কলকাতা বন্দর

ভারতের বন্দর

আনুষ্ঠানিকভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী পোর্ট ট্রাস্ট নামে পরিচিত কলকাতা বন্দর (কেপিটি) ভারতের একমাত্র নদীতীরস্থ প্রধান বন্দর[৯] বন্দরটি সমুদ্র থেকে প্রায় ২০৩ কিলোমিটার (১২৬ মাইল) অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে হুগলী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত।[১০] এটি ভারতের প্রাচীনতম সক্রিয় বা কার্যক্ষম বন্দর[১১] এবং বন্দরটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিলে।[১২] কলকাতা একটি সাধু বা মিষ্টি জলের বন্দর এবং জলে লবণাক্ততার কোনও পরিবর্তন বা প্রকরণ নেই।[১৩] বন্দরের দুটি স্বতন্ত্র ডক ব্যবস্থা রয়েছে — কলকাতায় কলকাতা ডক ব্যবস্থা ও হলদিয়ার হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সে একটি গভীর জলের ডক।

কলকাতা বন্দর
অবস্থান
দেশ ভারত
অবস্থানখিদিরপুর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
স্থানাঙ্ক২২°১৪′ উত্তর ৮৮°১৪′ পূর্ব / ২২.২৩° উত্তর ৮৮.২৪° পূর্ব / 22.23; 88.24
ইউএন/লোকোডআইএনসিসিইউ[১]
বিস্তারিত
চালু১৮৭০; ১৫৩ বছর আগে (1870)
পরিচালনা করেকলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ
মালিককলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাহাজ মন্ত্রক, ভারত সরকার
পোতাশ্রয়ের ধরননদী বন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দর
উপলব্ধ নোঙরের স্থানকলকাতা ডক ব্যবস্থা: ৩৪ টি[২]
হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স: ১৭ টি
জেটি৮৬ টি
পোতাশ্রয়ের গভীরতাকলকাতা: ৯.২ মিটার (৩০ ফু)[২]
হলদিয়া: ১২.২ মিটার (৪০ ফু)
জাহাজের ড্রাফট (গড়)কলকাতা ৭.১ মিটার (২৩ ফু)
হলদিয়া: ৮.৫ মিটার (২৮ ফু)
পরিসংখ্যান
জলযানের আগমন২,৯৫৭ (২০২১–২২)[৩]
বার্ষিক কার্গো টন৬৫.৬৬ মিলিয়ন টন (২০২২–২৩)[৪]
বার্ষিক কন্টেইনারের আয়তন৬,৮৭,৯৪০ টিইইউ (২০২০–২০২১)[৫][৬]
যাত্রী গমনাগমন৩৯,৫৫২
বার্ষিক আয় ২,৬২২ কোটি (US$ ৩২০.৪৯ মিলিয়ন) (২০২০-২০২১)[৭]
মোট আয় ১০৪.০৮ কোটি (US$ ১২.৭২ মিলিয়ন) (২০২০-২০২১)[৮][৭]
প্রধান আমদানি দ্রব্যযন্ত্রপাতি, খনিজ তেল, রাসায়নিক সার, কাঁচা সুত, ইস্পাত, অটোমোবাইল প্রভৃতি
প্রধান রপ্তানি দ্রব্যপাট ও পাট জাতদ্রব্য, সুতির বস্ত্র, চর্ম, লৌহ খনিজ, কয়লা, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লাইস ওস প্রভৃতি
ডক৩ টি (খিদিরপুর ডক, নেতাজি সুভাষ ডক ও হলদিয়া ডক)

কলকাতা বন্দর ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতের প্রধান বন্দর ছিল। দাস ব্যবস্থা ১৮৩৩ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পরে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আখের চাষের শ্রমিকদের উচ্চ চাহিদা ছিল। ব্রিটিশরা ১৮৩৮ সাল থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বন্দরটিকে মাধ্যমে সমগ্র ভারত থেকে অর্ধ মিলিয়ন ভারতীয়কে পরিবহন করার জন্য ব্যবহার করেছিল — বেশিরভাগ হিন্দি বলয় (বিশেষত ভোজপুরঅবধ) থেকে — এবং তাদেরকে মরিশাস, ফিজি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো, গায়ানা, সুরিনাম এবং অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলি সহ সারা বিশ্বের জুড়ে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সমগ্র বিশ্বে লক্ষ লক্ষ ইন্দো-মরিশিয়ান, ইন্দো-ফিজিয়ানইন্দো-ক্যারিবিয়ান মানুষ রয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতার পরে, বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭), পশ্চাৎভূমির আয়তন হ্রাস ও পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা সহ অন্যান্য কারণে বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস পায়।

এটির পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর পূর্ব পার্বত্য রাজ্য এবং নেপালভুটান নামক দুটি ভূমিবেষ্টিত প্রতিবেশী দেশ, এবং এছাড়াও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (চীন) সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ পশ্চাদভূমি রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর পালাক্রমে, পণ্য পরিবহনের পরিমাণ আবার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের সালের মার্চ পর্যন্ত, বন্দরটি বার্ষিক ৬,৫০,০০০ টি কনটেইনার প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম, যার বেশিরভাগই নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি থেকে আসে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা বন্দর বিশ্বের ৮৫তম ব্যস্ত বন্দর (বাল্ক পণ্যের হিসাবে)।

ভূগোল সম্পাদনা

অবস্থান সম্পাদনা

কলকাতা বন্দরটি হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত। পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের ব্যবস্থা হুগলী নদী তীরবর্তী তিনটি শহরে পরিচালিত হয়, যেগুলি হল কলকাতা, বজবজহলদিয়া। হুগলী নদীর পূর্ব তীরবর্তী কলকাতায় দুটি ডক ও বজবজে ৬ টি জেটি রয়েছে, এবং পশ্চিম তীরবর্তী হলদিয়ায় একটি ডক রয়েছে। হুগলী নদী কলকাতায় ৫০০ মিটার ও হলদিয়ায় ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত, কিন্তু হলদিয়ায় নদীর মাঝে নদীচর বা দ্বীপের অবস্থানের কারণে জলভাগের প্রশস্ততা কমে ১ কিলোমিটার হয়।

বন্দর চ্যানেল সম্পাদনা

 
কলকাতাগামী কন্টেইনারবাহী এসএসএল চেন্নাই

বন্দরটি ২৩২ কিলোমিটার (১৪৪ মা) দীর্ঘ জাহাজ চলাচলের চ্যানেল, এবং সেইসাথে নোঙরখানা (অ্যাঙ্কোরেজ) ও বন্দর সুবিধা নিয়ে গঠিত। বেশির ভাগ জাহাজের জন্য পাইলটের প্রয়োজন হয়, এবং চ্যানেলের তীক্ষ্ণ বাঁকগুলি ও ডুবো চরের জন্য বড় জাহাজসমূহের টাগবোটের সহায়তা প্রয়োজন হয়। চ্যানেলটি বঙ্গোপসাগরের স্যান্ডহেডস অঞ্চল থেকে থেকে কলকাতা শহরস্থিত কলকাতা ডক ব্যবস্থার অন্তর্গত খিদিরপুর ডক পর্যন্ত বিস্তৃত, যার মধ্যে স্যান্ডহেডস থেকে সাগর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার (৫৪ মা) কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে জাহাজগুলি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।[১৪]

কলকাতা বন্দরের সমুদ্র থেকে দুটি প্রবেশপথ রয়েছে, একটি ইস্টার্ন চ্যানেল এবং অন্যটি ওয়েস্টার্ন চ্যানেল। বর্তমানে পূর্ব চ্যানেল কলকাতাগামী নৌযানগুলির জন্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে পশ্চিম চ্যানেলটি হলদিয়াগামী জাহাজগুলি দ্বারা নৌচলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়।[১৫]

চ্যানেলের গভীরতা হুগলী নদীতে জল প্রবাহের উপর নির্ভর করে। ডুবো চরের উপস্থিতির কারণে চ্যানেলের গভীরতা সকল স্থানে সমান নয়। এই চ্যানেল স্যান্ডহেডসে ৫০ মিটার (১৬০ ফু) ও সাগর রোডে ৯ মিটার (৩০ ফু) থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফু) গভীর। কলকাতা পর্যন্ত পূর্ব চ্যানেলের সর্বনিম্ন গভীরতা ৩ মিটার (৯.৮ ফু)। জোয়ারেরে সময়ে চ্যানেলের গভীরতা ৮.৫ মিটারের (২৮ ফু) অধিক হয়; যখন সর্বোচ্চ ৮.৫ মিটার (২৮ ফু) ও সর্বনিম্ন ৫.৪ মিটার (১৮ ফু) ড্রাফ্ট সম্পন্ন জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম। হলদিয়া পর্যন্ত চ্যানেলের সর্বনিম্ন গভীরতা ৪.৩ মিটার (১৪ ফু)। জোয়ারেরে সময়ে চ্যানেলের গভীরতা ৯ মিটারের (৩০ ফু) অধিক হয়; যখন সর্বোচ্চ ৯ মিটার (৩০ ফু) ও সর্বনিম্ন ৭.৬ মিটার (২৫ ফু) ড্রাফ্ট সম্পন্ন জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম।[১৬]

চ্যানেলে জলের গভীরতা[১৬]
গভীরতা কলকাতা ডায়মন্ড হারবার সাগর রোড হলদিয়া স্যান্ডহেডস
প্রাকৃতিক গভীরতা সর্বনিম্ন ৩ মিটার (৯.৮ ফু) ৫.২ মিটার (১৭ ফু) ৬.৪ মিটার (২১ ফু) ৪.৩ মিটার (১৪ ফু) ৫০ মিটার (১৬০ ফু)
জোয়ারের সময় গভীরতা সর্বোচ্চ ৮.৫ মিটার (২৮ ফু) ৯.৫ মিটার (৩১ ফু) ১০ মিটার (৩৩ ফু) ৯ মিটার (৩০ ফু) ৫০ মিটার (১৬০ ফু)
গড় ৭.১ মিটার (২৩ ফু) ৮.৩ মিটার (২৭ ফু) ৫০ মিটার (১৬০ ফু)

ইতিহাস সম্পাদনা

 
১৮৫২ সালের কলকাতা বন্দরের দৃশ্য

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিকট হতে বাণিজ্য সনদ লাভের পরই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা বন্দরের গোড়াপত্তন ঘটায়। ভারত শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হলে, ১৮৭০ সালে সরকার বন্দর কমিশন গঠন করে।

কলকাতা বন্দর একটি বাণিজ্যিক বন্দর তথা পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানি সেনাবাহিনী এই সময় দুই বার বন্দরের উপর বোমাবর্ষণ করে। পূর্বতন বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৯৭৫ সাল অবধি বন্দরের দায়িত্বে রত ছিল। এরপর ১৯৬৩ সালের প্রধান বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হলে, কলকাতার বর্তমান পোর্ট ট্রাস্ট বা বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়।

ডক ব্যবস্থা সম্পাদনা

কলকাতা বন্দর কলকাতা ডক ব্যবস্থাহলদিয়া ডক চত্বরের, এবং সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলে উপযোগী ২৩২ কিমি দীর্ঘ নৌ-চ্যানেলের সমন্বয়ে গঠিত। ডক ব্যবস্থা দুটি হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত, যা বন্দরটিকে ভারতের একমাত্র নদী তীরস্থিত প্রধান বন্দর হিসাবে পরিচিতি প্রদান করে। বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট।

কলকাতা ডক ব্যবস্থা সম্পাদনা

কলকাতা ডক ব্যবস্থার অধীনে রয়েছে খিদিরপুর ডক (কেপিডি), নেতাজি সুভাষ ডক (এনএসডি), বজবজ নদী মুরিং (বিবি) ও ডায়মন্ড হারবার নোঙরখানা। বজবজ ডক চত্বরে রয়েছে ইমপাউন্ডেড ডক, তিনটি তৈল জেটি, তিনটি বজরা জেটি ও হলদিয়া নোঙরখানা।[১৭]

খিদিরপুর ডক (কেপিডি) সম্পাদনা

 
খিদিরপুর ডকের পশ্চিম অংশের (কেডিপি-১) দৃশ্য।

খিদিরপুর ডকে মোট ১৮ টি বার্থ রয়েছে, যার মধ্যে বহুমুখী বার্থ ১৭ টি ও পণ্যবাহী সহ যাত্রীবাহী জাহাজের জন্য ১ টি বার্থ। বার্থগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেগুলি ১ থেকে ২৯ পর্যন্ত হতে পারে।[১৭] বার্থগুলিতে জলের গভীরতা সমান নয়, যা ২৯ নং বার্থে সর্বনিম্ন ৭.৪ মিটার (২৪ ফু) ও ৮ নং বার্থে সর্বোচ্চ ৯.২ মিটার (৩০ ফু)।[২] খিদিরপুর ডকটি দুটি অংশে বিভক্ত, যেগুলি হল কেডিপি-১ (পশ্চিম) ও কেডিপি-২ (পূর্ব)। মোট ১৮ টি বার্থের মধ্যে ১০ বার্থের সমন্বয়ে কেডিপি-১ ও ৮ টি বার্থের সমন্বয়ে কেডিপি-২ গঠিত। এই দুটি অংশ — কেডিপি-১ ও কেডিপি-২ — একটি বাসকুল সেতু দ্বারা পৃথক করা হয়। ডকটি একটি লক গেটের মাধ্যমে হুগলী নদী তথা জাহাজ চলাচলকারী চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত। লক গেটে ও কেডিপি-১ এর মধ্যবর্তী অংশটি হল "টাইডাল বেসিন", এই বেসিনের সঙ্গে ড্রাই দকগুলি সংযুক্ত রয়েছে। ডকের মধ্যে জাহাজ চলাচলে সহায়তা প্রদানের জন্য ৬ টি বয়/মুরিং রয়েছে।[১৭]

খিদিরপুর ডকের মধ্যে ৩ টি ড্রাই ডক রয়েছে, যা জাহাজ বা নৌযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।[১৭]

নেতাজি সুভাষ ডক (এনএসডি) সম্পাদনা

 
নেতাজি ডকের কন্টেইনার ইয়ার্ড।

নেতাজি ডকে মোট ১০ টি বার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ১ টি হেভি লিফট বার্থ, ৪ টি ডেডিকেটেড কন্টেইনার বার্থ, ১ টি লিকুইড কার্গো বার্থ ও ৪ টি বহুমুখী বার্থ। বার্থগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেগুলি ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত হতে পারে।[১৭] বার্থগুলিতে জলের গভীরতা সমান নয়, যা ১ নং বার্থে সর্বনিম্ন ৭.১ মিটার (২৩ ফু) ও ৩ নং বার্থে সর্বোচ্চ ৯ মিটার (৩০ ফু)।[২] ডকটি একটি লক গেটের মাধ্যমে হুগলী নদী তথা জাহাজ চলাচলকারী চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত। ডকের মধ্যে জাহাজ চলাচলে সহায়তা প্রদানের জন্য ২ টি বয়/মুরিং রয়েছে।[১৭]

নেতাজি ডকের মধ্যে ২ টি ড্রাই ডক রয়েছে, যা জাহাজ বা নৌযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।[১৭]

পরিচালনা সম্পাদনা

 
কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডকে একটি পন্যবাহী জাহাজের মাল খালাসের দৃশ্য

কলকাতা বন্দরের বার্ষিক পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৮ কোটি ৭ লাখ টন। বজবজের ৬ টি জেটি সহ কলকাতায় ৩৪ টি ও হুগলী নদীস্থিত ৩ ওয়েল জেটি সহ হলদিয়ায় ১৭ টি[১৬] সক্রিয় বার্থ সহ মোট ৫১ টি বার্থ রয়েছে। জাহাজঘাটার মোট দৈর্ঘ্য ৯.৮৫৭ কিলোমিটার (৬.১২৫ মা)[১৮] এবং সর্বাধিক গভীরতা ৯.২ মিটার (৩০ ফু)[২] (কলকাতা ডক) থেকে ১২.২ মিটার (৪০ ফু)[১৬] (হলদিয়া ডক) পর্যন্ত। এই বৈশিষ্ট্যগুলি সর্বাধিক প্রস্তাবিত ১,৫০,০০ টন ডেডওয়েটের (ডিডাব্লুটি) ট্যাংকার ও ৭৫,০০ ডিডব্লিউটি বাল্ককারিয়ারের বার্থিং ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনীয়।[১৬] তবে নৌ-চ্যানেলের স্বল্প নাব্যতার কারণে সর্বোচ্চ কলকাতায় ২০,০০০ ডিডব্লিউটি ও হলদিয়ায় ৩০,০০ ডিডব্লিউটি জাহাজ পরিচালনা করা হয়। কলকাতা বন্দর বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে হলদিয়া ডকের মাধ্যমে ৩০,০০০ মেট্রিক টনের বেশি পণ্য বহনকারী জাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম।

বন্দরটি একটি সামুদ্রিক ও একটি নদী বন্দর। কলকাতাহলদিয়া থেকে উত্তর ভারতের রাজ্যসমূহ ও আসাম, এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসম্ভার নদী পথে পরিবহন করা হয়।[১৬]

ট্রান্সলোডিং সম্পাদনা

কলকাতা ডক ও হলদিয়া ডকের নকশাকৃত জলের গভীরতা যথাক্রমে ৯.২ মিটার (৩০ ফু)[২] ও ১২.২ মিটার (৪০ ফু)[১৬], কিন্তু নৌ-চ্যানেলে ডুবো চরের কারণে ডক দুটিতে ৮.৫ মিটার (২৮ ফু) এর বেশি ড্রাফটযুক্ত জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।[১৯] বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্রের স্যান্ডহেডেস নোঙ্গরখানা ও হুগলী নদীর মোহনায় সাগর নোঙ্গরখানায় ট্রান্সলোডিং-এর মধ্যমে বৃহৎ জাহাজগুলি থেকে ছোট বা বার্জে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করেছে। এই কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ জিন্দল আইটিএফ সংস্থাকে নিযুক্ত করেছে। জিন্দল আইটিএফ-এর এমভি যুগলরাজএমভি ভিগনরাজ নামে দুটি ট্রান্সলোডারের দ্বারা পণ্য খালাসের কাজ পরিচালিত হয়।[২০]

অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবট পয়েন্ট বন্দর থেকে কয়লা বহনকারী এম.ভি. লেক ডি ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৯ই জুন সাগর অ্যাঙ্কারেজে ট্রান্সলোডিংয়ের জন্য নোঙ্গর করেছিল, যা ছিল কলকাতার বন্দরের ইতিহাসে সাগর অ্যাঙ্কারেজে প্রথম কোনো কেপসাইজ জাহাজের নোঙ্গরের ঘটনা।[২১]

আমদানি-রপ্তানি সম্পাদনা

কলকাতা বন্দরের প্রধান আমদানি দ্রব্য হল কোক কয়লা, যন্ত্রপাতি, খনিজ তেল প্রভৃতি। বন্দর থেকে রপ্তানি করা হয় পাটজাত দ্রব্য, কয়লা, পেট্রোরাসায়নিক দ্রব্য, চা, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ আকরিক, ফ্লাই অ্যাস প্রভৃতি।বন্দরটির হলদিয়া ডক ব্যবহার করা হয় বাল্ক জাতীয় পণ্য আমদানি রপ্তানিতে এবং সামান্য কিছু কন্টেইনার পণ্য পরিবহন করে। কলকাতা ডক ব্যবস্থা প্রধানত ব্যবহার করা হয় কন্টেইনার পরিবহনে। এছাড়াও কলকাতা ডক ব্যবস্থা বাল্ক পণ্য পরিবহন করে। ২০১৫-২০১৬ সালে কলকাতা বন্দর ৫০.১৯ মিলিয়ন টন পণ্য ও ৬,৬২৮৯১ টিইউএস কন্টেইনার পরিবহন করেছে। এর মধ্যে কলকাতা ডক ব্যবস্থা ১৬ মিলিয়ন টন পণ্য ও ৫ লক্ষের বেশি কন্টেইনার এবং হলদিয়া ডক ৩৪ মিলিয়ন টন পণ্য ও ১ লক্ষের বেশি কন্টেইনার পরিবহন করেছে।

বছর কার্গো কন্টেইনার (টিইউএস)
২০১৫-২০১৬ ৫০.১৯ মিলিয়ন টন ৬,৬২,৮৯১
২০১৪-২০১৫ ৪৬ মিলিয়ন টন ৬,৩০,০০০
২০১৩-২০১৪ ৪১ মিলিয়ন টন ৬ ,০০,০০০
২০১২-২০১৩ ৩৯ মিলিয়ন টন
২০১৮-২০১৯ ৬৩.৭ মিলিয়ন টন ৮,৩০,০০০

নতুন বন্দর ও জেটি সম্পাদনা

বর্তমান কলকাতা বন্দর বা কলকাতা- হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্দরের পণ্য আমদানি রপ্তানি কমেছে।এই কারণে পশ্চিমবঙ্গে সাগরদ্বীপে ১০.৫ মিটার গভীরতার সাগর বন্দর গড়া হচ্ছে যেখানে কলকাতা বন্দর এর গভীরতা ৬ মিটার (২০ ফু) ও হলদিয়া বন্দরের গভীরতা ৮ মিটার (২৬ ফু) ।প্রস্তাবিত সাগর বন্দর প্রকল্পটিকে আর্থিকদিক থেকে সম্ভাবনাময় করে তুলতে ৫১৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বন্দরটির উন্নয়নে গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় জাহাজ চলাচল মন্ত্রক যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে সরকারের এই অনুমোদন তারই একটি অঙ্গ। এই প্রকল্পটি রূপায়ণের কাজে যুক্ত করা হয়েছে ভোর সাগর পোর্ট লিমিটেড অর্থাৎ বিএসপিএল’কে। সমগ্র প্রকল্পটি রূপায়ণে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশীদারত্বের মাত্রা হবে যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ।

বন্দরের নতুন করে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যই পিপিপি মডেলে চারটি বার্জ জেটি তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বার্জ জেটিগুলি বেশ বড় মাপের তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর। এই জেটিগুলির মাধ্যমে বাল্ক জাতীয় এবং লিকুইড জাতীয় কার্গো পরিবহন করা যাবে।হলদিয়া বন্দরের পাশেই হলদি নদী ও হুগলী নদীর পাড় বরাবর নতুন চারটি বার্জ জেটি তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। এগুলিকেই বলা হচ্ছে আউটার টার্মিনাল। ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় আউটার টার্মিনাল তৈরি হতে চলেছে। এই টার্মিনালটি তৈরি হবে হলদিয়া ভবনের ঠিক বিপরীতে। পাশাপাশি শালুকখালিতে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লিকুইড কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের বার্জ তৈরি হচ্ছে। ৪১৩ কোটি টাকার আউটার টার্মিনালের কাজ পেতে টেন্ডারে যোগ দিয়েছে দু’টি গোষ্ঠী। ইতিমধ্যেই ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বার্জ জেটি আর ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংক্রিয় ফ্লোটিং ক্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার পর দক্ষিণ ভারতের বোথরা শিপিং এজেন্সি বরাত পেয়েছে।

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "UN/LOCODE (IN) India"www.unece.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টে ২০২০ 
  2. "Berth Particulars of Kolkata Dock System"। Syama Prasad Mookerjee Port, Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  3. "SHIP CALLS AT SMP, KOLKATA"smportkolkata.shipping.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  4. "Kolkata Port achieves all-time high cargo ( 65.66 MT) handling in 2022-23"www.indiablooms.com (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্ডিয়া ব্লুমস নিউজ সার্ভিস। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  5. "Containers handled at major ports up 8% at 9.876 million TEUs in FY19"। Business Line। ৩ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৯ 
  6. "India's major ports see 6.7 percent growth in container volumes"। JOC.co। ৭ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫ 
  7. "Calcutta Port Trust posts 26% surplus hike"। www.telegraphindia.com। ১২ এপ্রিল ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২১ 
  8. https://bengali.news18.com/amp/news/coronavirus-latest-news/kolkata-port-present-situation-after-two-months-lockdown-ss-460325.html
  9. "Business Portal of India : Infrastructure : National Level Infrastructure : Maritime Transport : Ports"archive.india.gov.in। ২০১৬-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৬ 
  10. "Calcutta Port Trust - Brief History"। Calcutta Port Trust। ১৩ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  11. Bhattacharya, Snigdhendu (২০১৭-০৫-০৫)। "Close to 150 years, country's oldest port staring at threats from proposed ports in Odisha and Bengal"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৪ 
  12. Acharya, Shangkar (মার্চ ১০, ২০১৮)। "Kolkata Port plans upgrade to stave off competition"Kathmandu Post (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৪-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৪ 
  13. "Kolkata Port Trust renamed after Syama Prasad Mukherjee, announces PM Modi"The Times Of India। ১২ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২০ 
  14. "How to Reach-Kolkata Port Trust"smportkolkata.shipping.gov.in (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২৩ 
  15. "Pilotage-Kolkata Port Trust"smportkolkata.shipping.gov.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২৩ 
  16. কুমার, বিনীত। ADMINISTRATIVE REPORT 2021-22 (প্রতিবেদন)। শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৭০। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০২৩ 
  17. কুমার, বিনীত। Rejuvenation of Kodderpore Docks on public private partnership basis detailed feasibility report (প্রতিবেদন)। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২৩ 
  18. MASTER PLAN FOR KOLKATA PORT (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। sagarmala.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  19. "Information regarding Bore-Tides, period during which Moorings & Jetties are to be vacated, bore restrictions and other General Information."শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর, কলকাতা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  20. চট্টোপাধ্যায়, জগন্নাথ (১৪ ডিসেম্বর ২০১৫)। "মাঝদরিয়ায় 'ডাউনলোড'ই এখন নতুন ভরসা বন্দরের"আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  21. নাগ, দেবাঞ্জন (৯ জুন ২০২১)। "Major Milestone for Kolkata Port! In a first, a cape size vessel, M.V. LAKE D arrived at Sagar anchorage"ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • কলকাতা: এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস, অতুল সুর, জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৮১
  • কলকাতা: একাল ও সেকাল, রথীন মিত্র, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯১
  • ইতিহাসে খিদিরপুর, সমর দত্ত, দে বুক স্টোর, কলকাতা, ২০০৫

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা