কিরণ চাঁদ দরবেশ (১৮৭৮ - ০৮ জুন ১৯৪৬) ছিলেন স্বদেশী যুগের রাজনৈতিক কর্মী, সাহিত্য সাধক, গীতিকার এবং সন্যাসী। বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর তিনি শিষ্য ছিলেন। তার কাব্যগ্রন্থ ‘মন্দির’ এক সময়ে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. ক্লাসের পাঠ্য ছিলো। তার রচিত ২০টি গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলোঃ ‘রেবা’, ‘গানের খাতা’, ‘সঙ্গীত সুধা’, কুলসঙ্গীত’, ‘জপসী’, ‘সুখমণি বৃন্দাবন শতক’ ইত্যাদি।[১]

কিরণ চাঁদ দরবেশ
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মহিন্দু
দর্শনব্রাহ্মসমাজ, নব্যবৈষ্ণবধর্ম, সন্ন্যাসী সংঘ গঠন, আর্ত-পীড়িত মানুষের ত্রাণ, সমাজ-সংস্কার, তীর্থ সংস্কার, ধর্মচক্র ও কর্মচক্রের প্রবর্তন প্রভৃতি
ঊর্ধ্বতন পদ
গুরুবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী
সম্মানদরবেশজী

জন্ম ও শিক্ষা সম্পাদনা

কিরণ চাঁদ দরবেশ ১১ আগস্ট ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানাধীন খালিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত চট্টোপাধ্যায় পরিবারে চতুর্দশী উৎসবে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কূলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম রাশময়ী দেবী। পিতামহ শ্রী দুর্গাচরণ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। তিনি তার জীবদ্দশায় কাশী, পুরীকলকাতার মত ধর্মীয়স্থানে জমিজমা ক্রয় করেছিলেন।

শৈশবে তার পিতা তার জন্য গৃহশিক্ষক রেখে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেন। পরে গ্রামের স্কুলে ভর্তি হন। সেই সময় কবি মহাভারত সহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ শুনতে ভলবাসতেন। কবির মাত্র এগার বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ ঘটে। ১৮৯২ সালে ( পয়লা বৈশাখ ১২৯৯ ) কবির উপনয়ন হয়। এরপর তার অগ্রজ শ্রীশচন্দ্র, তাকে ঢাকার জুবিলি স্কুলে ভর্তি করে দেন ও হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখানে তিনি ব্রাহ্মসমাজের আদর্শের অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের সভায় উপস্থিত থাকতে শুরু করেন। ঢাকায় তার বেশি দিন থাকা হয় নি। বাড়ী ফিরে তিনি আর্য মিশন ইন্সটিটিউশন স্কুলে ভর্তি হন যেখানে ভগবত গীতা পাঠ আবশ্যিক ছিল। তিনি গীতা কণ্ঠস্থ করে ফেলেছিলেন এবং একই সাথে নৃত্য-গীত-বাদ্যাদিতে অংশ গ্রহণ করতে থাকেন। ১৮৯৪ সালে তিনি বরিশালের ব‌্রজমোহন বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি Little brother of the poor নামের একটি সমাজসেবা সংস্থার সদস্য হন এবং বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যুক্ত থাকেন। এই সময় তিনি ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অশ্বিনিকুমার দত্ত, গোরাচাঁদ, চন্দ্রনাথ দাশ (ইনিই সম্ভবত কবি কুসুমকুমারী দাশের পিতা এবং কবি জীবনানন্দ দাশের মাতামহ) প্রমুখদের সংস্পর্শে আসেন। বন্ধু মাখনলালের অনুপ্রেরণায় কিরনচাঁদ শেষমেশ গোঁসাইজীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন বৃন্দাবনে গোঁসাইজীর আশ্রমে, ১৭ই আষাঢ় ১৩০২ (১৮৯৫) তারিখে। দীক্ষা নেবার সময় তার বয়স ছিল ১৭। শুরু হয় তার আধ্যাত্মিক জীবন।[২]

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

১৮৯৭ সালে তিনি বিবাহ করেন বন্ধু মাখনলালের ভগিনী সরোজবালা দেবীকে। ১৯০৩ সালে গুরুজীর  উপদেশে তিনি ফটোগ্রাফি এবং জীবনবীমার ব্যবসায় শুরু করেন, বরিশালে। ভালো আয় হতে লাগলো এবং তিনি দান-ধ্যানও করতে লাগলেন।[২]

সন্ন্যাস সম্পাদনা

গুরুর আজ্ঞামত ২৩শে কার্তিক ১৩১৯ তারিখে ( নভেম্বর ১৯১২ ), ১২ বছরের বিবাহিত জীবন শেষ করে, স্ত্রী সরোজবালা দেবীর জন্য বিষয়-সম্পত্তির ব্যবস্থাপত্র সাঙ্গ করে, তিনি বারাণসীর সঙ্গমে শ্রী প্রবুদ্ধানন্দ সরস্বতীর কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তার নতুন নাম হয় কেশরানন্দ সরস্বতী কিন্তু তিনি কিরণচাঁদ দরবেশ নামেই খ্যাত হন। সন্ন্যাস গ্রহণ করার পরে তিনি কাশীধামে থেকে যান ভাড়া বাড়িতে।[২]

আশ্রম স্থাপন সম্পাদনা

তার শিষ্যরা কাশীতে বিজয়কৃষ্ণ মঠের পত্তন করেন। মেদিনীপুর ও শরিফাবাদেও শাখা আশ্রম খোলা হয়।[২]

তীর্থ সংস্কার সম্পাদনা

সাহিত্য সাধনা সম্পাদনা

কিরণচাঁদ খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারতেন। সেইজন্য তার গুরু গোঁসাইজী তাকে প্রবোধচাঁদের লেখা "শ্রীবৃন্দাবন শতক" কাব্যগ্রন্থটি, বাংলায় লিখতে বললেন। গুরুজীর তিরোধানের বেদনাতেও তিনি কিছু কবিতা লিখেছিলেন। ১৯২২ সালে, কলকাতার ৮০নং বিডন স্ট্রীট থেকে প্রকাশিত করেন তার “মন্দির” কাব্যগ্রন্থ। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন শ্রী রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী[২]

তিনি 'মন্দির' নামক মাসিক পত্রিকাটি শুরু ও পাঁচ বছর ধরে সম্পাদনাও করেন। এখনও শ্রী শ্রী বিজৈকৃষ্ণ আশ্রম, রামচন্দ্রপুর, পুরুলিয়া (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে।[৩]

বিপ্লবীদের সাথে সম্পর্ক সম্পাদনা

সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

১৩৫৩ বঙ্গাব্দের ২৫ জ্যেষ্ঠ (১৯৪৬খ্রি:) বারাণসীতে অবস্থানকালে দেহত্যাগ করেন।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "কিরণ চাঁদ দরবেশ(১৮৭৮-১৯৪৬) - Information About Greater Faridpur"greaterfaridpur.info। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Sadguru Bijoy Krishna Goswami"www.sadgurubijoykrishna.com। ২০১৯-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৩ 
  3. "www.Gosaiji.com - Life of Darveshji"www.gosaiji.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৩