কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ
কাবুস বিন সাইদ আল বুসাইদি (আরবি: قابوس بن سعيد آل سعيد, বেলুচি: قابس بن سعید آل سعید, Qābūs bin Saʿīd ʾĀl Saʿīd; ১৮ নভেম্বর ১৯৪০[১] – ১০ জানুয়ারি ২০২০) ওমানের সুলতান ছিলেন। তার বাবা সাইদ বিন তাইমুরকে একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তিনি ক্ষমতালাভ করেন। তিনি আল সাইদ রাজবংশের ১৪তম প্রজন্ম। তিনি গান্ধী শান্তি পুরস্কার লাভ করেছেন।[২]
কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ | |
---|---|
ওমানের সুলতান | |
রাজত্ব | ২৩ জুলাই ১৯৭০ – ১০ জানুয়ারি ২০২০ |
পূর্বসূরি | সাইদ বিন তাইমুর |
উত্তরসূরি | হাইসাম বিন তারিক আল সাইদ |
জন্ম | সালালাহ, ওমান | ১৮ নভেম্বর ১৯৪০
মৃত্যু | ১০ জানুয়ারি ২০২০ মাস্কাট, ওমান | (বয়স ৭৯)
দাম্পত্য সঙ্গী | সাইয়িদা নাওয়াল বিনতে তারিক (১৯৭৬–১৯৭৯) |
রাজবংশ | আল সাইদ |
পিতা | সাইদ বিন তাইমুর |
মাতা | মাজনুন আল-মাশানি |
ধর্ম | ইসলাম (ইবাদী) |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাকাবুস ১৯৪০ সালের ১৮ নভেম্বর সালালাহর জুফারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুলতান সাইদ বিন তাইমুর ও শাইখা মাজনুন আল-মাশানির একমাত্র পুত্র ছিলেন।
তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সালালাহ ও ভারতের পুনেতে লাভ করেছেন। পুনেতে তিনি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার ছাত্র ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য যান।[৩] ২০ বছর বয়সে তিনি রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে যোগ দেন। স্যান্ডহার্স্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাকে ১ম ব্যাটেলিয়ন ক্যামেরনিয়ান্স (স্কটিশ রাইফেল)-এ নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি জার্মানিতে একবছর দায়িত্বপালন করেছেন।
সামরিক দায়িত্বপালনের পর কাবুস ইংল্যান্ডের অধ্যয়ন করেন। সালালাহতে ফিরে আসার পর তিনি ইসলাম এবং দেশের ইতিহাসে উপর পড়াশোনা করেছেন।
ক্ষমতায় উত্থান
সম্পাদনাএকটি সফল অভ্যুত্থানে তার পিতার ক্ষমতাচ্যুতির পর কাবুস ১৯৭০ সালের ২৩ জুলাই ক্ষমতালাভ করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে রাষ্ট্রকে আর মাস্কাট ও ওমান নামে ডাকা হবে না। রাষ্ট্রীয় একতার জন্য এর পরিবর্তে রাষ্ট্রের নাম ওমান সালতানাত রাখা হয়।
সুলতান হওয়ার পর কাবুস দক্ষিণ ইয়েমেনের সশস্ত্র কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের কারণে সমস্যাগ্রস্ত হন। ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভী, জর্ডানের বাদশাহ হুসাইন বিন তালাল, ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সেস ও ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সহায়তা বিদ্রোহীদের পরাজিত করা হয়।
শাসন
সম্পাদনাওমানে সার্বভৌম রাজতন্ত্র ব্যবস্থা প্রচলিত।
ওমানে ক্ষমতার পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই।[৪] সমস্ত ক্ষমতা সুলতানের হাতে রয়েছে।[৪] সুলতান সশস্ত্র বাহিনীসমূহের প্রধান। এছাড়াও তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।[৪] ১৯৯৬ সালের মৌলিক আইনসহ সকল আইন ১৯৭০ সাল থেকে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে প্রচলিত হয়ে আসছে।[৪] সুলতান বিচারকদের নিয়োগ করেন এবং সাজা রদ বা হ্রাস করতে পারেন।[৪]
বৈদেশিক নীতি
সম্পাদনাসুলতান কাবুস সরকারিভাবে ওমানের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখেন। ইরানের সাথে তার স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলির সাথে ওমানের মিত্রতা রয়েছে।
পারস্য উপসাগরের আরব রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ওমানের সাথে সম্পর্ক সবচেয়ে স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ওমান ইরান ও পাশ্চাত্যের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখে।[৫] এর ফলে ওমান যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে।[৬][৭]
উত্তরসুরি
সম্পাদনাকাবুসের কোনো ঘোষিত উত্তরসুরি নেই। এক্ষেত্রে ওমান অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রের ব্যতিক্রম। ওমানের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুলতানের পদ খালি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে রাজপরিবারকে নতুন সুলতান নির্বাচন করতে হবে।[৮]
সামরিক পদ
সম্পাদনাসুলতান কাবুস নিম্নোক্ত সামরিক পদবীধারী:[৯]
- ফিল্ড মার্শাল, ওমান রাজকীয় সেনা বাহিনী
- এডমিরাল অব দ্য ফ্লিট, ওমান রাজকীয় নৌ বাহিনী
- মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স, ওমান রাজকীয় বিমান বাহিনী
- সর্বোচ্চ কমান্ডার, রাজকীয় ওমান পুলিশ
- সম্মানসূচক জেনারেল, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী
বংশলতিকা
সম্পাদনা১৬. তুর্কি বিন সাইদ | |||||||||||||||||||
৮. ফয়সাল বিন তুর্কি | |||||||||||||||||||
১৭. ইথিওপীয় সুরি | |||||||||||||||||||
৪. তাইমুর বিন ফয়সাল | |||||||||||||||||||
১৮. সুওয়াইনি বিন সাইদ | |||||||||||||||||||
৯. আলিয়া বিনতে সুওয়াইনি আল সাইদ | |||||||||||||||||||
১৯. গালিয়া বিনতে সালিম আল বুসাইদি | |||||||||||||||||||
২. সাইদ বিন তাইমুর | |||||||||||||||||||
২০. সালিম বিন সুওয়াইনি | |||||||||||||||||||
১০. আলি বিন সালিম | |||||||||||||||||||
২১. কাইস বিন আজ্জাম আল বুসাইদির এক কন্যা | |||||||||||||||||||
৫. ফাতিমা বিনতে আলি আল সাইদ | |||||||||||||||||||
২২. বারগাশ বিন সাইদ | |||||||||||||||||||
১১. আলিয়া বিনতে বারগাশ আল সাইদ | |||||||||||||||||||
২৩. মুজা বিনতে হামাদ আল সাইদ | |||||||||||||||||||
১. কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ | |||||||||||||||||||
১২. আলি আল মাশানি | |||||||||||||||||||
৬. আহমাদ বিন আলি আল মাশানি | |||||||||||||||||||
৩. মাজনুন আল-মাশানি | |||||||||||||||||||
মৃত্যু
সম্পাদনাসুলতান কাবুস ১০ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৭৯ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং তাঁর কোনো উত্তরাধিকারী বা মনোনীত কেউ ছিল না। তিনি ছিলেন আরব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দিন রাজত্ব করা সুলতান। [১০]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Al Sa'id, Qaboos (1940–) – Personal history, Biographical highlights, Personal chronology, Influences and contributions, The world's perspective, Legacy ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে. Encyclopedia.jrank.org. Retrieved on 14 July 2011.
- ↑ "Qaboos bin Said"। Webster's Concise Encyclopedia। 1। New York: Gramercy Books। ১৯৯৮। পৃষ্ঠা 520।
- ↑ "Tribute to His Majesty"। ১৮ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Country Report: Oman"। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ Slackman, Michael (১৬ মে ২০০৯)। "Oman Navigates Between Iran and Arab Nations"। The New York Times।
- ↑ http://www.nytimes.com/2013/09/05/world/middleeast/irans-president-to-speak-at-the-un.html?_r=0 Iran’s President to Speak at the U.N.
- ↑ http://www.economist.com/blogs/pomegranate/2013/08/iran Iran: A visit from the sultan
- ↑ Dokoupil, Martin (২৪ মে ২০১২)। "Succession Question Fuels Uncertainty in Oman"। Reuters। ৩১ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১২।
- ↑ The Royal Ark, Oman genealogical details, p.9
- ↑ "চলে গেলেন ওমানের সুলতান"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Official account of the Sultan's reign
- Oman Net
- Oman-Qaboos ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে
কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ আল সাইদ রাজবংশ জন্ম: ১৮ নভেম্বর ১৯৪০
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী সাইদ বিন তাইমুর |
ওমানের সুলতান ১৯৭০-২০২০ |
উত্তরসূরী হাইসাম বিন তারিক আল সাইদ |
নির্ধারিত হয়নি |