দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা (অফিশিয়ালি মাদরাসা-ই-দারুননাজাত) ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ডেমরা থানাধীন ডি.এন.ডি. প্রজেক্টের মধ্যে সারুলিয়া বাজার ও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে শুকুরশী গোরস্থান সংলগ্ন প্রায় তিন একর জমির উপর দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার অবস্থান।[১][২] জেডিসি, দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় এই মাদরাসা সারা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফলাফল করে থাকে।[৩][৪] বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭ এ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছিলো এই মাদরাসাটি। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদরাসাটি সারা দেশের মধ্যে সুনাম অর্জন করেছে।[১][৫][৬]
 | |
| ধরন | এমপিওভুক্ত |
|---|---|
| স্থাপিত | ১ জানুয়ারি, ১৯৯০ |
| প্রতিষ্ঠাতা | আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহ্হার সিদ্দীকি |
| অধিভুক্তি | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৬-২০১৬) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান) |
| অধ্যক্ষ | আ.খ.ম আবুবকর সিদ্দীক |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ১৫৮ জন |
| শিক্ষার্থী | ১০,০০০ (প্রায়) |
| ঠিকানা | শুকুরশী গোরস্থান সংলগ্ন, পূর্ব বক্সনগর, সারুলিয়া-১৩৬১ ডেমরা থানা , , বাংলাদেশ |
| ওয়েবসাইট | dskm |
ইতিহাস
১৯৮৮ সালে করিম জুট মিলস লি. এর ইমাম মাওলানা রুহুল আমীনের নেতৃত্বে এলাকার ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কা শরীফ গমন করেন এবং হজ্বব্রত পালন শেষে কাবা শরীফের চত্বরে বসে শুকুরশী গোরস্থানের পাশে একটি দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অতঃপর পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দীকি আল কুরাইশীর নাতি আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহ্হার সিদ্দীকির নামের সাথে মিলিয়ে নামকরণ করে দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই থেকে শুরু হয় এ মাদরাসার পথ চলা।[৭]
১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ডেমরার সারুলিয়ায় ইবতেদায়ী শাখা দিয়ে যাত্রা শুরু করে দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা। পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসাটিতে দাখিল, আলিম ও ফাজিল শ্রেণী উন্মুক্ত হতে থাকে এবং অবশেষে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে মাদরাসাটি সর্বোচ্চ ডিগ্রি কামিল পর্যায়ের অনুমোদন পায়, এবং কামিল মাদরাসায় পরিণত হয়।[৮] দাখিল ও আলিম স্তরে বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ রয়েছে মাদ্রাসাটিতে। ২০০৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অধীনে চার বছর মেয়াদি ফাযিল অনার্স কোর্স চালু হয়। এবং ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে মাদরাসাটি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম
দারুননাজাত মাদ্রাসায় হাফেজ ছাত্রদের সুবিধার জন্য তাখসীসি জামাত। যারা কুরআন ও হাদিসের উপর আলেম হতে চান তাদের জন্য রয়েছে আলাদা নজর, সম্পূর্ণ দরসে নেজামি পদ্ধতিতে নবম শ্রেণি থেকে বিশেষভাবে পাঠদান করা হয়। আলিম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ মিশকাতুল মাসাবিহ খতমের সুযোগ, এছাড়া ফাযিল ও কামিল শ্রেণিতে তাফসিরে জালালাইন, খতমে বুখারিসহ বিভিন্ন বিখ্যাত হাদিস ও তাফসির গ্রন্থ বাধ্যতামূলকভাবে খতম করা হয়।
দারুননাজাত মাদরাসায় জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি আমলের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রত্যহ ফজর নামাজের পর আবাসিক শিক্ষার্থীদের কুরআন তিলাওয়াতসহ মাগরিব নামাজের পর আওয়াবিন সালাত, যিকির বাধ্যতামূলকভাবে করানো হয়ে থাকে।
শাখা প্রতিষ্ঠান
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠান আছে;
- দারুননাজাত মহিলা শাখা।
- দারুননাজাত নেছারিয়া হিফজখানা।
- দারুননাজাত তাখসীসি শাখা।
- দারুননাজাত ছালেহিয়া এতিমখানা।
- দারুননাজাত কিতাব বিভাগ।
- দারুননাজাত আইডিয়াল মাদ্রাসা
সুযোগ-সুবিধা
- গ্রন্থাগার: মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪২টি বিষয়ের উপর ১৫ হাজার বই সংবলিত সুবিশাল গ্রন্থাগার যাতে রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রকাশনা
প্রতি মাসে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় বাংলা মাসিক পত্রিকা ‘মাসিক নতুন বিকাশ’। এছাড়া ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় ইংরেজি ম্যাগাজিন, ত্রৈমাসিক আরবী ম্যাগাজিন ছাওতুন নাজাত এবং বিভিন্ন স্মরণীয় দিনগুলোতে প্রকাশিত হয় আরবি দেয়ালিকা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পোশাক
- ছাত্র: সাদা পাজামা, সাদা নেছফে ছাক গোলজামা (১ বোতাম), সাদা টুপি এবং সাদা জুতা-মোজা।[৯]
- ছাত্রী: কালো বোরকা ও সাদা হিজাব (স্কার্প), কালো হাত ও পা মোজা।
সাফল্য
২০১৮ সালের দাখিল পরীক্ষায় সর্বমোট ৪১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এ+ পেয়েছে ১৮৯ জন। এ পেয়েছে ২১৮ জন। বিগত পরীক্ষাগুলোতেও এ মাদরাসা শীর্ষ দশে অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১০][১১] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দারুননাজাত মাদরাসা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে।[১২] এছাড়াও দেশের বাইরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দারুননাজাতের শিক্ষার্থীগণ স্কলারশিপ বা বৃত্তি পেয়ে থাকে।
শিক্ষক
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসায় প্রায় ১০০ শিক্ষক রয়েছে। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আ খ ম আবু বকর সিদ্দীক।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী
আবাসিক হল
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসায় ১৭ টি আবাসিক হল রয়েছে।
- দারুল হিকমাহ বিজ্ঞান হল
- সৈয়দ আহমদ বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হল
- সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসী রহমাতুল্লাহি আলইহি হল
- আল্লামা নিয়াজ মাখদুম খোতানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হল
- রিয়াজুল জান্নাত ছাত্রাবাস-(১-১২)
- সিদ্দীকিয়া হল।
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ "অন্যরকম এক দারুন্নাজাতের গল্প"। আওয়ার ইসলাম। ২০১৭-০৮-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩০।
- ↑ "দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় নতুন ভবন প্রয়োজন"। দৈনিক শিক্ষা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩০।
- ↑ "মাদ্রাসা বোর্ডে দেশসেরা ডেমরার দারুন্নাজাত"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯১.৪৬%"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় নতুন ভবন প্রয়োজন"। দৈনিক শিক্ষা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "মাদ্রাসা বোর্ডে দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা শীর্ষে"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা"। dskm.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা (তাখসীসি শাখা)"। dskmtakhsisibranch.com। ২০২১-০৬-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা"। dskm.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।
- ↑ "দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসায় সাফল্যের ধারা অব্যাহত"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩০।
- ↑ "সর্বাধিক সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে দারুননাজাত কামিল মাদরাসা"। subhesadik24.com | সুবহে সাদিক ২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩০।
- ↑ "ডেমরার দারুন্নাজাত কামিল মাদ্রাসা শীর্ষে"। NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৫-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২।