্দীন, জামাল (জুন ২০২১)। দেয়াঙ পরগণার ইতিহাস। বলাকা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৩৫৪–৩৫৫। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৯৪৯৪৫-০-৮ 
  3. শামসুল আরেফীন। "চট্টগ্রামের কবিয়াল ও কবিগান"দৈনিক আজাদী, প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ খৃঃ, পৃষ্ঠাঃ ০৩, কলামঃ ০৪ 
  4. এস. এম. নূর-উল আলম। "কবিয়াল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ"দৈনিক আজাদী, প্রকাশ: অক্টোবর ৩০, ২০০৫ খৃঃ 
  5. আলম, এস. এম. নূর-উল। চট্টগ্রামের কবিয়াল ও কবিগান। বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১২১। আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৬৮-৬ 
  6. জোনাকী ফাউন্ডেশন