রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (আগস্ট ২২, ১৮৬৪ - জুন ৬, ১৯১৯)[১] বাংলা ভাষার একজন বিজ্ঞান লেখক। তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পূর্বে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। উপযুক্ত বইয়ের অভাবই ছিল এর মূল কারণ। তিনি প্রচুর গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেন এবং বক্তৃতার মাধ্যমে বাঙালিদেরকে বিজ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর কোনো মৌলিক গবেষণা বা আবিষ্কার নেই, তবে তিনি মূলত লেখনীর মাধ্যমেই একজন বিজ্ঞানী ও শাস্ত্রজ্ঞের মর্যাদা লাভ করেছেন। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ছাড়াও তিনি দর্শন ও সংস্কৃত শাস্ত্রের দুর্বোধ্য বিষয়গুলো সহজ বাংলায় পাঠকের উপযোগী করে তুলে ধরেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অধ্যাপক রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী | |
---|---|
পেশা | অধ্যাপনা, লেখক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
ধরন | জনপ্রিয় বিজ্ঞান |
বিষয় | যুক্তিবাদী রচনা |
পরিবার ও প্রাতিস্বিক জীবন
সম্পাদনারামেন্দ্রসুন্দর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার জেমো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম গোবিন্দসুন্দর এবং মা চন্দ্রকামিনী। বাংলা ভাষার চর্চার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন রামেন্দ্রসুন্দর, কিন্তু জন্মসূত্রে তিনি বাঙালি ছিলেন না। তার পূর্বপুরুষরা বন্ধুগল গোত্রের জিঝৌতিয়া ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা রামেন্দ্রসুন্দরের জন্মের দু-শ বছর আগে থেকেই মুর্শিদাবাদে বসবাস করতো। এর ফলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের সকলের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায় এবং এক অর্থে তারা বাঙালিদের মতই বাংলার চর্চা করতে শিখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সূচনার আগেই ১৮৭৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে জেমো রাজপরিবারের নরেন্দ্র নারায়ণের কনিষ্ঠ কন্যা ইন্দুপ্রভা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনা১৮৮২ সালে কান্দি ইংলিশ স্কুল থেকে প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হন। বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজের একজন প্রাক্তনী এই রামেন্দ্র।[৩] ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। একই কলেজ থেকে ১৮৮৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান উভয় সাম্মানিক স্নাতক পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৮৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরেও প্রথম স্থান অর্জন করে নেন ত্রিবেদী; ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি পান।[২][১]
শিক্ষকজীবন
সম্পাদনা১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে রিপন কলেজে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হন। পরে প্রথমে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী অধ্যক্ষ এবং শেষে স্থায়ী অধ্যক্ষ হন। ১৮৯২ সালে রিপন কলেজেই পদার্থবিদ্যা ও রসায়নশাস্ত্রের অস্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তী ছয় মাসে তিনি স্থায়ী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯০৩ সালে তিনি এই কলেজের স্থায়ী অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন, আমরণ সে পদেই বহাল ছিলেন।[১]
বিজ্ঞানসাহিত্য
সম্পাদনাতিনি বাংলা সংস্কৃতির ধারা বজায় রাখার জন্যই ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গঠন করেন যা তখনকার সর্বোচ্চ গুণমানী প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনি ১৯০৪ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন।[৪]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সম্পর্কে বলেন:
বাংলার লেখকমণ্ডলীর মধ্যে সাধারণত লিপিনৈপুণ্যের অভাব দেখা যায় না; কিন্তু স্বাধীন মননশক্তির সাহস ও ঐশ্বর্য অত্যন্ত বিরল। মনন ও রচনারীতি সম্বন্ধে রামেন্দ্রসুন্দরের দুর্লভ স্বাতন্ত্র্য ছিল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁহার সেই খ্যাতি বিলুপ্ত হইবে না। বিদ্যা তাঁহার ছিল প্রভূত, কিন্তু সেই বিদ্যা তাঁহার মনকে চাপা দিতে পারে নাই। তিনি যাহা বলিতেন, তাহার বিষয়বিচারে অথবা তাহার লেখন-প্রণালীতে অন্য কাহারো অনুবৃত্তি ছিল না।[৫]
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি
সম্পাদনামৃত্যু
সম্পাদনা১৯১৯ সালের ৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "Distinguished-Alumni|CU"। www.caluniv.ac.in। ২০২০-১১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Adorn Publication"। adornbooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।
- ↑ "Surendranath Law College ::PRESIDENT DESK"। snlawcollege.ac.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।
- ↑ "পরিষদ সম্পর্কে – বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।
- ↑ "Rabindranath Tagore - Essays - ব্যক্তিপ্রসঙ্গ - রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (ramendrasundar thibedi)"। www.tagoreweb.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।
- ↑ "Adorn Publication"। adornbooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।
- ↑ "Shishu Sahitya Samsad Private Limited"। samsadbook.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০১।