ইখওয়ান বিদ্রোহ ১৯২৭ সালে শুরু হয়। এসময় মুতায়র ও আজমান গোত্রের লোকেরা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পার্শ্ববর্তী ট্রান্সজর্ডান, ইরাক ও কুয়েতে আক্রমণ চালায়।[২] বিদ্রোহের মূল অংশকে ১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ সাবিলার যুদ্ধে পরাজিত করা হয়।[৩] ইখওয়ান যোদ্ধা এবং ইবনে সৌদের প্রতি অণুগত সেনারা ১৯২৯ সালে জাবাল শামার অঞ্চলে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ৫ ডিসেম্বর ইখওয়ান আওয়াজিম গোত্রকে আক্রমণ করে। মুতায়র গোত্র ও বিদ্রোহের মূল নেতা ফয়সাল আল দাউয়িশ ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ে ইবনে সৌদের হাতে আসার আগে ১৯২৯ সালের অক্টোবরে কুয়েত পালিয়ে যান। ১৯৩০ সালের ১০ জানুয়ারি সরকারি বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিদ্রোহ দমন করে। এসময় অন্যান্য ইখওয়ান নেতারা ব্রিটিশদের নিকট আত্মসমর্পণ করে।[১] ইখওয়ান নেতাদের হত্যা করা হয় এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়মিত সৌদি সেনাদলে যুক্ত করা হয়। বিদ্রোহের তিন প্রধান নেতার অন্যতম সুলতান বিন বাজাদ ১৯৩১ সালে নিহত হন। ফয়সাল আল দাউয়িশ ১৯৩১ সালের ৩ অক্টোবর রিয়াদে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের সমস্যাকে মনে করা হয়।

ইখওয়ান বিদ্রোহ
মূল যুদ্ধ: সৌদি আরবের একত্রীকরণ

ইখওয়ানের পতাকা
তারিখ১৯২৭-১৯৩০
অবস্থান
ফলাফল ইখওয়ানের পরাজয়
বিবাদমান পক্ষ
ইখওয়ান

ইবনে সৌদের সেনাবাহিনী

  • মিত্র আরব গোত্র

যুক্তরাজ্য ব্রিটিশ বিমানবাহিনী

কুয়েত
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
সুলতান বিন বাজাদ
ফয়সাল আল দাউয়িশ
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ
শক্তি
১০,০০০[১] ৩০,০০০[১]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
সাবিলার যুদ্ধে ৫০০ জন[১]
জাবাল শামারে ৪৫০ জন
সাবিলার যুদ্ধে ২০০ জন[১]
জাবাল শামারে ৫০০ জন

অভিযানে প্রায় ১০০ জন নিহত
সাবিলায় ৭০০ জন নিহত
জাবাল শামারে ১,০০০ জন নিহত
আওয়াজিম গোত্র আক্রমণে ২৫০ জন নিহত

সর্বমোট ২,০০০ জন নিহত[১]

পটভূমি সম্পাদনা

২০ শতকের শুরুতে আরব উপদ্বীপে গোত্রীয় যুদ্ধ চলছিল। এর পরবর্তীকালে উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চল আল সৌদের নেতৃত্বে একীভূত হয়। এই অবস্থায় পৌছানোর প্রধান হাতিয়ার ছিল সুলতান বিন বাজাদফয়সাল আল দাউয়িশের নেতৃত্বাধীন ইখওয়ান যোদ্ধাদল।[৪] প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভাগের পর ১৯২৫ সালের শেষ নাগাদ ইখওয়ান বর্তমান সৌদি আরবের অঞ্চলগুলো জয় সম্পন্ন করে। ১৯২৬ সালের ১০ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ নিজেকে হেজাজের রাজা ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ জানুয়ারি তিনি নিজেকে নজদের রাজা ঘোষণা করেন। ইতিপূর্বে তার উপাধি ছিল সুলতান

ইখওয়ান কর্তৃক ইবনে সৌদকে অমান্যকরণ সম্পাদনা

হেজাজ জয়ের পর কিছু ইখওয়ান নেতা ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট ট্রান্সজর্ডান, ইরাককুয়েত আক্রমণ করতে চাইছিলেন। তারা ইতিমধ্যে কুয়েত-নজদ সীমান্ত যুদ্ধট্রান্সজর্ডান আক্রমণের মাধ্যমে কিছু চেষ্টা চালান। ১৯২৭ সালের ৫ নভেম্বর ইখওয়ানদের একটি দল দক্ষিণ ইরাক আক্রমণ করে। বুসায়ার কাছে ইরাকি সেনাদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুইপক্ষে ২০ জনের মত হতাহত হয়। ইখওয়ানরা ১৯২৮ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতে হামলা চালায়। দুই অভিযানেই তারা উট ও ভেড়া লুট করে। তাদের হামলা ভয়াবহ মাত্রার হলে ব্রিটিশ বিমানবাহিনী ও কুয়েতিদের কাছ থেকে তারা চরম বাধাপ্রাপ্ত হয়।[৫]

বিদ্রোহের সূচনা সম্পাদনা

 
ইখওয়ান বাহিনীর একটি দৃশ্য।

সাবিলার যুদ্ধ সম্পাদনা

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ইখওয়ানের হামলায় সম্মত ছিলেন না। ইখওয়ানের বিশ্বাস ছিল যে অওয়াহাবিরা সঠিক পথে চলছে না। এসময় আবদুল আজিজের শাসন বহির্ভূত আরবের কিছু অংশ ব্রিটিশদের সাথে মিত্রতায় আবদ্ধ ছিল। তিনি নিজেও স্বাধীন শাসক হিসেবে এক বছর আগে ব্রিটিশদের স্বীকৃতি পান। ফলে এসব অঞ্চলের সাথে সংঘাতে জড়ানোর ফল হিসেবে ব্রিটিশদের সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে তা তিনি অণুধাবন করেন।

এসব ঘটনার কারণে ১৯২৮ সালে ইখওয়ান প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে। ১৯২৯ সালের ৩০-৩১ মার্চ সাবিলার যুদ্ধে উভয় পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে লড়াই হয়। এতে ইখওয়ান পরাজিত হয়। সাবিলার যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এখানে প্রথাগত ইখওয়ান অশ্বারোহীদের বিরুদ্ধে ইবনে সৌদের মেশিনগান সমৃদ্ধ বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব কারণে ব্যাপক প্রাণহানি হয়। যুদ্ধের পরে প্রায় ৫০০ ইখওয়ান যোদ্ধা নিহত হয়। অন্যদিকে ইবনে সৌদের দল ২০০ জনের মত মারা যায়।[১]

জাবাল শামারের যুদ্ধ সম্পাদনা

১৯২৯ সালের আগস্টে জাবাল শামার অঞ্চলে ইখওয়ান ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়। এই যুদ্ধে ১,০০০ জনের মত মারা যায়।[১]

আওয়াজিম গোত্রের উপর হামলা সম্পাদনা

পরাজিত হওয়ার পরও ইখওয়ান ১৯২৯ সালের ৫ অক্টোবর আওয়াজিম গোত্রের উপর হামলার মাধ্যমে তাদের বিদ্রোহ বজায় রাখে। এতে প্রায় ২৫০ জনের মত মারা যায়।

চূড়ান্ত সমাপ্তি সম্পাদনা

ফয়সাল আল দাউয়িশ ১৯২৯ সালের অক্টোবরে কুয়েত পালিয়ে যান। ১৯৩০ সালের ১০ জানুয়ারি ইখওয়ান বিদ্রোহী নেতারা ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে সরকারি বাহিনী চূড়ান্তভাবে বিদ্রোহ দমনে সমর্থ হয়।[১]

পরবর্তী অবস্থা সম্পাদনা

পরবর্তীতে ইখওয়ান নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়। বাকিদের নিয়মিত সৌদি সেনাদলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্যতম প্রধান ইখওয়ান নেতা সুলতান বিন বাজাদ ১৯৩১ সালে নিহত হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] একই বছরের ৩ অক্টোবর ফয়সাল আল দাউয়িশ রিয়াদের কারাগারে মারা যান।[১]

১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর দুইটি পৃথক রাজ্য নজদ ও হেজাজকে একীভূত করে সৌদি আরব গঠন করা হয়।[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. University of Central Arkansas, Middle East/North Africa/Persian Gulf Region[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Harold,Dickson. [Kuwait and her Neighbors], "George Allen & Unwin Ltd", 1956. pg 300-302
  3. "Battle of Sibilla (Arabian history) - Encyclopedia Britannica"। Britannica.com। ১৯২৯-০৩-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-২৯ 
  4. King Abdul Aziz Information Resource ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে retrieved 19 January 2011
  5. Peter W. Wilson, Douglas Graham. Saudi Arabia: the coming storm . M.E.Sharpe, 1994: p.45