কুমার রায় (২ মার্চ ১৯২৬ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০) [][] ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি নট, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক।[] ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বহুরূপী নাট্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন। [] ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে বিজন ভট্টাচার্য রচিত এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শম্ভু মিত্র প্রযোজিত ও পরিচালিত ক্লাসিক তথা কালজয়ী নাটক নবান্ন-এর পুনঃনির্মাণে নির্দেশনা করেন । [] তিনি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই হতে আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতি ছিলেন। কুমার রায় কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের অধ্যাপক এবং শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন।[]

কুমার রায়
জন্ম(১৯২৬-০৩-০২)২ মার্চ ১৯২৬
দিনাজপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০(2010-02-28) (বয়স ৮৩)
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামকুমারেন্দ্র নারায়ণ রায়
পেশাঅভিনেতা নাট্যনির্দেশক
পরিচিতির কারণনাট্যনির্দেশনা
উল্লেখযোগ্য কর্ম
নবান্ন নাটকের নির্দেশনা
দাম্পত্য সঙ্গীলতা মিত্র (বি.১৯৬১)

কুমার রায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের দিনাজপুরের এক জমিদার পরিবারে। পিতা দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ রায় এবং মাতা কৃষ্ণতোষিনী দেবী। কুমারের পিতৃদত্ত নাম ছিল কুমারেন্দ্র নারায়ণ। তাদের জমিদার পরিবারে ছিল শিল্প ও জ্ঞানচর্চ্চার অনুকূল পরিবেশ। স্বভাবতই বাড়িতে অনুষ্ঠিত নাটকে নিয়মিতই অংশগ্রহণ করতেন। ছাত্রাবস্থাতে 'সিরাজদ্দৌলা' নাটকে ওয়াট্স-এর চরিত্রে এবং 'মহারাজা নন্দকুমার' নাটকে নন্দকুমার-এর চরিত্রে অভিনয় করেন। তাছাড়া তিনি চিত্রাঙ্কণেও দক্ষ হয়ে ওঠেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কৈশোরে কারাবরণ করেন এবং কারান্তরালে থেকেও ম্যাট্রিক পাশ করেন। মুক্তির পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কলকাতার কলেজ ত্যাগ করে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। এখানে সেসময় তার সহপাঠী ছিলেন ঋত্বিক ঘটক। ওই সময়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রাজা', 'পরিত্রাণ', 'ফাল্গুনী' নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। বঙ্গব্সী কলেজে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞানে স্নাতক হন। পরে প্রাইভেটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঋত্বিক ঘটকের সূত্রেই বহুরূপী থিয়েটারে যোগ দেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তুলসী লাহিড়ী রচিত পথিক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৫০-র দশকে খাদ্য বিভাগে পরিদর্শনের পদে যোগ দেন, কিন্তু বরাকরে বদলি হলে, নাটকের জন্য সেই চাকরি ছেড়ে দেন। অপেক্ষাকৃত কম বেতনের চাকরি নেন কলকাতার স্মল কেসেস্ কোর্টে। বহুরূপী নাট্যদলে 'দশচক্র', 'ধর্মঘট', 'রক্তকরবী', 'স্বর্গীয় প্রহসন', 'ডাকঘর' প্রভৃতি নানা নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে একাধিক নাটক পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিভাগে লেকচার হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শম্ভু মিত্র বহুরূপী নাট্যদল ত্যাগ করলে কুমার রায় নাট্যনির্দেশক হন এবং আমৃত্যু সেই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিজন ভট্টাচার্য রচিত এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শম্ভু মিত্র প্রযোজিত ও পরিচালিত কালজয়ী নাটক নবান্ন তিনি পুনঃনির্মাণ করেন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই তিনি পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতি হন এবং আমৃত্যু ওই পদে ছিলেন। অভিনয় ছাড়াও কুমার রায় নাট্যচর্চার উপর নানা গ্রন্থ এবং বহুরূপী নাট্যদলের পত্রিকা "বহুরূপী"-র সম্পাদনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-

রচিত গ্রন্থসমূহ-
  • তিলোত্তমা শিল্প (১৯৮০)
  • নাট্য ভবিষ্যত ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৭)
  • ঋষি-নট মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য (১৯৮৯)
  • '"নট ও নাট্যকার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী (১৯৯২)
  • শম্ভু মিত্র: নির্মাণ ও সৃজন (১৯৯৮)
  • মোকাম কলকাতা: নাট্যরঙ্গ (১৯৯৮)
  • কবির অভিঘাত ও কবির নাটক (১৯৯৯)
  • রবীন্দ্র-নাটক: আলোকিত উদ্ভাবন (২০০৩)
  • অভিনয়ের নানা আঁচড় (২০০৫)
সম্পাদিত গ্রন্থ-
  • বাংলা একাঙ্ক নাটক সংকলন (২০০১)

নাটকসমূহ

সম্পাদনা

অভিনীত নাটক

সম্পাদনা
  • রক্ত করবী
  • পুতুলখেলা
  • বিসর্জন রাজা
  • মুক্তধারা
  • পাগলা ঘোড়া
  • মুদ্রারাক্ষস
  • বাকী ইতিহাস
  • চোপ আদালত চলছে
  • মৃচ্ছকটিক
  • গ্যালিলিও
  • রাজ দর্শন
  • ধর্মঅধর্ম
  • আগুনের পাখি
  • মালিনী
  • নবান্ন
  • নিন্দাপাঁকে
  • এক দিন এক রাত্রি

চলচ্চিত্রসমূহ

সম্পাদনা

মঞ্চাভিনয়ের পাশাপাশি কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

শম্ভু মিত্র ও অমিত মৈত্র পরিচালিত-

একদিন রাত্রে

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত-

তিন কন্যা (মণিহারা পর্ব) (১৯৬১)

তপন সিংহ পরিচালিত-

সাগিনা মাহাতো (১৯৭০)

এখনই (১৯৭১)

হারমোনিয়াম (১৯৭৬)

পুরস্কার

সম্পাদনা

কুমার রায় অভিনয়ের জন্য নানা সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের ভিজিটিং ফেলো হয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৯৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Bengali theatre personality Kumar Roy dead"Deccan Herald। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১২ 
  3. "Kumar Roy's death leaves a void"The Statesman। ১ মার্চ ২০১০। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১২ 
  4. "Noted Bengali theatre personality Kumar Roy dies of heart ailment"The Times of India। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০। ৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১২ 
  5. Aparna Bhargava Dharwadker (১ নভেম্বর ২০০৫)। Theatres of Independence: Drama, Theory, and Urban Performance in India since 1947। University of Iowa Press। পৃষ্ঠা 407–। আইএসবিএন 978-0-87745-961-3। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১২ 
  6. "Kumar Roy biography"। Bohurupee। ২ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১২ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা