ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস
চা গাছ বা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস (বৈজ্ঞানিক নাম: Camellia sinensis) এক ধরনের গাছ যার পাতা এবং কুঁড়ি বা মুকুল থেকে উৎপাদিত চা পানীয় আকারে ব্যবহৃত হয়। এ প্রজাতির গাছটি পুষ্পবৃক্ষের একটি গণ ক্যামেলিয়া এবং পরিবার থিয়াসিয়া থেকে উদ্ভূত। সাদা চা, সবুজ চা, ওলং, পু-য়ের চা এবং কালো চা - ইত্যাদি সকল ধরনের চা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস থেকে উৎপাদন করা হয়। বিভিন্নভাবে প্রস্তুতপ্রণালী পর্বে বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করায় চায়ের স্বাদ ভিন্নতর হয়। এছাড়াও, ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস থেকে কুকিচা উৎপাদন করা যায়। কিন্তু এতে পাতার তুলনায় গরম জলের তাপ বা বাষ্প এবং চিকন ডালা ব্যবহৃত হয়।
ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস | |
---|---|
ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
বিভাগ: | Magnoliophyta |
শ্রেণী: | Magnoliopsida |
বর্গ: | Ericales |
পরিবার: | Theaceae |
গণ: | Camellia |
প্রজাতি: | C. sinensis |
দ্বিপদী নাম | |
Camellia sinensis (এল.) কান্টজ | |
প্রতিশব্দ[১] | |
|
বিবরণ
সম্পাদনাচা গাছ গুল্ম অথবা ছোট বৃক্ষ। এদের কচি কাণ্ড এবং শাখা মসৃণ। পাতা একান্তর এবং বিডিম্বাকার বা বল্লমাকার। চায়ের ফুলের রং সাদা। চা গাছে জুন থেকে জানুয়ারি মাসে ফুল ও ফল ধরে।
চাষাবাদ
সম্পাদনাক্যামেলিয়া সাইনেনসিস চিরহরিৎ প্রজাতির বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃত।[২] প্রধানত কান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের উদ্ভিদবিশেষ। যে সকল স্থানে কমপক্ষে ১২৭ সেন্টিমিটার বা ৫০ ইঞ্চি পরিমাণে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় সেখানে চা চাষ করা যায়। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়িয়া বা উচ্চ ঢালু জমি চা চাষের জন্য সবিশেষ উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের বন্দোবস্ত থাকলে উচ্চ সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা সম্ভবপর। হিউমাস সারযুক্ত এবং লৌহমিশ্রিত দো-আঁশ মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। এজন্য মৌসুমী ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চা চাষের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও, কয়েক প্রকারের চা গাছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে উৎপাদন করা হচ্ছে।[৩] সঙ্করায়ণ ঘটিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউকে মেইনল্যান্ডের পেমব্রোকশায়ায়,[৪] কর্নওয়ালে চাষাবাদ করা হচ্ছে।[৫] উন্নতমানের অনেক চা গাছ ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় উৎপাদিত হয়। তবে তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় কিন্তু তা অধিক সুগন্ধ বহন করে।[৬]
প্রথম অবস্থায় পাহাড়ের ঢালু জমি পরিষ্কার করা হয়। এর চারা আলাদা বীজতলায় তৈরী করা হয়। চারাগুলো যখন ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়, তখন সেগুলোকে চা-বাগানে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়। সাধারণতঃ দেড় মিটার পরপর চারাগুলোকে রোপণ করা হয়ে থাকে। এরপর গাছগুলোকে বৃদ্ধির জন্য যথামাত্রায় সার প্রয়োগ ও পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একটি চা গাছ গড়পড়তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের উপযোগী থাকে। তারপর পুনরায় নতুন গাছ রোপণ করতে হয়।
প্রকারভেদ
সম্পাদনাযদি চা গাছ ছাঁটা না হয়, তাহলে এটি বড় ধরনের বৃক্ষে পরিণত হয়ে যায়। এ গাছ প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সেজন্যে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার লক্ষ্যে পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুটের অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘণঝোঁপে পরিণত হয়।
বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষাবাদের লক্ষ্যে দুই প্রকারের চা গাছ উৎপাদন করা হয়। চীনের সি. সাইনেনসিস সাইনেনসিস জাতীয় চা গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে ছোট ছোট পাতা রয়েছে। পাতার সংখ্যাও অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। অপরদিকে আসামের সি. সাইনেনসিস আসামিকা জাতীয় গাছ প্রধানত কালো চায়ের জন্যে উৎপাদন করা হয়। এজাতীয় চা গাছ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অধিক চাষ করা হয়। গাছগুলো বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। বিধায়, এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী।
স্বাস্থ্যে প্রভাব
সম্পাদনাচা গাছে পাতা সনাতনী চৈনিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর প্রয়োগ সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। হাঁপানী, রক্তনালীতে সংশ্লিষ্ট রোগ, হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনের সাথে সংশ্লিষ্ট রোগ দূরীকরণে এর ভূমিকা রয়েছে। সবুজ চায়ের পাতা দিয়ে তৈরী চা শ্বাস-প্রশ্বাসের বাঁধা দূরীকরণে সহায়ক। গাছের নির্যাস ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Min, Tianlu; Bartholomew, Bruce। "18. Theaceae"। Flora of China। 12।
- ↑ "Camellia Sinensis". Purdue University Center for New Crops and Plants Products. Retrieved 2010-10-26
- ↑ ""Tea" (PDF). The Compendium of Washington Agriculture. Washington State Commission on Pesticide Registration. 2010. Retrieved April 26, 2011" (পিডিএফ)। ১০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১২।
- ↑ Turner, Robin (October 3, 2009). "Duo plant tea in Wales". Wales Online. Retrieved April 26, 2011
- ↑ "Tea", Gardening, Telegraph Online, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৫, ৭ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২১ .
- ↑ "Where Tea Grows"। teahorse.co.uk। ২০১২-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "Camellia sinensis"। ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬।
- Camellia sinensis from Purdue University
- Plant Cultures: botany and history of the tea plant ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ আগস্ট ২০০৮ তারিখে
- Antibacterial Activity of Green Tea Extracts against Streptococcus anginosus group CI.NII.AC.jp
- Jac.OxfordJournals.org, The effect of a component of tea (Camellia sinensis) on methicillin resistance in Staphylococcus.
- Suns.Ars-Grin.gov, List of Chemicals in Camellia sinensis (Dr. Duke's Databases)