তুলসী লাহিড়ী (৭ এপ্রিল ১৮৯৭ - ২২ জুন ১৯৫৯) বিখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা, গ্রামোফোন কোম্পানির সুরকার, বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার। নাটক রচনা ও অভিনয় দিয়ে নাট্য আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিলেন।[১]

জন্ম ও শৈশবসম্পাদনা

তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার রংপুর জেলা, বর্তমান গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামে।[২] তার পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ লাহিড়ী। পিতা ছিলেন রংপুরের ডিমলা এস্টেটের ম্যানেজার। তার জন্ম জমিদার পরিবারে।[১]

শিক্ষা ও কর্মজীবনসম্পাদনা

বি. এ. ও বি. এল. পাস করে প্রথমে রংপুরে ও পরে কলকাতার আলিপুর কোর্টে ওকালতি। তার রচিত দুইটি গান জমিরুদ্দিন খাঁ রেকর্ডিং করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ।[৩] কালে হিজ মাস্টার্স ভয়েসমেগাফোন গ্রামোফোন কোম্পানিতে সংগীত পরিচালক পদে নিযুক্তি লাভ। শুরু হলো অজস্র গান রচনা আর সুর সংযোজন। আইনব্যবসা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনয়ে যোগদান। নির্বাক যুগ থেকে শুরু করে বাংলা চলচ্চিত্রের সংগে কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠতা ছিলো তার। নাট্যরচনা, মঞ্চাভিনয় এবং পাশাপাশি চিত্রপরিচালক ও অভিনেতারূপে তার অভিজ্ঞতা ছিলো ব্যাপক, সিদ্ধি ছিলো ঈর্ষাজনক।[৪] মার্ক্সের দৃষ্টি নিয়ে নাট্যরচনায় সার্থকতা লাভ। পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রাম বাংলার দরিদ্র মানুষের অভাব-অনটন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তাদের উপর ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে "দুঃখীর ইমাম" (১৯৪৭) ও "ছেঁড়াতার" (১৯৫০) নাটক রচনা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন। "মায়ের দাবি" (১৯৪১), "পথিক" (১৯৫১), "লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার" (১৯৫৯) তার অপরাপর নাটক। উত্তর বাংলার কৃষক সমাজের বাস্তব জীবনচিত্র এসব নাটকের উপজীব্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে নাটক রচনায় আত্মনিয়োগ। কলকাতায় মৃত্যু।[৩] গানের জগতে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল নজরুল ইসলামের সংগে। তার লেখা বহু গান এখন নজরুলগীতি বলে প্রচলিত আছে। সহস্রাধিক জনপ্রিয় বাংলা গানের এই গীতকারের কোনো গীতসংকলন নেই।[৪] নাটকের নাম-

  • মায়ের দাবি (১৯৪১),
  • পথিক (১৯৫১),
  • লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার (১৯৫৯),
  • মণিকাঞ্চন,
  • মায়া-কাজল,
  • চোরাবালি,
  • সর্বহারা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২৭৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "তুলসী লাহিড়ী"। ১১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৪ 
  3. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ঢাকা; এপ্রিল, ২০০৩; পৃষ্ঠা- ১৮৬-৮৭।
  4. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত আধুনিক বাংলা গান; প্যাপিরাস, কলকাতা; বৈশাখ, ১৩৯৪; পৃষ্ঠা- ১৭০।

বহিঃসংযোগসম্পাদনা