ইবাদি ইসলাম

ইসলামের একটি মাযহাব

ইবাদি ইসলাম (আরবি: الإباضية, প্রতিবর্ণীকৃত: al-Ibāḍiyyah), ইবাদি মতবাদ বা ইবাদি আন্দোলন হল ইসলামের একটি শাখা যা ওমানে সবচেয়ে প্রভাবশালী।[] এছাড়া আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়াপূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে এর অস্থিত্ব রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে এই আন্দোলন ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে বা মহানবী হজরত মুহম্মদের (স.) মৃত্যুর ২০ বছর পর শুরু হয় যা সুন্নিশিয়া মতবাদের চেয়েও প্রাচীন।[] আধুনিক ঐতিহাসিকেরা এর উৎপত্তি সন্ধান করতে গিয়ে একে খারিজি আন্দোলনের একটি মধ্যপন্থী ধারা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।[][][]: সমসাময়িক ইবাদিরা তাদের খারিজি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করার তীব্র বিরোধিতা করেন, যদিও তারা স্বীকার করেন যে তাদের আন্দোলন ৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দের খারিজি বিদ্রোহ থেকে উৎপত্তিলাভ করেছে।[]:

ইবাদি ইসলামের একটি ক্ষুদ্র মাযহাব। এই মাযহাব সুন্নি বা শিয়া পন্থার অন্তর্ভুক্ত নয়। এর আবির্ভাব ইবাদি আন্দোলন থেকে। এই আন্দোলন মহানবী (স.) প্রয়াণের ২০ বছর পর শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আব্দুল্লাহ ইবন ইবাদ আল-তামিমিকে এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। কিন্তু এই মাযহাবের অনুসারীরা দাবি করেন যে এর প্রতিষ্ঠাতা জাবির ইবন জাইদ আল-আজদি। এই মতবাদের ওপর খারিজিদের প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়।[] ইবাদিরা নিজেদের "মুসলমান" বা "সরলতার লোক" বলে উল্লেখ করেন।[][]

বিস্তার

সম্পাদনা

এ মতবাদের অনুসারীরা ওমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওমানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অফিসিয়াল সংস্করণ হলো ইবাদিজম। ওমান ছাড়া পূর্ব আফ্রিকা, আলজেরিয়ার মা'জাব উপত্যকা, লিবিয়ার নাফুস পাহাড় এবং তিউনিসিয়াতে জেরবা দ্বীপে এ মতাবলম্বী মানুষ বাস করে।

সুন্নিদের দৃষ্টিভঙ্গি

সম্পাদনা

খারেজি মতবাদের সাথে এর মিল রয়েছে বলে সুন্নিরা ইবাদিদের খারেজি বলে।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণীত, এক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জেরানা নামক স্থানে দেখা করেন। জেরানা নামক স্থানটি হল সেই জায়গা যেখানে রাসুল মুহাম্মদ হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মাল বণ্টন করছিলেন। সাহাবী বেলাল এর কাপড়ের উপর রুপার টুকরা গুলো রাখা ছিল। নবীজি সেইখান থেকে মুষ্টি বদ্ধ ভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোক বললঃ- “হে মুহাম্মদ আপনি আল্লাহ্‌কে ভয় করুন ও ইনসাফ করুন”।

রাসুল (সা.) বলেনঃ ধ্বংস তোমার জন্য।আমি যদি ইনসাফ না করি তবে কে ইনসাফ করবে? আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার পর এমন কোন ব্যক্তি পাবে না যে আমার চেয়ে অধিক ন্যায় পরায়ণ হবে।সাথে সাথে ওমর (মতান্তরে খালিদ বিন ওয়ালিদ) বলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনি অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিককে হত্যা করি। মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "না, আমি আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই । যদি এমন কর তবে মানুষ বলবে আমি আমার সাহাবীদের হত্যা করি"।ঐ লোক চলে যাওয়ার পর, তিনি আরও বলেন, "এই লোকটা ও তার কিছু সঙ্গী থাকবে যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়"।[ মুসলিম শরীফ ][নাসায়ী শরীফ পৃষ্ঠা ৩০৮]

এই লোকের বংশধর ও অনুসারীরাই হচ্ছে খারেজি।এরা কেমন হবে কি করবে রাসুলুল্লাহ (সা) এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলে যান।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা
  1. সুলাইমান আল বারুনী
  2. আহম্মদ বি হামাদ, ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি
  3. কাবুস বিন সাঈদ, ওমানের সুলতান
  4. নুরী আবু শাহমিয়ান, লিবিয়ার রাজনীতিবিদ
  5. মুফতি জাকারিয়া, আলজেরিয়ার লেখক

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Vallely, Paul (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Schism between Sunni and Shia has been poisoning Islam for 1,400 years - and it's getting worse"The Independent 
  2. Donald Hawley, Oman, pg. 201. Jubilee edition. Kensington: Stacey International, 1995. আইএসবিএন ০৯০৫৭৪৩৬৩৬
  3. John L. Esposito, সম্পাদক (২০১৪)। "Ibadis"The Oxford Dictionary of Islam। Oxford: Oxford University Press। ২০ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. Lewicki, T. (১৯৭১)। "al-Ibāḍiyya" Lewis, B.; Ménage, V. L.; Pellat, Ch. & Schacht, J.The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume III: H–Iram। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 648–660। 
  5. Hoffman, Valerie Jon (২০১২)। The Essentials of Ibadi IslamSyracuse: Syracuse University Pressআইএসবিএন 9780815650843 
  6. "faith and power",(1982)
  7. "ধর্মীয় শিক্ষা ও ওমানের অভিজ্ঞতা"। ২০১৮-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-১৯ 
  8. "মুসলিম বিশ্ব : ধর্ম ও রাজনীতি | daily nayadiganta"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা