জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা
জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা, নরসিংদী বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় একটি আলিয়া মাদ্রাসা। স্থানীয়ভাবে মাদ্রাসাটি গাবতলী মাদ্রাসা নামে পরিচিত। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশী আলেম কামালুদ্দীন জাফরী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসাটি ফলাফলের দিক থেকে প্রায়ই বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসার মধ্যে প্রথম দশে স্থান পেয়ে থাকে।[১][২][৩] ১৯৭৬ সালে এই মাদ্রাসাটি মেঘনা বিধৌত নরসিংদী সদর থানায় গাবতলী মাদ্রাসা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা ১৫০০ এর অধিক।[৪]
অন্যান্য নাম | গাবতলী মাদ্রাসা |
---|---|
স্থাপিত | ১ জুলাই, ১৯৭৬ |
প্রতিষ্ঠাতা | কামালুদ্দীন জাফরী |
অধিভুক্তি | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৬- ২০১৬) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান) |
চেয়ারম্যান | কামালুদ্দীন জাফরী |
অধ্যক্ষ | শায়খ দেলোয়ার হোসাইন আল মাদানী |
শিক্ষার্থী | ১৫০০ |
ঠিকানা | গাবতলী, নরসিংদী সদর উপজেলা, নরসিংদী , |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে, ১৪ একর |
শিল্পী গোষ্ঠী | উজ্জ্বীবন শিল্পী গোষ্ঠী |
রাজনীতি | জামেয়া কাসেমিয়া ছাত্র সংসদ |
ক্রীড়া | ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল |
ওয়েবসাইট | জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসা |
ইতিহাস
সম্পাদনামাদ্রাসা গঠনের উদ্যোগ
সম্পাদনাজামেয়া কাসেমিয়া, নরসিংদী সদর উপজেলার অন্তর্গত পুরানপাড়া এলাকায় ১৪ একর জমির উপর অবস্থিত একটি মাদ্রাসা।[৫] ২০ শতকের ৬০/৭০ দশকে নরসিংদী জেলায় তেমন কোন ভালো মাদ্রাসা ছিলোনা। শুধু ১৯২৭ সালে শিবপুরের কুমরাদি এলাকায় মাওলানা আব্দুল আজীজের প্রতিষ্ঠিত কুমরাদি সিনিয়র মাদ্রাসা ও এবং ১৯৪৯ সালে ইছাখালি সিনিয়র মাদ্রাসা নামে দুটি মাদ্রাসা ছিলো।
৭ জানুয়ারি ১৯৭৪ তারিখে ব্রাহ্মন্দী জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রায় পঞ্চাশজন ব্যক্তি মাদ্রাসা গঠনের উদ্যোগ নেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য একটা কমিটি তৈরি করা হয়, যার চেয়ারম্যান ছিলেন রুস্তম আলী আশরাফি এবং সেক্রেটারি ছিলেন এ কে এম জয়নাল আবেদিন। ৪ আগস্ট ১৯৭৫ সালে প্রস্তাবিত ৬০ হাত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর নির্মাণের জন্যে ৭ সদস্য বিশিষ্ট 'গৃহ নির্মাণ কমিটি' গঠিত হয়। ১৮ জুলাই ১৯৭৬ সালে গাবতলার সভায় কামালুদ্দীন জাফরীকে মাসিক ৪০০ টাকা বেতনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও মাওলানা হাফেজ মোঃ ফয়জুল্লাহকে উপাধ্যক্ষ নির্ধারণ করা হয়।
মাদ্রাসা নির্মাণে অবদান রাখেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামিদ আল খতিব, শিল্পপতি আসহাব উদ্দীন ভুইয়া (মধু ভুইয়া), শিল্পপতি মোঃ তাফাজ্জল হোসাইন, আলহাজ্ব আবেদ আলী মিয়া, জয়নাল আবেদিন তোতা মিয়া, গাউছিয়া মার্কেটের মালিক শিল্পপতি আজাদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
নামকরণ
সম্পাদনা১৯৭৪ সালের ২৭ জানুয়ারি মাদ্রাসা বাস্তবায়ন কমিটির ৩য় সভায় নাম স্থির করা হয়। কামালুদ্দীন জাফরীর প্রস্তাবে 'জামেয়া-ই কাসেমিয়া মাদ্রাসা' নাম হিসেবে গৃহীত হয়। মুহাম্মাদের একটি হাদিস থেকে নামটি নেওয়া হয়েছে।
তবে ১৯৭৬ সালের দিকে ঐ অঞ্চলে বড় একটি গাবগাছ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এখনো রয়েছে সুবিশাল গাবগাছটি, যার নামানুসারে ঐ এলাকায় গড়ে ওঠা গ্রামের নাম হয়েছে 'গাবতলী গ্রাম' বলে। আর স্থানীয় সকলের কাছে জামেয়া কাসেমিয়া 'গাবতলী মাদ্রাসা' বলেই পরিচিত।
উপাধ্যক্ষগণের তালিকা
সম্পাদনামাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৪ জন উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্রমিক নং | উপাধ্যক্ষ | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব ত্যাগ | তথ্যসূত্র |
---|---|---|---|---|
১ | হাফেজ মোঃ ফয়জুল্লাহ (বড় হুজুর) | ১৯৭৬ | ১৯৯১ | |
২ | আবু তৈয়ব মোঃ রফি উদ্দীন | ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ | ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৩ | |
৩ | আ ন ম রফিকুর রহমান আল মাদানী | ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ | ৪ মে ১৯৯৭ | |
৪ | হাফেজ মাহমুদুল হাসান আল মাদানী | ৫ মে ১৯৯৮ | বর্তমান (অবসরপ্রাপ্ত) |
শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাজামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম, ফাজিলসহ মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর কামিল পর্যন্ত চালু রয়েছে। মাদ্রাসার দাখিল পর্যায়ে বিজ্ঞান ও মানবিক উভয় শাখাই চালু রয়েছে এবং আলিম শ্রেণিতেও বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা চালু রয়েছে। মাদ্রাসার ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ও আল ফিকহ বিভাগ চালু রয়েছে।
হেফজ বিভাগ
সম্পাদনাজামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসা হতে প্রতি বছর হাফেজ সাহেব বের হচ্ছে। মাদ্রাসায় কুরআন হেফজ করার পরে এই মাদ্রাসার আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ রয়েছে।
মহিলা বিভাগ
সম্পাদনাএখানে রয়েছে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জ্ঞান দানের আলাদা বিভাগ।[৬] ১ম শ্রেণী থেকে কামিল পর্যন্ত পৃথক ব্যবস্থাপনায় ছাত্রীদের পড়াশোনার পরিবেশ এখানে বিদ্যমান।
সহ শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাসাহিত্য- সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
সম্পাদনানিয়মিত ক্লাশের পাশাপাশি সাপ্তাহিক বিতর্ক, বক্তৃতা, হামদ-নাত, ইসলামি সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে থাকে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় জামেয়া কাসেমিয়ার ছাত্ররা পুরস্কার লাভ করেছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, যুব দিবস, মৌসুমী প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।[৭]
নরসিংদী জেলার অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী গোষ্ঠী 'উজ্জীবন শিল্পীগোষ্ঠী'। এটা মূলত জামেয়ার ছাত্রদের নিয়েই গঠিত। এর প্রতিষ্ঠাতা তারেক মনোয়ার।
খেলাধুলা
সম্পাদনাফুটবল টিম ছাড়াও ক্রিকেট, হকি, হ্যান্ডবল, ভলিবল ইত্যাদি এছাড়াও ছাত্রদেরকে আনন্দ দানের জন্যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রত্যেক বছর মাদ্রাসার ফান্ড থেকে টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন রকমের ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় করা হয়। জামেয়ার ভলিবল ও ফুটবল টিম একাধিকবার জেলা চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে।
ছাত্র সংসদ
সম্পাদনা১৯৭৮ সাল থেকে জামেয়া কাসেমিয়া ছাত্র সংসদের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ভিপি হয়েছিলেন হাফেজ মোহাম্মাদ এরশাদুল্লাহ। বর্তমান ভিপি হিসেবে রয়েছেন হাফেজ শাহীন ও জিএস হিসেবে রয়েছেন আমিনুল ইসলাম । প্রতি সেশনেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জামেয়া ছাত্র সংসদের উদ্যোগে নিয়মিত দেয়ালিকা ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের লেখা ছাপানো হয়। মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, মাদ্রাসার উন্নয়ন, মাদ্রাসার অবকাঠামোগত অসুবিধার কথাও এতে তুলে ধরা হয়।
সুযোগ-সুবিধা
সম্পাদনাজামেয়া মসজিদ কমপ্লেক্স
সম্পাদনাজামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের নামাজ পড়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল আয়তনের মসজিদ। এই মসজিদের আকৃতি বায়তুল মুকাদ্দাসের আকৃতি অনুসরণ করে করা হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা ও আশে পাশের জনগণ সালাত আদায় করেন।
ছাত্রাবাস সুবিধা
সম্পাদনাজামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় কয়েকটি বৃহৎ ছাত্রাবাস রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীগণ এখানে কম খরচে অবস্থান করে পড়াশোনা চালাতে পারে। এসকল ছাত্রাবাস প্রায় ৪৫০ জন ছাত্রের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে। এগুলো হলো:
- মাওলানা আজিজুর রহমান (রহঃ) ছাত্রাবাস
- ইমাম ইবনে তাইমিয়া ছাত্রাবাস
- শহীদ হাসানুল বান্না ছাত্রাবাস
- ইমাম ইবনুল কাইয়েম ছাত্রাবাস
এতিমখানা
সম্পাদনাজামেয়া কাসেমিয়া এতিমখানার গরিব ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে তৈরী করা হয় একটি চারতলা বিশিষ্ট "বুকশান ইমারত" ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দাখিল পরীক্ষায় গৌরবজনক ফল অর্জন করেছে নরসিংদী জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৭।
- ↑ sylhetview24.com। "মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে সেরা ২০"। www.sylhetview24.net। ২০২১-০৬-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৭।
- ↑ "মাদ্রাসা বোর্ডে দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা শীর্ষে"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৭।
- ↑ "জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার '৯৮ ব্যাচের মিলনমেলা"। BD Times365 (Bangla ভাষায়)। ২০২১-০৬-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৭।
- ↑ "মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সেরা ২০"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৭।
- ↑ "জামেয়া কাসেমিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসায় শতভাগ পাস"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৭।
- ↑ "রোভার স্কাউটের বিজ্ঞপ্তি" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ রোভার স্কাউট।