কামিল পরীক্ষা
কামিল মাদ্রাসা বা কামিল পরীক্ষা (আরবি: اختبار كامل) বা টাইটেল পরীক্ষা হল বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি পরীক্ষা।[১] নীতিমালা অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান বিবেচনা করা হয়। ১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ সরকারের কলকাতা কনফারেন্সের মাধ্যমে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসাকে তিন বছরের মেয়াদী তৎকালীন টাইটেল ক্লাস (স্নাতকোত্তর) খোলার অনুমতি দেয়। ১৯৪৭ সালের পরে বাংলাদেশে এই নামটি ধীরে ধীরে কামিল ক্লাস বা কামিল পরীক্ষা নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।[২] বর্তমানে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের কামিল মাদ্রাসার সংখ্যা ২১৫টা।[৩] বাংলাদেশের সকল কামিল ও ফাজিল মাদ্রাসা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।[৪]
ইতিহাসসম্পাদনা
১৭৮০ সালে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া প্রতিষ্ঠা হলেও এর সর্বোচ্চ ডিগ্রি কামিল পরীক্ষা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে, সেই সময়ে টাইটেল ক্লাস নামে পরিচিত ছিলো, যা বর্তমানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান।
১৯২৭ সালে শামসুল হুদা কমিটি প্রস্তাবনায় বাংলা ও আসাম সহ সকল ওল্ড স্কিম সিনিয়র মাদ্রাসাগুলোর অনন্য পরীক্ষাসহ ফখরুল মুহাদ্দিসীন (বর্তমানে কামিল পরীক্ষা) প্রথমবারের মত কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তখন কামিলের সিলেবাসে সিহাহ সিত্তাহের ৬টি হাদিসের বই, উসুলুল হাদিস, তাফসীরুল মাজমুউল বয়ান, তাফসীরুল বায়যাবী, তাফসীরুল কাশশাফ, তাফসীরুল কবীর,আল ফিকহ, উসুলুল ফিকহ, বালাগাত-মানতিকসহ আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ পাঠসুচি অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ১৯৭৮ সালে সিনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কমিটি কমিটির প্রস্তাবনায় ১৯৮৪ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য পাঠ্যসূচীর পরিবর্তন আনা হয় এবং কামিল স্তরকে ২ বছর মেয়াদী করা হয়।
পরিসংখ্যানসম্পাদনা
২০০২ সালে বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী কামিল ছিলো ১৭২টি, এবং ফাজিল মাদ্রাসা ছিলো ১,০৫০টি। ২০০৭ সালে সংখ্যা বেড়ে কামিল মাদ্রাসার সংখ্যা ছিলো ১৯৮টি।[১]
সাল | মাদ্রাসা সংখ্যা | শিক্ষার্থী সংখ্যা | অধিভুক্তি | মন্তব্য |
---|---|---|---|---|
১৯০৮ | আনু.৫ | ৩০ জন | কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা | |
১৯৪৭ | আনু.৫০ | ২০০ জন | ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা | ৩টি সরকারি মাদ্রাসা |
১৯৭১ | ১১০ | ৫০০ জন | ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড | |
২০০২ | ১৭২ | ৭০০ জন | বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড | |
২০০৭ | ১৯৮ | ৮০০ জন | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ | ২০১০ সালে ৩১টি মাদ্রাসায় স্নাতক কোর্স চালু |
২০১৯ | ২১৫ | ৯৯৫ জন | ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় | ২০১৬ সালে আরো ২১টি মাদ্রাসায় স্নাতক কোর্স চালু |
অধিভুক্তিসম্পাদনা
বাংলাদেশের কামিল মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীরাই কামিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। ২০০৬ সালে কামিল মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিকরন ও সাধারণ শিক্ষার সমমান দেওয়ার জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৬] সেইসময়কার ১৯৮টি কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।[৭] ২০১০ সালে দেশের ৩১টি উল্লেখযোগ্য মাদ্রাসাকে স্নাতক সমমান কোর্স চালু করে ফাজিল পরীক্ষাকে স্নাতক ও কামিল পরীক্ষাকে করে স্নাতকোত্তর মান প্রদান করা হয়।[৮] ২০১৬ সালে আলিয়া মাদ্রাসাকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত করা হয়, এবং আরো ২১টি মাদ্রাসায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু করা হয়।[৮] বর্তমানে বাংলাদেশের ৫২টি কামিল মাদ্রাসায় পূর্ণ স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।[৪]
উল্লেখযোগ্য কামিল মাদ্রাসাসম্পাদনা
বাংলাদেশে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি কামিল মাদ্রাসা রয়েছে, এছাড়াও সবগুলো জেলায় কামিল মাদ্রাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু কামিল মাদ্রাসা হল:
- ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা
- তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা
- জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা
- সরকারি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা
- খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা
- রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসা
- কুওয়াতুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসা
- ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা
- দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা
- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা
- মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা রাজশাহী
- ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা
- পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা
- ধাপ সাতগাড়া বায়তুল মুকাররম মডেল কামিল মাদরাসা
- পটুয়াখালী ওয়ায়েজিয়া কামিল মাদ্রাসা
- শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা
- টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা
- নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা
- নাঙ্গুলী নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ গ "মাদ্রাসা - বাংলাপিডিয়া"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ "কামিল স্নাতকোত্তর প্রথম পর্বে ভর্তি শুরু আজ - বাংলাদেশ প্রতিদিন"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২০২০-০৯-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ ক খ "ফাজিল ও কামিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ"। জাগো নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ ক খ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "আরও ২১ মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ "আলিয়া মাদরাসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ"। লেখাপড়া২৪.নেট। ২০২১-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৮০, ৫১। অন্তর্বর্তীকালীন বিশেষ বিধান"। bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ "মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যাশা"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ ক খ "মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবনা - কালের কণ্ঠ"। কালেরকন্ঠ। ২০১৬-১০-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।